আনু মিয়ার ডিভি
তাইফুর সরোয়ার
চৈত্রের তপ্ত দুপুর। সূর্যের প্রচণ্ড দাবদাহে মাঠঘাট ফেটে চৌচির। জনজীবনে নেমে এসেছে অস্বস্তি। এই অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আনু মিয়া। আনু মিয়ার ভালো নাম আনোয়ার হোসেন।
মা, বাবা এবং আত্মীয়-স্বজনদের স্নেহ-ভালবাসায় আনোয়ার হোসেন নামটাই হয়ে গেছে আনু মিয়া। আনু মিয়া তার দুপুরের সময়টা কাটায় বাড়ির পিছনের সুপারি বাগানে। বাগানের দক্ষিণ কোণে তিন হাত উঁচু বাঁশের মঞ্চ তৈরি করে সেখানে চলে তার অবসর যাপন। মাঝে মাঝে রেডিও ছেড়ে নিজেকে সে সুরের ভেলায় ভাসিয়া দেয়। জায়গাটা খুব সুন্দর।
মৃদু বাতাসে বাগানের গাছগুলো সন্তর্পনে নড়ে ওঠায় সূর্যের তীব্রতা অনুভব হয় না। তাই ক্লান্ত দেহ বাঁশের মঞ্চে লাগাতেই সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ঘুমের ঘোরে স্বপ্নের রাজ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলে আনু। স্বপ্নের জগতে তার সাথে এক বিদেশী মেমের পরিচয় হয়। ঐ মেমের সাথে সে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায়, তাদের মধ্যে অনেক আলাপ হয়।
বিদায় বেলা মেম আনুর দিকে একশ কোটি টাকার একটি চেক বাড়িয়ে দেয়। চেকটি হাতে নেয়ার সময়ই ছোট ভাই ইবুর কণ্ঠস্বরে ঘুম ভেঙ্গে যায় তার। মুহূর্তের মধ্যে সে স্বপ্নরাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ইস! আর একটুর জন্য কোটিপতি হতে পারলাম না! এই আফসোস থেকেই ইবুর প্রতি তার খুব রাগ হয়। ইবু জানায় বাড়িতে ডাক পিয়ন এসেছে।
এটা শুনে আনুর রাগ আরো বেড়ে যায়। কারণ এটা তার জন্য কোন নতুন খবর নয়। মাসের মধ্যে তাদের বাড়িতে দু-এক বার ডাক পিয়ন আসেই। বড় ভাই হিরন, যে ঢাকা চাকরি করে, তার চিঠি কিংবা টাকা পৌঁছাতেই পিয়নের তাদের বাড়িতে যাতায়াত। কিন্তু ইবুর কাছ থেকে যখন সে জানতে পারে যে আমেরিকা থেকে চিঠি এসেছে তখন তার সমস্ত রাগ সূর্য ভীরু শিশিরের ন্যায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
আনুর মনের মধ্যে বিষ্ময়ের সূচনা হয়। তার কৌতুহলী মন ইবুর কাছে জানতে চায়, যে কিভাবে সে বুঝল চিঠিটা আমেরিকা থেকে এসেছে? উত্তরে ইবু জানায়, এটার উপরে ইংরেজি লেখা। আর ইংরেজির দেশ তো হল আমেরিকা। আরবি হলে হত সৌদি আরব। আনু এবং ইবু বাড়ির দিকে দ্রুত পায়ে আসতে শুরু করে।
চলতি পথে আনুর মনের মধ্যে নানা জল্পনা-কল্পনা উঁকি দেয়। কে চিঠিটা পাঠিয়েছে? কী লেখা আছে এতে? কেনইবা পাঠিয়েছে? উত্তরবিহীন নানা প্রশ্ন তাকে আরো কৌতুহলী করে তোলে। তারা বাড়িতে এসে দেখে পিয়ন চলে গেছে। আনুর মা জোনাকী বেগম আনুকে খামটা দিল। খামটা হাতে নিয়ে আনু অনেক্ষণ এপিঠ ওপিঠ দেখল।
