কে বলেছে ফটিকত্ব শুধু এগারো-বারো বছরের বালকদেরই হয় ? আসল ফটিক বেলা তো শুরু হয় পচিশ/ছাব্বিশ বছর থেকে । কেনো বিশ্বাস হচ্ছে না ? আসুন মিলিয়ে দেখি,শেষ পর্যন্ত যে কেউ বলতে বাধ্য হবেন এই ফটিক ছোট ফটিক থেকে অনেক গুন বেশি অভাগা । এদের দুর্গতির শুরু হয় গ্র্যাজুয়েশন বা পোষ্ট-গ্র্যাজুয়েশন শেষ হওয়ার সাথে সাথেই । এদের দুর্গতির ফিরিস্তিতে আসুন একবার চোখ বুলিয়ে নেই-
• শুরুতেই অবসান হবে ক্লাসের দোহাই দিয়ে বাইরে যাওয়ার আপনার সর্ণালী দিনগুলোর । পরীক্ষার ফী, টার্ম টেস্ট বাবদ বাবার কাছ থেকে টাকা মারার পথটাও বন্ধ হয়ে যাবে চিরতরে ।
• বড় ভাইরা আপনাকে দেখে চোখ কুঁচকে তাকাবে ভাববে আপনার বেকারত্বটা ইচ্ছাকৃত বিলাসিতা, আপনি কোথাও ট্রাই না করে শুধু শুধুই টইটই করে ঘুরে বেরাচ্ছেন ।
• ক্যাম্পাস ছেড়ে আসায় বন্ধুরাও হয়ে যাবে অমাবশ্যার চাঁদ ।
• মাখন মানে ছোটভাইদের সাথে আড্ডাতে বসলে তারাও অসস্থিবোধ করবে ।
• আর যদি কোন মাখন আপনার আগে চাকরি-বাকরিতে ঢুকে পরে তবে তার আশে পাশে একশ হাতের ভেতর যাওয়াটা কবিরা গোনাহর সমান্তরাল বলে বিবেচিত হবে (সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়-জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়ারা ১০০% নিশ্চিৎ থাকুন এই পরিস্থিতিতে পড়বেনই)। তার আলগা ভাবের গরমের হাত থেকে বাঁচতে আপনাকে শীতের রাতেও দু-তিনবার গোসল করতে হবে ।
যাকে কিনা কিছুদিন আগেও আপনি হোমওয়ার্ক করে দিতেন সেই আজ আপনাকে জ্ঞান দিতে আসবে । তার টুটি চাপবেন কি মান সম্মানের ভয়ে আপনাকেই সবকিছু চেপে যেতে হবে ।
• এই বয়সে আপনার কার্টুন নেটোয়ার্কও ভাল লাগবে আবার নিউজ চ্যানেলও দেখতে মন চাইবে ।
• গায়ে বাতাস লাগিয়ে চলার দিনের অবসান হয়ে হঠাৎ অনেক দায়িত্ব এসে পড়বে ঘাড়ে ।
• চাচি-মামি-খালারা আপনি বেকার জেনেও বিয়ে-শাদি নিয়ে অবান্তর প্রশ্নে জর্জরিত করে তুলবে ।
• চাচা-খালু-মামারা আপনার ক্যারিয়ার নিয়ে যতবার দেখা হবে ততবার প্রশ্ন করবেন এবং একগাদা উপদেশ বানীর ডালি সাজিয়ে বসে পরবে্ন ।
• ঐ মুহূর্তে অনেকেরই চোখে পরবে ছেলেটা অনেকদিন ধরে বেকার পরে আছে । সমবেদনা সুলভ উক্তি আহারে,উহুরে,বেচারা এরকম কত ধরনের কথা বার্তাই না তখন আপনাকে শোনতে হবে ।
• ঐ সব দিনগুলতেই আপনি দেখবেন যারা এতদিন আপনার পেছনে খাওয়া দাওয়ার উছিলায় ঘুরত তারাই আপনাকে দেখলে টিনের চশমা পরে চিনতে না পারার ভান করবে ।
• ধৈর্য্যশক্তির সবচেয়ে বড় পরিক্ষাটা আপনাকে আপনাকে তখন প্রতিদিনি দিতে হবে ।
