আমি যে কেনো কাঁদি , জন্মাবধি ! বৃষ্টি-দগ্ধ হয়ে ডুবে থাকি কারো তন্দ্রাহত দৃষ্টির গভীরে ...
১।
সমগ্র আকাশটা মেঘে ঢেকে আছে সেই বিকাল থেকে । এখন সন্ধ্যা । অন্ধকারে ঢেকে গেছে চারপাশ । টিপ টিপ করে বৃষ্টি পরছে একটানা ।
হিমেল বাতাস বয়ে যাচ্ছে , কাপিয়ে দিচ্ছে রাস্তার পাশে অযত্নে বেড়ে উঠা ছোট গাছ গুলিকে । বৃষ্টি বলেই হয়তো রাস্তায় মানুষজনও খুব একটা নেই । একটা দুটো গাড়ির হেডলাইটের আলো মাঝে মাঝে দেখা যায় শুধু । কয়েকটা সোডিয়াম বাতি জ্বলে আছে রাস্তার মোড়ে মোড়ে । এই নির্জন বৃষ্টির রাতে কেউ আশা করেনি , গত কয়েক দশকের সব চেয়ে জনপ্রিয় কবি হাসান মাহমুদ চৌধুরি , হেটে যাবেন খালি পায়ে , সবার সামনে দিয়েই ।
পথে যে দু একজন পথচারী ছিল , সোডিয়াম আলোর নিচে হাসান মাহমুদ এর ধুসর চেহারা দেখে , তাকে কেউ চিনতে পারেনি । খালি পায়ে বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় হাঁটা হাসানের বহুদিনের অভ্যাস । তাই বিকেলে যখন মেঘ করল আকাশে , হালকা বাতাস বইতে শুরু করল , হাসান বের হয়ে আসে বই মেলার দমবন্ধ করা পরিবেশ থেকে , একটু নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য । এবারের বইমেলায় তার কবিতার বই বের হয়েছে , নাম ' দি গ্র্যান্ডফাদার ক্লক ' । বের হওয়ার সময়ও অনেক পাঠক তাকে ঘিরে ধরল , অটোগ্রাফ দেওয়ার জন্য ।
অটোগ্রাফ দিতে তার কোনদিন ভালো লাগেনি , তবুও প্রকাশক এর অনুরোধে তাকে আসতে হয় । এখন অটোগ্রাফ দিতেই হবে , কিছুই করার নেই । ডজনখানেক অটোগ্রাফ দিয়ে হাসান কোনমতে ছাড়া পায় , পুলিশ এসে পরায় ।
হাসান চুপি চুপি বের হয়ে আসে চোরের মতন , রাস্তায় তার দামি নীল গাড়ি দাড়িয়ে আছে । এখানে হাটা যাবে না , মানুষ তাকে চিনে ফেলবে , ভিড় করবে ।
হাসান গাড়িতে গিয়ে উঠে ধীরে ধীরে ,-
- স্যার , কোথায় যাব ? বাসায় ? , মৃদু গলায় জিজ্ঞেস করে ড্রাইভার রহমত ।
হা হা , হাসানের হাসি পায় ভীষণ । রহমত তাকে স্যার বলে ডাকে , অথচ রহমত কি জানে এক কালে হাসানও ছিল এক ধনীর ড্রাইভার , ফয়েজ মিয়ার ড্রাইভার । ফয়েজ মিয়া ভালো লোক ছিলেন না , মোটা ভুরিওয়ালা লোক , নাকের নিচে গোঁফ । মধ্যরাত পর্যন্ত মদ খেতেন বারে গিয়ে , রাস্তায় হাসানকে গাড়ি নিয়ে বসে থাকতে হত মাঝরাত পর্যন্ত ।
মাঝে মাঝে অর্ধনগ্ন মাতাল নারীদের গাড়িতে নিয়ে বাসায় ফিরতেন ।
হাসানকে তিনি পছন্দ করতেন না । কথায় কথায় হাসানকে ধমক দিতেন , শরীরে হাতও তুলতেন মাঝে মাঝে ।
- যাও , বাসার দিকেই । ভারী গলায় রহমতকে বলে হাসান ।
সেদিন বই মেলায় ফয়েজ সাহেব এসেছিলেন , হাসানের একটা কবিতার বই কিনেন । হাসানের কাছে এগিয়ে এসে বলেন -
- স্যার , একটা অটোগ্রাফ ! চেনা কন্ঠ শুনে হাসান চমকে তাকায় , ফয়েজ মিয়াকে চিনতে তার এক মুহূর্ত দেরী হয় না । ফয়েজ মিয়া তাকে চিনতে পারেনি , চেনার চেষ্টাই করেনি , হয়তো ভাবেইনি এক ড্রাইভার কি করে এত বিখ্যাত কবি হবে !