ইবুর জিজ্ঞাসু চোখজোড়াও তাকিয়ে আছে খামটার দিকে। হঠাৎ ইবু বিষ্ময় ভরা কণ্ঠে বলল ভাইজান, তুমি কি ডিভি পাইছ? মুহূর্তের মধ্যে আনুর মনে চেতনার সঞ্চার হয়। ছোট ভাইয়ের প্রশ্নটা তার মনে তীব্র কম্পন সৃষ্টি করে। তার কল্পনার চোখে ভেসে ওঠে সুপারি বাগানের মঞ্চের উপর ঘুমের ভিতরের মেমের কথা। আনু ভাবে বিদেশী মেমের সেই বাগানে একশ কোটি টাকার চেকটাই হয়তো এই ডিভি লটারির খাম।
আনু আবেগে আপ্লুত হয়ে নিজের অজান্তেই বলে উঠে, ডিভি পাইছি।
বিকালের মধ্যেই সারা গ্রাম ছড়িয়ে পড়ে, যে মৃত আনিস ব্যাপারির মেঝো ছেলে আনু মিয়া ডিভি লটারি জিতে আমেরিকা যাচ্ছে। রাতারাতি আনু মিয়ার দর কয়েকশ গুন বেড়ে যায়। দোকানে চা খেয়ে তাকে আর পঁয়সা দেওয়া লাগে না। সবার মাঝ থেকেই কেউ একজন তার পক্ষ অবলম্বন করে চায়ের দাম দিয়ে দেয়।
অনেক সময় দোকানিরাও তার কাছে দাম রাখে না। শুধু আনুর একটু নেক নজর পাওয়ার জন্য। আমেরিকা গিয়ে সে তাদের যেন ভুলে না যায়।
রাতে আনু মিয়ার ঠিক মত ঘুম হয় না। যক্ষের ধনের মত সে খামটাকে বুকের সাথে আগলে রাখে যাতে বে-হাত হয়ে না যায়।
একটা অজানা আশঙ্কায় মাঝ রাতে তার ঘুম ভেঙে যায়। আধঘুম চোখে তখন সে বালিশের নিচে কিংবা আলমারির শেষ তাকের পুরাতন জামা কাপড়ের স্তুপের নিচে রাখা খামটা হাতে নিয়ে দেখে ঠিক মত আছে কিনা। খামের অস্বিত্ব নিশ্চিত করার পরই সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। তারপর আবার ঘুমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ঘুম আর আসে না।
ঘুমের জায়গাটা দখল করে নেয় কল্পনা। আনু কল্পনার চোখ দিয়ে দেখতে শুরু করে প্লেন থেকে আমেরিকার মাটিতে নামছে। দেশটা ছবির মত সুন্দর, আকাশে বাতাসে সেখানে শুধু টাকা উড়ছে। হাত বাড়ালেই শুধু টাকা, টাকা আর টাকা! এত টাকা সে গুনে শেষ করতে পারছে না।
আনুর ঘরের পূর্ব পাশের বাঁশের বেড়াটা উঁই পোকায় ধরায় নষ্ট হয়ে গেছে।
এই নষ্ট অংশ দিয়ে যে কোন চোর-ডাকাত ঘরের ভিতর এসে তাকে আঘাত করে খামটা নিয়ে নিতে পারে। তাই খামটা আসন্ন চুরি থেকে বাঁচাতে বাঁশের নষ্ট বেড়াটা পাল্টিয়ে সেখানে টিন দিয়ে নতুন বেড়া দেয়।
খবর পেয়ে পরদিন বিকালে আলিম মামা এসে হাজির হল। আলিম মামা তার বক্তব্য প্রকাশ করল, তার শত ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও এসেছেন আনুকে আমেরিকা যাওয়ার জন্য সাহায্য করতে। কারণ ডিভি পাওয়াই যে আমেরিকা যাওয়া তা তো নয়।
ডিভি পাওয়ার পরও অনেক ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়। অফিস সংক্রান্ত বিভিন্ন ঝামেলা সহ্য করতে হয়। নিরক্ষর হলেও আলিম মামার বিশ্বাস, যে কোন অফিসে তার কথার আলাদা মূল্যায়ন আছে। মামা তার বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে এখানে আসায় তার ব্যবসায়ের বিভিন্ন ক্ষতির কথা তুলে ধরে আনু এবং জোনাকী বেগমকে লজ্জিত করেন।
খবর পেয়ে সন্ধ্যায় আনুদের বাড়িতে রহিমার বাবা গনি মোল্লা মিষ্টি নিয়ে হাজির হয়।
