প্রথম পর্বের লিঙ্কঃ
Click This Link
প্রথম পর্ব লিখে আপনাদের কাছ থেকে ভাল সাড়া পেয়েছি তাই ২য় পর্ব লেখার সাহস করলাম। গত পর্বে কাজের বুয়ার রান্না করা ৫ টা creative item এর উল্লেখ করেছিলাম। বাকি ৫ টা এখন দিচ্ছি। এই রান্নাগুলো পরখ করার ক্ষেত্রে আমি ছিলাম এক গিনিপিগ। কয়েকটা রেসিপি ভাল ছিল আর বাকিগুলো, আপনারাই ধারনা করে নিন আমার জায়গায় আপনি থাকলে কেমন লাগত।
৬. ধনে পাতার ফ্রাই
এই রান্নাটা আমার খুব একটা খারাপ লাগে নি। সবজি রান্নার জন্য বাসায় তখন কিছুই ছিল না। তাই বুয়ার মাথায় creativity-র পুরাতন রোগ জেগে উঠল । ধনে পাতাগুলোকে মশলা দিয়ে ভাল করে মেখে সরিষার তেলে ভাজা হয়েছিল। খাবারটা দেখে জিহবায় পানি এসে গিয়েছিল কিন্তু মুখে দিয়ে দেখি বুয়া লবন দিতে ভুলে গেছে।
আপনারা যদি এই রেসিপি তৈরি করতে চান তবে লবন দিতে ভুলবেন না কিন্তু।
৭. চিকেন ফ্রাই with টমেটো সস
নাম শুনে হয়ত ভাবছেন এ আর এমন কি নতুন খাবার। অপেক্ষা করুন, এখানেও creativity আছে। সাধারনত আমরা মুরগির মাংসের সাথে তৈরি করা টমেটো সস খেয়ে থাকি। কিন্তু আমাদের বুয়া অনেক বেশি creative. তিনি প্রথমে টমেটো সিদ্ধ করে জ্বাল দিয়ে কিভাবে জানি সস তৈরি করলেন।
সেই সসের ভিতর সিদ্ধ করা মুরগির মাংস ঢাললেন। তারপর তেল ও মসলা দিয়ে আবার অনেকক্ষণ জ্বাল দিলেন। তরকারিতে কোন ঝোল ছিলনা, ঝোলের বদলে ছিল সস। সেদিন ছিল শুক্রবার। সপ্তাহে একদিন একটু ভাল খেতে চাওয়ার অপরাধ করেছিলাম।
সেটার শাস্তি এমনভাবে পেতে হবে বুঝি নাই। মুরগির মাংসের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছিলাম “তুই ফ্রাই হইসিস ঠিক আছে, আমারে ফ্রাই করলি না কেন ?”
৮. বেগুন দোপেয়াজা with কালোজিরা ভর্তা
কালোজিরা অনেক রোগের ওষুধ ঠিক আছে কিন্তু এর ভর্তা খেতে আমার খুব একটা ভাল লাগে না, আমি আসলে খেতেই পারি না। দুর্ভাগ্যক্রমে বাসায় সেদিন কালোজিরা ছিল। বুয়াকে বললাম বেগুন ভাজি (আমার খুব প্রিয় খাবার) করতে। বুয়া বেগুন ভাজির সময় তার ভেতর কালোজিরা ঢুকিয়ে দিয়ে কিভাবে জানি বেগুন ভাজির উপর কালোজিরার একটা আবরণ তৈরি করল।
বলাই বাহুল্য, অতি সাধের বেগুন ভাজি আমার আর সেদিন খাওয়া হয় নি।
৯. গাজরাংস (গাজর + মাংস)
হয়ত ভাবছেন এইটা আবার কি নাম। গাজর এবং মাংসের সন্ধি করলে সম্ভবত তাই দাঁড়ায়। কোন ভাষাবিদ যদি থেকে থাকেন তিনি হয়ত আরো ভাল বলতে পারবেন। মাংস আমরা হয় ভুনা অথবা আলুর সাথে তরকারি আকারে খেয়ে থাকি।
আলুর বদলে অনেক সময় অন্য কিছু থাকে। কিন্তু সেই অন্য কিছুটা যদি শুধু গাজর থাকে তাহলে কেমন লাগে বলেন? সালাদ হিসাবে গাজর ঠিক আছে কিন্তু তরকারি হিসাবে চিন্তা করতে আপনাদের কেমন লাগে জানি না, আমার অসহ্য লাগে। কিন্তু বুয়ার creativity-র জ্বালায় আমাকে সেটাও সহ্য করতে হয়েছে।
১০. খিচুরি without ডাল
এইটা আমাদের ঘন ঘনই খেতে হয়। ডাল ছাড়া খিচুরির কথা কি আপনারা জানেন? না জানলে এখন জানুন।
যেদিন রাতে আমদের ভাত বেঁচে যায় তার পরদিন সকালে বুয়া রুটি তৈরি না করে ভাতগুলোকে হলুদের সাথে মিশিয়ে তেল দিয়ে ভেজে আমাদের জন্য রেখে যায়। তাতে তাঁর কষ্ট কম হয় কিন্তু আমাদের যন্ত্রনা বাড়ে বই কমে না। খেতে মাঝে মাঝে ভাল লাগে কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই বিরক্ত লাগে। কিন্তু কিছুই করার নেই।
সংক্ষেপে এই হচ্ছে আমাদের বুয়ার creativity-র নমুনা।
সামনে আরো যে কত creativity দেখতে হবে আল্লাহ্ই ভাল জানেন। আপনারা হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন কেন এই বুয়াকে আমরা এখনও বদলাচ্ছি না। তার দুটো কারন,
. ঢাকা শহরে কাজের বুয়া পাওয়া অনেক কঠিন, যারা মেসে থাকেন তারা এটা ভাল বুঝবেন।
. বুয়ার ব্যবহার অনেক ভাল। তার ভাল ব্যবহারের জন্য তার creativity কে আমরা ignore করি।
প্রথম পর্ব পড়ে আমার অনেক পরিচিতজন তাদের বুয়ার creativity-র কথা জানিয়েছেন। ইচ্ছে আছে যদি সময় করতে পারি তবে সেগুলোকে নিয়ে ৩য় পর্ব লেখার। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন। যারা মেসে থাকেন তাদেরকে বলব মানিয়ে নেওয়া ছাড়া যেহেতু কিছু করার নেই তাই কষ্ট করে মানিয়ে নিন। একটা সহজ সমাধান দিচ্ছি।
অবিবাহিতরা বিয়ে করে ফেলুন। কষ্টের দিন শেষ হয়ে যাবে।
প্রথম পর্বের লিঙ্কঃ
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।