- স্যার , আমি আপনার সব বই পরেছি , দেখুন বয়স হয়ে গেছে , তবুও আপনার কবিতা পড়া ছাড়তে পারিনি । হা হা ।
হাসান মৃদু হাসে , একটা অটোগ্রাফ দিয়ে বলে ,
- ফয়েজ সাহেব , ভালো আছেন ?
ফয়েজ চমকে তাকান , একজন বিখ্যাত কবির মুখে তার নাম শুনে কিছুটা বিহ্বল হন ।
হাসানকে তার চেনা চেনা মনে হয় , মনে হয় খুব কাছের একজন । স্মৃতি তার সাথে বেঈমানী করে । কিছু বলতে চান ফয়েজ , কিন্ত ততক্ষনে পিছন থেকে আরেকজন বিরক্ত হয়ে চেঁচিয়ে উঠে - এই যে ভাই সরে দাড়ান , অটোগ্রাফ নিতে এতক্ষন লাগে ? অনেক লোক বাকি আছে , সরে দাঁড়ান ।
ফয়েজ অনিচ্ছা সত্ত্বেও সরে দাঁড়ান , বিড় বিড় করে কিছু বলতে থাকেন । হাসান তৃপ্তির শ্বাস ছেড়ে মনে মনে ভাবে , জীবনে সে সব কিছুই পেয়েছে ।
নাম , যশ , খ্যাতি সব । আর কি লাগে এক জীবনে ?
২।
নীল সেডানের কাঁচের জানালায় বৃষ্টির ফোঁটা গরিয়ে পরতে থাকে ধীরে ধীরে , অস্বচ্ছ কাঁচের ভিতর দিয়ে বাইরের নিয়ন আলোর বাতিকে কেমন ঝাপসা লাগে হাসানের চোখে । মুগ্ধ দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একটা কবিতা মনে আসে , ঝট করে কাগজ বের করে লিখতে শুরু করে –
মৌমিতা , দেখ , সোডিয়াম রোদের
এই বাদলের রাতে
তোমার জন্য এনেছি চেয়ে –
চারটি রঙ্গিন গোলাপ ,
ম্যাপলের কতক পুরনো পৃষ্ঠা ,
যেখানে পড়েছে কোন এক ,
প্রাচীন কবির নিনাদ মায়াবী ছাপ ।
সক্রিয় তাপযন্ত্রে তোমার রুপালি দেহ -
শুকিয়ে যায় , তোমার সুডৌল বুক -
যেন পাইনের মায়াবী জলে -
বেঁচে থাকা এক অচিন পাখির শুভ্র পালক ।
হঠাৎ কবিতা লেখা থেমে যায় , ঝাপসা হতে থাকে নিয়নের বাতিগুলো , আরো গভীর , আরো নীল । হাসানের চোখ ভেঙ্গে জল আসছে , জীবনে সে সব পেয়েছে , সব । সত্যিই কি সব পেয়েছে ? তার মনে হয় , আসলে জীবনে সে কিছুই পায় নি । সব পেয়েও কিছু পায় নি , কিছুই না ।
সে মৌমিতাকে পায়নি , পায়নি তার ভালোবাসা , তার প্রেম ।
মৌমিতার কথা আজ বড্ড মনে পরছে কেন , বৃষ্টির দিন বলে ?