আনু রহিমাকে খুব ভালবাসে। রহিমা এবং আনুর মধ্যকার ভাবটা আজ কয়েক বছর ধরে। তাদের ভালবাসাটা বিয়ে পর্যন্ত গড়াতে পারে নি। শুধু রহিমার বাবা এই গনি মোল্লার কারণে। বেকার অস্বচ্ছল হওয়ায় আনুর হাতে কন্যা দানে তার এই অসম্মতি।
কিন্তু আজ আনু ডিভি লটারি পেয়েছে। এ খবর শুনে গনি মোল্লা তার মত পাল্টিয়ে আনুকে তার মেয়ের জামাই করার প্রস্তাব নিয়ে মিষ্টি হাতে এসেছেন। লজ্জায় আনুর কপোলজোড়া লাল হয়ে গেল। গনি মোল্লা প্রস্তাবটা প্রথমে মামার কাছে উপস্থাপন করলেন। প্রস্তাব শুনেই মামা এক বাক্য না বলে দিলেন।
তিনি গনি মোল্লাকে বললেন যে, তার আমেরিকাগামী ভাগ্নেকে কোন মোল্লা-মৌলভির মেয়ের সাথে বিয়ে দিবেন না। মামার মতে, মোল্লা-মৌলভির ঘরে তার ভাগ্নে জামাই হয়ে গেলে সেখানে উপযুক্ত সমাদর হবে না। এ কথায় গনি মোল্লা আশাহত মনে বাড়ি ফিলে গেলেন। মামার অসম্মাতিতে আনুর খুব রাগ হল। রহিমাকে বিয়ে করার জন্য আনু কম চেষ্টা করেনি।
তার ইচ্ছার পক্ষে রহিমার পূর্ণ সমর্থন ছিল। কিন্তু বাধ সাদল রহিমার বাবা গনি মোল্লা। গনি মোল্লার মন যোগানোর জন্যও আনু কম চেষ্টা করে নি। হাটে-বাজারে, রাস্তায় যেখানে দেখা হতো সেখানেই সে আগ বাড়তি খাতির করার চেষ্টা করত। নিজেদের বাগানের সুপারি চুরি করে বাজারে বিক্রি করে গত কোরবানির ঈদে গনি মোল্লার জন্য পাঞ্জাবি পর্যন্ত কিনেছিল।
গনি মোল্লা পাঞ্জাবি নিয়েছিল ঠিকই কিন্তু তার পাষণ্ড হৃদয়ে আনুর জন্য কখনো মায়া কিংবা স্নেহের জন্ম হয়নি। গনি মোল্লা তার সিন্ধান্তে অনড়-ই ছিলেন। আজ যখন গনি মোল্লা নিজ থেকেই বিয়ের কথা পাকা করতে এসেছেন তখন তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আনুর রাগ হওয়াটাই স্বভাবিক। মামা আনুকে বোঝালেন যে, সে আমেরিকা যাচ্ছে। আর আমেরিকাগামী পাত্রের সুন্দরী এবং ধনী পাত্রীর অভাব হয় না।
আনুও চিন্তা করল সত্যিই তো, সে যাবে আমেরিকা! মোল্লার মেয়েকে বিয়ে করাটা অবশ্যই বেমানান। উচ্চাশার আকস্মাৎ মোহে পড়ে রহিমার ভালবাসা তার কাছে নিমিশেই তুচ্ছ হয়ে গেল।
মামার কথা যে একে বারে অযৌক্তিক নয় তা আনু দু-তিন দিনের মধ্যেই বুঝতে পায়। আনুদের বাড়ি যেন ঘটকরা আর ছাড়ে না। ডিভি বিজয়ী আমেরিকাগামী আনুর জন্য প্রতিদিন-ই বিভিন্ন প্রস্তাব আসতে শুরু করে।
কোনটা ধনী চেয়ারম্যানের মেয়ে, কোনটা বিরাট ব্যবসায়ীর একমাত্র মেয়ে, কোনটাতে মেয়ের সাথে বিরাট অঙ্কের যৌতুক প্রদানের ও প্রস্তাব এসেছে। ঘটকদের এতসব প্রস্তাব এবং তার সাথে বিভন্ন সুবিধার কথা শুনে আনু তো কিংকর্তব্যবিমূড়। মামা প্রত্যেক ঘটকের সাথে এমন ভাবে ব্যবহার করেন, যেন তিনি ঐ ঘটকের প্রস্তাবিত মেয়েকে-ই আনুর সাথে বিয়ে দেবেন। মামা আনুর কানে ফিসফিসিয়ে বলেন, যে তারা কোন ঘটককেই নিরাশ করবেন না। তাদের কাছে পাত্রী দেখা মূখ্য নয়, মূখ্য হল পাত্র পক্ষের জন্য আয়োজিত খাবার দাবারটাই।
