আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গডফাদার-৩০

জামালের অফিসে বেশ কয়েকজন ঠিকাদার বসে আছে। তাদের মধ্যে মোস্তফা সাহেব এবং বেলায়েত সাহেবও আছেন। জামাল প্রথমে তার ফার্মে নতুন নিয়োগ কৃত ইঞ্জিনিয়ার রশিদ সাহেবের সঙ্গে সকলের পরিচয় করিয়ে দিল। রশিদ সাহেব সবাইকে সালাম দিলেন। মোস্তফা সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, জামাল অফিস থেকে খবর নিয়েছ কোন গ্রুপে কয়টি শিডিউল বিক্রি হয়েছে? জি পাঁচটা গ্রুপের মধ্যে এক নাম্বার আর তিন নাম্বার গ্রুপে পনেরোটা করে শিডিউল বিক্রি হয়েছে অন্যান্য গ্রুপে সাতটা করে শিডিউল বিক্রি হয়েছে।

জামাল রশিদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল, এক নাম্বার গ্রুপের কাজটা বোধ হয় বেশি এ্যাট্রাকটিভ? রশিদ সাহেব বললেন, জি ভাই। জামাল বিনয়ের সাথে বলল, মোস্তফা ভাই সামনে আমার ইলেকশন, প্রচুর টাকার প্রয়োজন তাই এ সময় যদি কিছু টাকা লাভ করতে পারতাম তবে আমার খুব হেল্প হতো। বেলায়েত সাহেব আর মোস্তফা সাহেব পরস্পরের মুখের দিকে একবার তাকালেন তারপর মোস্তফা সাহেব বললেন, তারমানে তুমি এক নাম্বার গ্রুপের কাজটা নিতে চাচ্ছ? জামাল একটু হাসল। মোস্তফা সাহেব বললেন, কিন্তু পনেরোটা শিডিউল ক্লোজ করা তো কঠিন ব্যাপার। জামাল বলল, বড় ভাই আপনারা যদি আশ্বাস দেন তবে বাকী ব্যবস্থা আমি করবো।

বেলায়েত সাহেব বললেন, ঠিক আছে আমরা এক নাম্বার গ্রুপের কাজে পার্টিসিপেট করবো না। তুমি নেগোসিয়েট করার চেষ্টা কর। জামালের মুখে হাসি ফুটে উঠল। সে বলল, বড়ভাই এর মধ্যে ছয়টা শিডিউল আমি ক্লোজ করেছি। আপনাদের দু'জনের কাছে দু'টা আমার কাছে একটা তাহলে বাইরে থাকল আর ছয়টা।

আমার বিশ্বাস আমি পারব আর একান্তই যদি না পারি তবে অফিসের গেটে হিটলারকে বসিয়ে দিব। এসময় চা এলো। জামাল বিনয়ের সঙ্গে বলল, চা নিন প্লিজ। মোস্তফা সাহেব বললেন, সেটা ঠিক হবে না। যে শিডিউলগুলো এখনো ক্লোজ করতে পারনি তাদের নামগুলো বলো দেখি? জামাল পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে নামগুলো পড়ল।

মোস্তফা সাহেব বললেন, তুমি আমার কথা শোন যে ছয়টা শিডিউল এখনো ক্লোজ করতে পারো নি তাদের নামগুলো তো আমি জানলাম তুমি প্রত্যেককে শিডিউলের দাম ফেরত আর পাঁচ হাজার টাকা করে দিয়ে শিডিউলগুলো নিয়ে এসো। আর কেউ যদি না দিতে চায় তবে আমাকে বলো। অফিসের গেটে সন্ত্রাসী বসিয়ে দিয়ে অন্যান্য ঠিকাদারদের বাধা দিতে গেলে সিন ক্রিয়েট হতে পারে, তাতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে পারে, তুমি এখনি টাকা নিয়ে বেরিয়ে পড়। সবার শিডিউল ক্লোজ করা হলে আমার মোবাইলে একবার রিং দিও। জি ভাই, বলে জামাল মোস্তফা সাহেব এবং বেলায়েত সাহেবের সঙ্গে হ্যান্ডশ্যাক করল।

মোস্তফা সাহেব এবং বেলায়েত সাহেব চলে যাবার পর জামাল রশিদ সাহেবকে বলল, রশিদ সাহেব আমি একটু বের হবো। আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত আপনি যাবেন না। আমি আসার পর শিডিউল পূরণ করতে হবে। আপনি এখন আপনার রুমে বসুন বলে তিনি জাহিদকে ডেকে পাঠালেন, জাহিদ রুমে আসতেই জামাল উঠে দাঁড়ালো, জাহিদ আমি শুধু তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত তুমি যাবে না, বলে জামাল বের হলো। জামাল ফিরে এলো তখন রাত প্রায় এগারোটা বাজে, তার চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ।

