শরীরে আচড়ের দাগ, নষ্ট হল বুঝি আবার মানবতা! বইমেলা-২০১২
আর কদিন পরেই আসছে মহান একুশের স্মৃতি বিজড়িত, বাংলা একাডেমী আয়োজিত আমাদের প্রাণের মেলা, অমর একুশে গ্রন্থ মেলা -২০১২। বছরের এই কটা দিন আমাদের পাঠক, লেখক এবং প্রকাশকদের জন্য অনেক আনন্দের এবং সুখের। নতুন বই এর নানা রঙের নজরকাড়া মলাট, নতুন কাগজের ঘ্রাণ, বাংলা একাডেমীর ধূলোময় প্রান্তর, বাইরে নানানতরো বিনোদনের আয়োজন, সব মিলে বই মেলা একটা পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ। এ কথা বোধহয় বললে অত্যুক্তি হবে না বইমেলা আমাদের জাতিসত্ত্বার চিন্তার খোরাক!
আমরা বাঙালিরা বিস্মৃতিপরায়ন এবং একই সাথে হুজুগে জাতি। সারাটি বছর আমরা ভুলে থাকি আমাদের দেশেও লেখক কবিরা আছেন তারা লেখেন, তারা পাঠকের কথা ভাবেন, তাদের চাহিদার কথা ভাবেন।
আর বইমেলা এলেই আমাদের মধ্যে হঠাৎ করে যেন এক অদ্ভুত চেতনার ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। আমাদের মনে পড়ে যায়, বই মেলার মত আনন্দ কোন মেলাতেই পাওয়া যায় না, বই পড়ার মত আনন্দ আর কোন কিছুতেই নেই, বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না, প্রিয়জনকে বই উপহার দিন ইত্যাদি ভারী ভারী সব কথাবার্তা। এটা বোধহয় আমাদের হুজুগে বাঙালির পরিচয়টাকে সার্থক ভাবে তুলে ধরবার জন্যই।
আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করি সারা বছর বই এর সাথে সংস্রবহীন পাঠকেরা এই বইমেলাতে এসে বাৎসরিক জ্ঞান আহরণের যে বিপুল ঘাটতি হয়ে গেছে তা উপলব্ধি করেন এবং চেষ্টা করেন পুষিয়ে নিতে। এই একমাসে গুরুপাক খাদ্যদ্রব্যের অতিভোজনের মত করে অনেক বেশি বেশি বই কিনে, তারা সামাজিক ভাবে সামাল দেনও কেউ কেউ, তবে তা শেলফের শোভা বর্ধনই শুধু করে কিনা আমরা নিশ্চিত নই।
এ সব পাঠকদের আকৃষ্টের জন্য লেখক, প্রকাশকরাও প্রতি বইমেলায় শত শত নতুন বই নবীন প্রবীন লেখকদের বের করে যাচ্ছেন নিরন্তর। আর নবীন প্রবীন সব শ্রেণীর লেখকই এমন ভাবে ফেব্রুয়ারী কেন্দ্রিক হয়ে উঠেছেন যে, এ থেকে সহসা বের হবার কোন লক্ষণ আপাতত আমরা দেখছি না।
আমার কথাগুলো পড়ে কোন মৌসুমি পাঠক আহত বোধ করবেন না দয়া করে। কারণ এই হুজুগটা আছে বলেই বই বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি বছর বই মেলা হচ্ছে।
আমার এত কথা বলবার একটাই কারণ, সেটা হল বই মেলা অপরিহার্য । পাঠককে কাঠগড়ায় তোলার আগে আমাদের লেখক প্রকাশকদের নিজেদের প্রশ্ন করা উচিত বই প্রকাশের বিষয়টি নিয়ে তারা পাঠকের দৃষ্টি বাকি মাস গুলোতে আকর্ষণ করতে ব্যর্থ কেন ? কোন প্রকার বিজ্ঞাপন হবে না, প্রকাশনা উৎসব হবে না, তবে পাঠক জানবে কি করে যে বই বের হচ্ছে ? কার বই বের হচ্ছে, কি বই বের হচ্ছে, কি তার কন্টেট ? এর পরেও যে পাঠক বই কেনে এই তো অনেক। হুজুগ তাই থাকুক আগামি বছর গুলোতেও।
আমার আশা, আমরা আগামীতে দেখব, সারা দেশে, জেলা উপজেলা শহরে বই মেলা হবে। জাতীয় পর্যায়ে বছরে তিন থেকে চারটি মেলা হতে পারে।
অন্তত দুটি বইমেলা সময়ের দাবি একটি ফেব্রুয়ারীতে এবং অপরটি সেপ্টেম্বরে কিংবা অক্টোবরে। তাতে লেখক পাঠক এবং প্রকাশকের বোঝাপড়াটা আরো সার্থক হবে বলেই বিশ্বাস।
মৌনমুখর বেলায়
