হারতে শিখিনি কোনদিন । হারবও না ।
প্রতিদিন সকাল হতেই চলে আসি মাঠটাতে। খুব বড় মাঠ। দু-একটা বড়-সড় ফুটবল লীগও হয়েছিল মাঠটাতে।
তাই মাঠটা এলাকার মানুষের সকাল বেলার হাটা-হাটির উত্তম জায়গা।
এতে নাকি স্বাস্থ্য ভাল থাকে। রোগ ব্যাধি কম হয়। সকালের আবহাওয়ার নাকি এমনই গুন। কথাটা অবাস্তব নয়।
তাই অন্য সবার মতো আমিও প্রতিদিন এখানে এই মাঠটাতে আসি হাটা-হাটি করার জন্য। আর সকাল বেলা হাটা-হাটি করতে গিয়েই দেখা হল লোকটার সাথে। অনেক দিন ধরে তিনি সকাল হলেই চলে আসেন গাছ তলায়।
চোখে কালো সানগ্লাস । সাথে আরো অনেক লোক বসা থাকলেও কারো সাথে কোন কথা বলেন না কোন সময় ।
বলার প্রয়োজন মনে হয় বোধ করেন না।
সাথের লোকদের সাথে টুক-টাক দু-একটা কথা বলতেও কোন দিন দেখিনি আমি। আর শালার মানুষেরা এত বজ্জাত যে পাথরের মত বসে থাকা লোকটাকে মানুসিক রোগী ভেবে দু-একটা কথাও জিঙ্গেস করে না।
প্রয়োজন মনে করে না।
আসলে তাদের আসল ঘটনা জানা উচিত ছিল।
তবেই না বুঝত কেন লোকটি প্রতিদিন লাঠি হাতে এখানে বসে থাকে।
আমি একদিন ঠিকই সামনে গিয়ে জিঙ্গেস করলাম –এই যে আংকেল,রাগ করবেন না ,প্লিজ। আমি আপনাকে একটা কথা জিঙ্গাসা করতে চাই,রোজ-রোজ আপনাকে এখানে বসে থাকতে দেখি ।
অন্য সবার থেকে আপনি আলাদা।
কারো সাথে আপনি কথা বলেন না।
গল্প করেন না।
হাটা-হাটিও করেন না। কারন টা কি?
পাথর হয়ে যাওয়া লোকটা নড়ে-চড়ে উঠলেন-
‘–বাবা,কারন টা যে অনেক কঠিন। হৃদয় বিদারক। এই যে দেখছনা চোখে সানগ্লাস এটি সরালেই দেখতে পাবে আমার চক্ষু নেই।
এই দুনিয়ার কোন আলো আমার চোখ দুটো দেখতে পারে না। কিভাবে পারবে আমি যে অন্ধ। কিন্তু আমি জম্মগত অন্ধ নই। এর পেছনে করুন ইতিহাস রয়েছে। ’
আমি কৌতুহলী হয়ে উঠলাম।
সাথে সাথে জিঙ্গাসা করলাম -কিভাবে আপনি অন্ধ হলেন ।
তিনি আবার নড়ে-চড়ে বসলেন।
‘ইতিহাস অনেক করুন।
আমি ছাত্রবেলায় খুব ভাল ছাত্রও মেধাবী ছিলাম। মেট্রিকে স্টার তারপর যেদিন আই.এ পরিক্ষার আমার শুরু হল ।
ঠিক সেই সময়ের কথা।
আমার দু-চোখে বালু ঢুকে পড়ল। না বুঝে বালু বের করার জন্য ভন্ড কবিরাজের কাছে গিয়েছলাম। ব্যাস ,তাতেই দু-চোখ অন্ধ হয়ে গেল।
ব্যাস,সব শেষ।
সব শেষহয়ে গেল আমার। পরীক্ষা । ভাল প্রস্তুতি।
তারপর ভাল রেজাল্ট করে ভাল চাকরি -বাকরির আশা । কোনটাই হল না।
অন্ধকার চোখের সামনে আমার সবই অন্ধকার। অন্ধ হওয়ার দরুন বিয়েও করিনি। এভাবেই বেচে আছি।
জীবন টা অসহ্য। হ্যা,অনেক অসহ্য।
বলতে বলতেই তিনি কান্নায় ভেংগে পড়লেন। অতঃপর কান্না থামিয়ে বললেন-২০ বছর ধরে নরক যন্ত্রনা ভোগ করছি ।
অন্ধ হওয়ার জ্বালা শুধু আরেক জন অন্ধ ই অনুধাবন করতে পারবে।
অন্য কেউ নয়।
মৃত্যুর জন্য আমি অপেক্ষা করছি।
আমি জানি অন্ধদের মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।
বলেই তিনি চলে গেলেন। আর কোন দিন আর এলেন না। হয়তো এতদিনে উনার অপেক্ষার প্রহরের সমাপ্তি ঘটেছে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।