এলোমেলো ভাবনা সারাক্ষণ মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকায় অনেক শিয়াল বাস করে। তারমধ্যে দুই শিয়ালের (কুমার শিয়াল এবং কুমারী শিয়াল) ছোটবেলা হতেই খুব ভাব। কুমার শিয়ালের নাম মিথান আর কুমারী শিয়ালের নাম মিঠাই। মিঠাইয়ের মা খুব কড়া। যখন তখন তাকে বের হতে দেয় না।
তাই মিথান রাত ১১টার পর এভাবেই ডাকছে,,,হুক্কা হুয়া আ-স -স-সসসস। মিঠাই শুনতে পেল যে মিথান তাকে ডাকছে। তাই চারদিকে তাকিয়ে সে দেখল তার মা আর দুইভাই ঘুম আসছে। চুপ চুপ করে বাইরে আসলো। তখন আকাশ ভেঙ্গে জোøা ঝরছে।
তারাভরা আকাশ আর ঝিরঝির বাতাস সব মিলিয়ে দারুণ একটা সময় । মিঠাই চারপাশে তাকায়, তারাভরা আকাশের দিকে তাকিয়ে আনন্দে ডাকে হুক্কা হুয়ায়ায়ায়া,,,, মিথান লেজ নাড়তে নাড়তে এগিয়ে আসে। দুজন দুজনের মাথা ঠেকিয়ে আনন্দ প্রকাশ করে। এবার দুজন একটা ঝোপের আড়ালে এসে বসে। মিঠাই বলল, ইস আর একটু হলেই মার কাছে ধরা খেয়ে যেতাম গো।
মিথান বলল দেখ এই ইউনিভারসিটির কিছু ছেলেমেয়ে এখনও পড়ালেখা করছে। মিথান কাছের একটা গাছের নীচে দেখিয়ে বলল,’ঐযে দেখ দুজন এখন দুজনকে পড়ছে। মিথান শব্দ করলো,,,,হুররে হুয়া, হুররে হুয়া। তারপর দুজন এক এক করে কথার মালা বুনতে লাগলো। একসময় মিথান বললো, জাহাঙ্গীর নগরএর এই পড়া দেখতে আর ভাল লাগে না, চল যাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাব।
সেখানের নতুন পড়া দেখবো। আরও দেখবো ঢাকা শহরএর ওলি গলি, চিরিয়াখানা, পার্ক আরও কতকি! মিঠাইয়েরও খুব ভাল লাগলো,,,আর নয় এখানে,,এবার ঢাকা শহরটা ঘুরে দেখতেই হবে। বুদ্ধি করলো আগামীকাল সন্ধা হলেই দুজন রওয়ানা দিবে।
সেই প্রতীক্ষিত সময় আসলো। দুজন ঢাকা শহরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল।
সাভার বাস স্ট্যান্ডের কাছে আসতেই দেখা দিল একটি ট্রাক ধীর গতিতে চলছে। তাতে দুজন লাফ দিয়ে উঠলো। ট্রাক ছুটে চলেছে ঢাকার উদ্দেশ্যে। দুজন এখন দুজনার। কতযে খুশি হয়েছে তারা,,,ফিস ফাস করে কথা বলছে।
ড্রাইভার ব্যাটা বুঝতেই পারছে না। আসাদগেটের কাছে আসতেই একটা মিছিল দেখতে পেল তারা। বিপরীত দিক হতে আরও একটা। মিঠাই অবাক হয়ে মিথানকে বললো ’এ কেমন আজব শহর, এখানে সন্ধারাতেও মিছিল। তাদের পড়া নাই।
’ কিন্তু ততক্ষণে ট্রাকের পিছন দিক হতে আগুন ধরিয়ে দিল কিছু পিকেটার। দুজন দুদিকে লাফ দিয়ে পড়লো। এলোপাথারী দৌড়াতে লাগলো দুজন। মিঠাই এক সময় থামলো। হাঁফাতে লাগলো,,,, ’ঢাকা শহর ঘুরে দেখা হলো না, কত প্রেমের কথা বলা হলো না, কত আবেগ প্রকাশ পেল না,,,হু হু হুমমমমা হুয়া করে কাঁদতে লাগলো মিঠাই।
কাঁদতে কাঁদতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লো ।
খুব সকালে রাস্তা দিয়ে এক রিক্সাওয়ালা যাচ্ছিল। এক পথচারী বললো এই রিক্সা যাবে? রিক্সাওয়ালা বলল যাব কিন্তু কোথায়। পথচারী বলল, উত্তর ঢাকায়। রিক্সাওয়ালা বলল, নারে ভাই উত্তর ঢাকায় যাওয়া যাবে না।
উত্তর ঢাকায় গেলে আমার ঠ্যাং ভাইঙ্গা দিব অন্য রিক্সাওয়ালারা। আমি বাপু পারমু না। রিক্সাওয়ালা বিরবির করে বলতে লাগলো ’উত্তর ঢাকায় একখান বিয়া করছিলাম, ওহানে ঝামেলা, পাওনাদাররা টাকা পাইব। ’ পথচারী তখন নিরুপায় হয়ে হাটা ধরলো। মিঠাইএর ঘুম এসময় ভেঙ্গে গিয়েছে।