মৌমিতা হাসানের সাথে পড়ত , একই কলেজে । গ্রীস্মের এক প্রচণ্ড গরম দুপুরে তাদের প্রথম দেখা হয় , এক লোকাল বাসে । হাসান তখন ঘামছিল রোদে , টপ টপ করে জল ঝরছিল সারা মুখ থেকে । রোমাল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে তার চোখ যায় দাড়িয়ে থাকা এক মায়াবী মেয়ের দিকে , মেয়েটিকে সেদিন তার এত আপন মনে হয়েছিল কেন ? কেন সে দাড়িয়ে বলেছিল ,
- আপু , এখানে বসেন ।
মেয়েটিও কি অবলীলায় বসে যায় , যেন এটাই তার পাওনা ছিল ।
রাতে ঘরে ফিরে কেন বারবার মনে পড়ছিল ওই মেয়েটার কথা , সেই উজ্জল শ্যমলা মায়াবী মুখ , তা আজো জানে না হাসান । তিনদিন পর একই কলেজে মেয়েটিকে দেখে হাসান অবাক হয় । তারপর থেমে থাকেনি তাদের কথা বলা , হাসান প্রেমে পরে । কিন্ত মৌমিতা কোনদিন তার প্রেমে পড়েছিল কিনা হাসান আজো জানে না , হয়তো পড়েছিল , হয়তো না । কলেজের পরে হাসানের আর লেখা পড়া হয় নি ।
হাসানেরা ধনী ছিল না মোটেই । বাবা মারা গেছেন , এদিকে মার বড় রকমের অসুখ , টাকা পাঠাতে হবে গ্রামে , মার কাছে । তাই ফয়েজ মিয়ার ড্রাইভার এর চাকরিটা তার নিতে হয় । একদিন খবর পায় মৌমিতার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে । হাসান দেখা করে মৌমিতার সাথে , এক সন্ধ্যায় , নির্জন কফিশপে ।
জীবনের এক অমোঘ সত্যকে উন্মোচিত হয় সেদিন , তার চোখের সামনে । মৌমিতা বলে –
- হাসান , তুমি তো ড্রাইভার ! , অন্যের গাড়ি চালাও , তোমাকে আমি কিভাবে বিয়ে করব ? জীবন তো ছেলেখেলা না ! আর যার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে সে কানাডায় থাকে , বিয়ের পর আমি সেখানেই চলে যাব ।
কি সহজেই না মৌমিতা কথাগুলো বলেছিল ! হাসান চেয়েছিল নিস্পলক মৌমিতার মুখের পানে , অবাক হয়ে । সেদিন প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিল , রাস্তা ঘাট ভেসে যাচ্ছিল জলে , হু হু করে বাতাস বইছিল , আর কাঁদছিল হাসানের হৃদয় , চুপি চুপি , সকলের অগোচরে ।
তারপর হাসান আর বিয়ে করেনি ।
সে ভীষণ নিঃসঙ্গ , একা , একেকটা মৌন রাতকে তার মনে হয় একেকটা ধুসর মরুভূমি । সেই গভীর একাকীত্ব কাটানোর জন্যই তো সে কবিতা লেখে , সবাই সেই কবিতা পরে , আনন্দ পায় । কিন্ত কেউ জানে না হাসানের মনে কি গভীর কষ্ট এক , লুকিয়ে আছে হৃদয়ে ?
৩।
বাড়ির কাছাকাছি এসে হাসান মৃদু গলায় বলে ,
- রহমত , তুমি গাড়ি নিয়ে চলে যাও । আমি বাকি পথ হেটে আসছি , বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ।
হাসান নেমে দাড়ায় রাস্তায় , এখান থেকে বাড়িতে হেটে যেতে মিনিট বিশেক লাগবে , রহমতও নেমে দাড়ায় , বলে -
- স্যার , বেশিক্ষন বৃষ্টিতে ভিজলে ক্ষতি হবে । তাড়াতাড়ি এসে পরবেন ।
- চুপ , শুয়োরের বাচ্চা , তোর কাছ থেকে আমাকে শিখতে হবে ? , হাসান চেঁচিয়ে উঠে ।
তারপর হঠাৎ জোরে একটা চড় বসিয়ে দেয় রাহমতের গালে । রহমত অবাক হয়ে তাকায় ।
চড় খেয়ে যতটা না অবাক হয়েছে , তারচেও বেশি অবাক হয়েছে এক বিখ্যাত কবির মুখে এমন অশ্রাব্য গালি শুনে । আগের হাসানের সাথে এই হাসানকে সে ঠিক মেলাতে পারে না । চুপ করে গাড়িতে উঠে , তারপর চলে যায় কান্না নিয়ে ।
