ফ্রেড যেন ছিলেন হারিয়ে যাওয়া এক তারা। সেই ২০০৫ সালে ব্রাজিলের হয়ে অভিষেক। ২০০৬ বিশ্বকাপেও খেলেছেন হলুদ জার্সি গায়ে। গোলও করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। সেই ফ্রেড কোথায় যেন হারিয়ে গেলেন!
বিস্মৃতির ধুলোর আড়াল থেকে ফ্রেডকে আবার সাফসুতরো করে নিয়ে এলেন লুইস ফেলিপে স্কলারি।
২৯ বছর বয়সে এসে যেন তাঁর ক্যারিয়ারের পুনর্জন্ম হলো। ফ্রেড এখন ব্রাজিলের আক্রমণভাগের বড় ভরসা। এবারের কনফেডারেশনস কাপের সর্বোচ্চ গোলদাতাও।
গোল্ডেন বুটটা অবশ্য জেতা হয়নি, নিয়মের ফাঁদে সেটি ‘দখল’ করেছেন ফার্নান্দো তোরেস। অথচ তোরেসের পাঁচ গোলের চারটিই তাহিতির বিপক্ষে।
সেখানে ফ্রেডের পাঁচ গোলের দুটি ফাইনালে; একটি গোল করেছেন সেমিফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেও।
সোনার বুট না জেতায় অবশ্য ফ্রেডের কোনো আক্ষেপ নেই। দল শিরোপা জিতেছে, আর কী চাই। কনফেডারেশনস কাপ শুরু হওয়ার আগে যে ফ্রেডকে চিনত অল্প কিছু মানুষ, সেই তিনিই এখন ব্রাজিলের অন্যতম স্বপ্নসারথি। রোনালদোর বিখ্যাত নয় নম্বর জার্সিরও যোগ্য উত্তরসূরি ভাবা হচ্ছে তাঁকে।
প্রায় আট বছর আগে অভিষেক হলেও খেলেছেন মাত্র ২৯টি ম্যাচ, নামের পাশে ১৬টি গোল। প্রতিশ্রুতি থাকলেও রোনালদিনহো, কাকা, আদ্রিয়ানো, রবিনহোদের ভিড়ে প্রত্যাশিত ঔজ্জ্বল্য ছড়াতে পারেনি তাঁর ছোট্ট নামটি। তবে ক্লাব ফুটবলের অঙ্গনে বরাবরই আলো ছড়িয়েছেন তিনি।
২০০২ সালে নিজ শহরের ক্লাব আমেরিকা মিনেইরোর হয়ে পেশাদারি ফুটবলে পা রাখেন ফ্রেড। সেখানে কাটিয়েছেন দুই বছর।
২০০৫ সালে পাড়ি জমান ইউরোপিয়ান ফুটবল অঙ্গনে। যোগ দেন ফ্রান্সের শীর্ষস্থানীয় ক্লাব অলিম্পিক লায়নে। সেখানে তিনি কাটান চারটি সফল মৌসুম। জিতেন তিনটি ফ্রেঞ্চ লিগ শিরোপা।
২০০৯ সালে আবার ফিরে আসেন ব্রাজিলের ঘরোয়া ফুটবলে।
এবার গায়ে চড়ান ফ্লুমিনেসের নয় নম্বর জার্সিটা। তাঁর হাতেই তুলে দেওয়া হয় অধিনায়কত্বের বাহুবন্ধনী। সত্যি সত্যিই দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন ফ্রেড। ২০১২ মৌসুমে দলকে চ্যাম্পিয়নশিপ জেতানোর পেছনে মুখ্য অবদান ছিল তাঁর। স্বীকৃতি হিসেবে জিতেছিলেন প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার।
পরের বছর ব্রাজিলিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের সেরা স্ট্রাইকারও নির্বাচিত হয়েছিলেন ফ্রেড।
কিন্তু ক্লাব ফুটবলে ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়ে গেলেও জাতীয় দলে খুব একটা পাত্তা পাননি ফ্রেড। আর কিছুদিন ব্রাত্য হয়ে থাকলে হয়তো আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্যারিয়ারটাই শেষ হয়ে যেত। কিন্তু প্রায় ভুলে যাওয়া ফ্রেডকে আবার জাতীয় দলের জার্সি পরার সুযোগ করে দেন স্কলারি। দ্বিতীয় দফায় ব্রাজিলের দায়িত্ব নেওয়ার পর দলে ডাকেন ফ্রেডকে।
কোচের এই আস্থার প্রতিদানও দারুণভাবেই দিয়েছেন তিনি। এ বছর এখন পর্যন্ত ১০টি ম্যাচ খেলে গোল করেছেন নয়টি। সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন বেশ কয়েকটি গোল।
ব্রাজিলের হয়ে দ্বিতীয় পর্বটি যে অন্য রকমই হতে যাচ্ছে, ফ্রেড সেই ইঙ্গিতটা সবচেয়ে ভালোভাবে দিয়েছেন সদ্য শেষ হওয়া কনফেডারেশনস কাপে। ফাইনালে স্পেনের বিপক্ষে তাঁর দুই গোলেই তো শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ঘরে তুলল সেলেসাওরা।
এর মধ্যে প্রথম গোলটি তো কনফেডারেশনস কাপের ইতিহাসেরই দ্রুততম গোল।
এবারের কনফেডারেশনস কাপ শুরুর আগে সবার নজর ছিল নেইমারের ওপর। ব্রাজিলের শিরোপা জয়ের প্রধান কান্ডারি হিসেবেই বিবেচনা করা হয়েছিল ২১ বছর বয়সী নেইমারকে। তেমনটা হওয়ার যোগ্যতা যে তাঁর আছে, সেই প্রমাণ বেশ ভালোমতোই দিয়েছেন তিনি। তবে ফুটবলপাগল ব্রাজিলিয়ানদের প্রত্যাশার চাপটা হয়তো এখন তাঁকে একাই বইতে হবে না; কিছু চলে যাবে ফ্রেডের কাঁধেও।
আগামী বছরের বিশ্বকাপে হয়তো ফ্রেডের নয় নম্বর জার্সিটার দিকেও তাকিয়ে থাকবেন ব্রাজিল সমর্থকেরা। ‘নতুন জীবন পাওয়া’ ফ্রেড সেই প্রত্যাশার প্রতিদান দিতে পারবেন কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।