চলে যাচ্ছি। ফেরার সময় জানা নেই। মেইল আইডি থাকলো। সময়টা মধ্যরাত। এম ভি পানামা লঞ্চে আমরা।
আমরা মানে আমি আর মা। যাত্রাভিমুখ- রাজধানী শহর। প্রায় ১৮ ঘণ্টার জার্নি। বদ্ধ কেবিনে আমি চাদর জড়িয়ে জবুথবু হয়ে শুয়ে আছি। প্রচণ্ড শীত।
এতটা শীত পড়বে ভাবিনি।
সূর্য উঁকি দেয়ার আগেই লঞ্চ সদর ঘাটে পৌঁছবে। কতদূর এলাম, তার রেগুলার আপডেট দিতে হচ্ছে সেঝপু কে।
আমার আপাদমস্তক ঢাকা চাদরে। মা'র উপস্থিতি ভুলেই গিয়েছিলাম।
একবার উঁকি দিয়ে দেখলাম- মা মোবাইলে গেম খেলতে ব্যস্ত। ঘুমানোর চেষ্টা করেও পারছিলাম না। হঠাৎ খেয়াল হল কেউ যেন আমার গায়ে কিছু জড়িয়ে দিচ্ছে। তাকিয়ে দেখি মা। তার গায়ের চাদরটা আমার গায়ে জড়ানো।
দুষ্টমি করতে গিয়ে ধরা পড়ে যাওয়া বাচ্চার মতো কাঁচুমাচু গলায় মা বললো "ঘুমাস নি?" উত্তর না দিয়ে বললাম - তোমার ঠাণ্ডা লাগেনা ? মা বলল- তোর অ্যাজমার প্রব্লেম... ঠাণ্ডা লেগে গেলে তো কষ্ট পাবি। আমি হাসলাম। চাদরটা গায়ে জড়িয়ে উঠে বসলাম।
আমার গায়ে জ্যাকেট, তার উপর আমার চাদর..তার উপর মা'র চাদর। আর মা'র গায়ে শুধু সোয়েটার।
মা কে বললাম - ধর, তোমার সাথে কোনো লাগেজ নেই। যদি সেঝপু থাকত এখানে ... তখন কি করতে? মা'র নির্বিকার উত্তর- সোয়েটার টা জড়িয়ে দিতাম।
আমি আরেকটু কৌতূহল নিয়ে বললাম- মেঝপু ও থাকলে? মা বলল- আমি বুকে জড়িয়ে রাখতাম।
এবার আমার মুখে বিজয়ের হাসি। বলে রাখা ভাল- আমরা ৪ বোন।
আমি শেষ তীর টা ছুঁড়লাম। বড়'পু ও থাকলে?
মা'র দ্বিধা-শূন্য চোখ দেখে অবাক হলাম। বলল- শাড়ীটা খুলে ৪ ভাঁজ করে দুজনকে জড়িয়ে দিতাম।
আমি তাড়াতাড়ি উল্টো দিকে মুখ করে শুয়ে পরলাম। চোখের পানি লুকানোর চেষ্টা।
এত ভালবাসা কিভাবে ধারণ করে মা!
যার সাথে কারণে-অকারণে হরহামেশাই রুক্ষ আচরণ করি আমি.. সে-ই তার সবটুকু দিয়ে আমাকে আগলে রাখতে চায় কেন!
মনে মনে নিজেকে জিজ্ঞেস করলাম- আমি কি আমার সন্তানকে এতটা ভালবাসতে পারব? জীবন যে গতিতে যান্ত্রিক হয়ে চলেছে...মানুষের মায়া-মমতা কমে যাচ্ছে.. মা'র ভালবাসা এক-ই রকম থাকবে তো?
মনে মনে বললাম -ভালবাসি তোমায়, মা। কেন জানি না... মুখ ফুটে বলতে পারলাম না..
পৃথিবীর সব মা'র ভালবাসা এক-ই রকম.. এটা আমি বিশ্বাস করিনা।
আমার মা-ই সেরা মা.. এটা ভাবতেও আমি রাজি নই।
সৃষ্টিকর্তার প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা- আমার জীবনে অন্তত একটি মানুষ তো আছে.. যার ভালবাসায় কোনো স্বার্থ নেই;যে আমার জন্য হাসতে হাসতে জীবন বিসর্জন দিতে রাজি।
সবাই তাদের মায়ের স্নেহের ছায়াতলে আশ্রয় পাক সারাজীবন.. এই প্রার্থনা ।
ভাষা-জ্ঞান তেমন প্রখর নয় আমার।
ব্লগ এ এটা-ই আমার প্রথম লেখা।
ভাষা-জনিত ভুল হলে মাফ করবেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।