সে খুব চিন্তায় পড়ে গেল। কি করবে? সে চিন্তা করতে লাগলো মিথান এখন কি করছে??? ইসসিরে যদি দুজন একসাথে থাকতাম... তাহলে কত মজাই না হতো। এদিকে খুধাও লেগেছে। খাওয়া দরকার। কিন্তু কোথায় পাওয়া যাবে খাবার।
চিন্তা করতে করতে সে হাটা দিল। একটা মুদির দোকানের দেখা পেল। দেখলো মুদির দোকানের মালিক দোকানে নেই । কে যেন দোকানের পিছনে প্রাকৃতিক কাজ সেরে নিচ্ছে। সেই হয়ত দোকানের মালিক।
মিঠাই তখন দোকানের কলার কাদি হতে গোটা দশেক কলা নিল। ১০০ কদম সামনের দিকে হাটতেই দেখতে পেল মুরগীর খাঁচা। উহ্ মুরগীগুলো!!!! আহারে কতদিন খাইনা!!! সেদেখলো মুরগীওয়ালা একজন লোকের সাথে কথা বলছে। এই সুযোগ। আর দেরী করা যায় না।
যেই ভাবা সেই কাজ। কলা ফেলে দিল। খাঁচার কাছে এগিয়ে গেল। মুখ গলে দিল মুরগীর খাঁচার ভিতর। হা করে দুটো মুরগী ধরলো।
মুরগী মুখে করে ছুটে ছলেছে মিটাই। কোন দিকে তার তাকাবার সময় নাই। এবার একটু খান্ত দিল। হাপিয়ে গিয়েছে। দেখলো মুরগী দুটো তাজা আছে, কিন্তু নিস্তেজ হয়ে পড়েছে।
খুব খুশী হলো ,,একটা তার নিজের আর একটা মিথাইএর। কিন্তু কিভাবে সে তাকে খুঁজে পাবে। এক পত্রিকাওয়ালা বলছে,,খবরের কাগজ নিবেন খবরের কাগজ। উত্তরের গরম গরম খবর। মিঠাই ভাবলো, বাহ্ আমি উত্তরে এসে পড়েছি।
মিথান যদি উত্তরে থাকতো তাহলে খুব ভাল হতো। একজন লোক মিঠাইকে তারা করতেই সে আবার দৌড় দিল। দৌড়াতে দৌড়াতে একেবারে চিড়িয়াখানার কাছে এসে পৌছাল। মিঠাই কাঁদতে কাঁদতে ডাক দিল হুক ----হুক---হুক্কা হুয়াওওওওওওওওওও। আকাশে প্রতিধ্বনিত হলো সেই শব্দ।
দূর হতে মিঠাই দেখলো তার মিথান অন্য একটা শিয়ালের সাথে নিবিড়ভাবে খোসগল্প করছে। একজনের মাথা অন্যজনের মাথায় ঠেকাচ্ছে। মনে কষ্ট নিয়ে মিঠাই ভাবতে লাগলো....ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের পড়া দেখতে এসেছিলাম...তা তো হলোই না... এখন নিজের ভালবাসার মিথানেরই অন্য শিয়ালের সাথে পড়া দেখতে হচ্ছে। মিঠাইএর মন ভী-ষ-ণ খারাপ হয়ে গেল। উহ্ আর নয় এই খাজ কাটা খাজ কাটা দালান কোঠার শহরে।
সবাই এখানে শুধু ভাগাভাগি করে। শহর ভাগাভাগি হয় । এখানে ভালবাসাও ভাগাভাগি হয়। মিঠাই কাঁদতে লাগলো হুয়ায়ায়া হুক্কাহুয়াওওওওও নানানানা..... সে ধীর গতিতে সাভারে যাওয়ার জন্য হাটা শুরু করতেই মিথান পিছন হতে ডাক দিল। চল মিঠাই চিড়িয়াখানার ভিতর আমাদের আরো বন্ধুদের দেখে আসি।
তারা কেমন আছে। আমরা ম্ক্তু কিন্তু তারা বন্ধী। যতই তারা আরামে থাকুক না কেন আমাদের মত স্বাধীন নয়। বোটানীক্যাল গার্ডেনে যাব, কত কচি কচি মুরগী খাব। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে যাব।
সেখানে ছাত্রছাত্রীদের পড়া দেখবো। মিঠাই আর পিছন ফিরে তাকালো না। সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। মিথান গান শুরু করলো হুহুহুক্কা হুয়া যেও না সাথী,,,,,হু হু হুক্কা হুয়া পথ ভুলে যাবে যে তুমি,,,,হুহুহুক্কা হুয়ায়ায়া।
(বি: দ্র: মানিকগঞ্জ হতে ঢাকায় ফিরছিলাম।
রাত তখন ৯টা। বেরসিক বাসটার চাকাটা নষ্ট হয়ে গেল,,,, ঠিক জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে। চাকা ঠিক করার কাজ চলছে। একটু পরেই শুনতে পেলাম শিয়ালের হুক্কা হুয়ার শব্দ। অনেক বছর পরে শিয়ালের ডাক শুনতে পেলাম।
ভাবলাম শিয়াল মামাকে নিয়ে কিছু একটা লেখা-লেখি করলে মন্দ হয় না। লিখলাম ঠিকই--- কেমন হয়েছে জানিনা। আপনারা কিছু যোগও করতে পারেন। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।