আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছাগ-মার্ক পোষ্টঃ কেন অধ্যাপক গোলাম আযমকে সমীহশ্রদ্ধা করি ও ভালোবাসি - খোমেনী ইহসান

এখানে বাংলাদেশের জন্মের বিরোধী জামাত-শিবিরের হায়েনা দেখলে কিক দেওয়া হয়। কেন অধ্যাপক গোলাম আযমকে সমীহশ্রদ্ধা করি ও ভালোবাসি - খোমেনী ইহসান [এই নোট সবার উদ্দেশ্যে লেখছি না। এটি হজম করার সামর্থ সবার নাই। তাই কাউকে বিব্রত না করার কথা বিবেচনা কাউকেই ট্যাগ করলাম না। যারা ট্যাগিত হতে চান, জানালে করব।

] আমি অধ্যাপক গোলাম আযমকে আমি সমীহশ্রদ্ধা করি। ভালোবাসি। এর প্রথম কারণ বাবার প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। বাবা জামায়াতে ইসলামী করতেন। মফস্বলের পরিশ্রমী ও ত্যাগী নেতা ছিলেন।

তিনি তার প্রিয় নেতা অধ্যাপক গোলাম আযমকে অনেক পছন্দ করতেন। এই পছন্দের মূল্য দিতে তার তৃতীয় ছেলের নাম রাখেন গোলাম আযম। আর তৃতীয় সেই ছেলেটি আমি। বাবা যাকে শ্রদ্ধা করেন তাকে আমিও শ্রদ্ধা করি। যাকে ভালোবাসেন তাকে আমিও ভালবাসি।

যাকে সমীহ করেন তাকে আমিও সমীহ করি। দ্বিতীয় কারণ হল ব্যক্তিগতভাবে অধ্যাপক গোলাম আযমকে আমার ভাল লেগেছে। ১৯৯৮ সালের দিকে তার সাথে আমার দেখা হয়েছিল। আব্দুশ শহীদ নাসিম আঙ্কেলের সাথে মগবাজার থেকে এটিএম আজহার চাচার গাড়িতে চড়ে গিয়েছিলাম কাজী অফিস লেনের মসজিদে। সেখানে জোহর নামাজের শেষে অধ্যাপক গোলাম আযমের সাথে দেখা হল।

আমি সালাম দিলাম। তিনি হাত বাড়িয়ে মোসাফা করলেন। হাসিমুখে জানতে চাইলেন, ‘কী নাম তোমার?’ আমি বললাম, ‘গোলাম আযম’। শুনেই তিনি হেসে ফেলেন। মুচকি হাসি।

বললেন, ‘তুমি আমার নাম বলছ কেন?’ আমি তখন কিশোর। জবাবে বলেছিলাম, ‘আমি আরেকটা গোলাম আযম। ’ নাসিম আঙ্কেল, আজহার চাচাসহ উপস্থিত সবাই আমার কথা শুনে হেসে ওঠেন। তখনো আমার হাত ধরে আছেন অধ্যাপক গোলাম আযম। তিনি আমার জন্য দোয়া করলেন।

আবার যেন তার কাছে যাই বললেন। তারপর আমরা চলে এসেছি। সেই দেখার সময় ওই যে বলেছিলেন ‘তুমি আমার নাম বলছ কেন’ এই সরল মশকরাটুকুনই আমার কিশোর মনকে জয় করে ফেলেছিল। তার সুন্দর হাসি, সাদা দাড়ি আর সুতি টুপি আমার স্মৃতিপটে গেথে গেছে চিরস্থায়ীভাবে। তার ব্যক্তিত্ব আমার ভাল লেগেছে।

আরো কয়েকবার দেখা হয়েছে। কথা হয়নি। তিনি বক্তৃতা দিয়েছেন আমি তন্ময় হয়ে শুনেছি। এতটুকুনই। তাতেই বারেবারে মনে হয়েছে একটি কথা লোকটি সরল।

তৃতীয় কারণটি হলো অধ্যাপক গোলাম আযমের অবসর জীবনের কর্মকান্ড। যারা আদর্শবাদী রাজনীতি করেন, তারা অনেক দূর আসার পরেও খেয়ালই করেন না যে, নেতা-কর্মীদের মান কোন পর্যায়ে আছে। অধ্যাপক গোলাম আযম বাংলাদেশে এ জায়গায় ব্যতিক্রম। তিনি দলের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন দলটির সহযোগী দুটি গণসংঠন ইসলামী ছাত্র শিবির ও ইসলামী ছাত্রী সংস্থার নেতৃস্থানীয়দের আদর্শিক মান উন্নীত করার কাজে। দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বেশ কিছু পাতলা সাইজের বইও লেখেন এই সময়।