খাবার শেষে তারা কনে কিংবা তার পরিবারের কোন একটা দোষ ধরে প্রস্তাবটা প্রত্যাখ্যান করে চলে আসবে। আনুও ভেবে দেখল মামার বুদ্ধিটা একে বারে মন্দ না। মামার উপস্থিতিটা তার কাছে অনেকটা সুখের পায়রার মত। তিনি না থাকলে উদ্ভূত এ সকল পরিস্থিতি যে সে একা কিভাবে সামাল দিত তা ভেবেই পায় না।
এরই মধ্যে ব্যস্ততা আরো বেড়ে গেলে।
মামা তো মেয়ে দেখার জন্য ঘটকদের শিডিউল দিতে গিয়ে রীতিমত হিমসিম খেয়ে যাচ্ছেন। মেয়ে দেখা উপলক্ষে সকালের নাস্তাটা করা হবে কিরণপুরের চেয়ারম্যান বাড়িতে। দুপুরের আহার হবে আবু বাজারের মহাজনের বাড়িতে। রাতের খাবারের আয়োজন হবে এক সম্ভ্রান্ত বাড়িতে।
আমেরিকাগামী ছেলেকে মেয়ের জামাই বানাতে কন্যা পক্ষের সে কী আয়োজন! হরিণের কোরমা, পুঁটির রেজালা, চিংড়ির হালুয়া, শুঁটকির দোপায়া, ধনে পাতার কুসুন্দি ইত্যাদি মুখরোচক খাবার যোগ হয় মেন্যুতে।
ছেলে পক্ষকে খুশি করতে কন্যা পক্ষের এ যেন এক নীরব প্রতিযোগিতা। পেট ভরে খাবার পর সামান্য খূঁত ধরে তারা প্রস্তাবটা বাদ দিয়ে পাড়ি জমায় অন্য বাড়িতে। মামা কোন বাড়িতে মাংসে তেল কম হয়েছে বলে বাড়ীর কর্তাকে কৃপণ উপাধি দিয়ে প্রস্তাবটা বাদ দেন। আবার কোন বাড়িতে চিংড়ির হালুয়ায় লবণ বেশি হয়েছে বলে কন্যা পক্ষকে অমিতব্যায়ী বলেও প্রস্তাবটা বাদ দেন। কোন বাড়ির পুকুরের ঘাট নেই, কোন মেয়ে খাটো, কোন মেয়ে মোটা, কোনটার আবার চুল ছোট ইত্যাদি অজুহাত দেখিয়ে চলে তাদের প্রস্তাব বাতিলের আয়োজন।
অবশেষে বাধ্য হয়ে আনুকে অনেকটা জোরপূর্বক মাতাব্বর বাড়ির এক কুৎসিত মেয়ের সাথে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়েছে।
সে দিন ছিল মঙ্গলবার। মঙ্গলবার হলেও দিনটা আনুর জন্য মঙ্গল বয়ে আনতে পারিনি। মীর বাড়ির কাছারি ঘরে দুপুরের আহার শেষে বিশ্রাম নেওয়ার সময় তন্দ্রায় তাদের চোখ ভারি হয়ে ওঠে। কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নেয়।
হঠাৎ মাঝ বয়সী কাঁচা-পাকা দাড়িওয়ালা এক লোকের ফিসফিসানিতে ঘুম ভেঙ্গে যায় তাদের। লেকটা নিচু স্বরে সরিষাপুর গ্রামের মাতাব্বর বাড়ির এক সুন্দরী মেয়ের প্রস্তাব তুলে ধরে। লোকটির বক্তব্য- মেয়েটি যেমন সুন্দরী তেমন গুণবতী। তাছাড়া মেয়েদের কয়েকশ কানি জমিও আছে। এই মেয়ের সাথে যার বিয়ে হবে সে এক সাথে রাজকন্যা ও রাজ্য দুটোই পাবে।
লোকটার কথায় দুজনই লোভে পড়ে গেল। তারা মীর বাড়ির সুশ্রী মেয়েটাকে বাম চোখ ট্যারা উপাধি দিয়ে চলল সরিষাপুরের পথে। বিয়ে না হোক অন্তত রাতের খাবারটা ভাল হবে এই ভেবেই তাদের পথ চলা। পথে মামা আনুকে বারবার নিজের উপকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে লাগল। শুধু এই বিশাল উপকারের সামান্য প্রতিদান স্বরূপ আনুকে আমেরিকা যাবার পর তার জন্য একটি আমেরিকার ভিসার ব্যবস্থা করতে বললেন আনুও ভেবে দেখল যে মামার মত বুদ্ধিমান মানুষের জন্য আমেরিকাই উপযোগী।
