বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা) এর জন্ম দিবস কবে?
কোন তারিখে রাসুলে আকরাম (সা) জন্ম গ্রহণ করেছেন তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে। অনেকের মতে তাঁর জন্ম দিন হল ১২ রবিউল আউয়াল। আবার অনেকের মতে ৯ রবিউল আউয়াল। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে গবেষণা করে প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে যে রাসুলুল্লাহ (সা) এর জন্মদিন আসলে ছিল ৯ রবিউল আউয়াল সোমবার।
বর্তমান বিশ্বে সকলের নিকট সমাদৃত, সহিহ হাদিস নির্ভর শুদ্ধতম সিরাতগ্রন্থ হল ‘আর-রাহীক আল-মাখতুম’। নবী করিম (সা) এর জন্ম দিবস সম্পর্কে এ গ্রন্থে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা) ৫৭১ খৃস্টাব্দে ২০ এপ্রিল মোতাবেক ৯ রবিউল আউয়াল সোমবার প্রত্যুষে জন্ম গ্রহণ করেন। এটা গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যুগের প্রখ্যাত আলেম মুহাম্মাদ সুলাইমান আল-মানসূর ও মিশরের প্রখ্যাত জোতির্বিজ্ঞানী মাহমুদ পাশা।
আল্লামা শিবলী নোমানী ও সাইয়েদ সুলাইমান নদভী (রহ) প্রণীত সাড়া-জাগানো সিরাত-গ্রন্থ হল ‘সিরাতুন্নবি’। এ গ্রন্থে বলা হয়েছে, নবী করিম (সা) এর জন্ম দিবস সম্পর্কে মিশরের প্রখ্যাত জোতির্বিজ্ঞানী মাহমূদ পাশা এক পুস্তিকা রচনা করেছেন।
এতে তিনি প্রমাণ করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা) এর পবিত্র জন্ম ৯ রবিউল আউয়াল রোজ সোমবার, মোতাবেক ২০ এপ্রিল ৫৭১ খৃস্টাব্দ। মাহমুদ পাশা যে প্রমাণ-পত্র দিয়েছেন তা কয়েক পৃষ্ঠাব্যাপী বিস্তৃত। ”
তাদের গবেষণা বিষয়ের একটি দিক হল যে আল্লাহর রাসুল (সা) সহিহ হাদিসে নিজেই বলেছেন তার জন্ম সোমবার দিন হয়েছে। মাহমুদ পাশা গবেষণা ও হিসাব করে দেখিয়েছেন, সে বছর ১২ রবিউল আউয়াল তারিখের দিনটা সোমবার ছিল না ছিল বৃহস্পতিবার। সোমবার ছিল ৯ রবিউল আউয়াল।
তাই বলা যায়, জন্ম তারিখ নিয়ে অতীতে যে অস্পষ্টতা ছিল বর্তমানে তা নেই। মাহমুদ পাশার গবেষণার এ ফল প্রকাশিত হওয়ার পর সকল জ্ঞানী ব্যক্তিই তা গ্রহণ করেছেন এবং কেউ তার প্রমাণ খণ্ডন করতে পারেননি। অতএব নবী করিম (সা) এর জন্ম দিবস হল ৯ রবিউল আউয়াল; ১২ রবিউল আউয়াল নয়। তবে সর্বসম্মতভাবে তাঁর ইন্তেকাল দিবস হল ১২ রবিউল আউয়াল। যে দিনটিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মোৎসব পালন করা হয় সে দিনটি মূলত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইটি ওয়াসাল্লামের জন্ম দিবস নয়, বরং তা ছিল তাঁর মৃত্যু দিবস।
তাই দিনটি ঈদ হিসেবে পালন করার আদৌ কোন যৌক্তিকতা নেই।
রাসুলে করিম (সা) এর জন্মদিন পালন সম্পর্কে ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি
কোন ব্যক্তির জন্মদিবস পালন করা ইসলামসম্মত নয়। এটা হল খৃস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধসহ অমুসলিমদের রীতি। ইসলাম কারো জন্মদিবস পালন অনুমোদন করে না।
এর প্রমাণসমূহ নিচে তুলে ধরা হল।
এক. ইসলাম আজ পর্যন্ত অবিকৃত আছে এবং ইনশাআল্লাহ থাকবে। ইসলামে সকল হুকুম আহকাম, আচার-অনুষ্ঠান সুনির্ধারিত ও কোরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু নবি করিম (সা) এর জন্ম দিবস বা মিলাদ পালনের কথা কোথাও নেই। এমনকি নবিপ্রেমের নজিরবিহীর দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী সাহাবায়ে কেরাম রাজিয়াল্লাহু আনহুমদের কেউ এ ধরনের কাজ করেছেন বলে কোন প্রমাণ নেই। তাই ঈদে-মিলাদ পালন করা নিশ্চয়ই একটি বেদআতি কর্ম।
বেদআত জঘন্য গুনাহের কাজ।
দুই. ইসলামে কম হলেও একলাখ চব্বিশ হাজার নবি, তারপরে খুলাফায়ে রাশেদিন ও অসংখ্য সাহাবা, মনীষী, আওলিয়ায়ে কেরাম জন্ম গ্রহণ করেছেন ও ইন্তেকাল করেছেন। যদি তাদের জন্ম বা মৃত্যু দিবস পালন ইসলাম-সমর্থিত হত বা সওয়াবের কাজ হত তাহলে বছরব্যাপী জন্ম-মৃত্যু দিবস পালনের ঘূর্ণাবর্তে আবদ্ধ হয়ে যেতে হত আমাদের সকল মুলমানদের।
তিন. নবী করিম (সা) এর জন্মদিন পালনের প্রস্তাব সাহাবায়ে কেরাম রাজিয়াল্লাহু আনহুম কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। যেমন হিজরি ক্যালেন্ডার প্রবর্তিত হওয়ার সময় হযরত উমর রাজিয়াল্লাহু আনহু সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে বৈঠকে বসলেন।
কোন এক স্মরণীয় ঘটনার দিন থেকে একটি নতুন বর্ষগণনা পদ্ধতি প্রবর্তন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কেউ কেউ প্রস্তাব করলেন রাসুলুল্লাহ (সা) এর জন্ম তারিখ থেকে সন গণনা শুরু করা যেতে পারে। উমর (রা) এ প্রস্তাব বাতিল করে দিয়ে বললেন, এ পদ্ধতি খৃস্টানদের। উমর (রা) এর এ সিদ্ধান্তের সাথে সকল সাহাবায়ে কেরাম একমত পোষণ করলেন। এবং রাসুলে করিম (সা) এর হিজরত থেকে ইসলামি সন গণনা আরম্ভ করলেন।
চার. রাসুলুল্লাহ (সা) এর সাহাবাগণ ছিলেন সত্যিকারার্থে নবিপ্রেমিক ও সর্বোত্তম অনুসারী। নবিপ্রেমের বেনজির দৃষ্টান্ত তারাই স্থাপন করেছেন। তারা কখনো নবি করিম (সা) এর জন্মদিনে ঈদ বা অনুষ্ঠান পালন করেননি। যদি এটা করা ভাল হত ও মহব্বতের পরিচায়ক হত তবে তারা তা অবশ্যই করতেন। জন্মোৎসব পালন করার কালচার সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা ছিল না তা বলা যায় না।
কেননা তাদের সামনেই তো খৃস্টানরা ঈসা আলাইহিস সালাম-এর জন্মদিন ( বড়দিন) উদযাপন করত।
