আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গডফাদার-২৫

চেয়ারম্যান সাহেব একে একে সকলের অভিযোগ শুনছেন আর বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। পিছনের সারিতে বসে থাকা একটা ছেলে দাঁড়িয়ে বলল, চেয়ারম্যান সাহেব আমার একটা অভিযোগ আছে। বলো কী তোমার অভিযোগ? কয়েকদিন থেকে দেখছি আমার পাশের বাড়ির শাহেদ চাচা প্রাইভেট ক্লিনারের ডাষ্টবিনে ময়লা ফেলে না, পৌরসভার ডাষ্টবিনেও ময়লা ফেলে না প্রতিদিন তার বাড়ির কাজের ছেলেটা হয় রাস্তার উপর আর না হয় ড্রেনে ময়লা ফেলে দিয়ে চলে যায় চেয়ারম্যান সাহেব আপনাকে এর একটা বিচার করতে হবে। চেয়ারম্যান সাহেব তার পাশে বসা এক কর্মীকে বললেন, হাসিব তুই যা তো শাহেদ চাচাকে আমার সালাম দিস্‌। হাসিব বেরিয়ে গেল।

চেয়ারম্যান সাহেব বললেন, করিম চাচা, হারেস চাচা আপনারা একটা মারাত্মক ভুল করতে যাচ্ছিলেন সময় মতো আমাদের ছেলেরা বাধা না দিলে বিয়েটা হয়ত হয়েই যেত। একে অপরের মুখের দিকে কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, কেন কী হয়েছে? চেয়ারম্যান সাহেব বললেন, আপনারা অনেকেই হয়ত জানেন না করিম চাচা তার সতেরো বছর বয়সের ছেলের সঙ্গে হারেস চাচার তেরো বছর বয়সের মেয়ের বিয়ে দিচ্ছিলেন। বিয়ের সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করেছিলেন, কাজী সাহেবও বিয়ে পড়ানোর জন্য উপস্থিত হয়েছিলেন। শুধু কি তাই? বিয়েতে যৌতুকেরও একটা হিসাব ছিল। আমি ঠিক সময়ে না পৌঁছালে এমন একটা গর্হিত কাজ হয়ে যেত বলে চেয়ারম্যান সাহেব বললেন, কাজী সাহেব আপনি তো ছেলে মেয়ের বয়স জানেন তারপরও আপনি বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে রাজি হলেন কেন? কাজী সাহেব মাথা নত করে বসে রইলেন, করিম চাচা বললেন কাজী সাহেবের কোন দোষ নেই বাবা কাজী সাহেব আমাদের বলেছিলেন কিন্তু আমাদের অনুরোধে তিনি বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করতে সম্মত হয়েছিলেন।

কিন্তু আপনারা তো জানেন এবং আমিও সবাইকে বলেছি যৌতুক নেয়া কিংবা দেয়া এবং আঠারো বছরের কম বয়সের মেয়ে আর একুশ বছরের কম বয়সের ছেলের বিয়ে দেয়া আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। তারপরও আপনারা কেন এই অপরাধ করতে যাচ্ছিলেন? হারেস বললেন, বাবা মেয়ে বড় হয়েছে করিম আমার অনেক দিনের বন্ধু তার ছেলেও বিয়ের লায়েক হয়েছে যৌতুক কম তাই দু'বন্ধু মিলে বন্ধুত্ব আরো পাকা পোক্ত করতে চেয়েছিলাম। দেখুন বন্ধুত্ব পাকাপোক্ত করা কিংবা কম যৌতুকের জন্য অল্প বয়সে মেয়ের বিয়ে দেয়ার যুক্তি ঠিক না। আপনার মেয়েটা সুন্দর, সবেমাত্র ক্লাস সেভেনে পড়ছে ওকে আরো লেখাপড়া শেখাবেন, মেয়েদের লেখা পড়ার জন্য সরকার উপবৃত্তি চালু করেছে। কাজেই সরকারী সুবিধা গ্রহণ করে আপনি মেয়েকে উচ্চ শিক্ষিত করে তুলতে পারেন।

