আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার চা-ক-রী বেলা

আনাড়ী রন্ধন শিল্পীর ব্লগ B-)। ব্লগের বাজে-মানহীন লেখাগুলোর মাস্টার পিস দেখতে চাইলে এই ব্লগারের পোষ্ট গুলো পড়ে দেখতে পারেন। কথা দিচ্ছি, নিরাশ হবেন না। B-) ব্লগে বিভিন্ন বার বিভিন্ন জায়গায় হয়ত বলেছি আমার জীবনের একাধিক লক্ষের মাঝে একটি হল একজন ভাল শিক্ষইকা হওয়া। ক্লাসে যখন মুগ্ধ হয়ে কোন টিচারের লেকচার শুনি তখন মনে হয় ইশ...আমি যদি এই জায়গায় দাড়াতে পারতাম।

এভাবে লেকচার দিবো আর রুম ভরা স্টুডেন্ট মুগ্ধ হয়ে আমার লেকচার শুনবে! শিক্ষকতায় প্রথম এবং প্রধান যে জিনিসটি থাকা অবশ্যই দরকার সেটি হলো ধৈর্য্য...যা আমার খুবই কম। আর রুটিনে বাধা চাকরীর জীবন আমার দ্বারা হয়ত সম্ভব না তাই নিজের লক্ষ সম্পর্কে নিজেই সন্দিহান....এর পেছনে অবশ্য আরো কারন আছে। সেসবে যাচ্ছি না। তো আমার মনে হয় আমি যদি মনের মত একমাস ও কোথাও শিক্ষকতা করতে পারি তাহলেও হয়ত আমার লক্ষ পূরন হবে! আমার বান্ধবী এ্যানী এক কোচিংয়ে পড়াতো। একদিন আমাকে এসে বলে কোচিংয়ে পড়াবো কিনা।

রাজী হয়ে গেলাম। মাসের শেষ বলে বললাম সামনের মাস থেকেই শুরু করি তাহলে। ও বললো তআর দরকার নেই যে কয়দিন ক্লাস করবো তা হিসেব করে টাকা শোধ করে নতুন মাস শুরু করবে। ওর কথা মত সেপ্টেম্বরের ২৬ তারিখ শুরু করেছিলাম। ১৩-১৪ বছরের সহপাঠী, খুব ভাল বান্ধবী শেষ পর্যন্ত কলিগ।

দারুন এক্সাইটেড ছিলাম। দুজনে একসাথে যেতাম। কখনও ওর কাজের চাপ বেশী থাকলে দৌড়ে এসে আমাকে দু-একটা খাতা লিখে দিতে বলতো, আমি দুষ্টুমী করে বলতাম তোর কাজ আমি কেন করবো। কিছুদিন যাওয়ার পরেই যথারিতী রুটিনে বাধা জীবন আর ভাল লাগেনা। তবে ক্লাসে গেলে বাচ্চাদের দেখে আবার মন ভাল হয়ে যেতো।

মাঝে এ্যানী খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে, বিছানা থেকেই উঠতে পারেনা। কোচিংয়ে না গেলে সেখানকার বড় ম্যাডাম জিজ্ঞেস করলে বললাম ওর অসুস্থতার কথা। শুনে সে যা বললো তাতে চরম ভাবে অবাক হলাম। বলে, "কোচিংয়ে ত অনেক কাজ, এক ঘন্টার জন্যে এসে একটু করে দিয়ে গেলেও ত হয়"!! আমার বোঝা হয়ে গেল যে এই মহিলার এখানে আমি অন্তত কাজ করতে পারবোনা। অক্টোবরে আমার ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা ছিলো।

নভেম্বরে প্র্যাকটিক্যাল শুরু হয়। দুইটা পরীক্ষা পরে ১২-৩ টা। আমি ম্যাডামকে বলি ঐ দুইদিন আসতে পারবো না। কারন ক্লাস শুরু ৪টা থেকে আর নিউমার্কেট থেকে এসে ক্লাস করা সম্ভব না, দেরী হয়ে যাবে। ম্যাডাম বলে, "দেরী হলেও একটু কষ্ট করে আইসো"।

মেজাজ ভয়াবহ খারাপ হলেও কিছু বললাম না। মনে মনে বললাম এরেই কয় চা-ক-রী। যাগগে দুই দিন ই গেলাম এবং ৫টার আগেই গিয়েছি। অক্টোবর মাস শেষ হবার আগেই বললাম আমি আর কাজ করবোনা এখানে। ম্যাডাম বলে, সামনে ত বাচ্চাদের পরীক্ষা নতুন টিচার আসলে কাজ বুঝতেই সময় লাগবে, তুমি কষ্ট করে হলেও সামনের মাসটা করো"।

অনুরোধে ঢেকি গিললাম এবং এর ফল পরেই খুব ভাল করেই বুঝেছি। এখানে একটা কথা বলেনিই আমাকে ভাংতি মাসের বেতন না দিয়ে বলে আমার মাস ২৬ তারিখ থেকে হিসেব করবে। মেনে নিয়েছি সেটা। নভেম্বর মাসে ১২ দিন ছুটি থাকে ঈদের। ছুটি শেষে কিছুদিন কোচিং করে ২৬ তারিখ বললাম এই মাস শেষে আমি আর আসছিনা।

ম্যাডাম বলে ডিসেম্বরটা একটু কষ্ট করে করো। বাড়ীতে যাবো বলে আর রাজী হইনি। আমাকে বলে এই মাসটা তো করলাই না, ঈদের ছুটি গেল আর গত সপ্তায় দুই দিন করো নাই!! আমাকে কেউ যদি হঠাৎ করে দুইটা কষে চড় লাগাতো দুই গালে তাতেও মনে হয় এতটা অবাক হতাম না যতটা মহিলার (ম্যাডাম সম্বোধোনটা আর করতে পারিনি) কথা শুনে হইছি। পরীক্ষার জন্যে দুই দিন দেরী করে গিয়েছিলাম, কিন্তু সেটা তাকে জানানোই ছিলো। আর খুব বেশী দেরী হয়নি! মেজাজ খিচড়ে গেলেও নিজের মাঝেই রাখলাম।

পরে বলে ঠিকাছে কাল এসে ক্লাস করে বেতন নিয়ে যেয়ো। বেতনটা এ্যানীর হাতে দিতে বলে চলে আসলাম, আর যাইনি। পরেরদিন শুনি এক গার্জেনের সাথে নাকি আমার কথা বলেছে যে আমার নাকি ক্লাস না করিয়েই মানা করেদিয়েছি, তার চক্ষু লজ্জা আছে বলে পুরো টাকাই আমাকে দিয়েছে। শুনে খুব ঘিন্না লেগেছিলো টাকাটা ধরতে। যেয়ে শুধু জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলাম ১২ দিন ঈদের ছুটি ছিলো সেটা কি আমার দোষ!! কিন্তু এ্যানী খুব করে নিষেধ করে পরে ওকে কথা শোনাবে বলে।

তাই আর যাইনি। এখনও মাঝে মাঝে ব্যাপারটা মনে পড়লে খুব মেজাজ খারাপ লগে। শিক্ষকতা করলেও আমার মনে হয়েছে আমাকে হুকুমের গোলামের মতন খাটানো হয়েছে বা চাকরের মতন। তাই শিরেনামটা এরকম.... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।