.
.
.
.
.
.
.
.
.
তাঁর নাম রাগীব আলী। এই মানুষটি এসময়ে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ দানবীর।
শতাধিক- স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, ব্যাংক,সহ প্রতিষ্টা করেছেন
অনেক মানবিক উদ্যোগ।
বাংলাদেশে এমন যদি আরও কিছু মানুষ জন্ম নিতেন.........
==========================================
দানবীর রাগীব আলী //
দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ
মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ ১৭৫৭ সালে পলাশীতে নওয়াব সিরাজ উদ্দৌলার সেই শোচনীয় প্রতারণামূলক পরাজয় থেকে ১৯০৫ সালে এ দেশের বাঙালি মুসলমানদের জীবনের নানা ক্ষেত্রে অভ্যুত্থানমূলক কালকে তাদের নবজীবনের সূচনার ইঙ্গিতবাহী কাল বলে চিহ্নিত করেছেন। এ কালেই অবিভক্ত বাংলাদেশের সুবিখ্যাত দানবীর হাজী মোহাম্মদ মহসিন (১৭৩২-১৮১২ইং) জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর দানের কথা আজ বাংলাদেশ তথা সর্বত্র সকলেই নির্দ্বিধায় গ্রহণ করেন। এ কালেই নওয়াব আব্দুল লতীফ (১৮২৩ জন্ম) ১৮৬৩ সালে এ বাংলাদেশই মুসলিমদের নবজাগরণের জন্য তার সুবিখ্যাত Mohamedan Literary Society কলিকাতাতে প্রতিষ্ঠা করেন, বাংলাই যে অধিকাংশ বঙ্গবাসী মুসলিমের মাতৃভাষা সে বিষয়টি প্রতিষ্ঠার সূত্রপাত করেন। তিনি তৎকালীন বঙ্গীয় মুসলিম সমাজের নেতাদের ও মধ্য ভারতের তখনকার মাওলানা কেরামত আলী জৌনপুরী থেকে এ বিষয়ে সাহায্য পেয়েছিলেন। যা হোক তাঁরই প্রচেষ্টায় মাওলানা আকরম খাঁ বর্ণিত অভ্যুত্থানকে নওয়াব আব্দুল লতীফের ১৮৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত Mohamedan Literary Society-ই যে প্রকৃতপক্ষে মৌলিক ভিত্তি সে সম্বন্ধে আর সন্দেহের অবকাশ নেই। আমাদের সৌভাগ্যই বলতে হবে এ যুগে আমরা সেই দানবীর হাজী মোহাম্মদ মহসিনের উত্তর-পুরুষ হিসেবে পেয়েছি এমন এক ব্যক্তিকে যাকে-অবলীলাক্রমে এ দেশের হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের লোক তাদের শিক্ষা দীক্ষা প্রভৃতি জীবনের সকলক্ষেত্রে মহান দাতা হিসেবে পেয়েছেন।
তিনি হচ্ছেন দানবীর রাগীব আলী। এ দানবীরের কর্মজীবন শুরু হয়েছে যৌবনের প্রারম্ভে। তিনি সিলেটবাসী অন্যান্য উৎসাহী যুবকদের সঙ্গে দেশ থেকে যান গ্রেট ব্রিটেনে। নানাবিধ কারখানাতে কাজের লোক রাগীব ক’বৎসর সেখানে ব্যস্ত থাকার পর বেশ মূলধন সঞ্চয় করে সঙ্গে সঙ্গে একজন নামকরা ব্যবসায়ী হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। তদবধি সিলেট এবং ঢাকারও কোন কোন প্রতিষ্ঠানে তিনি হাজী মোহাম্মদ মহসিনের মতই অকাতরে দান করে চলেছেন।
