ওরে ভয় নাই আর, দুলিয়া উঠিছে হিমালয়-চাপা প্রাচী! গৌরীশিখরে তুহিন ভেদিয়া জাগিছে সব্যসাচী! আমরা তিনজন । অলস দেহে হাঁটিতে হাঁটিতে টিকেট কাউন্টারের দিকে অগ্রসর হইলাম । টিকেট কাউন্টারে
বিশাল বড় লাইন দেখিয়া আক্কেলে হেঁচকা টান পড়িল ।
বন্ধু 'র' এর মাতাকে "মহিলা ও প্রতিবন্ধী" টিকেট কাউন্টারে দাঁড়া করাইয়া তামাশা দেখিতে লাগিলাম ।
পেছন পানে তাকাইতে আক্কেলে পুনরায় হেঁচকা টান পড়িল ।
নয়া এক প্রকান্ড চিকামারা । উহাতে রেলের নব টিকিট মূল্য !
একি ! টিকিটের দাম যে দ্বিগুণ হইয়া গিয়াছে । তামাশা ছাড়িয়া দৌড়াইয়া চাচীআম্মার নিকট গিয়া নয়া ভাড়া অনুযায়ী অর্থ দিয়া
আসিল বন্ধু "র" । অতঃপর কতক সময় রেল মন্ত্রলানয়ের আঠেরো গোষ্ঠীর নাম উদ্ধার করিলাম গালি পারিয়া , যে উহারা কি কারণবশত
টিকিটের এই অনাবশ্যক মূল্যবৃদ্ধি ঘটাইয়াছে !
যাহা হউক , যথাসময়ের কিঞ্চিৎ পূর্বে চাচীয়াম্মা টিকিট লইয়া ফিরিয়া আসিলেন । তিন তিনটি টিকিট ।
কি মনোরম !
অথচ সিট নং এর স্থানে এ কি লেখা ! সিট নাই !!
আক্কেলে আরো একবার হেঁচকা টান পড়িল ।
এই বেলা ৬ নং প্লাটফরমের নিকট চলিয়া গেলাম । রেলগাড়ি ঝকফকের সময়জ্ঞান দেখিয়া মুগ্ধ না হইয়া পারিলাম না ।
উনি সময়মতোই আসিয়া বসিয়া রহিছেন ।
চাচীয়াম্মা আবার বসিয়া ছাড়া যাইতে পারিবেন না ।
কিন্তু এ আন্তঃনগর ট্রেনে উনাকে যে কেহ সিট ছাড়িয়া দিবেন না
সে কি আর আমরা বুঝিনে?
ফলস্বরূপ আমরা বুদ্ধি খুঁজিয়া পাইলাম । আমরা পাইয়াছি না বলিয়া চাচীয়াম্মা বুদ্ধি বাতলাইয়া দিলেন বলিলেই শুদ্ধ হয় ।
আমরা চলিয়া গেলাম খাবার বগির পানে ।
বন্ধু 'র' সাদা উর্দিওয়ালা এক ওয়েটার মামাকে ধরিল । মামা ইশারা ইঙ্গিতে যাহা বুঝাইল তাঁহার সারমর্ম এই যে, " আমাকে একটা
ভালো অঙ্কের অর্থ দাও ,আমি তোমাদিগের তিনজনার বসিবার ব্যবস্থা করিব ।
জনপ্রতি পঞ্চাশ মুদ্রায় মামা মশাইয়ের সহিত রফাদফা হইল ।
মামা মশাই কোথা হতে পেলাস্টিকের কার্টন আনিয়া তিনখানা সিট বানাইয়া দিলেন । মামা মহাশয়ের স্থাপত্য কর্মের সহিত পচা খাদ্যের দুর্গন্ধ আমার আক্কেলকে নাড়াইয়া দিয়া গেল ।
যাহা হউক , রহিলাম বসিয়া ।
বৃহস্পতিবারের খবরের কাগজের পাশাপাশি বিশাল বিনুদুন পাতায় চোখ বুলাইতে লাগিলাম চোখ সার্থক করার নিমিত্তে ।
চাচীয়াম্মা মুখে কেবল পান ঢুকাইয়াছেন এমতাবস্থায় অতিকায় দেহের এক হাম্পটি ডাম্পটি সাহেব আসিয়া আর্তনাদ করিতে লাগিলেন ।
মামা মহাশয়কে ধরিয়া আচ্ছা করিয়া ঝাড়ি দিয়া কহিলেন , " পাইয়াছ কি ? যাহাকে তাহাকে খাবার বগিতে উঠাও কি নিমিত্তে ? বেতন পাহ না ?"
