পাঠকদের কি হামিমের কথা মনে আছে??রাস্তার উপর উপুড় হয়ে পড়ে আছে ৫ বছরের একটা ছেলের নিথর দেহ,সাদা চাদর দিয়ে ঢাকা...ঠিক পত্রিকার প্রথম পাতায় ছবি। সে দিন পত্রিকায় দেখলাম হামিমের পরিবার রাস্তায় মানব বন্ধনে দাঁড়িয়ে-ঠিক ধরেছেন,বিচার পায়নি তার পরিবার। সড়ক দূর্ঘটনা নাকি খুন??এরপরও আমরা তারেক মাসুদ,মিশুক মুনিরকে হারিয়েছি,৪০ জন ছাত্রের মৃতদেহ দেখেছি-সেই ছোট্ট হামিমকে কি মনে থাকে??তারেক মাসুদরা মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ছিলেন,তাই শেষ পর্যন্ত চালক ধরা পড়েছে। এর পর কিন্তু এক দিনে ১২ জন নিহত হওয়ার মত ঘটনাও ঘটেছে-কেও একটা টু শব্দও করেনি। তাহলে কি দাঁড়াল??এদেশে তারকা হওয়ার পরও আপনার বেচে থাকার কোনও নিশ্চয়তা না থাকলেও আপনাকে গাড়ি চাপা দিলে চালক ধরা পরতে পারে!! কিন্তু হায়!!সেই চালককে জামিন দেয়ার জন্যও ধর্মঘটের কথা শুনেছি!!কই?বিরোধী দলতো সেদিন চালকের বিচারের জন্য হরতাল ডাকেনি??কেও এভাবে রাস্তায় পিষে মারার বিচারের জন্য মিছিল করেনি?-বোকার মত প্রশ্ন;এসবে কি ফায়দা আছে না কোন ইস্যু আছে?তাই এ কথা কেও বলেনা।
বকর হত্যার কথা মনে আছে??মনে আছে-সেই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রের কথা??যার লাশ পাওয়া যায় ম্যানহলের ভেতর??-সে ছবিও পত্রিকার প্রথম পাতায় আসে। কিন্তু কেও বলেনি এই নোংরা ছাত্র রাজনীতি(পড়ুন “সন্ত্রাস”) নিষিদ্ধের কথা। কারন দল ক্ষমতায় গেলে দুই দলের হায়নারাই টেন্ডারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে!!-আর কিছু হলে ভাষা আন্দোলনের দোহাই তো দেয়াই যাবে!!
মনে পড়ে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার কথা??সেই ফাঁসির আসামীকে ক্ষমা করা হয় যার অপরাধ আদালতে প্রমানিত। সে দিন বিরোধী দল তো হরতাল ডাকেনি??কি করে ডাকবে তাদের সময়ও যে রাষ্ট্রপতির ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিই ছিল-আর সেই পানি পড়া পেয়েছিল ২০ জনের মত সৌভাগ্যবান “যুবরাজ”!!কোন মুখে আর প্রতিবাদ করব?তাই কথিত বুদ্ধিজীবিদের(এই শ্রেনীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে)কাছ থেকে দাবি উঠল,এভাবে যাতে রাজনৈতিক ফায়দা কেও না তুলতে পারে তার জন্য আইন সংশোধন করা হোক-কিন্তু সে কথা সবাই ভুলেই গেছে,এখন আর কেও বলে নাহ।
ছয় ছাত্রকে পশুর মত পিটিয়ে মারা হল-সবাই আক্ষেপ করল।