পাঁচ. জন্ম দিবস কেন্দ্রিক উৎসব-অনুষ্ঠান খৃস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও অন্যান্য অমুসলিমদের ধর্মীয় রীতি। যেমন বড় দিন, জন্মাষ্ঠমী, বৌদ্ধ পূর্ণিমা ইত্যাদি। তাই এটা মুসলিমদের জন্য পরিত্যাজ্য। বিধর্মীদের ধর্মীয় রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান যতই ভাল দেখা যাক না কখনো তা মুসলিমদের জন্য গ্রহণ করা জায়েজ নয়।
এ কথার সমর্থনে কয়েকটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করলাম।
(ক) রাসুলে করিম (সা) বলেছেন –‘যে ব্যক্তি কোন জাতির সাদৃশ্যতা গ্রহণ করবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। ’
(খ) আজানের প্রচলনের সময় কেউ কেউ রাসুলুল্লাহ (সা) এর কাছে প্রস্তাব করলেন, সালাতের সময় হলে আগুন জ্বালানো যেতে পারে। কেউ প্রস্তাব করলেন ঘণ্টাধ্বনি করা যেতে পারে। কেউ বললেন বাঁশী বাজানো যেতে পারে।
কিন্তু রাসুলে করিম (সা) সকল প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন। বললেন আগুন জ্বালানো হল অগ্নিপুজারী পারসিকদের রীতি। ঘণ্টা বাজানো খৃস্টানদের ও বাঁশী বাজানো ইহুদীদের রীতি।
(গ) মদিনার ইহুদীরা আশুরার দিনে একটি রোযা পালন করত। রাসুলে করিম (সা) দুটি রোযা রাখতে নির্দেশ দিলেন, যাতে তাদের সাথে সাদৃশ্যতা না হয়।
(ঘ) হিজরি সনের প্রবর্তনের সময় অনেকে রাসুলে করিম (সা) এর জন্মদিন থেকে সন গণনার প্রস্তাব করেন। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যাত হয়, খৃস্টানদের অনুকরণ হওয়ার কারণে।
ইসলামে ঈদ দুটি, ঈদুল ফিতর ও আজহা
সাহাবি আনাস বিন মালিক (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলে কারিম (সা) যখন মদিনায় আসলেন তখন দেখলেন বছরের দুটি দিনে মদিনাবাসী আনন্দ-ফুর্তি করছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন এ দিন দুটো কি? উত্তরে তারা বলল, আমরা ইসলামপূর্ব মূর্খতার যুগে এ দুদিন আনন্দ-ফুর্তি করতাম। রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন- আল্লাহ তায়ালা এ দুদিনের পরিবর্তে এর চেয়ে উত্তম দুটো দিন তোমাদের দিয়েছেন।
তা হল ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর। (আবু দাউদ) ইসলামে ঈদ শুধু দুটি। এ বিষয়টি শুধু সহিহ হাদিস দ্বারাই প্রমাণিত নয়, তা রবং ইজমায়ে উম্মত দ্বারাও প্রতিষ্ঠিত। যদি কেউ ইসলামে তৃতীয় আরেকটি ঈদের প্রচলন করে তবে তা কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না। বরং তা দীনের মধ্যে একটা বেদআত ও বিকৃতি বলেই গণ্য হবে।
যখন কেউ বলে সকল ঈদের সেরা ঈদ- ঈদে মিলাদ’ তখন স্বাভাবিক ভাবেই এর অর্থ হয় ইসলামে যতগুলো ঈদ আছে তার মধ্যে ঈদে মিলাদ হল শ্রেষ্ঠ ঈদ। কিভাবে এটা সম্ভব? যে ঈদকে আল্লাহ ও তার রাসুল স্বীকৃতি দেননি। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন ও ইমামগণ যে ঈদকে প্রত্যাখ্যান করেছেন তা ইসলামে শ্রেষ্ঠ ঈদ বলে বিবেচিত হতে পারে কিভাবে? কোনভাবেই নয়। যে ঈদ আল্লাহর রাসুল (সা) প্রচলন করে গেলেন তা শ্রেষ্ঠ হবে না। এটা কিভাবে মেনে নেয়া যায়? কোনভাবেই নয়।