মামা মহাশয়ের টগবগ টাগুর মাগুর মুখখানা রক্তিম হইয়া উঠিল । উনি আমাদিগকে কহিলেন ," আপনারা পাশের বগিতে যান । "
অতঃপর কাছে আসিয়া ফিসফিস করিয়া কহিলেন , " স্যার রেল হইতে নামিলেই আপনাদের ডাকিয়া দিব "।
আমরা নিরীহ মনে পাশের বগিতে আসিয়া বসিলাম ।
মিনিট পাঁচেক অতিবাহিত হওয়ার পর লক্ষ্য করিলাম , " আমার পাশে যিনি বসিয়াছেন তাঁহার হস্তের টিকিটখানা আমার দিকে মুখ
তুলিয়া চাহিয়া আছে । উহাতে সিট নাই ! সামনের ভদ্রলোককে জিজ্ঞাসা করিলাম উনি টিকিট কাটিয়াছেন কিনা । উনি কহিলেন
টিকিট কাটিয়াছেন সিট নাই । মিনিটখানেকের মধ্যে আবিষ্কার করিলাম এই বগির কাহারো টিকিটেই সিট নম্বর নাই !
কিঞ্চিৎ পর যাহা আবিষ্কার করিলাম তাহা হয়ত কলম্বাসের আবিষ্কারকেও হার মানাইল ।
এই বগির যে কোন অক্ষরই নাই ।
ইহা এক্সট্রা কম্পারটমেন্ট । অতএব ইহার আবার সিট নাম্বার কিসে । আমরা তিনজন যে বসিয়া আছি উঠাইবার কেহ নাই ! সিট কেহ ক্লেইম করিবে না !! কাহারো সিট থাকিলে তো ক্লেইম করিবে !!!!!
আহা কি আনন্দ জাগিয়া উঠিল । কিন্তু মামা মহাশয় ! !
চাচিয়ম্মা বন্ধু 'র' কে ডাকিয়া কহিলেন , " টাকা ফেরত লইয়া আস । "
আমরা চিন্তার জাঁতাকলে পড়িয়া ভাবুক হইয়া পড়িলাম ।
কি করিয়া টাকা ফেরত লইয়া আসা যায় !
মামা মশাইকে গিয়া কহিলাম , " মামা, যাইব না তোমার খাবারের বগির সাথে । টাকা ফেরত কর । "
মামা বিস্মিত নজরে কহিলেন , " এত সুন্দর ব্যবস্থা রাখিয়া আপনারা যাইবেন না ! এ হয় নাকি ?"
আমরা কহিলাম," ইহাই হইয়া থাকে । "
প্রপঞ্চিত দৃষ্টিতে মামা টাকাখানি ফেরত করিলেন ।
আমরা গিয়া চাচিয়াম্মার পাশে বসিয়া পরিলাম ।
মাস পাঁচেক সেই বিকেলে আমরা বিনা সিট নম্বরেই সিটে বসিয়া
আসিলাম কোনরূপ ধলাই-খলাই ব্যতিরেকেই ।
পুনশ্চঃ পূর্বে এবং পশ্চাৎকালে আরও বহুবার আসিয়াছি এরূপ টিকিটে সিট নাম্বার ব্যতিরেকেই সিটে বসিয়া । সে কথাসমূহ হয়ত আরেকদিন হইবে ।
পুনশ্চ ২: নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির পার্শ্ববর্তী এক ওজন-উচ্চতা মাপিয়ের নিকট ডিজিটাল যন্ত্রে পাঁচ টাকা খরচপূর্বক উচ্চতা-ওজন মাপাইয়াছিল গত মাসে ।
এই সপ্তাহে মাগাইলাম আবারো ওনার নিকট ।
ওজন দুই কেজি কমিয়াছে । উহা সমস্যা না । সমস্যা হইল উচ্চতা এক ইঞ্চি কমিয়াছে । কিছুই পাইশতে পারিতেছি না ।
পুনশ্চ ৩: আজকাল যুবসমাজের মধ্যে ধর্ষণের মনস্তত্বের প্রকোপ দেখিয়া মনে আশা জাগে , যদি মানুষ উভলিঙ্গ হইত কি ভালোই না হইত ।
ধর্ষণ করিবার ইচ্ছা হইলে নিজেরে করিতো । আফসোস ............ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।