আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্টেটের স্ত্রীর অর্ন্তবাস গোছানো কি একজন ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীর কাজের অর্ন্তভূক্ত?

একজন ভীরু মানুষ... ঘটনা কি তা নিশ্চয় বিজ্ঞ পাঠক মহল এতক্ষনে খানিকটা বুঝে নিয়েছেন; তারপরও বলি কিছুটা। নাম বলছি না সঙ্গত কারণে, কিন্তু ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় না দিলেই নয়। বেচারা একজন সদালাপি হাসি মুখের ধর্মের প্রতি অনুরাগী উঁচু বর্ণের সনাতন ধর্মী মানুষ। হালকা পাতলা গড়নের, কাঁচা হলুদের মত গায়ের রঙ। অর্থ কষ্ট অনেক কিছু কেড়ে নিলেও কেড়ে নিতে পারেনি স্বভাবজাত ভদ্রতা।

পরিবারের দৈন্যদশায় লেখাপড়ার চাকা উচ্চমাধ্যমিকের পরে আর চলতে পারেনি। সীমিত যোগ্যতা নিয়ে যোগালদারি থেকে শুরু করে প্রাইভেট টিউশনি সবই করেছেন। অবশেষে তিনি একটি জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্টেটের অধীনে ফরাশ পদে সরকারি চাকরি পান। পরিবারের বৃদ্ধা মা, ছোট বোন আর দুই ভাইয়ের চোখে জ্বলে উঠে আশার আলো। আমার বিশেষ প্রয়োজনে আইন ও তার প্রয়োগ সংক্রান্ত কিছু তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের জন্য চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের দফতরে যেতে হয়েছিল।

সেখানে আমার এক ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীর সাথে পরিচয় হয় যে পুরো অফিসে সৎ ও বিশ্বাসী হিসেবে পরিচিত। তারপর বিভিন্ন সময় তার সাথে বিভিন্ন সময় আমার দেখা হয় এবং এই সহজ সরল মানুষটার সাথে আমার সুসর্ম্পক গড়ে ওঠে। বেশ কয়েক মাস পরে গত শুক্রবার তার সাথে আমার দেখা হয়। তাকে দেখে মনে হলো বেশ অসুস্থ। তাকে জিজ্ঞাসা করতেই সে জানালো সে মূত্রনালি সংক্রান্ত সমস্যাই ভুগছে।

ডাক্তার তাকে বলেছে বিশ্রামে থাকতে, ভারি কিছু না উঠাতে আর প্রচুর পানি পান করতে। কিন্তু এবার যে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্টেট এসেছে সে বেশ নির্দয় প্রকৃতির। এর আগেও তারা সাহেবদের ছেলে-মেয়েদের স্কুলে আনা-নেওয়া, বাজার করে দেওয়া, ছুটির দিনে তার সাহেব-এর ফরমাইশ খাটা এমন সব বাসার কাজ করে দিয়েছে। কিন্তু এই সাহেব ও তার স্ত্রী তার মত ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দিয়ে ছেলে-মেয়েদের স্কুলে আনা-নেওয়া, বাজার করে দেওয়া্র মত কাজতো করায় সাথে সাথে ঘর মোছা, থালা-বাসন ধোয়া, টয়লেট পরিস্কার করা, সাহেব ও ম্যাডামদের খুলে রাখা ময়লা কাপড় কাচা, পানি টানা, বাটনা বাটা, তরকারি কুটা ও রান্না করার মত কাজও করিয়ে নিচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই সে কিছু মেয়েলি কাজে অপটু এবং সে কথাটি ম্যাডামকে বলাতে তার উপর নেমে আসে আযাব।

সে লজ্জায় মুখটা নামিয়ে বলে, একদিন তাকে কাপড় আয়রন করে আলমারিতে গুছিয়ে রাখতে বলা হয় যেখানে মেয়েদের অর্ন্তবাসও ছিল। সে সনাতন ধর্মী জেনেও তাকে কুরবানির ঈদের দিন তাকে সাহেবের বাসায় যেতে বলা হয় যেখানে গরু কুরবানি হয়েছিল। সে মুখ বুজে সব কাজ করে গেছে কিন্তু এবার বাঁধ সেধেছে তার অসুস্থ শরীরটা; সেই কথাটা সাহেবকে বলাতে তিনি মুখ খিঁচিয়ে কাজ চোর উপাধি দেয় আর বাড়িয়ে দেয় কাজের পরিমান। মানুষ কতটা খারাপ হলে এমন করতে পারে? সে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী বলে কি মানুষ না? বিভিন্ন সময় দেখেছি আর জেনেছি এই বিচারক শ্রেণীর কিছু মানুষের নানা অপকর্ম, ঘুষ নেওয়া, ফেন্সিডিলের ব্যবসা ইত্যাদি কুকর্মের কথা । এইরকম যাদের বিবেচনা বোধ তারা কি করে বিবেচনা করবে কে অপরাধী আর কে নিরাপরাধ? এখন আমার প্রশ্ন কিসের ভিত্তিতে বা কোন এখতিয়ারে কোন সরকারী কর্মচারীকে দিয়ে কোন কর্মকর্তা তার স্ত্রীর নোংরা মাখানো কাপড় পরিস্কার করাতে পারে? কোন আইনের বলে একজন অসুস্থ কর্মচারীকে কাজচোর আখ্যা দিয়ে অমানুষিক পরিশ্রম করাতে পারে? আমি সরকারী কর্মচারী কল্যাণ সমিতির একজন নেতার সাথে কথা বলে বুঝেছি তারা এমন কোন ব্যাপারে নাক গলাইনা যেখানে তাদের বিক্তিগত লাভ নাই।

একজন অভিজ্ঞ আইনজীবির সাথে কথা বলেছি, তিনি বলছেন লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোর কথা। কিন্তু তিনি একথাও বলেছেন যে কা-কে কা-কের মাংস খাই না ফলে বেচারি ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী উলটা বিপদে পড়তে পারে। এই সমস্যাটি শুধু একজনের নয়। একটু খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন সরকারী উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভেতরের সর্ম্পকটা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই কলোনালিজমের সেই প্রভু আর দাসের মতই রয়ে গেছে। বেচারা এখন না পারছে সইতে না পারছে চাকুরি ছেড়ে দিতে কারণ তার পরিবারটা চলে তার বেতনের টাকার ঊপর।

কেউ কি এই মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপদগ্রস্ত মানুষটাকে বাঁচানোর জন্য কোন সঠিক পরামর্শ দিতে পারেন। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৪৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।