এক সময় জানা গেল মাদক সাম্রাজ্য সেখানে;স্থানীয় সন্ত্রাসীরাই ওদের মেরেছে,হাত ছিল পুলিশেরও-জানি না বিচার পেয়েছে কিনা সেই পরিবারগুলো। এক যুবককে পুলিশ ডাকাত সন্দেহে স্থানীয় লোক জনের হাতে তুলে দিল-আর জনতা পিটিয়ে মেরেই ফেললো তাকে!!!সেই পুলিশের বিচারের কথা কেও বলেনা-সেই মায়ের কান্নাও কেও শোনে না। ঘটনা এখানেই শেষ হতে পারত,আমরাও কপাল চাপড়াতে ভুলে যেতাম কিন্তু লিমন,কাদের এর মত যথাক্রমে “সন্ত্রাসী” আর “চাঁদাবাজ”এর কারনে আবার সাংবাদিকদের দুটো রিপোর্ট বেশি তৈরি করতে হল-আমি ভাবছি সবাই কি এই দুজনের মত ভাগ্যবান হয়??কত জনের রিপোর্টই তো আর তৈরি হয় নাহ!!হয়তো তাদের মা গিয়ে ছেলের লাশ নিয়ে বাসায় ফিরে আসেন-দরজা বন্ধ করে কাঁদেন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ছিল সময়ের দাবি-আর এ সরকার ছাড়া যে সে বিচার কেও করত না-তা জনগন জানে বলেই ভোট দিয়েছে আপনাদের। দেশ স্বাধীন না হলে আজ হয়তো “ছোরে কি আঁখও ম্যায় নেশা...” গান শুনতাম, “কায়েদ দিবস” পালন করতাম।
এত বড় মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার হচ্ছে-ভাল কথা। ৪০ বছর পর,এখন দেশে কি হচ্ছে তাও দেখা উচিত নয় কি??আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে খুব ভাল যাচ্ছে না তা বোঝার জন্য সমাজবিজ্ঞ্যান পাঠ করতে হয়না!!
“বিরোধী দলকে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না”-খুব ভাল কথা। কিন্তু পর পর ২ দিন স্বর্নের দোকানে ডাকাতি,দৈনিক ৫ খানা হত্যাকাণ্ড, একই শেয়ার বাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের প্রতীকী জানাজা আর জনৈক “দরবেশ” এর ২০ টাকার শেয়ার ১৯০ টাকায় বিক্রি হওয়া-যে নৈরাজ্জ্যের লক্ষন সেই জ্ঞ্যানও সমাজবিজ্ঞ্যান পাঠ না করিয়াই পাওয়া যায়!!-এবং খুব ভাল করিয়াই পাওয়া যায়।
“গনতন্ত্র”- ইহা এক খানা ধারনার নাম। কিন্তু আজ সকালে তার চার রাঙ্গা ছবি ছাপা হয়েছে!! একটি রক্তাক্ত লাশ পুলিশ ভ্যানে উঠানো হচ্ছে-ছবির পটভূমি “গনমিছিল”।
কাল নিহত হওয়া ৪ জনের ২ জনই রিকশাচালক,শুনেই মনে হল “ওই দুটো পরিবারের কি হবে??” এর আগেও বিডিআর হত্যাকাণ্ডের দিন সকালের গোলাগুলিতে ১ জন রিক্সা চালক আর ১ দোকানি মারা যায়-সে কথা মনে আছে??এখন আর কেও সে কথা বলে না...আপনারা মারামারি করেন সাধারন মানুষ মরে......কিসের রাজনীতি করেন আপনারা?? ধীক্কার ধীক্কার!!
এ সব কথা কেও বলে না,এত কষ্ট আর লাশের ভিড়ে এত কিছু কি মনে থাকে??যে দিন ১৪ কোটি লোক (বাকি ২ কোটি মানুষ কি বিদেশি সাহায্য??আদমশুমারিতেও ভেজাল!!) এই প্রশ্নগুলো করবে,এই কথা গুলো বলবে সে দিন ভেবে নেব-আমরা নতুন নেতৃত্বকে গ্রহন করার যোগ্য হয়েছি। তার আগ পর্যন্ত আমাদের ভাগ্য ফেসবুক শেয়ার,ব্লগ লিখার মধ্যেই আটকে থাকবে-রাজপথে নামবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।