shamseerbd@yahoo.com
Twinkle twinkle
little star
How I wonder
What you are !!!
সামনের রিক্সা থেকে ভেসে আসছিল এই রাইমটি । পাশ কাটিয়ে যাবার সময় দেখলাম ছোট্ট একটি পিচ্চি ছেলে সাথে তার বাবা মা। বাবা খুব আগ্রহ নিয়ে রাইমটি পড়ছে আর ছেলেটি শুনে শুনে বলছে। খুব মজা লাগল দৃশ্যটি দেখতে। পুরো পরিবারটি সান্ধ্য ভ্রমনে বের হয়েছে সম্ভবত।
বাবুটি তার বাবার মুখ থেকে শুনে নিজে নিজেই একবার পুরোটা বলল। সাথে সাথে বাবা মায়ের সে কি উচ্ছাস । সন্তানের প্রতিটি অর্জনই বাবা মার কাছে বিশাল কিছু। শিশুটির এই প্রথম রাইম বলতে পারা তার বাবা মার জন্য অন্য রকম একটি আনন্দের ব্যাপার। এমনি করে তার প্রতিটি সাফল্যে তার বাবা মা সবসময় উচ্ছসিত হবে, তেমন করে ব্যর্থতায়ও তাদের বুক ভেঙ্গে যাবে।
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার দুদিন আগে থেকে আমার একশ চার ডিগ্রী জ্বর, পরীক্ষা দিতে পারবো কিনা সেটাই নিশ্ছিত নয়। তোর দাদা দাদীর চরম মন খারাপ যদিও তারা সেটা প্রকাশ না করে আমাকে সাহস দিয়ে যাচ্ছেন, অভয় দিচ্ছেন এইবার পরীক্ষা না দিতে পারলে জীবনে খুব বড় কোনক্ষতি হবেনা, সামনের বার দেয়া যাবে। জ্বর নিয়েই সাহস করে পরীক্ষা দিলাম, অনেক কস্ট হত পরীক্ষার হলে লিখতে। কিছুটা ভয়ে ছিলাম কিন্তু আল্লাহর রহমতে ফলাফল আশানুরুপ হল, যখন বাসায় আসলাম তোর দাদা আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল, তোর দাদীও কানছে!!! সন্তানের সাফল্যে বাবা মার চোখে সবসময় আনন্দাশ্রু এসে ভর করে।
যেমন করে শিশুটির রাইম বলতে পারায় তার বাবা মা খুব খুশী, তাদের শিশুটিকে নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখা চলতেই থাকবে।
আর শিশুটি নিজের অজান্তেই কঠিন এক জগতে পদার্পন করল।
এই জগত জ্ঞানের জগত, তুমুল প্রতিযোগীতার জগত, এখানে নিত্য সাফল্যের পিছনে ছুটে চলেছে মানুষ, একটু পিছলিয়ে যাবার সুযোগ নেই । এইভাবে একটু একটু করে রাইম বলতে বলতে শিশুটির হাতে তুলে দেয়া হবে বই, শিশু সুলভ আনন্দ তার জীবন থেকে আস্তে আস্তে দূরে সরে যাবে, রেসের ঘোড়া হিসেবে শুরু হবে তার জীবন । বাবা মা নিরুপায় আর শিশুটির ও সামনে অন্য কোন পথ খোলা নেই। এই প্রতিযোগী্তায় নিজের অজান্তেই সে শামিল হয়ে যায়।
বড় কঠিন আমাদের এই জগত, মায়ের পেটে থাকার সময়টুকুই কেবল নিরাপদ বলা চলে। পৃথিবীতে পদার্পনের সাথে সাথে আরো ছয়শ কোটি মানুষের একজন হয়ে গেলে তুমি, সবার সাথেই তোমার প্রতিযোগীতা, তোমার নিজেকে যোগ্য করে নেয়ার উপরই নির্ভর করে স্বার্থকতা, আর তাই বাবা মাও নিরুপায়। শিশুসুলভ আনন্দের পরিবর্তে তারা সন্তানকে যত শ্রীঘ্রই সম্ভব ঠেলে দেন নিরানন্দ জগতের পানে।