হাসান মনে মনে হাসে , নিজেকে খুব অন্যরকম লাগে , অনেকটা অচেনা । নিজেকে ফয়েজ মিয়ার মত লাগে হাসানের ।
রহমত জানে না , ফয়েজ মিয়ার একেকটা চড় হাসানের একেকটা কবিতার জন্ম দিয়েছিল , তখনও সে বিখ্যাত হয় নি , কোন কবিতার বই প্রকাশ পায় নি তখনও । কিন্ত হাসান লিখত , সেইসব নির্জন রাতে ফয়েজ মিয়ার জন্য বারের সামনে অপেক্ষা করতে করতে , কোন বৃষ্টির রাতে সিগারেট ধরাতে ধরাতে , চড় খাওয়ার পর তীব্র ব্যথা নিয়ে , সে লিখত নিজমনে , একা একা । ফয়েজ মিয়া নিজেও জানে না , হাসানের প্রথম বইয়ের উৎসর্গে যে ফয়েজ মিয়ার কথা বলা হয়েছে সেটা আসলে সে নিজেই । আর এই কারনেই এতো অত্যাচার এর পরেও সে ছেড়ে যায়নি ফয়েজ মিয়াকে ।
রহমত ও কবিতা লিখতে চায় , একদিন এক কবিতা দেখিয়ে ছিল হাসানকে , মোটামুটি ভালোই লিখে , দেখা যাক আজকে চড় খেয়ে কোন কবিতা লিখতে পারে কিনা সে ।
এই রাস্তা পুরোপুরি নির্জন , ল্যম্পপোস্টের হলুদ আলো বৃষ্টিস্নাত পিচের রাস্তায় পরেছে , এক অদ্ভুত মোহ সৃষ্টি করেছে চারপাশে । হাসান ধীরে ধীরে জুতাজোড়া খুলে নেয় , ফেলে দেয় ঠিক রাস্তার মাঝখানে । তারপর হাটতে শুরু করে , বৃষ্টির ফোঁটায় তার চশমা ঘোলা হয়ে যায় , তবুও সে হাঁটতে থাকে আপন মনে , তাকে যে হাঁটতেই হবে । পায়ে কাঁদা লাগে , রাস্তার পাশের ময়লা আবর্জনা এসে পরেছে পথের মাঝখানে , তার উপর দিয়েই হেঁটে চলে হাসান , খারাপ লাগেনা তার ।
৪।
এই রাস্তাই শেষ প্রান্তেই ওই কফিশপ টা , যেখানে মৌমিতার সাথে তার শেষ দেখা হয় । হাসান হেঁটে যেতে থাকে কফিশপটার দিকে । আজ এখানে বসেই শেষ করবে অসমাপ্ত কবিতাটা । দোকানের সামনে এসে হাসান একটু থমকে যায় । খোলা দরজা দিয়ে অইতো টেবিলটা দেখা যাচ্ছে , যেখানে মৌমিতা তাকে সুস্পষ্ট প্রত্যাখান করে ।
ওখানেই তো সে বসেছিল , আর সামনে বসেছিল মৌমিতা । হাসান একটু চমকে যায় , আজ থেকে বিশ বছর আগে মৌমিতা যে ভঙ্গিতে বসেছিল , ঠিক সেখানে সেই ভঙ্গিতে বসে আছে এক মেয়ে । হাসান দীর্ঘশ্বাস ফেলে , আজ আর কবিতা লেখা হবে না , জায়গা দখল হয়ে গেছে আগেই । দোকানটার শেডের আড়ালে একটু দাড়ায় সে , শ্বাস নেয় জোরে জোরে ।
আকস্মিক এক পরিচিত কন্ঠ ভেসে আসে তার পাশ থেকে , মৃদু গলায় কেউ জিজ্ঞেশ করে ,
- কেমন আছ হাসান ?
হাসানের হার্ট বিট বেড়ে যায় , দ্রুত ঘুরে দাড়ায় , অবিশ্বাসের কন্ঠে বলে ,
- মৌমিতা তুমি , এইখানে ?
মৌমিতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে একটা , মৃদু হাসে ।
হাসান স্পষ্ট চোখে তাকায় তার দিকে , সেই আগের মতই আছে মৌমিতা , কোন পরিবর্তন হয়নি তার , আগের চেয়ে একটু স্বাস্থ্য বেরেছে শুধু । মৌমিতা আবার বলে
- তুমি ভালো আছ হাসান ? কি রোগা হয়ে গেছ ! , অথচ আগে কি মোটাটাই না ছিলে !
আক্সমিক বিস্মিত ধাক্কা কেটে যায় না হাসানের , তীব্র গলায় বলে
- কি মনে হয় তোমার , মৌমিতা ? কেমন আছি আমি ? তোমার মত তো সুখে কাটেনি আমার এতটা জীবন , স্ব্যাস্থ ভালো থাকে কি করে ।
- তুমি তো এখন বিখ্যাত কবি । তুমিও খুব সুখেই আছ হাসান ।
- ভুল, মৌমিতা , ওটা ভুল , চেঁচিয়ে উঠে হাসান , - ভুল বললে , আমি মোটেও সুখে নেই ।
- কেন হাসান ?
- তোমার জন্য , মৌমিতা শুধু তোমার জন্য ।
- আমার জন্য ! মৌমিতা কেমন চমকে যায় , কেন তুমি বিয়ে করোনি ?