যার বেশির ভাগই এবাদত ও আত্মিক পবিত্রতা সংক্রান্ত। ভবিষ্যতে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের খুলুসিয়াতের প্রশ্নটিই যে রাজনীতি ছাপিয়ে বড় বিষয় হয়ে দাড়াবে এমন উপলব্ধি থেকে তিনি এসব কাজ করেন। তার এই উপলব্ধি আমার ভালো লেগেছে। আদর্শবাদী রাজনীতিকদের মধ্যে ঘরসংক্রান্ত এমন উপলব্ধি থাকা জরুরি ও দরকারি। চতুর্থ কারণ হল তার রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা সামনে রেখে দুনিয়াদারি সম্পর্কে ওয়াকেবহাল থাকার শর্ত।

আমার মতো এ দেশের অনেক তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীর বেড়ে ওঠা ইসলামী তাহজিব-তমুদ্দুন চর্চাকারী পরিবারে। যেখানে সম্পর্কগুলো পরতে পরতে বাংলাদেশী সংস্কৃতির গন্ধযুক্ত। কিন্তু এখানকার মাটি-পানি-আবহাওয়া-খাদ্য-পোষাক-ভাষায় জড়ানো ওই সম্পর্কগুলোর অভিমুখ জাতি-বর্ন-শ্রেণী-ধর্মের উর্ধ্বে ওঠে ইসলামের বয়ান নির্দেশিত ফিতরাত বা প্রকৃতির-স্বভাব উপযোগী হয়ে ওঠা। তো আমাদের পরিবারগুলোর জন্মঅভিজ্ঞতার যন্ত্রণার ইতিহাসও অনেকানেক দিনের। অধিপতি সেক্যুলার অভিমুখ এই জমিনে জন্ম নেয়ার আগেই আমাদের পরিবারগুলোর জন্ম হয়েছে।

যারা এখানকার কৃষি উত্পাদন-সম্পর্কের সাথে যুক্ত যুগ যুগান্তর জুড়ে। আমাদের রক্ত ধারা এক সময় না সনাতন ধর্ম, না বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারি ছিল। আমরা ছিলাম প্রকৃতি ও সমাজের নানা দেবদেবি-নৃপতির পুজা-উপাসনামুক্ত নিধর্মী এক জনগোষ্ঠী। তারপর শোষণ ও নিপীড়নের মুখে আমরা নিম্নবর্নের হিন্দু হয়েছি। উচ্চ বর্নের হিন্দুদের নিপীড়ন থেকে নির্বান লাভ করতে পরে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছি।

পরে যখন চট্টগ্রাম, আরাকান ও খুলনা-বাগেরহাটে আরব থেকে নিপীড়িত মজলুম মুজাহিদ দরবেশ রাসূলে করীমের (সা.) দ্বীন নিয়ে বাংলায় আসলেন তখন তৌহিদের ঈমানে দীক্ষিত হয়ে আমরা মুসলমান হয়েছি। জাতপাতবর্নের নিপীড়ন থেকে সত্যিকার অর্থে মুক্তিলাভ করেছিলাম আমরা মুসলমান হয়ে। পরে আমরা হিন্দুকুশ পর্বত বেয়ে নেমে আসা আশরাফ মোসলমানদের জুলুমের শিকার হয়েছি শত শত বছর ধরে। যদিও এখানে বারবার সুলতান-ভূঁইয়ারা বিদ্রোহ করেছেন এই জুলুমের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার বাণী নিয়ে। তবে আমরা বারবার হেরেছি এবং ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করেছি।

শেষ পর্যন্ত আশরাফ মোসলমানদের দরবারি চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পড়ে আমরা ঔপনিবেশিক ইংরেজ শাসন ও হিন্দু জমিদারির নিপীড়নের শিকার হয়েছিলাম। ১৭৫৭ থেকে ১৮৫৭ পর্যন্ত আমরা দখলদারির বিরুদ্ধে ফকির-সন্নাসী-পাগল-ফরায়েজি আন্দোলন করে গেছি। সব শেষ মহান সিপাহী বিদ্রোহ দমিত হওয়ার ঘটনাঘটনের মধ্যে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের চূড়ান্ত পরাজয় হয়েছে। এরপর ইংরেজ বশ্যতার অধীন মধ্যবিত্ত মুসলমানিত্বের উত্থান ঘটল। আমাদের স্বাধীনতা ও দ্বীন রক্ষার মুক্তিযুদ্ধ ধামাচাপা পড়ে গেল সাম্প্রদায়িক মুসলিম জাতীয়তাবাদিতার তলে।

