আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভ্যাট-ট্যাক্স যদি দেই শিক্ষা কেন কিনতে হবে ???

গত ১০ জানুয়ারি ২০১২ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন “উচ্চশিক্ষা টাকা দিয়ে কিনে নেওয়ার জিনিস, ব্যয়বহুলের প্রশ্ন অবান্তর। ” আমি বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এটা জিজ্ঞেস করতে চাই “মাননীয় ভিসি আমরা যারা সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দেই তা কিসের জন্য দেই ??” শুধুই কি মন্ত্রী-এমপি আর আপনাদের মতো মাননীয় আমলাদের মৌজ-ফুর্তি করবার জন্য ?? বাংলাদেশে গ্রামীণ ফোন আর ব্যাক্সিমকোর মত বিশাল কোম্পানি আর বড়-বড় শিল্পপতিরা তাদের কর্পোরেট ট্যাক্স তো ফাঁকি দিতে পারেন খুব সহজেই। তবে আমাদের মত সাধারণ নাগরিকদের গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে ভ্যাট নামক আর একটি মরণ ফাঁদ। প্রায় সকল নিত্য-প্রয়োজনীয় দ্রব্যের উপর বাংলাদেশে আরোপ করা আছে ১৫% ভ্যাট। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে যদি একজন নাগরিক মাসে ১,০০০ টাকাও খরচ করেন তাহলে প্রায় ১৫০ টাকা তিনি সরকারকে দিচ্ছেন।

এভাবে যেই পরিবারটি মাসে ১০,০০০ টাকা খরচ করছে তারা মাসে সরকারকে দিচ্ছে ১,৫০০ টাকা আর বছরে দিচ্ছে ১৮,০০০ টাকা ভ্যাট! চিনি, চা, লবণ, তেল, ফোনের প্রত্যেকটি মিনিট, বিড়ি-সিগারেট সহ প্রায় প্রত্যেকটি নিত্য-ব্যবহার্য দ্রব্যের উপরই এভাবে ট্যাক্স বসানো আছে। আমরা ভোক্তারা নিজের অজান্তেই সরকারের এই অদৃশ্য করের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছি। সরকার শুধু এই বলেই এতকাল এই করারোপকে জায়েজ করেছিল যে তারা দেশের জনগণের প্রয়োজনে এই টাকা কাজে লাগাবে। তারা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ ও নিরাপত্তায় জনগণের এই টাকা কাজে লাগাবে। কিন্তু আমরা কি দেখছি সরকার স্বাস্থ্যখাতকে বহুদিন যাবৎ পঙ্গু করে রেখেছে।

মানুষকে বাধ্য করেছে বেসরকারি হাসপাতাল আর ক্লিনিকের শরণাপন্ন হতে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারের কোন চিন্তা নেই। সরকারি বিমান, রেল সহ সকল পরিবহণ মাধ্যম ধীরে ধীরে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। এমনকি ঢাকায় মেট্রো-রেলের মত জনহিতৈষী প্রকল্পটিও বাতিলের দিকে ঠেলে দিয়েছে। নিরাপত্তাবাহিনীরা কিসের জনগণকে নিরাপত্তা দেবে তারা উল্টো লোকজনকে গুম করবার কাজে নিয়োজিত আছে।

দেশের জনগণের টাকায় বেতনভোগী প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা বিদেশীদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে প্রকাশ্য প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন এই সরকারের দৃষ্টি বাংলাদেশের পাবলিকের টাকায় পরিচালিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে। বাংলাদেশের লক্ষ-লক্ষ মেধাবী শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার আশ্রয়স্থল এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে সরকার ধীরে-ধীরে অর্থায়ন কমিয়ে দিয়ে এগুলোকে বেসরকারিকরণের নীতি হাতে নিয়েছে। এই প্রক্রিয়া শুরু করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন-ফি বৃদ্ধির মাধ্যমে। তারা বলছে আমাদের শিক্ষা কিনে নিতে হবে।

আরে এক জিনিস আমরা কত বার কিনব?? আমরা তো সামাজিক ভাবে স্বাস্থ্যসেবা-শিক্ষা-যোগাযোগ আর নিরাপত্তা কিনবার জন্যই ভ্যাট-ট্যাক্সের মাধ্যমে সরকারকে টাকা দিয়েছি আবার কেন টাকা দেব ??? সব শেষে দেশের সকল মন্ত্রী, ৩০০ এমপি, ১০০০ আমলা আর ১৫০০০ পাতিমাস্তানের উদ্দেশ্যে বলছি, “জনগণের সাথে আর কত নেমকহারমী করবেন? যে গোয়ালে ছিলেন আপনাদের সেই গোয়ালেই পাঠায় দেয়া হবে। ” তারিফ হক, শিক্ষার্থী ফিনেন্স বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।