আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তিন ইসলামবিদ্বেষী ব্লগারের আইওয়াশের গ্রেফতারে হিন্দু সহ অন্য ধর্মাবলম্বীরা এতো ক্ষুব্ধ কেন!? আপনি মুক্তমনা, সুশিল বা চুশিল হলেও একটু আসেন তো ভাই সাহেব

স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । তবে স্বপ্ন দেখা নিয়ে কিছুদিন যাবত একটা সমস্যা হয়ে গেছে । নতুন দেখা স্বপ্নগুলো কেন যেন পূরণ হচ্ছে না খুব শীঘ্রই এই সমস্যা কেটে যাবে এই আশাতেই আছি । সেলুনে হিন্দু নাপিতকে দিয়ে সেভ করাতে করাতে ভারত বিরোধী তর্কের এক পর্যায়ে মুসলমান এক লোক বলে বসলেন - " তোমরা কোন কথাই বইলো না মিয়া । বাংলাদেশ - ইন্ডিয়ার খেলা হলে তোমরা সাপোর্ট করা ইন্ডিয়ারে ।

ইন্ডিয়ার কেউ আউট হইলে মুখ কালা কইরা ফালাও । ইন্ডিয়াই তো তোমাগো দেশ । এইহানে আছো কি করতে? গেলে গাই পারো! " নারায়নগঞ্জের সমবায় মার্কটের সাথের সেলুনে দুই মাস আগে এই ঘটনা । আমি পাশের চেয়ারে বসে চুল কাটাচ্ছিলাম, ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম লোকটাকে । মাঝবয়সী, দাড়িও আছে ।

নাপিত যথেষ্টেরও অনেক বেশি ভদ্র । আমি যদি নাপিত হতাম আর আমাকে কেউ এ ধরনের কথা বললে আমি ক্ষুর সোজা গলায় বসিয়ে দিতাম । সে মনে কষ্ট পেলেও রাগ না করে লোকটাকে মোটামুটি শান্ত গলায়ই বললো - " ভাই এটাতো ঠিক কথা কইলেন না । " একটু পর লোকটা বের হয়ে গেলে নাপিতই তার সাথে কথা বলতে বলতে বের হলো । দশ মিনিট পরে চুল কাটিয়ে বের হবার পর দেখলাম নাপিত লোকটা তখনও তার সাথে কথা বলছে এবং একহাতে ঐ লোকটার হাত সুন্দর করে ধরে রাখা , অথচ দোকানে কাস্টমার বসে আছে ।

নাপিত লোকটা সেদিন আসলেই কষ্ট পেয়েছিলো । তাই নিজের মাতৃভূমিতে তাকে পরগাছা বানিয়ে আরেকজনের এমন অযাচিত , শাস্তিযোগ্য জঘন‍্য একটা কথা শোনার পর তার দোকানে ফিরে গিয়ে টাকা কামানোটা মাথায়ই আসে নি । কারণ বাংলদেশের উপর তার অধিকার আপনার চেয়ে কোন অংশেই কম না এবং এই দেশকে সেও অনেক বেশীই ভালোবাসে । এখন আপনিই বলুন ঐ লোকটা তো দাঁড়ি রাখে, কথার মধ্যে আল্লাহর নামও নেয় , কিন্তু সে কি বাংলাদেশের মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করে? অবশ্যই না । বাংলাদেশের সরকার কি জনগনের মানসিকতার প্রতিনিধিত্ব করে? অতি অবশ্যই না ।

আজ যে তিনজন ব্লগার ইসলাম বিদ্বেষী লেখার জন্য গ্রেফতার হয়েছে সে ব্যাপারটা অনেক হিন্দু ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীই মেনে নিতে পারে নি , তারা হতাশ । তারা যা বলছেন তা শতভাগ যৌক্তিক । ইসলাম ধর্মের অবমাননা হলে সেখানে আইন কাজ করে, তাদের ধর্মের অবমাননার সময় আইন কেন চুপ করে ছিলো? তারা কি বাংলাদেশর নাগরিক না? নাকি বাংলাদেশ কেবলমাত্র মুসলমানদেরই? রামুর ঘটনার বিচার কেন হয় নি, কেন সাম্প্রতিক মন্দির ভাঙ্গার ঘটনারও কিছু হলো না? হিন্দু ভাই আর বোনদের কাছে দুইটা প্রশ্ন করি । আচ্ছা আপনারা কি ভাবেন যে সরকারের ইসলামের প্রতি দরদ একেবারে উথলে উঠায় এই গ্রেফতারগুলো হয়েছে? এর পেছনে কোনই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই? যে কোন বিবেচক মানুষের প্রথম প্রশ্নটার জবাব হবে না, দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাব হবে হ্যা । বাংলদেশ থেকে ইসলাম কে বিলুপ্ত করার জন্য এই সরকার যথেষ্ট সচেষ্ট ।

সরকার লোক দেখানো যে কাজগুলো করছে তা সাময়িক সময়ের জন্য, ৬ এপ্রিলের ইসলামি দলগুলোর লং মার্চের প্রতি জনসমর্থন কমিয়ে দেয়ার জন্য । আপনারা কেন ভাবছেন আপনাদের ঠকানো হয়েছে? সরকারের তো কোন ধর্মই নেই । এরা আছে আরেকবার ক্ষমতায় যাওয়ার তালে । এরা যা করছে আরেকবার ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য করছে , এরা যদি মুসলমানদের ধর্মানুভূতিকেই মূল্যায়ন করতো তবে এসব গ্রেফতার হতো আরো বহু আগে । দেশের মানুষ কি চাইলো বা না চাইলো তাতে তো এদের কিছুই আসে যায় না ।