আমাদের সময়ও মনে হয় এত বেশী প্রতিযোগীতা ছিলনা। আমি স্কুলে গিয়েছি ছয় বছর বয়সে, ক্লাশওয়ানে চারদিন পড়ার পর আমার নানু অসুস্হ হওয়ায় চিটাগং চলে আসি সন্দ্বীপ থেকে , এরপরের বছর ক্লাশ টু থেকে লেখাপড়া শুরু করি , তোমার দাদা ভাই আমাকে প্রথম প্রতিযোগীতায় নামিয়ে দিলেন পঞ্চম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে সাথে ছিল চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি পরীক্ষায় টিকতেই হবে এমন চাপ ।
আল্লাহর রহমতে বৃত্তিও পেয়েছিলাম, কলেজিয়েট এ পড়াও হল ।
আর এখনতো দেখি বাচ্চাদের পারলে কথা যেদিন থেকে বলা শুরু করছে সেদিনই স্কুলে পাঠিয়ে দেয় বাবা মা। একটা শিশুর পারিবারিক মানসিকতার বিকাশ হওয়ার আগেই সে মিশে যাচ্ছে মুল জনস্রোতে, এটার ফল মনে হয়না খুব একটা ভাল। মানবীয় আবেগ অনুভূতিগুলো আগে জীবনের জন্য জরুরী, প্রতিযোগীতার মনোভাব এত শিশু বয়সে শিখে ফেলা মনে হয়না জীবনের জন্য মঙ্গলজনক।
একটা শিশুকে প্রথমে পারিবারিক মন্ডলে বেড়ে উঠতে দেয়া উচিত , আবেগ অনুভূতিগুলো সে এখান থেকেই শিখবে।
তারপর ধীরে ধীরে স্কুলের মাঠে তাকে ছেড়ে দেয়া উচিত। প্রতিযোগীতায় সে অবশ্যই নাম লেখাবে, তবে এখানে মনে হয় তার পছন্দের মূল্যায়ন করা উচিত । তোমার সাথে এই প্রমিজটা আমি করতে চাই- তোমার উপর কোন পথ জোর করে চাপিয়ে দেয়া হবেনা, তুমি তোমার ভাল লাগার পথ বেছে নিতে পারবে। আর আমি এটা বিশ্বাস করি- আবেগ অনুভূতির যথাযথ শিক্ষা, মূল্যবোধের চর্চা, অন্যকে সন্মান করা আর পরমত সহিষঞুতা - এই বিষয়গুলো যদি তোমাকে আমরা যথাযথ শিখাতে পারি তাহলে আল্লাহর রহমতে তোমার ভুল করার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে। জীবেন ভুল হতেই পারে, তবে সেটাকে যত জলদি শুধরে নেয়া যাবে, জীবনের জন্য সেটা ততই মঙ্গলজনক হবে।
কি ভয় পেয়ে জাচ্ছিস নাকি- এ কোন পৃথিবীতে এসে পড়লাম এমন চিন্তা হচ্ছে বুঝি!!! আরে ব্যাপারনা, টেনশনের কিছুই নেই, জীবন অতি সাধারন একটা জিনিস, এটাকে অত বেশী গুরুত্ব দিয়ে ঘুম হারাম করার কোন মানে নেই। খুব বেশী টেনশন হলে আমার নিয়ম ফলো করবি, সোজা ঘুম দিবি, গোল্লায় যাক পৃথিবী । পরীক্ষার হলেও ঘুম দেয়ার অভিজ্ঞতা আছে আমার, সো তুই ও যে অমন কিছু করবিনা সেটার গ্যারান্টি কি, হা হা হা । যত যাই কিছু হউক, লাইফে খুব বেশী টেনশন কখনোই নিবিনা, টেনশন করে কোনদিন কোন সমস্যার সলভ হয় নাই উল্টো সমস্যা আরো প্রলম্বিত হয়েছে।
জীবন মানেই পাওয়া আর না পাওয়ার এক বিরাট সরল অংক।
স্কুলে গেলে দেখবি যে সরল অংকটি যত বেশী জটিল আর কঠিন মনে হচ্ছে শেষ পর্যন্ত তার ফলাফল হয় এক অথবা শূণ্য। একটাইত জীবন, ফলাফল এক ধরে নিয়েই আগানো যাক- মনে মনে সবসময় এই ভাবনাটাকেই প্রশ্রয় দেয়ায় বেটার।
অনুভূতিগুলো জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অন্যের অনুভূতিকে সবসময় শ্রদ্ধা করতে হবে, মানুষ হবার পূর্বশর্তই আসলে এটা ।
পঞ্চম পর্ব ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।