আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৫ বন্ধু মিলে সা’দকে খুন করে (আমরা কি অপরাধী হয়ে যাচ্ছি ???? )

নিখোঁজ হওয়ার ৮দিন পর রাজশাহী মহানগরীতে নাদিমুজ্জামান সা’দ (১৭) নামের এক কলেজ ছাত্রের লাশ উদ্ধার করেছে র‌্যাব। গতকাল নগরীর শিরোইল মঠপুকুর এলাকার একটি ছাত্রবাসের সেফটিক ট্যাংকির ভেতর থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত সা’দ নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার আমিনুল ইসলাম শাহীনের ছেলে। সে মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি ১ম বর্ষের ছাত্র ছিল। এ ঘটনায় ৩ কলেজ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- নগরীর বরেন্দ্র মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র ও মীরেরচক এলাকার বিপু, টিকাপাড়া এলাকার আবুল কালামের ছেলে কাইসার আহম্মেদ অনিক ও চাঁপাই নবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের মাসুদ। ৩ জনই নিহত সা’দের বন্ধু ছিল। এ ঘটনায় জড়িত আরও দুই কলেজ ছাত্রকে খুঁজছে র‌্যাব। এদিকে, লাশ উদ্ধারের সময় নিহতের স্বজনদের রোষানলে পড়েন রাজপাড়া থানার ওসি মোকাররম। স্বজনরা অভিযোগ করেন, এ ঘটনায় ১৯শে জানুয়ারি নগরীর রাজপাড়া থানায় জিডি করলেও পুলিশ কোন তৎপরতা দেখায়নি।

এমনকি সা’দের স্বজনদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা হয়নি অভিযোগ করে গতকাল তারা চড়াও হয়। তারা ওসি’র অপসারণ দাবি করেন। এর কিছুক্ষণ পর ওই এলাকা ত্যাগ করেন ওসি। গত ১৭ই জানুয়ারি নাদিমুজ্জামান সা’দ নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও না পেয়ে ১৯শে জানুয়ারি পরিবারের পক্ষ থেকে রাজপাড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করা হয় এবং তার অনুলিপি র‌্যাব-৫ এর দপ্তরে দেয়া হয়।

এ নিয়ে মাঠে নামে র‌্যাব সদস্যরা। তদন্তের একপর্যায়ে র‌্যাব সদস্যরা সা’দের বন্ধু নগরীর মীরেরচক এলাকার বিপুকে আটক করে। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অনিক ও মাসুদকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা সা’দকে হত্যার কথা স্বীকার করে। র‌্যাব-৫ এর কর্মকর্তা লে. মোহাম্মদ নূর জানান, আটককৃতদের দেয়া তথ্যানুযায়ী র‌্যাব সদস্যরা শিরোইল মঠপুকুর এলাকার একটি ছাত্রাবাসের সেপটিক ট্যাংকির ভেতর থেকে সা’দের গলিত লাশ উদ্ধার করে।

আটককৃতদের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সা’দের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া ও সা’দের সঙ্গে বেশকিছু দিন আগে অনিক ও বিপুর মধ্যে বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়ে থাকতে পারে। তবে এ বিষয়ে আরও নিশ্চিত হতে চেষ্টা করছে র‌্যাব। যেভাবে হত্যা করা হয়: গ্রেপ্তারকৃতদের দেয়া তথ্য মতে, গত ১৭ই জানুয়ারি রাতে বন্ধুদের নিয়ে পিকনিক করার নাম করে নিহত সা’দকে বাড়ি থেকে বের করে অনিক। এরপর তারা সা’দকে নিয়ে যায় নগরীর শিরোইল মঠপুকুর এলাকার ওই ছাত্রাবাসে। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিল বিপু, মাসুদ, সুজন ও কোয়েল।

রাতে কোমল পানীয়ের সঙ্গে নেশা জাতীয় দ্রব্যাদি খাইয়ে মাতাল করা হয় সা’দকে। এরপর একটি কম্বলের সঙ্গে জড়িয়ে প্রথমে লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। পরে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে হত্যা করা হয়। হত্যার পরের দিন সন্ধ্যায় তারা সা’দের লাশ ওই ছাত্রাবাসের বাইরে ম্যানহোলের মধ্যে ফেলে দেয়। ম্যানহোলের উপরে রেখে দেয়া হয় বালু।

