***
মায়ের অবস্থা যখন তখন। দেখতে হলে এখুনি দেশে যেতে হবে। স্পন্সরকে বলার সাথে সাথে পাসপোর্ট রেডি!
টিকেট চাই "বিমানের" বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন "আকাশে শান্তির নীড়"! এই বিমানের টিকেট AVAILABLE কথাটি এই দেশ এসে অব্ধি শুনিনি!
কোথাও টিকেট না পেয়ে অগত্যা বিমান অফিসে! কর্মকর্তা আমার সাথের ভদ্রলোকের পূর্ব পরিচিত। সব শুনে বললেন, " কোন ট্রাভেল এজেন্সি থেকে তারিখবিহীন একটা ব্ল্যাংক টিকেট কিনে নিয়ে আসেন। "
পাশেই ট্রাভেল এজেন্সি।
টিকেট কেনা হলো। চোখের ইশারায় লেন-দেন!
কর্মকর্তা নিজ হাতে-ই টিকেটের উপর লেবেল লাগলেন, তারিখ বসালেন! ডিজিটাল দেশে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে সব ঠিক করা হলো!
এরপর তিনি কাউকে ফোন জানালেন, "আপনার ফ্লাইট ক্যান্সেল হয়ে গেছে, আপনার ফ্লাইট দুদিন পর!"
কতো ক্ষমতাধর ব্যক্তি!নমোঃ নমোঃ!
***
প্রবাসীদের প্রায় সবারই নিজ দেশের প্রতি মমত্ব একটু বেশি-ই থাকে, নাড়ির টানে এরা স্বদেশকে লালন করে বুকের ভেতর।
আর তাই দেশের ভালোমন্দ দুই-ই নিয়েই তাঁদের অনেক আগ্রহ-হতাশা।
আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে দূর-সুদূরে এরা এক রকম বন্দী, অসহায় জীবন যাপন করেন, খেটে খাওয়া এসব শ্রমজীবীদের পাঠানো রেমিটেন্সে দেশের অর্থনৈতিক প্রবাহ,
বিদেশী মুদ্রার অব্যাহত সহায়তা সরকারী রিজার্ভ বাড়ানোতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখলেও এরা নানা বৈষম্য, হয়রানির শিকার হন নিজ ভূমেই।
একজন কর্মজীবী প্রবাসী স্ত্রী-পুত্র-কন্যা কিম্বা আপনজন রেখে একটু সুখের আশায় বুক বেঁধে ২ বা ততোধিক বছর কাজ করার পর ছুটি কাটানোর স্বপ্নে বিভোর হয়ে নিজের কষ্টার্জিত টাকায় বাবার জন্য বাতের ব্যথা নাশক চেইন, তসবি, জায়-নামাজ, মায়ের জন্য কম্বল, স্ত্রীর জন্য শাড়ি, কসমেটিকস ইত্যাদি টুকি-টাকি নানান জিনিস কিনেন।
সবাইকে খুশি করতে হবে যে!
****
দেশে যেতে হবে চাই টিকেট বুকিং। যাত্রীদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধার প্যাকেজ দেয়া আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন নয় সবাই নিজের দেশের "বিমান" বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকেট কিনতে মরিয়া! নাড়ির টান বলে কথা! দুটি টাকা বিমান পাক, দেশ এগিয়ে যাক। অথচ বিমানের লন্ডন ও মধ্যপ্রাচ্যের ভাড়া সবচেয়ে বেশি। সর্বসাকুল্যে মাত্র ৮টি উড়োজাহাজ নিয়ে চলছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স চলছে! অথচ টিকেটের দাম অন্য যেকোনো এয়ারলাইন থেকে ৫/৭ হাজার টাকা বেশি তবু কেউ পরোয়া করেনা।
এয়ারপোর্টে 8 ঘণ্টা আগে রিপোর্ট করার নিয়ম।
বিমানের বেলায় সেটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। সকাল ০৩.৪৫ মিনিটের ফ্লাইট। রাত ১১ টায় এয়ারপোর্টে প্রবেশ করে ইমিগ্রেশন নয় সারারাত
এয়ারপোর্টের বাইরে কাটানোটাই এখানে বিমানের যাত্রীদের অলিখিত নিয়ম! সকালে কঠোর কাস্টমস চেকিং, নির্দিষ্ট ওজনের বেশি মালের জন্য কিলো প্রতি প্রায় ১০০০ টাকা পরিশোধ করে কিম্বা ম্যানেজ করে নিতে হয়! আনুমানিক সকাল পৌনে ৮ টায় বিমান আকাশে পাখা মেলে!