হাসান পাগলের মত হাসে , হাসতে হাসতে চোখে পানি এসে যায়
- না , এই জীবনে আর বিয়ে করা হবে না । আমি চিরদিন থাকব একা । নিঃসঙ্গ !
মৌমিতা বলে, - তুমি কি আমার জন্য কাউকে বিয়ে করোনি ?
হাসান মৃদু গলায় বলে
- হ্যা , মৌমীতা । শুধু মনে রেখ , তোমার চলে যাওয়াই আমাকে কবি করে তুলেছে , তাই তোমার কাছে হয়তো আমি ঋণী ।
আমার এইবারের কবিতার বই তোমাকে উৎসর্গ করেছি মৌমিতা , এবার বল তোমার কথা , কেমন আছ তুমি ?
মৌমিতার চোখে জল চিক চিক করে উঠে
- এই তো আছি একরকম ।
- তোমার স্বামী কোথায় , তোমার সন্তান । আর কানাডা থেকেই বা কবে ফিরলে মৌমিতা ?
মৌমিতা অন্যদিকে তাকায় , মুখ অন্ধকারে আড়াল করে বলে ,
- আমার ছেলে আছে , নাম রঞ্জন । কানাডা থেকে এসেছি সপ্তাহখানেক আগে ।
- আবার চলে যাবে কবে তুমি ?
মৌমিতা বলে একটু থমকে তাকায় , হু হু করে কেদে ফেলে আচমকা , বলে
– না , হাসান , আমি আর যাব না ।
আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে , ওর আর আমাকে ভালো লাগছে না ।
হাসান চমকে তাকায় , মনে মনে কি একটু খুশি হয় হাসান , মৌমিতাকে এই অবস্থায় দেখে ? তার নিঃসঙ্গ মন কি এটাই চেয়েছিল এতদিন ?
এরপর নেমে আসে দীর্ঘ নিস্তব্দতা , কেউ কোন কথা বলে না , শুধু বৃষ্টির দিকে চেয়ে থাকে , যেন কেউ কাউকে চেনে না , অপরিচিত দুজন মানুষ মাত্র । হাসানের মনে পরে সেই দিন গুলির কথা , মৌমিতা কানাডা চলে যাওয়ার পর , অসহ্য কষ্টে কেটেছে তার এক একটি দিন । বহুদিন কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলে পর্যন্ত তাকাত না । গ্রামে তার বৃদ্ধ মায়ের অসুখের কথা শুনেও সে যায় নি ।
মা মারা যায় সাতদিন পর , হাসানের ঘোর ভাঙ্গে , বুঝতে পারে কি ভুল সে করেছে । মার চিকিৎসা করার প্রয়োজন ছিল , সে সেদিকে খেয়াল করেনি , তার কারনেই হয়তো মা মারা গিয়েছিল ।
হাসান পায় নি কাউকে , পায়নি তার মাকে , পায়নি মৌমিতাকে । কিছুই পায়নি জীবনে , কিছুই না । শুধু কিছু সাদা পাতায় কলম ঘসে ঘসে লিখেছে কবিতা , তাতে কি হল ? মানুষ আনন্দ পেল , বিনিময়ে সে কিছু পেয়েছে কি ? চোখ ফেটে জল আসে হাসানের , নেমে পরে রাস্তায় , মৌমিতার দিকে ফিরেও তাকায় না , পিছন থেকে মৌমিতা ডেকে বলে ,
- হাসান , দাড়াও , আমি তোমার সাথে যাব ।
হাসান পিছনে তাকায় না । হেঁটে যায় সামনে । বৃষ্টি পরছে তো পরছেই , থামার কোন লক্ষন নেই তাতে । একটা দুটো গাড়ি মাঝে মাঝে পার হয়ে যায় সামনে দিয়ে , হিমেল হাওয়া এসে কাপিয়ে দেয় তাকে । এই রাতকে বড় রহস্যময় মনে হয় ।
হাসান হাঁটতে থাকে , হাঁটতে থাকে নিরুদ্দেশ । চোখ ভিজে উঠে হাসানের , এই জীবনকে নিরর্থক মনে হয় । কান্না ঠেলে আসে বুক থেকে , এই বৃষ্টির রাতে আজ সে কাঁদবে , কাঁদবে অঝোরে , কাঁদবে , বহুদিন বৃষ্টির সাথে কাঁদা হয় নি তার ।
********
* প্রচ্ছদ ও গল্পের কবিতা আমারই রচনা ।
গানটা শুনতে শুনতে মন্তব্য করেন ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।