সেজন্য রামুর ঘটনা, বিশ্বজিৎ, মন্দির ভাঙ্গার ঘটনাগুলোর বিচারও সরকার করে নি । কারণ রামুর ঘটনা ঘটানোর পেছনে দায়ী বলে যাদের দিকে আঙ্গুল তারা সরাসরি সরকারদলীয়, বিশ্বজিৎ কে তো লাইভই কুপিয়ে মারলো ছাত্রলীগ । মন্দির ভেঙ্গেছে শিবির - জামাত ,কিন্তু এক যুবলীগের নেতাও কিন্তু এ কাজ করতে গিয়ে ধরা পরেছে সরকার যা চেপে গিয়েছে বেমালুম । কাজেই সরকার এসবের বিচার করবে না নিজেকে বাঁচাতেই। আমরা সাধারন মানুষরা চিৎকার করতে করতে গলা দিয়ে রক্ত বের করে মরে গেলেও না ।

বিচার হতে পারে মানুষের ইচ্ছার মূল‍্যায়ন করে এমন কোন সরকার ক্ষমতায় আসলেই । আপনারা নিজেদের বঞ্চিত করা হয়েছে মনে করে এর জন্য সাধারণ মুসলমানদেরই দায়ী করছেন । এখানে কাউকেই জেতানো বা বঞ্চিত করা হয় নি, পুরো ব্যাপারটাই রাজনৈতিক নোংরামি, আইওয়াশ । একবার পেছনে গিয়ে দেখুন তো বাংলদেশে আপনাদের উপর হওয়া প্রতিটা নির্যাতনের সময় সাধারন মানুষগুলো প্রতিবাদ করেছিলো কি না? জামাত - শিবির চরমপন্থি দল, এরা সাধারন মুসলমানদের প্রতিফলিত করে না । এরা সন্ত্রাসী যাদের অপরাধের বিচার সবার চাওয়া ।

দয়াকরে সেলুনের সেই লোকটাকে বা সরকারকে দিয়ে আমাদের বিচার করবেন না । আমরা সব সময়ই আপনাদের পাশে ছিলাম, আপনারাও যেমন আমাদের পাশে আছেন । নিজেদের মধ্যে এভাবে বিভেদ না বাড়াই । আমরা নিশ্চয়ই চাই না বাংলাদেশে ভারতের শিবসেনার মতো বা আফগানিস্তানের তালেবানদের মতো ধর্মোন্মাদ দল তৈরি হোক আমাদের হাত ধরেই , আমরা নিশ্চয়ই এও চাই না আফ্রিকান প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর দেশগুলোর মতো আমাদের দেশটাও গোত্রে গোত্রে ভাগ হয়ে ধ্বংস হয়ে যাক । এখন আসি সেইসব মানুষদের কথায় যারা সব জায়গায় বাকস্বাধীনতার কথা বলতো বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলছেন ।

বলে যাচ্ছেন নানা অভিমানী প্রেমিকাসুলভ কথা । আচ্ছা, ভাই আপনাদের এই বহুল কপচিত বাকস্বাধীনতা জিনিসটা আসলে কি? আমার কাছে এই জিনিসটাই এখনো ক্লিয়ার না আপনাদের কর্মকান্ড দেখে । বাক - স্বাধীনতা কি মিথ‍্যাচার আর মুখে যা আসে তাই বলে যাওয়ার লাইসেন্স? ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলার রুট পারমিট? নাস্তিকরা সব এরিস্টটল, সক্রেটিস, প্লেটোর ক্লোন আর আমরা সব আবাল? হলে বলে ফেলেন । আজ যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদের প্রতি আমার কোন সহানুভূতি নেই । খবরে দেখলাম এরা ইসলাম ধর্ম ও মহানবী (সঃ) এর বিরুদ্ধে লিখে গেছে ।

বিরুদ্ধে খুব মার্জিত শব্দ, আসিফ মহিউদ্দীন গংদের বিকৃত মানসিকতার সাথে এটা কখনোই যায় না। কেউ নিজে নাস্তিক ( বলা উচিত ইসলামবিদ্বেষী) হতেই পারেন, সেটা তার একান্তই ব‍্যক্তিগত ব্যাপার । কিন্তু তার জন্য সে বাকি কোটি কোটি মানুষের কাছে সবচেয়ে মর্যাদার বিষয় আর মানুষটাকে আপনি নিজের ইচ্ছামতো জঘন্য ভাষায় বিকৃত করে উপস্থাপন করতে পারেন না । এর নাম বাকস্বাধীনতা না ,নোংরামি আর অসুস্থতা । আমি জানি সরকার এদের কিছুই করবে না, কিছুদিন পরেই মানুষ একটু চুপ হলে ছেড়ে দেবে ।

তবুও একজন মুসলমান হিসেবে আমি চাই এদের মতো আরো যারা আছে তাদের মানসিক চিকিৎসা করে আচরনে পরিবর্তন আনা হোক , না হয় আইন পরিবর্তন করে এদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিচার করা হোক । ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।