তার এসব দানের মধ্যে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাতে দান করেছেন এবং সম্পূর্ণ নিজ ব্যয়ে এরূপ অনেক সমাজকল্যাণমূলক জনহিতকর অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন এবং এখনও তা অব্যাহত আছে। মোহাম্মদ মহসিন সম্বন্ধে ছেলেবেলায় একটা চমকপ্রদ কাহিনী পাঠ করেছিলাম। তাতে তাঁর মহৎ হৃদয়ের পরিচয় সম্পর্কে একটা সত্য ঘটনা ছিল। এক রাত্রিতে এক চোর তার হুগলীর বালাখানায় প্রবেশ করে তার ব্যবহারের জন্য রক্ষিত একটা প্রকান্ড ডেগ নিয়ে পালিয়ে যাবার সময় তাকে তিনি পাকড়াও করেন। চোর যথাসাধ্য চেষ্টা করেও তার কব্জি থেকে মুক্তি পায়নি।
তখন নিরুপায় কয়ে কেঁদে ফেলে এবং কাতর হয়ে বলে ‘আপনি হুজুর এত বড় দানবীর এ ডেগ আমি নিয়ে গেলেও আপনার বিশেষ কোন ক্ষতি হবে না। তবে আপনি এখন আমাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করলে এবং আপনার জবানবন্দিতে আমাকে দীর্ঘকাল জেলে থাকতে হবে। ’ মহসীন তখন তাকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘তোমার কোন ভয় নেই, আমি তোমাকে পুলিশের ফাঁড়ি দিয়েই নিয়ে যাবো, সেখানে তাদের কাছে সাফাই গেয়ে বলবো আমি খুব ইচ্ছা করেই তোমাকে এ ডেগ দিয়েছি। তোমাকে যাতে চোর বলে সন্দেহ করে পাকড়াও না করে সে জন্যই তোমাকে এগিয়ে দিতে এসেছি। বলা বাহুল্য তার ওয়াদা মত তিনি কাজ করেন।
সেই চোর তার এ ব্যবহারে ভালো মানুষে রূপান্তরিত হয়ে গেলো। সে ডেগ নিয়ে চলে যাবার সময় কাঁদতে লাগলো এবং বললো ‘ আমি আপনার নিকট থেকে এ ডেগ নিলাম এখন থেকে আমি আর চুরি করবো না। বাকী জীবন পরিশ্রম করে উপার্জন করবো। ’ আমাদের এ দ্বিতীয় মহসিনের পক্ষে এরূপ উদারতার কোন দৃষ্টান্ত প্রকাশ করার সুযোগ হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। হয়তো হয়েছে বা হবে।
এসব অগণিত দানের মাধ্যমে এদেশকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করার পরেও তার নিজস্ব সম্পত্তি হিসাবে যেসব সম্পত্তি রয়েছে তার মূল্যও কম নয়। বর্তমানে আমাদের দেশে তিনি ব্যতীত আরও ধনী ব্যবসায়ী রয়েছেন এবং তাদের মধ্যেও কেহ কেহ নিজ গ্রামে মেডিক্যাল কলেজ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করে এদেশের চিকিৎসার ক্ষেত্রে দেশবাসীকে অগ্রসর করেছেন। আমরা দেশবাসী এসব জীবন যাত্রা পথে সফল ব্যক্তিগণের নিকট থেকে দেশবাসীর কল্যাণ কামনার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া জানাই। আলহাজ্ব রাগীব আলী সম্প্রতি যৌবন কাল থেকে উত্তীর্ণ হয়ে প্রৌঢ়ত্বের সীমায় পৌঁছেছেন। আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন তার পূর্বসূরী হাজী মোহাম্মদ মহসিনের মত দীর্ঘায়ু লাভ করেন এবং তার মত আজীবন তার দেশকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করে যান।
আমিন।
লেখক : জাতীয় অধ্যাপক, দার্শনিক। ২০০১ সালে প্রকাশিত রাগীব আলী গ্রন্থ থেকে সংকলিত।
=======================================
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।