মানুষ মরেনা কখনো বিভিন্ন ধর্মীয় অথবা সামাজিক প্রথাসমূহের মাধ্যমে পরিবেষ্টিত হয়েই আমাদের ব্যক্তিগত জীবন আবর্তীত হয়। এই প্রথাগুলোর কতগুলো প্রয়োজনীয়, আবার কিছু নিছকই আনুষ্ঠানিক; বাস্তব জীবনের জন্য কোন উপকারীতাই নেই। তবে এই প্রয়োজনীয়/অপ্রয়োজনীয় প্রথাগুলোই জীবনে আনে বৈচিত্র, করে সুখকর অথবা ভীতিকর। এগুলো না থাকলে কিন্তু আজ মানুষ হয়ে উঠত নির্লিপ্ত; শুধুমাত্র খাদ্যগ্রহণ, আর শারিরিক চাহিদাগুলোর পরিপূরণের পর আর কোন আর্জি থাকতো না। আবার সময়ের আবর্তনে এই প্রথাগুলোর আধিক্যও জীবনকে বেশি ব্যতিব্যস্ত করে ফেলে।
এ কারনেই হয়তো বলা হয় "বারো মাসে তের পার্বন"। যদিও পাঠ্যবইয়ে এই বাগধারাটির অর্থ ভিন্নভাবে উপস্থাপিত, কিন্তু আমার মতে অত্যাধিক সংখ্যার "পার্বন" নিয়ে আমাদের জীবন যে মাঝে মাঝে অতিষ্ট হয়ে উঠে, তা বোঝাতেই এ বাগধারার ব্যাবহার। যাহোক, এখানে বাগধারার ব্যাবহার নিয়ে আসলে কথা বলব না, বলছিলাম পার্বনের সংখ্যাধিক্য নিয়ে। পৃথিবীর আর কোন জাতিতে এতটা নাই। এ কারনেই আমাদের দেশে ছুটিও আছে সবচেয়ে বেশি।
প্রশ্ন উঠতে পারে বেশি অনুষ্ঠান, বেশি আনন্দ - তাতে অসুবিধা কি? অসুবিধা এখানেই যে, বেশি অনুষ্ঠান-আনন্দের স্রোতে অবগাহনে আমাদের দেশী জনগনের কর্মবিমুখতা ও কাজ-কর্মের প্রতি নির্লিপ্ততার ব্যপ্তি বেড়ে যাচ্ছে অথবা ইতিমধ্যেই গিয়েছে। বাংলাদেশই এমন দেশ যেখানে এত অভাব-অনটনের মধ্যেও যে কোন প্রকার মেলার আয়োজন অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন করা যায়; কর্মবিমুখ প্রফেশন "ভিক্ষাবৃত্তি"র মানুষ মনে হয় এখানেই সবচেয়ে বেশি; রাস্তা-ঘাটে কোন কিছু হলেই উৎসুক দর্শকের অভাব চোখে পড়ে না। কারন, মানুষগুলো জেনেটিক্যালি দর্শক হয়ে মজা নেয়ায় বেশি অভ্যস্থ; কার্যকরি পদক্ষেপ (Active Role) নেয়ার চেয়ে। সুতরাং দেশের বাস্তবিক উন্নতি করার ইচ্ছা থাকলে এ দিকটিতেও আমাদের খেয়াল করা উচিৎ। বাদ দেয়া উচিৎ অপ্রয়োজনীয় আচার অনুষ্ঠান।
যুগের সাথে উপযোগী অনুষ্ঠান পালন আর আনন্দ পেতে বাধা নেই। কিন্তু অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচার-অনুষ্ঠান পালন করতে গিয়ে যেমন কষ্টার্জিত অর্থ-ব্যায় ঘটে, অপরদিকে দেশও পিছিয়ে পরে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা থেকে। আমরা দরিদ্র দেশ, দরিদ্র জনগোষ্ঠী। দারিদ্রতা দূরিকরণই হওয়া উচিৎ আমাদের প্রধান লক্ষ্য। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে অহেতুক সময় ও অর্থ অপচয় পরিহার করাই হবে আমাদের সকলের কাম্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।