করিম চাচার ছেলেও ইন্টারমিডিয়েট পড়ছে ততদিনে সেও আরো লেখাপড়া শিখে বড় হবে তারপর বিয়ে দেবেন তাতে আপনাদের বন্ধুত্বও ঠিক থাকবে, বিয়ের পর মেয়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। আমি আশা করি আপনারা সবাই করিম চাচা আর হারেস চাচার কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবেন। কেউ অল্প বয়সে ছেলে মেয়ের বিয়ে দিবেন না, যৌতুক দিবেন না এবং যৌতুক নিবেন না। কেউ বিয়েতে যৌতুক দাবি করলে বা যৌতুকের জন্য নির্যাতন করলে আমাকে জানাবেন। আর কাজী সাহেব আপনিও শুনুন এই পৌরসভায় কোন বাল্য বিবাহ হবে না, যৌতুকের আদান-প্রদান হবে না।

আপনি বয়স সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে কোন বিয়ে রেজিস্ট্রি করবেন না। কারো বয়স সম্পর্কে নিশ্চিত হতে না পারলে আমাকে বলবেন আমি পৌরসভায় সংরক্ষিত সনদপত্র অথবা তাদের অভিভাবকের কাছ থেকে ভালভাবে জেনে নিশ্চিত হব। এর কোন পরিবর্তন ঘটলে জন প্রতিনিধি হিসেবে আমি ব্যবস্থা নিব। এমন সময় শাহেদ সাহেব ও হাসিব রুমে ঢুকলো। চেয়ারম্যান সাহেব শ্রদ্ধা সহকারে শাহেদ সাহেবের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করলেন।

তারপর বললেন, চাচা আপনারা সবাই আমাকে এলাকার ভালোমন্দ দেখার জন্য ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। আল্লাহর রহমতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আমি এলাকার উন্নয়নের জন্য সাধ্য মতো চেষ্টা করছি। পৌরসভা থেকে প্রাপ্ত বরাদ্দ দিয়ে এলাকার উন্নয়নের চেষ্টা করছি। তা আপনারা সবাই এতদিনে বুঝতে পেরেছেন। আমি মনে করি উন্নয়ন মানে শুধু রাস্তা-ঘাট, ড্রেইন এর উন্নয়ন নয়।

মানুষের মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিও উন্নয়ন। তাই আমি কিছু কাজও এরই মধ্যে শুরু করেছি, যেমন জন্ম-মৃত্যু রেজিষ্ট্রেশন, যৌতুক ও বাল্য বিবাহ রোধ এবং প্রাইভেট ক্লিনার দ্বারা এলাকার পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা। জন্ম-মৃত্যু রেজিস্ট্রেশন আমরা যেদিন থেকে শুরু করেছি সেদিন থেকে এলাকায় যত শিশু জন্ম গ্রহণ করেছে সবারই নাম রেজিস্ট্রেশন হয়েছে, যত মানুষ মারা গেছে সকলের নাম রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। গত দু'মাসে কোন বাল্য বিবাহ হয়নি, কোন বিয়েতে যৌতুকের আদান-প্রদান হয়নি, করিম চাচা আর হারেস চাচা তাদের অল্প বয়স্ক ছেলে মেয়ের যৌতুকের বিনিময়ে বিয়ে সম্পাদনের চেষ্টা করছিলেন তা বন্ধ করেছি। তারা তাদের ভুল স্বীকার করেছেন বলে চেয়ারম্যান সাহেব একটু থামলেন তারপর আবার বলতে শুরু করলেন, শাহেদ চাচা আপনার বাড়ির উচ্ছিস্ট ময়লা প্রাইভেট ক্লিনার বা পৌরসভার ডাস্টবিনে না ফেলে রাস্তা বা ড্রেইনে ফেলে? শাহেদ সাহেব বললেন, আমি তো জানি না বাবা।

চাচা বাসায় বলে দিবেন যেন প্রইভেট ক্লিনারের ডাস্টবিনে ময়লা ফেলে। ঠিক আছে বাবা। তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি গত দু'মাসে আমাদের এলাকার উন্নয়ন হয়েছে আপনারা আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি পৌরসভাকে একটা আদর্শ পৌরসভায় পরিনত করব। যা সারাদেশে একটা নজির স্থাপন করবে।

আমি আপনাদের সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। চলবে.. গডফাদার-০১  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।