'সব কিছুই নষ্টদের অধিকারে চলে যাবে',
হুমায়ূন আজাদ স্যারের আশ্চার্য এই ভবিষ্যত্ বানী ধ্রুব সত্যের মতোন মনে হয় এখন। দেশটা ইতিমধ্যে নষ্টদের অধিকারে চলে গেছে। অদ্ভুত এক আধাঁরের চাদরে ঢেকে গেছে রাষ্টের শরীর। কবিরা তাঁদের অন্তদৃষ্টি দিয়ে নিকট ও দূর ভবিষ্যতের অনেক কিছু দেখতে পান। জীবনানন্দও তাই অনেক অনেক আগেই অদ্ভুত এই আঁধার নামার কথা বলে গিয়েছিলেন।
বোধকরি খানিকটা দেখেও গিয়েছিলেন। কিন্তু দ্বাবিংশ শতাব্দীর দিকের সেই ছোট ছোট আধাঁরগুলো আজ অমাবস্যায় পরিনত হয়েছে। ঘোরতর এক অমাবস্যা।
বছর দশেক আগে একটা বিজ্ঞাপনের কথা মনে পড়ছে ,আমাদের চোখ বন্ধ,আমাদের পা বাঁধা,আমাদের মুখ বন্ধ।
সত্যিতো আমাদের মুখ বন্ধ,আমাদের চোখ বন্ধ আমাদের হাত- পা সবই বাঁধা।
আমরা যা দেখি তা বলতে পারি না,যা চিন্তা করি তা লিখতে পারি না। আমরা যারা মুক্তচিন্তা করি,প্রগতির কথা বলি,স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলি মৌলবাদী অপশক্তি তাদের কন্ঠ রুখতে চেয়েছে বারবার। এদেশে হুমায়ুন আজাদকে চা পাতির কোপে রক্তাক্ত হতে হয়। দাউদ হায়দার কিংবা তাসলিমা নাসরিনদের মতো প্রগতিশীলদের দেশ ছাড়া হতে হয়।
প্রগতিশীলরা চিরকাল মুক্তবুদ্ধি চর্চার কথা বলে,মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে কাজ করে ,ধর্মব্যাবসায়ীদের ভন্ডামীর বিরুদ্ধে কথা বলে তাই মৌলবাদীরা তাদের কন্ঠ রুখতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু অবাক হতে হয় যখন স্বাধীনতার পক্ষের কোন সরকার বাকস্বাধীনতার বাঁধা হয়ে দাড়ায়। ব্লগার সুব্রত শুভ,রাসেল পারভেজ ও মশিউর রহমানদের গ্রেফতার তাই কেবল অন্যায় ও অযৌক্তিকই নয় বরং সরকারের মেরুদন্ডহীনতার প্রমাণ। যে তরুন ব্লগাররা একদিন মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে গনজাগরন করে তুলেছিল, তার প্রথম থেকেই সরকারের অকুন্ঠ সমথর্ন আমরা প্রশংসা করেছিলাম। কিন্তু এরপর আমার ব্লগ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছয় ব্লগারের তথ্য চাওয়া,তথাকথিত ধর্মব্যবসায়ী মাওলানা আরেফের থেকে ৮৪ ব্লগারের
তালিকা গ্রহন,গনজাগরন মঞ্চ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকী সব মিলে একেরপর এক কর্মকান্ড আমাদের অবাক করছে। আমরা ক্ষুব্ধ,আমরা বিস্মিত আমরা হতাশ।
কিন্তু কেন হঠাত্ করে সরকারের এই সিদ্ধান্ত। তথাকথিত হেফাজতে ইসলামের সাথে সমঝোতার চেষ্ঠা?সরকার কি গনজাগরন মঞ্চকে তাদের চেয়ে শক্তিশালী মনে করছে?তাদের প্রতিদ্বন্দী ভাবছে?তারা বোধহয় ব্লগারদের গ্রেফতার করে দেশের ধর্মভীরু সাধারন জনগোষ্ঠীর কাছে নিজেদের ইসলাম প্রেমী প্রমান করতে চাইছে?কারন ইতিমধ্যেই জামাত শিবিরের প্রতারকরা সাধারন মানুষের কাছে ব্লগার মানেই ধর্ম বিদ্বেষী ধারনাটি প্রতিষ্ঠিত করতে উঠে পড়ে লেগেছে। আওয়ামীলীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস প্রগতির পক্ষের। স্বাধীনতার পক্ষের। তাই তাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশার চাপটাও বেশি।
বলতে গেলে প্রত্যাশার চাপটা কেবল তাদের কাছেই। তাই তাদের এমন গর্হিত আচরন মোটেও প্রত্যাশিত নয়।
ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্তকরজ্বল আমার এ প্রিয় দেশ আফগানিস্থান কিংবা পাকিস্থানের মত কখনই মউলবাদিদের অভয়ারন্য হতে পারে না,। তাই একদিন সব আঁধার কেটে যাবে। এদেশ থেকে মৌলবাদীদের শিকড় একদিন উচ্ছেদ হবে।
সেই আশায় পথ চেয়ে থাকলাম। আমার মতো আরো অনেকেই থাকলো। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।