তারা যখন সরিষাপুরের মাতাব্বর বাড়িতে পৌঁছাল তখন সন্ধ্যা। বকের সারিগুলো ব্যস্ত পাখায় আপন নীড়ে উড়ে যাচ্ছে। সূর্যটা দিনের শেষে পশ্চিম আকাশে লাল রঙ ছড়িয়ে বিদায় নিচ্ছে। বাড়িতে ঢুকেই দুজন বুঝতে পারল, লোকটার কথার সাথে কাজের কোন মিল পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু এটা বোঝা যাচ্ছে, যে এক সময় এদের অনেক যৌলুস ছিল।
সন্ধ্যার পর পরই তাদেরকে মেয়ে দেখানো হলো। উল্লেখ করার মত কোন বিশেষ গুণ বা রূপ তাদের চোখে পড়ল না। মেয়েটার গায়ের রং কালো, চেহারা তেমন সুশ্রী নয়। রাতের খাবারেও তেমন বিশেষ কোন আয়োজন ছিল না। তারপরও পেট ভরে খাবার শেষে যখনই মেয়ে পক্ষের কোন দোষ ধরে প্রস্তাব বাদ দিতে যাবে, সুঠাম দেহী লম্বা গোঁফওয়ালা পাঁচ ছয়জন লোকের মুখের ভয়ঙ্কর ভাব দেখে আলিম মামার কণ্ঠ থেমে গেল।
ভয়ে কিছুতেই তিনি না শব্দটি উচ্চারণ করতে পারলেন না। ফান্দে পড়ে বিয়েতে মামা রাজি হয়ে গেলেন। এত এত সুন্দরী মেয়ে দেখে পছন্দ না করে এই কুৎসিত মেয়েকে বিয়ে করার জন্য মত দেওয়ায় আনু তো মামার উপর রেগে আগুন। ফিসফিসিয়ে মামা আনুকে বোঝালেন, যে এখানে মত না দিলে তারা হয়ত জীবিত অবস্থায় আর বাড়ি পৌঁছাতে পারবে না। তাছাড়া আমেরিকাতে মেশিনের মাধ্যমে কালো মানুষকেও ধবধবে সাদা বানানো যায়।
মেশিনের এ প্রান্ত দিয়ে ঢুকিয়ে ওপ্রান্ত দিয়ে বের করলেই গায়ের রং ফর্সা হয়ে যায়। ভয়ে আনুও বাধ্য হয়ে বিয়েতে মত দিল।
আনুর হঠাৎ করে বিয়ে করার খবর পেয়ে তার বড় ভাই হিরন ঢাকা থেকে বাড়ি আসল। আসার পথে গ্রামের বিভিন্ন মানুষের মুখে তার ছোট ভাইয়ের ডিভি লটারি বিজয়ের কথা শুনে সে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। বাড়িতে এসে আনুর কাছ থেকেও ইতিবাচক উত্তর শুনে কৌতুহল আরো বেড়ে গেল।
কিন্তু ডিভি লটারির জন্য আবেদন করতে তো এইচএসসি পাশ হতে হয়। হিরন আনুকে ডিভি লটারির জন্য আবেদন করেছিল কিনা জানতে চাইলে আনু তাকে ঘরের এক কোণায় নিয়ে যায়। ফিসফিসিয়ে বলে, যে সে আবেদন করেনি ভুল করে ডাক পিয়ন অন্যের ডিভি লটারির ভিসা তার কাছে দিয়ে গেছে। এ কথা শুনে হিরনের চোখ কপালে উঠে। সে খামটা আনতে বলল।
খামটা হাতে পেয়ে হিরনের সব কৌতুহল এবং বিস্ময়ের অবসান হলো। গত মাসে হিরন আমেরিকান লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে একটি বীমা করেছিল। এটা সেই বীমার রশিদ। বিদেশী কোম্পানী বলে খামটার উপরের এবং ভিতরের ফর্মে সব তথ্য ইংরেজিতে লেখা। হিরনের কাছ থেকে এ কথা শুনে আনু এবং আলিম মামার অবস্থা মরমর।
দীর্ঘ মোহের মধ্যে হঠাৎ বাস্তবতার জল পড়তেই তারা যেন সম্বিৎ ফিরে পেল। খবরটা সারা গ্রাম ছড়িয়ে পড়ার আগেই মান বাঁচাতে রাতের ট্রেনে তারা দুজন অজানার উদ্যেশে পাড়ি জমাল। ....
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।