বন্ধুরা, আপনারা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন বেশ কিছুদিন ধরে আমার প্রোফাইল পিকচারে অদ্ভুত অন্ধকবির মোটা মাথাটি নেই ? আর অনেকে ফেসবুক সূত্রেও জেনেছেন আমার জন্য ভীষণ আবেগের সংবাদটি! তাই আপনাদের সবার সাথে এই আনন্দ সংবাদ টি শেয়ার করবার বাসনা হল। তাই এই পোস্টের অবতারনা
বেশ কয়েকটি বছর বাংলা একাডেমী চত্বরে ডুকতেই মনে হত, এই সুন্দর মলাটের একটা বই আমার যদি থাকত! তো এই আসছে বইমেলায় শত শত নতুন লেখক কবির ভীড়ে নিজেকে শামিল করবার ইচ্ছাটা মাথাচাড়া দিয়েছিল এ বছরের শুরুতেই। একটা জোর প্রচেষ্টা নিলাম সেপ্টেম্বর মাস থেকে।
যেহেতু এ বছর পড়ালেখা শেষ করে বেড়িয়েছি তাই হাতে কিছু সময় ছিল। আল্লাহর রহমতে আর বন্ধুদের নিরন্তর ভালবাসায়। আমার চেষ্টা বৃথা গেল না।
আসছে বইমেলায় জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশন থেকে আসছে আমার কবিতার বই মৌনমুখর বেলায়। পাচ ফর্মার এই বইটির প্রকাশক মো: মোর্শেদ আলম।
বইটি পাওয়া যাবে অমর একুশে বইমেলার ১১৭-১১৮ নাম্বার স্টল, জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশন এর স্টলে। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন রাজীব চৌধুরী। আপনারা হয়ত উনাকে চিনতে পারেননি। তবে উনার আরেকটি পরিচয় আছে সেটা দিলে সবাই চিনবেন আমাদের ব্লগার নষ্ট কবি। চমৎকার এ প্রচ্ছদ করে দেয়ায় উনার প্রতি রইল কৃতজ্ঞতা।
বইটিতে মোট কবিতা আছে ৩৭ টি। এই কবিতা গুলো নির্বাচন অতি সতর্কতার পরিচয় দিতে চেষ্টা করেছি। পান্ডুলিপি চূড়ান্ত ভাবে তৈরি করার পর চারজন বোদ্ধা পাঠক আমাকে তাদের ভাল লাগা মন্দ লাগা জানিয়েছেন। এর ভিত্তিতে বই এর পাণ্ডুলিপি বদল করেছি চারবার। কেননা বইটি রচনার প্রথম স্তর থেকেই আমি চেয়েছি পাঠকেরা এর সংস্পর্শে থাকুন।
কারণ আমি বিশ্বাস করি, কবি বা লেখক কবিতা গল্প লেখেন নিজের জন্য কিন্তু বই করেন পাঠকের জন্য। দিন শেষে যে কোন বই এর সাফল্য ব্যর্থতার বিচারক আম পাঠকেরা। তাই সহজ বোধ্য এবং অনুভূতিতে নাড়া দেয়া কিছু কবিতা নিয়েই সাজিয়েছি বইটি।
বই এ যে কবিতা গুলো স্থান পেয়েছে সে গুলো হল-
মিশ্র প্রাণের সুর / স্বপ্ন আমার / স্বপ্ন পথের পথিকেরা / পরম্পরা / বিস্ময় / আমি আজ কবিতা লিখতে এসেছি / তুই / জন্ম এবং মৃতু্যু বিষয়ক / আর নেই দরকার / নষ্ট ছেলের ইতিকথা / অপঘাত / রেবতী, আমি আইতাছি এই ঈদে / রাত্রির কবিতা / বাবা / অবশেষ / আজব কান্ড / কবি ও কাকের গল্প / ক্ষমা চাই / হায় হেলেন / বিনাশের কবিতা / অন্ধকারের পরের গান /
কলম যোদ্ধা / আজ রাত্রে / কেমন আছ প্রিয়ন্তীকা ? / জানি হাত বাড়ালেই পাব না / বলে যাও- ভালবাসি / মহিমান্বিত একুশ / The Exalted Ekush / মৃত্যু / লাবনীতা / হে রুদ্র বৈশাখ / আমারে খুজে নিও / বিচ্ছুরিত বিষাদ কণা / বিষ / খড়কুটো সংসার / বিষাদ দিনের কথা / অপেক্ষা
এই কয়টি। উল্লেখ্য এখানে মহিমান্বিত একুশ কবিতাটি যেহেতু মাতৃভাষা দিবস, তথা অমর একুশের প্রেক্ষাপটে রচিত তাই আমি এটাকে আর্ন্তজাতিক রূপ দিতে চেয়েছি।
প্রিয় বন্ধুবর কবি সোহরাব সুমন আমাকে এটা অনুবাদ করে দিয়ে কৃতজ্ঞ করেছেন। শুভকামনা উনার প্রতি।
পেছনের কিছু কথা :
অনেক আনন্দের এই দিনটিতে মনে পড়ছে গত পাচটি মাসের ভীষণ পরিশ্রমের কথা। শারিরীক মানসিক নানা প্রকার ঝামেলার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। মনে পড়ছে কারো তাছিল্য, কারো চাটুকারিতা, কারো প্রতারণা এবং সেই সাথে অবশ্যই মানুষের ভালবাসা।
