আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অলস গল্পকারের 'শাংরি-লা' (নিতান্তই ব্যক্তিগত পোস্ট)

মাথায় অনেক গল্প আসে; কিন্তু লেখার মত পর্যাপ্ত ধৈর্য-শ্রম-অধ্যবসায় নেই। গল্পগুলোকে তাই ছোট করে কবিতা বানাই.... বাড়ি এবং বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। কাজের সূত্রে বর্তমান ঠিকানা ময়মনসিংহের ভালুকায়। অফিস ডর্মিটরি'র একচিলতে কামরায় নিজের মত এলোমেলো থাকি। আমার নিজের 'শাংরি-লা'য়।

মাথার কাছের ওই জানালা থেকে দেখা সকালবেলার দৃশ্য কথা বলার দূর্বলতা আর মিশতে পারার অক্ষমতার কারণে আমার অনেক অনেকটা সময় কাটা হয় বইয়ের মাঝে ডুবে থেকে। আমার বেশিরভাগ বই-পত্র যদিও বাড়িতে, তবে আজ রুম গুছাতে গিয়ে দেখি এখানেও কখন যেন বেশ বড় একটা কালেকশন হয়ে গেছে ! আজ শুধু ছবি দিয়ে যাব, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কিছু মানুষের অসাধারণ সব কীর্তির মাঝে ডুবে থাকার আনন্দটা ভাগাভাগি করব। আপনার হিংসা-টিংসা লাগলে সেটা আপনার সমস্যা ! ইদানিং চিত্রকলা নিয়ে কিছু পোস্ট করছিলাম; স্বাভাবিকভাবেই চিত্রকলা নিয়ে কিছুটা পড়ালেখাও করেছিলাম। আমার "École des Beaux-Arts" (স্কুল অফ ফাইন আর্টস) কিছু ফিকশন, কিছু ক্লাসিক~ ইতিহাস পড়তে মাঝে মাঝে ভালই লাগে; তবে বেশ অনেকদিন পড়া হয় না। তাই এই বিষয়ের বেশিরভাগ বই-ই বাড়িতেই রয়ে গেছে।

হাতের কাছে যে ক'টা আছে ~ কবিতায় ~ আর খুব ভাল লাগার একটা বিষয় হল পুরাণ কাহিনী এবং প্রাচীন সব দর্শন ! প্রিয় একটা বিষয়ের ওপর প্রিয় একটা বই~ ইল্যুসন-ডিল্যুসন নিয়ে বেশ কিছুটা পড়লেও, সাইকোলজিতে আমার সবচেয়ে প্রিয় বিষয় হচ্ছে 'ঘুম আর স্বপ্ন' ! ডিল্যুসনের মত নির্দিষ্ট কিছু মানুষ নয়, বরং 'স্বপ্ন' এমনটা একটা জিনিস যাতে আমরা সবাই আক্রান্ত ! এ নিয়ে পড়ার ইচ্ছেটা তাই প্রবল ছিল সবসময় ! সবটা মিলে আমার ছোট্ট স্বর্গ 'শাংরি-লা'র ভয়ানক চিত্র ! এছাড়া 'উত্তরাধিকার', 'কালি ও কলম', 'মহাকাশ বার্তা' - এসবের বেশ ক'টা সংখ্যা, কিছু সায়েন্স ম্যাগাজিন, অকাডেমিক বই আর কয়েকটা ঈদ-সংখ্যার ছবি আর দিলাম না। সবশেষে অলস গল্পকারের নোটবুক আর স্কেচবুক~ এই ডায়েরি নিয়েও ছোট্ট একটা কাহিনী আছে। ব্লগে কখনও কোথাও বলেছিলাম, আমার কবিতা ব্লগ ছাড়া কোথাও লিখে রাখা হয় না, হাতের কাছে কাগজ না পেয়ে অনেক সময় কবিতা হারিয়ে ফেলি। আমাকে পুরোপুরি হতবাক করে দিয়ে ব্লগের এক আপু এর কদিন পরেই এই ডায়েরি দিয়ে গেলেন। কোনও রকম পূর্ব পরিচয় ছাড়া, শুধু আমার লেখা চালিয়ে যাওয়ার উৎসাহ দিতেই কেউ এমনটা করে বসবে, ব্যাপারটা আমার জন্য ছিল অভাবনীয়।

এই সমস্ত বইপত্রের মাঝে আমার সবচেয়ে প্রিয় বইটা'র কথা আলাদা করে বলি - জীবনানন্দের "রূপসী বাংলা"। দেশাত্মবোধ বা ইত্যাদি কারণে নয়, বইটার প্রতি অসীম ভাল লাগা শুধু এর কাব্যগুলোর জন্যই ! আমি যখন যেখানে, যে শহরে বা যে দেশেই যাই - "রূপসী বাংলা" সবখানে আমার সাথে থাকে। এই বইয়ের কবিতাগুলো পড়ার সময় আমার চোখ আর মনের সামনে ক্রমাগত একটা পরিবেশ সৃষ্টি হতে থাকে; রোদেলা দিনেই এই বই পড়ে আমি আষাঢ়ের ভেজা সবুজ-বাংলার ঘ্রাণ পাই; আশ্বিনের রোদ্দুর, কার্তিকের পূর্ণিমা, পৌষের সন্ধ্যা - সব সব যেন এই বইয়ের মাঝে অটুট অবস্থায় ঢুকে বসে আছে ! এমন সব কবিতা একটা মানুষ কিভাবে লিখে গেল? অতশত জানিনা এবং জানতে চাই না; আমি শুধু মুগ্ধ বিস্ময়ে পড়তে থাকি। রাতজাগা অনেকেই আছেন, জানি। চান্নিপশর রাত দেখা মানুষেরও অভাব নেই, কিন্তু আপনারা কে কে 'তারা' দেখতে বসেন, হাত তুলুন তো? আচ্ছা, হাত তুলতে হবে না, আমি দেখতে পাব না।

যা বলতে আসলাম, 'তারা পরিচিতি' বইটা আমার সামনে এক বিশাল মহাবিশ্বকে খুলে দিয়েছিল। 'চাঁদ' নামের হতচ্ছাড়া রোমান্টিক উপগ্রহ'টা ছেড়ে আমি অসাধারণ সব নক্ষত্র দেখতে শিখেছিলাম এই বই পড়ে। আর্দ্রা, সুনীতি বা কৃত্তিকামন্ডলের তারাগুলোর দিকে তাকিয়ে রাত গাঢ় হয়ে যেত ! অনেকক্ষণ তাকালে ধীরে ধীরে বোঝা যেত পরশুরামের এক হাতে কুঠার, অন্য হাতে রাক্ষসী'র ছিন্নমস্তা। যে তারা'টা রাক্ষসীর মাথা নির্দেশ করে, বাংলায় সেই তারাটার নাম 'মায়াবতী' ! কী আজব ! রাতের আকাশ আরও আজব, আরও অনেক বিস্ময় নিয়ে বসে আছে সারাটাক্ষণ ! আপনারা যে যেখানেই থাকেন, ওখানে বসেই রাতের আকাশ দেখার আমন্ত্রণ দিলাম; অনেক দূরে থেকে আমিও চোখের তারায় নক্ষত্রচারী হয়ে বসে আছি। মাঝে মাঝে গিটারটা নিয়ে প্রিয় গায়ক Knopfler-এর সুরে গুনগুন করি - "There's a diamond in the sky Our evening star - In our 'Shangri-la'..." এসব সময়ে আমার চোখে হঠাৎ হঠাৎ জল এসে যায়... অনর্থক।

 ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।