ভালো থেকো বন্ধুরা
ওপরের ছবিটি দেখুন। বিস্ফোরণে ভেংগে চুরমার হয়ে গেছে একটি ফুলদানির নিচের অংশ। কিন্তু ওপরের অংশটি সটান দাঁড়িয়ে আছে–কাত হয়ে পড়ে যায়নি। এমনকি এতে রাখা ফুলপাতাও অক্ষত। সময় যেন থমকে আছে এখানে।
আসলে ফুলদানির নিচের অংশ ঠিক যখন বিস্ফোরিত হয়েছে, সময়ের সেই সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম মুহূর্তে ছবিটি তোলা হয়েছে–এর ওপরের অংশটি কাত হয়ে পড়ে যাওয়ার আগেই। যে প্রযুক্তিতে এই ছবিটি তোলা হয়েছে, তার নাম উচ্চ গতির চিত্রগ্রহণ বা হাই স্পীড ফটোগ্রাফি।
সময়ের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশে, এক সেকেন্ডের শত কিংবা সহস্রতম ভগ্নাংশে ঘটে যাওয়া ঘটনা, যা খালি চোখে ধরা পড়ে না–এরকম ঘটনার ছবি তোলাই হাই স্পীড ফটোগ্রাফির কাজ। উচ্চ গতির ছবি তোলার এই ধারণাটি নতুন নয়। বরং আলোকচিত্রশিল্পের প্রায় জন্মলগ্ন থেকেই এর চর্চা শুরু হয়েছিল।
১৮৭৮ সালে
এডওয়ার্ড মব্রিজ নামে একজন ইংরেজ চিত্রগ্রাহক সর্বপ্রথম পর পর কয়েকটি ক্যামেরা বসিয়ে দ্রুত ধাবমান ঘোড়ার ছবি তোলার পরীক্ষা চালান। ঘোড়া দ্রুত ছুটে চলার সময় কখনও এর চারটি পা-ই মাটি ছেড়ে শুণ্যে উঠে যায় কিনা–এটি বের করাই ছিল তাঁর পরীক্ষার উদ্দেশ্য। দিনে দিনে উচ্চ গতির ছবি তোলার প্রযুক্তি অনেক উন্নত হয়েছে এবং আলাদা হাই স্পীড ক্যামেরা ও আনুষাংগিক যন্ত্রপাতি তৈরি হয়েছে। মব্রিজের তোলা সেই কালজয়ী প্রথম ছবিটি দেখুন নিচেঃ
হাই স্পীড ফটোগ্রাফির মৌলিক বিষয় হচ্ছে, ক্যামেরার উচ্চতর শাটার স্পীড। শাটার স্পীড বেশি হলে ছবির মানও ভাল হবে।
এছাড়া আলোর অবস্থা (স্ট্রোব লাইটিং), ক্যামেরার এপারচার সাইজ এবং আইএসও স্পীডও ভাল ছবি তোলার ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। আরও কিছু কারিগরি বিষয় রয়েছে, যার আলোচনা এখানে প্রাসংগিক নয়।
এবার দেখা যাক, হাই স্পীড ফটোগ্রাফির বিষয়বস্তু কী কী। অতি উচ্চ গতিবিশিষ্ট বুলেট বা গুলির গতিপথ চিত্রায়ন করা এই ফটোগ্রাফির একটি জনপ্রিয় বিষয়। বন্দুকের ছুটন্ত গুলি খালি চোখে দেখা অসম্ভব হলেও হাই স্পীড ক্যামেরায় তা সহজেই ধরা পড়ে।
নিচে দেখুন একটি পিস্তলের গুলি কীভাবে একটি তাসকে দ্বিখণ্ডিত করে বেরিয়ে গেছে। অথচ তাসের ওপরের অংশটি তখনও পড়ে যাওয়ার সময় পায়নি!
অতি উচ্চ গতিবিশিষ্ট গুলির আরও কিছু ছবি দেখুন নিচেঃ
ছলকে ওঠা তরলের ছবি উচ্চ গতির চিত্রগ্রহণের আরেকটি জনপ্রিয় বিষয়। নিচে দেখুন ছলকে ওঠা পানির ফোঁটা আবার মিলিয়ে যাওয়ার আগেই কীভাবে ধরা পড়েছে হাই স্পীড ক্যামেরায়।
কফিতে ঢেলে দেওয়া দুধ মিশে যাওয়ার আগে শিল্পিত রূপ নিয়েছে নিচের ছবিতেঃ
তারপর দেখুন ছলকে ওঠা রঙিন তরলের শিল্পিত সৌন্দর্য:
নিচের অসাধারণ ছবিটিতে দেখুন, শাওয়ারের পানি লোকটির মাথায় পড়ার পর সারা গায়ে ছড়িয়ে পরার ঠিক আগে কেমন ছাতার আকার নিয়েছে।
বিভিন্ন বস্তুর বিস্ফোরিত হওয়ার বা ভেংগে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার মুহূর্তও চিত্রায়িত করে থাকে হাই স্পীড ফটোগ্রাফাররা।
যেমন, ভেংগে চুরমার হয়ে যাওয়া গবলেটের টুকরোগুলো ছড়িয়ে পড়ার ঠিক আগের মুহূর্তটি দেখুন নিচের ছবিতে।
নিচের ছবিতে হাওয়ায় ভেসে থাকা বুদবুদ আঙুলের খোঁচায় ভেংগে মিলিয়ে যাওয়ার ফুরসত পায়নি তখনওঃ
ভেংগে যাওয়া বস্তুর আরও কিছু ছবি দেখুনঃ
ফেটে যাওয়া পানিভর্তি বেলুন হাই স্পীড ফটোগ্রাফারদের আরেকটি প্রিয় বিষয়। নিচে অসাধারণ কিছু ছবি দেখুন। প্রথম ছবিতে সুপারসনিক গতিবিশিষ্ট একটি গুলি পানিভর্তি বেলুনে আঘাত করার মুহূর্তটি ধরা হয়েছেঃ
গুলিটি বেলুনের একদিক দিয়ে ঢুকে অন্যদিক দিয়ে বের হওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তটি ধরা পড়েছে পরের ছবিতে। বেলুনটি পুরোপুরি ফেটে গিয়ে ভেতরের পানি তখনও ছড়িয়ে পড়তে পারেনি।
পরের ছবিটি আরও অসাধারণ। সুঁইয়ের খোঁচায় বেলুন ফেটে গেছে, কিন্তু ভেতরের পানি তখনও পড়ে যায়নি, বরং বেলুনের আকৃতি ধরে রেখেছে।
নিচের ছবিটির কোন তুলনা হয় না। ফেটে যাওয়া বেলুনের আর কোন অস্তিত্বই নেই, কিন্তু ভেতরের রঙিন পানি তখনও এর আকৃতি ধরে রেখেছে–ছড়িয়ে পড়ার আগেই ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে হাই স্পীড ফটোগ্রাফির প্রয়োগ রয়েছে।
বিশেষ করে, ভৌত গবেষণায়, সমরাস্ত্র গবেষণা ও নির্মাণে, বিজ্ঞাপনচিত্র তৈরিতে এবং ক্রীড়া সাংবাদিকতায় এটি বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। আর শিল্পমাধ্যম হিসেবেও আলোকচিত্রীদের কাছে এর বেশ কদর রয়েছে–ওপরের বেশির ভাগ ছবিই তার প্রমাণ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।