আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি এবং অতসীর দাদু

" সাহিত্যের কাজ হচ্ছে মানুষকে খেলাচ্ছলে শিক্ষা দেওয়া " - প্রমথ চৌধুরী (কাল্পনিক লেখা......কেউ হুদাই মনে কইরেন না যে আমার জীবন নিয়া লেখছি) আজ ১৬ জানুয়ারী। গত কয়েকদিন আগ থেকেই ঠিক করে রেখেছি অতসীর সাথে দেখা করব। ওর বাপ-মা আবার খুব্বি কড়া। মেয়েকে সবসময় চোখে চোখে রাখে। গত ১ তারিখ থেকে তার কলেজ বন্ধ (উল্লেখ্য, সে ক্যাডেট কলেজে পড়ে)।

সে থাকে শহরে, আর আমি গ্রামে। তার বাসায় কখনও যাওয়া হয়নি, তার বাসাও আমি চিনিনা......খালি জানি তার বাসাটা কোথায়। এতদিন তার সাথে পুরা শহর ঘুরেছি, আজ ও তাই করতাম। কিন্তু ঘাপলা বাঁধালেন আমার শাশুড়িআম্মা (কত্ত মজা...বিয়ার আগেই শাশুড়ি)। এই কয়েকদিনে মেয়ে নাকি বেশী বাইরে গিয়েছে।

তাই আপাতত তার বাইরে বের হওয়া বন্ধ। গতকাল ও ফোন দিয়ে বলল দেখা করতে হলে বাসায় আসতে হবে। ১০ টার পর তার বাপ মা কেউ থাকেনা......তার সাথে থাকে তার দাদি। কথায় আছে, “বড় প্রেম নাকি শুধু কাছে টানেনা, গাছেও তোলে”......আর মেয়ের বাসায় যাওয়া তো ডাল-ভাত। যাই হোক, আমি পড়লাম বিশাল গ্যাঞ্জামে।

এমনেই মেয়ের বাসা আমি চিনিনা......মানুষকে জিজ্ঞেস করে করে বাসা বের করা লাগবে। আমার বয়সী ছেলেদের এমনেই মানুষজন ইভ-টিজার বলে সন্দেহ করে। এখন যদি আমি জিজ্ঞেস করি অমুক মেয়ের বাসা কোথায়, মানুষজন তো সন্দেহ করবেই। যাই হোক, ১০ টার ১০ মিনিট আগে আমি তার বাসার সামনের রাস্তায় উপস্থিত। বুঝছিলাম না, কাকে বাসার কথা জিজ্ঞেস করব।

এসব চিন্তা করতে করতে আমি ঐ রাস্তা ধরে আগাচ্ছিলাম। একজন বয়স্ক মহিলাকে দেখে থামলাম। - আচ্ছা আনটি, নিজাম সাহেবের বাসা কোনটা? - কোন নিজাম সাহেব? - ঐ যে ব্যাঙ্কে চাকরি করেন......। - ও......অতসীদের বাড়ি......কিন্তু বাবা, তুমি কে? - (খাইসি ধরা) না মানে আনটি......অতসী তো ক্যাডেট কলেজে পরে, তাই না? - হুম......কিন্তু তুমি কে? - (যাহ, মিথ্যা কথা শুরু করলাম) আমি ক্যাডেট কলেজ থেকেই এসেছি। - ও আচ্ছা চল।

বাঁচলাম বাপ। আমি এমনেই মিথ্যা কথা বলতে গেলে ধরা খেয়ে যাই। আমি চুপচাপ আনটির পিছে হাঁটতে শুরু করলাম। অতসীদের বাসার সামনে এসে উনি বললেন, “এটাই অতসীদের বাসা”। আমি উনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভিতরে ঢুকতে যাব, এমন সময় বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত অতসীর দাদি (অনুমান করেছিলাম) বের হয়ে এলেন।

আমি কিছু বলার আগেই ঐ আনটি বলা শুরু করলেন, “ও গোলাপি, (মনে হয় দাদির নাম) তগো বাসায় তো মেহমান আইসে রে......” দাদি আমার দিকে এমনভাবে তাকাতে লাগলেন, যেন আমি তার নাতনীকে অপহরণ করতে এসেছি। তারপর বললেন, “কে তুমি, বাবা?” - না মানে, এ বাসায় তো ক্যাডেট কলেজে পড়ুয়া এক মেয়ে থাকে, তাই না? - হ্যাঁ, কিন্তু তুমি কে? - (আপনের নাতজামাই) না মানে আমি ক্যাডেট কলেজ থেকে এসেছিলাম। - তা বাবা, কি জন্য? - তা কি আনটি আমি দাঁড়িয়ে বলতে পারব? (আমি ভিতরে যাব......আআআআআআআ......) - আচ্ছা বাবা, আস। বাসার ভিতরে ঢুকলাম আমি। বেশ সুন্দর করে সাজানো বাসাটা।