গত পাচটি মাস আমার সব শ্রেণীর বন্ধুরা নিরন্তর সহযোগিতা করে গেছেন এবং সেটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। বিশেষ কিছু নাম আমাকে উল্লেখ করতেই হবে।
আমি যখন ব্লগে আসি তখন নবীন তানিমের লুতুপুতু প্রেমের কবিতা পড়বার কার কী দায় পড়েছিল ? সেই সময়টাতে এত বেশি ভালবাসা পেয়েছি আমি নষ্ট ছেলে, ফাইরুজ, সায়েম মুন আর শূণ্য উপত্যাকা এই ব্লগারদের কাছে কি বলব ? এই ভালবাসাই আমাকে লিখতে সহায়তা করেছে প্রথম দিনগুলোতে।
আর এর পরে যখন একটু পরিচিত হলাম তখন শাহেদ খান, স্বদেশ হাসনাইন, হানিফ রাশেদীন, সাইরাস হেলাল, জিসান শা ইকরাম, সুপান্থ সুরাহী, হাসান মাহবুব, ইসরা, শোশমিতা, রেজওয়ানা, মাহজাবীন জুন রেগুলার তাদের কমেন্টের সাথে দিয়েছেন মূল্যবান সাজেশন। আমি ভীষণ উপকৃত তাদের কমেন্টে।
হয়ত আজ বই বের করবার চিন্তাই করেছি তাদের মতামতের জন্য।
আর এর পরে থাকল এখনকার বন্ধুরা যারা নানাভাবে আমাকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। ব্লগে পোস্ট করাই কমেন্টের জন্য, ভাল পরামর্শ সহ সমালোচনার জন্য। পাঠক বন্ধুরা আমাকে ধন্য করে যাচ্ছেন নিরন্তর। এই ভালবাসার কোন বিনিময় হয় না।
আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আলাদা করে কোন নাম লিখলাম না কেননা নাম নিলে বাকি বন্ধুটির প্রতি হবে অবিচার।
আর আমার মত ঠুনকো এই নবীশকে তাদের মূল্যবান পাঠ প্রতিক্রিয়া দিয়ে অশেষ কৃতজ্ঞ করেছেন তিনজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। এক জন হলেন, আমার প্রিয় কবি এবং অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ব্লগার, বলা চলে ব্লগে আমার কবিতার আদর্শ যিনি সেই স্বদেশ হাসনাইন দাদা। আরো দিয়েছেন আমার শ্রদ্ধাভাজন ডা. সুরাইয়া হেলেন আন্টি, উনার কাছেও আমার কৃতজ্ঞতা।
আর সবশেষে শ্রদ্ধেয় সঙ্গীতজ্ঞ, লেখক এবং গবেষক মুস্তাফা জামান আব্বাসী। উনার প্রতি রইল বিশেষ কৃতজ্ঞতা।
স্মরণ করছি বিশেষ তিনজনকে, যাদের কাছে আমার সারাজীবনের ঋণ! তাদের একজন ছিল প্রিয় নষ্ট কবি। আমাকে এই পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাবার সময় ভীষণ বাজে অবস্থায় পড়তে হয়েছিল একবার। আমি সিগ্ধান্ত নিয়েছিলাম বই আর করবোই না।
তখন উনি আমাকে বলেন যে, বই আমরা করবোই। আমি সাহস পাই এবং আবারো উঠে দাড়াই। সবাই জানেন না হয়ত আমার সুখ আমি সবাইকে শেয়ার করি, কিন্তু দু:খ কাউকে না। এই সময়টার কথা উনিই জানতেন শুধু। পরিবার, বন্ধুরা কেউ না।
আরেক জন হলেন আরজু পনি আপু। উনার সাথে পরিচিত না হলে হয়ত আজ আমার বইটি বেরই হত না। আর একজন হল প্রকাশক মোর্শেদ আঙ্কল। উনাকে ভীষণ ডিস্টার্ব করেছি। চারবার পান্ডুলিপি বদলেছি আর তিনবার প্রচ্ছদ।
সত্যিই উনি অনেক কষ্ট করেছেন আমার পাল্লায় পরে।
বি.দ্র: বইমেলার পরে বইটা পাওয়া যাচ্ছে কাটাবন কনকর্ড এম্পোরিয়ামের সংহতি প্রকাশন এবং প্রকৃতি এর দোকানে।
উৎসর্গ: পোস্টটি অবশ্যই উৎসর্গ আরজু পনি আপুকে। উনাকে যত টুকু দেখেছি তাতে মনে হয়েছে উনি একজন শাদা মনের মানুষ। শুধু একটাই কথা উনাকে বলব, জগতটা একেবারে কালো কুচকুচে নয়, তা আদতে সাদাই।
তাতে কালোর ছোপ আছে বলেই পৃথিবীটা নীল
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।