এরপর হত্যাকাণ্ডকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে গত ২৩শে জানুয়ারি সা’দের মোবাইল নম্বর থেকে একটি মেয়ে কণ্ঠে সা’দের মা নাদিরা বেগমকে ফোন দেয়া হয়। ফোনে জানানো হয়, আমি অন্তঃসত্ত্বা। আমি ও সা’দ বিয়ে করেছি। আমরা একসঙ্গে আছি। নিহত সা’দের পরিবারের অভিযোগ: নিহত সা’দের চাচা আবদুুস সালাম তুহিন অভিযোগ করে বলেন, সা’দ নিখোঁজ হওয়ার পর রাজপাড়া থানায় ডায়েরি করা হয়।

এ নিয়ে আমাদের পক্ষ থেকে তোড়জোড় করা হলে থানার অফিসার ইনচার্জ মোকাররম হোসেন খান দুর্ব্যবহার করেন। তারা ওসিকে একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে তা খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিলে তিনি তাদের বলেন, আপনার ছেলেকে উদ্ধারের জন্য পুলিশ বসে নেই। তিনি বলেন, ওসি মোকররমকে বারবার অনুরোধ করেও কোন লাভ না হওয়ায় বিষয়টি মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. ওবায়দুল্লাহকে জানানো হয়। পরে তার হস্তক্ষেপে রাজপাড়া থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তিনি বলেন, ওসি যদি ওই মোবাইল নম্বর দিয়ে তাৎক্ষণিক তদন্ত শুরু করতেন তাহলে হয়তো সা’দকে জীবিত পাওয়া যেতো।

এদিকে, এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে র‌্যাব-৫ এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত ১৭ই জানুয়ারি আমিনুল ইসলাম এর ছেলে নাদিমুজ্জামান সা’দ পিকনিকের কথা বলে বাড়ি হতে বের হয়ে আর বাসায় ফেরেনি। এরপর আমিনুল ইসলামের মোবাইলে একটি কল আসে এবং কল প্রদানকারী নিজেকে সা’দের বন্ধু হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলে যে, আপনার ছেলে ভাল আছে এবং আমাদের সঙ্গে পিকনিকে আছে। পরবর্তীতে সা’দের মোবাইল থেকে আমিনুল ইসলামের মোবাইলে একটি মেয়ে কল করে এবং কল প্রদানকারী মেয়েটি নিজেকে তার ছেলের বউ হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলে যে, আমরা বিয়ে করেছি এবং ভাল আছি। ব্যাপারটি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় আমিনুল ইসলাম গত ২৩শে জানুয়ারি ২০১২ তারিখ রাতে র‌্যাব-এর রাজশাহী রেলওয়ে কলোনি ক্যামেপ এসে অভিযোগ করেন এবং রাজপাড়া থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৫, রাজশাহীর রেলওয়ে কলোনি ক্যামেপর একটি অপারেশন দল ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারী ও তথ্যানুসন্ধান চালায়।

এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রাজশাহী শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা সা’দকে হত্যা করে লাশ ট্যাংকির ভিতরে লুকিয়ে রেখেছে বলে স্বীকার করে। এরপর র‌্যাব-৫, রাজশাহীর অপারেশন দল পুলিশ ও স্থানীয় সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে লুকিয়ে রাখা লাশটি গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের দ্বারা উদ্ধার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই বরেন্দ্র মহাবিদ্যালয়, রাজশাহীর ২০১২ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং নিহত নাদিমুজ্জামান সা’দ-এর সঙ্গে বন্ধুত্বের সমপর্ক ছিল। তারা এবং পলাতক আরও দু’জন সহযোগী মিলে পূর্ব-কল্পিতভাবে সা’দকে বাসা থেকে মিথ্যা কথা বলে ডেকে নিয়ে ছাত্রাবাসের ভিতরে একটি রুমে হত্যা করে লাশ খাটের নিচে লুকিয়ে রাখে।

পরবর্তীতে তারা লাশটি উক্ত বাড়ির সেফটিক ট্যাংকির ভিতর লুকিয়ে রাখে। লাশ উদ্ধারের সময় নিহতের গলায় কাটা চিহ্ন দেখে ধারণা করা হয় তাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। তবে গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা জানায়, হত্যার আগে সা’দকে নেশা পান করিয়ে অজ্ঞান করে নেয়া হয়। পরবর্তীতে তার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য গলা কেটে ফেলা হয়। তবে সুনির্দিষ্ট কি কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তা আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়নি।

সূএ ::::: মানবজমিন (২৭-০১-২০১২) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।