বসার ঘরে ঢুকেই দেখলাম অতসী বসে আছে। আমাকে দেখে বেশ অবাক হল সে। যদিও সে বলেছিল বাসায় আসতে, কিন্তু সে মনে করেছিলো আমি আসব না। আমাকে এতটা সাহসী সে মনে করেনি। হেহ হেহ হে......আমারে তুমি চিননাই গো......।

যদিও বাইরে দিয়ে বেশ কনফিডেন্ট ছিলাম আমি, কিন্তু ভেতরে ভেতরে আমার ঘাম ছুটে যাচ্ছিল। যাই হোক, আমি বসতে বসতে আমার লেকচার শুরু করলাম। - একচুয়ালি আমি এসেছি একটা স্বশাসিত সংগঠন থেকে। আপনি তো মনে হয় ফেসবুকে বসেন না, তাই জানেন না......আমাদের একটা সংগঠন আছে “এক্স ক্যাডেট ফোরাম” নামে। (এক্স ক্যাডেট আপু-ভাইয়ারা, মাফ করে দিবেন......Everything is fair in LOVE & WAR) ঐ ফোরাম থেকে আমাদের জুনিয়র এক্স-ক্যাডেটদের বলা হয়েছে সব জেলার বর্তমান ক্যাডেটদের তথ্য সংগ্রহ করতে।

আর নরসিংদী জেলার দায়িত্ব পড়েছে আমার উপর। তাই আমার এ বাড়িতে আসা। আড়চোখে তাকিয়ে দেখছি অতসী নিঃশব্দ হাসিতে ফেটে পড়ছে। আমি অনেক কস্টে নিজের মাঝে সিরিয়াস ভাবটা ধরে রেখেছি। কিন্তু বুঝছি, আমিও বেশীক্ষণ টিকতে পারবনা।

অন্যদিকে দাদির চেহারা দেখে মনে হচ্ছে এখনি আমার নামে থানায় মামলা করে দিবেন। আমি প্রমাদ গুনলাম। প্রেমিকার সাথে দেখা করতে গিয়ে গণপিটুনি খাব, এমনটা চিন্তা করিনি। এমন সময় দাদি মুখ খোলেন। - তা বাবা, এতজন থাকতে তোমাকেই দায়িত্ব দেয়া হল কেন? - (ছি ছি ছি......আমার এত্ত বড় অপমান......গররররর......) না মানে, আমার অন্য ক্লাসমেটরা তাদের ক্লাস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেছে।

আমিই একমাত্র ছেলে, যে এখনও ফ্রি আছে। বুঝেন তো, কাউকে না কাউকে দায়িত্বটা নিতেই হয়......(বলে ভুবনমোহিনী একখান হাসি দিলাম)। - আচ্ছা আচ্ছা...তা বাবা, তোমার নাম কি, কোথায় ভর্তি হয়েছ? আমি আমার গুণগান শুরু করতে যাব, এমন সময় মোবাইলে মেসেজ আসল, অতসীর লেখা......”ঐ গাধা পোলা, তুমি এখন তাড়াতাড়ি বের হও......দাদু একটু পরেই বের হবে......তারপর আমি মিসকল দিলে আসবে... তাকিয়ে দেখলাম, অতসী আমার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে। আমি দাদির দিকে তাকিয়ে বললাম, “যদি সম্ভব হয় তাহলে এক গ্লাস পানি খাওয়াতে পারবেন? (আশা, উনি পানি আনতে উঠবে, আর অতসীর সাথে একটু কথা বলা যাবে......)” উনি বললেন, “অতসী, একটু পানি আন তো ওর জন্য......(হায়রে কপাল আমার...)” সঙ্গে সঙ্গে আমি বলে উঠলাম, “থাক থাক লাগবে না......আমি এখন একটু অন্য ক্যাডেটদের বাসায় যাব...এখন উঠি। “ দাদির সন্দিহান চোখের সামনে আমি ওদের বাসা থেকে বের হলাম।

একটু দূর গিয়েই দেখলাম, দাদি বাসা থেকে বের হয়েছেন। আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ওকে মিসকল দিলাম। তারপর.........থাক, আর নাই লিখলাম......। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।