ইন্টারভিউ বোর্ডে বসলে নিজের বাবার চৌদ্দগোষ্ঠি উদ্ধার করবেন এই কারনে যে কেনো তিনি বিল গেটস’এর বংশে বিয়ে করেন নি । মামা ভাগ্য ফেরাতে পারলে নিজের বাবাকে আর একটি বিয়ে দিয়ে আবার নতুন করে জন্মান আর কি ।
• বাসায় বসে থাকলে বাজার করা থেকে গ্যাস বিল,বিদ্যুৎ বিল,টেলিফোন বিল,কাজের বুয়াকে বাড়ি পৌছে দেওয়া,ছোট ভাতিজা-ভাতিজি কে স্কুলে আনা নেওয়া,খালাতো-মামাতো-চাচাতো বড় বোন খালা-মামী-চাচীদের সাথে মার্কেটিং প্রভৃতি মহান কাজের ভার আপনার উপরই বর্তাবে ।
• এই বয়সেই আয়নায় আপনার প্রথমবারের মতো চোখে পরবে চুলে পাঁক ধরেছে,কপালটা আরো দু’ইঞ্ছি বেড়ে গেছে ।
• আর যদি আপনি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন তবে আপনার প্রতি অশেষ সমবেদনা এবং দুঃখ প্রকাশ ।
এক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হলে তো আপনার বিদেহী আত্নারও কয়েক দফা মাগফেরাত কামনা করি । যেখানে প্রাইভেট ভার্সিটিতে মাস্টার্স করছে আপনার ৩ বছরের ছোট প্রেমিকার সারে ৩ বছরের ছোটভাই সেখানে আপনি দিন গুনছেন কবে আপনার অনার্স ফাইনাল হবে । এমনও হতে পারে যে ছেলেটাকে ফার্স্ট ইয়ারে আপনি প্রাইভেট পড়িয়ে ক্লাস ফাইভে গোল্ডেন A+ পাইয়ে দিয়েছেন আপনি ফাইনাল দেওয়ার সময় সে প্রাইভেট ভার্সিটিতে অনার্স ফোর্থ ইয়ারে উঠে গেছে ।
• এই বয়সে প্রথম যে ধাক্কার মুখামুখি হতে হয় তার উৎপত্তি ও কেন্দ্রস্থল হলো একটা বিবাহ অনুষ্ঠান । এবং তা অতি অবশ্যই আপনার অতি প্রিয় কলিজার টুকরা ময়না পাখি,বেকার জীবনের একমাত্র বিনিয়োগ স্থল প্রাণ-প্রিয় প্রেমিকার ।
• এই সময়ে সব ছেলেরা হিমু হতে চায় কেন জানেন ? সবচে বড় কারন হিমুদের পকেট থাকে না...আরে বাবা পকেটে টাকা থাকলে না পকেট থাকবে । তবে যাদের যাদের পকেট এবং মানিব্যাগ থাকে তাদের মানিব্যাগটা সবসময় হৃষ্ঠপুষ্ঠ থাকে যতটা না টাকার ভারে তার কয়েকগুন বেশি ভিজিটিং কার্ডের ভারে ।
এতো কষ্টের মাঝে থেকেও এরা বেঁচে থেকে কিসের আশায় ? কারন বাড়ি ফিরলে এদের মমতাময়ি মা কখনও জিজ্ঞাসা করেন না এতোসব ঝমেলার কথা । শুধু মমতা মাখা বুকে জড়িয়ে ধরে সারাদিনের হতাশা,ক্লান্তি জড়ানো মুখখানা আচঁল দিয়ে মুছে দেন । যত দেরিই হোক নিজে না খেয়ে ভাতের থালা সাজিয়ে বসে থাকেন, একমাত্র মা’য়েদের চোখেই যে তাদের ছেলে পৃথিবীর সেরা ছেলে ।
এই বয়সেই প্রথম উপলব্ধি হয় মা-বাবাকে একটু শান্তিতে রাখার,বাবাকে একটু জিরতে দেওয়ার । এই উপলব্ধিটকুই এই সব ফটিকদের বেঁচে থাকার অবলম্বন । দাঁত কামড়ে তাই নতুন দিনের আশায় আবার জীবন শুরু করে ।
‘MIRAKKEL AKKEL CHALENGER’ এর ফেইসবুক গ্রুপের একটি স্ট্যাটাস থেকে অনুপ্রানিত হয়ে লিখা ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।