****
বাংলাদেশে পৌঁছে সবার আগেই চাই নিজের কার্টুনগুলো/লাগেজগুলো। বেল্টের সামনে অপেক্ষারতদের চারপাশ থেকে দালালের দল ছেঁকে ধরে! "ভাই কাস্টমস দেবার মত কিছু আছে!
আমার সাথে কন্টাক্ট করেন আমি বিনা কাস্টমসে আপনার মাল ছাড়াবো!"
মনে প্রশ্ন জাগে, "এত স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হয়ে এরা ভেতরে প্রবেশ করলো কি করে!
পকেট কেটে, হ্যান্ড ব্যাগ চুরি করে মুহূর্তেই কেটে পড়ে কি করে?"
ওই সিসি টিভিগুলো কোন কামের জন্য বসানো?
****
মায়ের মৃত্যু সংবাদে মাত্র দুই মাসের ছুটিতে ২০ ডিসেম্বর পাবনা সদরের জালাল বাংলাদেশে গিয়েছে এয়ারপোর্টে তাঁর মালামাল আসেনি! ক্লেইম করেও এতদিনে সে তার কার্টুনের হদিস পায়নি।
সে জানিয়েছে ওই একই ফ্লাইটে আনুমানিক ৫০/৬০ জন যাত্রীর লাগেজ আসেনি।
গত ২রা জানুয়ারি আনোয়ার হোসেন নামের কেরানীগঞ্জের একজন যাত্রী তার লাগেজ খুঁজে পাননি। ব্যাগেজ ক্লেইম করে দু'দফা এয়ারপোর্টে গিয়েও মালের হদিস পায়নি। কর্তা-বাবুরা বলেছেন,
"আপনাকে আসতে হবে না। আমরা ফোন করে জানাবো। "
বিমানের এমন একটি ফ্লাইট নেই যেটিতে এই লাগেজ গায়েব/ না আসার মত মত ঘটনার রেকর্ড নেই!
****
রিয়াদ এয়ারপোর্টে বাঙালিদের ঘুষ-লেনদেন ওপেন সিক্রেট।
একটি সূত্র বলছে বিমানে কর্মরত একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট সংঘবদ্ধ ভাবে এয়ারপোর্টে যাত্রীর মালামালের বদলে স্মাগলার, আমদানি-কারকদের মাল প্রেরণ করছে। প্রতি কিলোতে অতিরিক্ত ১০০০ টাকা আদায় করা কিম্বা ঘুষের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া মালগুলো ফ্লাইটে তুলে দেয়া হচ্ছে। সাধারণ যাত্রীর মালামাল "কার্গো বিমানে" তুলে দেয়া হচ্ছে। সেগুলো সোজা বিমানের "গোডাউন"-এ চলে যাচ্ছে। অসাধু-চক্র যাত্রীর কার্টুন খুলে মালামাল হাতিয়ে কার্টুনগুলো নিয়ে হুবহু পূর্বের মত করে বেঁধে রাখছে।
সংঘবদ্ধ এই চক্রের কারণে বিমানের ইমেজ ধ্বংস হয়েছে অনেক আগেই, বাকি রয়েছে লাল বাতি জ্বালানো। কর্মরতদের দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচার, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, তুঘলকি কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয় না দেশে একটি নির্বাচিত সরকার আছে!
ভুক্ত-ভুগি, তাঁদের আত্মীয়-স্বজন কিম্বা আমি নিজেও কোনদিন বিমানের টিকেট কেনার আগে ৫০ বার ভাবব।
পাদটীকা: প্রিয় পাঠক যদি বলি, "হয়ে যাক একটা বিভাগীয় তদন্ত আপনারা কি দাবিটির সাথে একাত্ম হবেন না?"
প্রবাসীর সুখ-দুঃখ পর্বগুলোতে সাথেই থাকুন।
ছবি: ইন্টারনেট ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।