তা সত্ত্বেও যদি ঈদ পালন করতেই হয় তবে তা ১২ রবিউল আউয়াল তারিখে না করে ৯ রবিউল আউয়ালে করা যেতে পারে। তাহলে অন্তত সাইয়েদুল মুরসালিন (সা) এর ইন্তেকাল দিবসে ঈদ পালন করার মত ধৃষ্ঠতা ও বেয়াদবির পরিচয় দেয়া হবে না। অবশ্য এটাও কিন্তু বেদআত বলে গণ্য হবে।
সারকথা, ১২ রবিউল আউয়ালে ঈদে মিলাদ উদযাপন করা শরিয়তবিরোধী কাজ। এ ধরনের কাজ হতে যেমন নিজেদের বাঁচাতে হবে তেমনি অন্যকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে।
যে কারণে ঈদে মিলাদুন্নবি পালন করা যাবে না
প্রথমত ইসলাম পরিপূর্ণ ধর্ম। কোরআন ও হাদিসের কোথাও ঈদে মিলাদ পালন করতে বলা হয়নি। রাসূলে কারিম (সা) এর সাহাবায়ে কেরাম বা তাবেয়িনগণ কখনো এটা পালন করেননি। তাই এটা বেদআত ও গোমরাহি।
রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, “আমাদের এ ধর্মে যে নতুন কোন বিষয় প্রচলন করলে তা প্রত্যাখ্যাত হবে।
” (বুখারি ও মুসলিম) তিনি আরো ইরশাদ করেন, “সাবধান ! ধর্মে প্রবর্র্র্তির্ত নতুন বিষয় থেকে সর্বদা দূরে থাকবে। কেননা নব-প্রবর্তির্ত প্রতিটি বিষয় হল বেদআত ও প্রতিটি বেদআত হল পথভ্রষ্ঠতা। ” (আবু দাউদ, তিরমিজী, ইবনে মাজা, মুসনাদে আহমাদ) দ্বিতীয়তঃ ঈদে মিলাদুন্নবি হল খৃস্টানদের বড় দিন, হিন্দুদের জন্মাষ্ঠমী ও বৌদ্ধদের বৌদ্ধ-পূর্ণিমার অনুকরণ। ধর্মীয় বিষয়ে তাদের আচার-অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করা ঈমানের দাবি। অথচ ঈদে মিলাদ পালনের মাধ্যমে তাদের বিরোধিতা না করে অনুসরণ করা হয়।
তৃতীয়তঃ সর্বসম্মতভাবে ১২ রবিউল আউয়াল নবী আকরাম (সা) এর ইন্তেকাল দিবস। এতে কারো দ্বিমত নেই ও কোন সন্দেহ নেই। এ দিনে মুসলিম উম্মাহ ও সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর রাসুল (সা) এর ইন্তেকালের শোকে পাথর হয়ে হয়ে গিয়েছিলেন। এসব জেনে-শুনে ঠিক এ দিনটিতে ঈদ তথা আনন্দ-উৎসব পালন করা চরম বেঈমানি ও নবীর শানে বেয়াদবি ভিন্ন অন্য কিছু হতে পারে না।
চতুর্থতঃ মিলাদুন্নবী পালন করে অনেকে মনে করে নবী কারিম (সা) এর প্রতি তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য আদায় হয়ে গেছে।
তাই তারা রাসুলে কারিম (সা) এর সিরাত ও আদর্শের প্রতি কোন খেয়াল রাখেন না। বরং তারা সিরাতুন্নবী নামের শব্দটাও বরদাশত করতে রাজি নয়।
পঞ্চমতঃ আল্লাহ ও তার রাসুল (সা) কর্তৃক নির্ধারিত ইসলামের দু’ ঈদের সাথে তৃতীয় আরেকটি ঈদ সংযোজন করা ইসলাম-ধর্ম বিকৃত করার একটা অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।