আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

“ঘটনাটি সত্য নয়”

ঈশ্বরদী। যেখানে ঈশ্বর থাকতেন। আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে সেই ছোট্ট শহরে কোন এক ২০ ডিসেম্বর একটি নিুমধ্যবিত্ত পরিবারে আনোয়ারা বেগমের গর্ভে নাকবোঁচা ছেলেটির জন্ম হয়। বাইরে তখন প্রচন্ড শীত। হু হু করে বাতাস বইছে।

টিনের চালে শিশির পড়ছে টপ্ টপ্ করে। তাই দেখে পাশের ঘরের এক ব্যর্থ-বেকার শিল্পী সাদা কাগজে স্পষ্টাক্ষরে লিখলেন, “তাহার নাম দিলাম শিশির”। আশৈশব পাবনা শহরে বেড়ে ওঠা ছেলেটি মা-বাবা আপিসে চলে গেলে টো টো করে ঘুরে বেড়াতো সারা শহর। বাবা-মা আশ্চর্য হয়ে একদিন দেখলো ছেলেটি ছবি আঁকছে। জেলা স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ও জানতো রাস্তার পাশে কোন ড্রেনে কোন কোন মাছের ছানা, জলপোড়া সাপ ওর জন্যে অপেক্ষা করে।

জুতোর ফিতে বাঁধতে পারতো না। একদিন মারকুটে একটা ছেলে ওর ফিতে বেঁধে দিল, সেই থেকে সে বন্ধু হল ওর। ক্লাস ফাইভে উঠতেই শহরের পাবলিক লাইব্রেরীর প্রায় সব বই শেষ করে ফেলল সে। দূর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে ওরা তিন হাফপ্যান্ট-বালক সারা শহর ঘুরে কবিতা বিক্রি করে সেই টাকায় চাল-চিড়া-মোমবাতি কিনে সোজা চলে গেল একদিন জেলা প্রশাসকের অফিসে। সাংবাদিকদের কি মনে হল, কাগজে ছাপিয়ে দিল ওদের হাসিমুখের ছবি, “একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত”।

ঠোঁট পুড়ে যাবে ভয়ে অঞ্জনদা'দের আড্ডায় গিয়ে বলত, “আমি চা খাই না। ” মুখচোরা ছেলেটি লেখাপড়ায় ভাল ছিল, ক্লাসে বরাবরই প্রথম হত। ছেলেটা একদিন স্কুল ফাঁকি দিয়ে সারাদিন অপেক্ষা করল জাহানারা ইমামের জন্য, একাত্তরের ঘাতক দালালদের বিরুদ্ধে একটা কবিতা আবৃত্তি করে ফেলল মুক্তমঞ্চে। ক্লাস সিক্সে আরো কিছু বন্ধু হল ওর। সবাই মিলে একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারের সামনে একটা ১ কি.মি. দীর্ঘ দেয়ালপত্রিকা করে ফেলল ওরা।

ফটোকপি করে পত্রিকার প্রকাশনা চলল নিয়মিত। আর “একদিন ফুল দেখে মনে হল ফুলেরও অধিক কিছু ফুল আছে ফুলের ভেতরে। ” শুরু হল স্কুল পালিয়ে নদীর কাছে চলে যাওয়া। সবকিছু পাল্টে যেতে থাকলো। তারপর একদিন সিনেমা বানানোর স্বপ্ন- প্রিয় শহর ছেড়ে রাজধানী - নটরডেম কলেজ - টাইফয়েড- শাহবাগ-আজিজ মার্কেটে লিটল ম্যাগাজিন আড্ডা - এ্যান্টিএষ্টাবলিষমেন্ট- উত্তর ভারতে পড়তে যাওয়া - বাবার মৃত্যু - ফিরে আসা - চাকুরিতে ঢুকে পড়া আর তারপর... তারপরের গল্পটা বিশ্রী।

তারপরের গল্পটা আরেকদিন বলব। গল্পটা একটি কুৎসিত হাঁসের ছানার.... (আশরাফ শিশিরের ছোটগল্পগ্রন্থ "ঘটনাটি সত্য নয়", প্রকাশক: প্রতিভূ, প্রাপ্তিস্থান : একুশে বইমেলায় নন্দিতা প্রকাশ (ষ্টল নং-৬০,৬১) আল-আমিন প্রকাশন (ষ্টল নং-৪৪) এবং লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে মূল্য: ২০০ টাকা একবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে প্রচন্ড অস্থির সময়ে প্রেম-দাম্পত্য-কবিতা-নন্দনতত্ত্ব-জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে পরাজিত নগরের এক তরুণ কবি একদিন একা একা একটি নি:সঙ্গ ট্রেনে উঠে পড়ে কেন না নগরে উত্তরাধুনিক কবিদের আড্ডায় সে হয়ে ওঠে অর্বাচীন যদিও প্রিয় নারীদের গতানুগতিক স্বার্থপরতায় ভেঙ্গে পড়া তরুণটির কলম থেকে তখন বেরিয়ে আসে না কোন প্রিয় কবিতা আর এ রকমই একটা সময়ে পত্রিকার সাহিত্য পাতায় বিক্রি হয়ে যাওয়া নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা কবিবন্ধুরা তাকে “নেশা না করলে কি কবিতা হয়?” জাতীয় পরামর্শ দিলে সে এই প্রথমবারের মত বিষয়টি ভেবে দেখবার অবকাশ পায় আর তখনই নগরের মুখস্ত মানুষদের মুখে লাথি দিয়ে জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে পরাজিত নগরের এক তরুণ কবি একদিন একা একা একটি নি:সঙ্গ ট্রেনে উঠে পড়ে কেন না অজানা কোন ষ্টেশনে অজানা কোন গ্রামে সে নেমে পড়তে চায় যেখানে ধানের ফলন হলে কৃষকের বুকে সুররিয়্যালিজমের স্বপ্ন জমে আর মাটি ভেদ করে জ্বেগে ওঠে ম্যাজিক রিয়েলিটি অথচ এইসব ম্লান করে দিয়ে সবকিছু মুছে দিতে সামনে এসে দাঁড়ায় ধানরাজনীতি-ধানের অর্থনীতি। তবুও পরাজিত এবং বেহায়া তরুণ কবিটি অপেক্ষা করে নবান্নের জন্য, যে ধানে মদ হয় তার জন্য,অপেক্ষা করে জীবনের শ্রেষ্ঠ কবিতাটি লেখার জন্য... (আশরাফ শিশিরের দীর্ঘকবিতার বই "দুধধান", ২য় সংস্করণ প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা, প্রকাশক: প্রতিভূ, প্রাপ্তিস্থান : একুশে বইমেলায় নন্দিতা প্রকাশ (ষ্টল নং-৬০,৬১) আল-আমিন প্রকাশন (ষ্টল নং-৪৪) এবং লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে মূল্য: ১০০ টাকা) পুরো বইটি ফ্রি ডাউনলোড করতে পারেন এই লিংক থেকে http://www.mediafire.com/?1hspk2eca7hz9gt  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।