রশিদ সাহেব এবং জাহিদ তখনো অফিসে জামালের ফিরে আসার অপেক্ষায় ছিল। জামাল শিডিউলগুলো তার টেবিলের উপর রেখে ধপাস করে চেয়ারে বসে পড়ল। জামালের পিছনে পিছনে রশিদ সাহেব ভিতরে ঢুকলেন। জামালের মুখের দিকে তাকিয়ে রশিদ সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, ভাইজান সবগুলো পেয়েছেন তো? জামাল বলল, হুঁম, তবে কালেকশন করতে বেশ সমস্যা হলো। আপনি এই শিডিউলগুলো রাখুন আর জামাল কন্সট্রাকশনের রেটটা এট পার করবেন, অন্যগুলো আরো বেশি রেটে প্রস্তুত করবেন।

রাতেই সব রেডি করবেন আগামীকাল শুধু বি.ডি লাগিয়ে ড্রপ করবেন। জি ভাই। জামাল আবার স্মরণ করিয়ে দিলেন, শিডিউল ড্রপিং বেলা একটা পর্যন্ত। জি ভাই আমি সব রেডি করছি আপনি এ নিয়ে ভাববেন না, বলে রশিদ সাহেব শিডিউলগুলো নিয়ে তাঁর চেম্বারে গেলেন। রশিদ সাহেব চলে যাবার পর চেম্বারে ঢুকলো জাহিদ, ভাইজান কিছু বলবেন? হ্যাঁ তোমার ফেন্সি কুইনদের অবস্থা কী? জি ভাইজান মার্কেটে মাল ভালো চলছে।

দালাল কিংবা কুইনদের সঙ্গে কথা বলার সময় খেয়াল রাখবে, বলে জামাল একটা মোবাইল সেট বের করে জাহিদের হাতে দিয়ে বলল, এই মোবাইলটা তুমি ব্যবহার করবে কিন্তু সাবধান তোমার মোবাইল নাম্বার যেন আমি ছাড়া কেউ না জানে। জাহিদের চোখে মুখে আনন্দের ছাপ ফুটে উঠল। হঠাৎ করেই হাতে মোবাইল সেট পাবে একথা জাহিদ কোনদিন কল্পনাও করতে পারেনি। জামাল বলল, এখন ব্যবসা দেখাশুনা করতে তোমার আর কোন অসুবিধা হবে না, বলে জামাল একটু থামল। তারপর বলল, আচ্ছা জাহিদ ফেন্সির মার্কেট তো বেশ জমে উঠেছে এবার হেরোইনটা চালু করতে পারলে হয় না? জাহিদ বুঝতে না পেরে বলল, কী বললেন ভাইজান? হেরোইন খুব দামি নেশা কোন কারণে যদি একবার কেউ এই নেশা ধরে তবে আর জীবনে ছাড়তে পারবে না।

কোন রকমে একবার ধরাতে পারলেই হয়। জাহিদ মাথা নত করে দাঁড়িয়ে রইল। তোমার তো বুঝি ফেন্সি লাগবে? জি ভাই। আমি তাহলে এক ট্রাক ফেন্সি আর এক কেজি হেরোইনের অর্ডার দেই। জি ভাইজান, বলে জাহিদ চলে গেল।

জামাল তার ড্রয়ার থেকে আরেকটা মোবাইল সেট বের করে মোবাইল করল, হ্যালো। দেখ জামাল এক ট্রাক ফেন্সি পাঠিয়ে দিচ্ছি কিন্তু এক কেজি হেরোইনের দাম কোটি টাকা তুমি চালাতে পারবে তো এতগুলো মাল? বস্‌ তাহলে হেরোইন হাফ কেজি পাঠিয়ে দিন। আচ্ছা ঠিক আছে সময় মতো তুমি মাল পেয়ে যাবে। জামাল চোখ বুজে রইল তার চোখের সম্মুখে তখন একটা বিলাস বহুল বাড়ি এবং দামি গাড়ির ছবি ভাসছে। এমনভাবে জামাল কয়েক মিনিট চেয়ারে বসে রইল তারপর চেয়ার ছেড়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো।

চলবে... গডফাদার-০১  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।