ইংরেজ উদরে জন্ম নেয়া হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার প্রতিক্রিয়ার গর্ভে জন্ম দিল মুসলমানী সাম্প্রদায়িকতা। যা আমাদেরকে রক্তের ভাই নিম্নবর্নের হিন্দু ও নিধর্মী ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলল। আমরা দরবারি আশরাফ মুসলমানের ২৪ বছরের শোষণ-নিপীড়ন-লুণ্ঠনের মধ্যে বন্দি থাকলাম পাকিস্তান নামক জালেম রাষ্ট্রের জাতিবিদ্বেষী শাসক শ্রেণীর অধীনে। এরপর আমরা পূর্ব বঙের সাবেক মুসলিম লীগারদের রাজনীতি ও উন্নতি আকাঙ্ক্ষার অধীনে রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ কায়েম করেছি। এই যে ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা, যার মধ্যে এতদূর আসতে আসতে হযরত শাহ পরাণের (রহঃ) সাথে আসা এক মুজাহিদের রক্তের উত্তরাধিকার বাংলাদেশের নিম্নবর্নের কৃষক হিন্দুদের গর্ভপথ অনুসরন করতে করতে আমার জন্ম দিল।

সেই আমার জন্য ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা থেকে শেখার একটি বড় জায়গা হলেন অধ্যাপক গোলাম আযম। রাজনৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে জামায়াত জাতীয়তাবাদ বিরোধী ছিল। যে কারণে এ দলটি পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক উত্থানের বিরোধী ছিল। সেই দলটি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের অখন্ডতাকে সমর্থন করে আরেক ভাষা ও ভূখন্ড ভিত্তিক জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করল। যা করার জন্য দলটি ইনডিয়ার সাম্প্রদায়িক ও সম্প্রসারণবাদী খাসলতকে বিবেচনা করল, এই বিবেচনার চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ওয়াকেবহাল হওয়ার সুযোগটাও আমি পেয়েছি অধ্যাপক গোলাম আযমের কাছ থেকে।

তার নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধে শামিল না হয়ে পাকিস্তানের পক্ষে থাকল কেন এই প্রশ্নটির জবাব আমি দলটির পাকিস্তান প্রীতি ও ইসলামী আদর্শের খাসলতের মধ্যে খুঁজিনি। জামায়াত সংশ্লিষ্ট নেতা-কর্মীদের শ্রেণী চরিত্রের মধ্যে খুঁজেছি। আমার সময়ে আমি যেই শ্রেণী চরিত্রের ঝোক ও দুর্বলতা সম্পর্কে হুঁশিয়ার থাকার কারণেই আমি ঐতিহাসিক মুহূর্তে কখনো ভুল করি নাই। মধ্যবিত্তের প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক আচরন করে বসিনি। পঞ্চম কারণ হলো তাকে বুঝতে পারার কারণেই আমি বহুল প্রচারণাকৃত মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি, প্রগতিশীলতা ও বামপন্থী-সমাজতন্ত্রী রাজনীতি নামক ভাওতাবাজি ও আত্মপ্রবঞ্চনা থেকে নিজেকে হেফাজত করতে পেরেছি।

জামায়াতের মতই একই শ্রেণী চরিত্র ধারণ করেও ইসলাম বিদ্বেষ আর সেক্যুলার পরাশক্তিগুলোর তাবেদারি করে নিজেদের শ্রেণীশত্রুতাকে মহিমান্বিত করার এই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি, প্রগতিশীলতা ও বামপন্থী-সমাজতন্ত্রী রাজনীতি নামক ভাওতাবাজি করে হয়তো আত্মসুথে বিভোর থাকতে পারতাম। কিন্তু রাজনৈতিক মানুষ হিসেবে আমার যে সম্ভাবনা, মেহনতি মানুষের ইমামতির অধীনে আল্লহার এবাদত করার যে সৌভাগ্য তা থেকে আমি বঞ্চিত হতাম। এখন আমি আল্লাহর লাখো শুকরিয়া আদায় করি যে, অধ্যাপক গোলাম আযমকে বুঝতে পারার জন্য আমি বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত না থাকার ফুরসত পেয়েছি। তাকে বুঝতে গিয়েই আমি বাংলাদেশের সব রাজনীতিকের প্রতি দরদি থাকারও ফুরসত পেয়েছি। যে কারণে জরুরি অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়া-শেখ হাসিনা-তারেক রহমানসহ রাজবন্দি রাজনীতিকদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করার বেলায় আমাকে কোন গ্লানিবোধ তাড়া করেনি।

বরং ঐতিহাসিক করণকর্তব্য সম্পাদনের ভালো লাগা আমাকে প্রাণিত করেছে। ফেসবুক লিংক ছাগমার্ক হিসাবে পোষ্টখানি রাখা হলো। এর একটু চমৎকার এবং শৈল্পিক স্যাটায়ার কাউন্টার করেছেন ব্লগার রাইসুল জুহালা। "গেলমান রচনাঃ কেন অধ্যাপক গোলাম আযমকে সমীহশ্রদ্ধা করি ও ভালোবাসি - রাইসুল জুহালা" পড়ে দেখতে পারেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।