ডানা ভেঙ্গে মুখ থুবড়ে পরা পাখির মতন বিছানা থেকে ক্লান্ত চোখ তুলে লিভিং রুমের টেবিলের উপর দাবার খোপে দাড়িয়ে থাকা সাদা কালো দুই দল সৈনিকের দিকে তাকিয়ে থাকি। যেন এখনই শুুরু হবে যুদ্ধ! কিন্তু কেউ এগোয় না, কেউ নেই ওখানে ওদের এগোতে বলবার জন্য। মনে হলো কতদিন দাবা খেলিনা। সৈন্যদের মাথার উপর দিয়ে চোখ ভেসে যায় বারান্দার ওধারে দুধপুকুরে সাগরের জলের উপর। তারও ওপারে দুরে দেখি স্যান্ডগেট টাউন, পেছন দাড়িয়ে সারি বাঁধা সবুজ পাহার।
বন্ধুর সাথে খুব কথা বলতে ইচ্ছা করে। ছোট ছোট কথা আর মনে একটু ভাললাগা বাতাস লাগা....ফেসবুকের পাতা খুলতে মনচায়....ইচ্ছে করেনা ক্লান্ত শরীরে উঠে বসতে। শুয়েই খুলি.....স্বপ্ন একটা চমৎকার গান শেয়ার করছে....
গানটা
.......গানটা বেজে উঠতেই দুরে দেখি সূর্য ডুবছে সারা আকাশে লাল ছড়িয়ে, চারিদিকে গোলপি লাল আভায় অদ্ভুত একটা স্বর্গ!! মনে মনে বলি সব এত এত সুন্দর.......এত সুন্দর!.......শুধু আমি কেন সুন্দর হচ্ছিনা? আমি পাখিটা কেন আকাশে আর উড়তে পারছিনা......ইচ্ছে করে এই লাল আভায় গা ডুবিয়ে আমি উড়াল দেই আবারও আকাশ ছুতে!
স্বপ্ন'র গানটা মনে কি একটা দোলা দিয়ে বলে আহা এখন যদি বাড়ি থাকতাম মা আমার জন্য ঠিক শিং মাছের ঝোল আর ফুলকপি দিয়ে পাবদা মাছের ঝোল রাঁধত। জানে সে আমার অসুখ হয়ে মুখ তিতে হলে এটা আমি খেতে পারব। খুব ইচ্ছে করে মা'কে ফোন করে বলি "মা চলে আসো না এখনই, আমার একদম সসেজ দিয়ে ডিনার করতে ইচ্ছে করছেনা এখন, তুমি আমাকে বেগুন ভর্তা করে ভাত দাও"।
মা'কে ফোন করিনা....এস এম এস করতে ইচ্ছে করে বলতে, "মা তোমাকে ভালবাসি"....... তা'ও করিনা স্বপ্নের গানটা বারবার শুনতে থাকি, লালচে আকাশে প্লেন উড়ে যাওয়া দেখি ছেড়া ছেড়া নীলচে মেঘের ভেতর বাইর দিয়ে......আর না জানার ভান করে একটা একটা করে ছোট ছোট সসেজের টুকড়ো মুখে পুরে দেই যেন Invisible কেউ আমাকে না জানিয়ে মুখে পুরে দিচ্ছে আমি জানার আগেই......যাতে তিতে স্বাদ ছারা আর কিছু নেই। ঠিক মা তখন এস এম এস করে, "How do you feel now? I pray for you"
সাগরের পানির ওপাড়ে একটা দুইটা আলো জ্বলে উঠছে আর সেই আলোর ছায়া সাগরের পানিতে পরে কি অদ্ভুত লাগছে! আবারও মনে হয় সব কিছু এত সুন্দর!!..... শুধু আমি সুন্দর নই কেন?? ফেসবুকে আমার স্টাটাসে করবির কমেন্টা যেন সত্যি হয়ে উঠেছে...করবি লিখেছে, "দিন বদলের দিন গুলোতে চুপ কথাদের সুর, একটি পাখি দাওয়ায় বসে দৃষ্টি বহু দূর............" আসলেই আমি পাখিটার দৃস্টি বহুদুর এখন.........দুধ পুকুরে সাগর পেরিয়ে, সবুজ পাহারের সারি পেরিয়ে, দুরের জ্বলে ওঠা আলো পেরিয়ে, লালচে আকাশের মুগ্ধকরা রং পেরিয়ে আরো দুরে সূর্য যেদিকে ছুটে চলেছে....যেখানে সাঝাবাতি জ্বালবার সময় হয়নি এখনও, যেখানে আমার মা এখন দুপরের খাওয়া সেরে বুয়ার পেছনে ঘুর ঘুর করে তদারকি করছে বা শীত দুপুরে সোফায় কম্বল মুরে বসে টিভিতে সিরিয়াল দেখছে..........আমার দৃস্টি সেখানে। ইচ্ছে করে বিড়ালের বাচ্চার মতন লেজ গুটিয়ে গোল পাকিয়ে মা'র কম্বলের পাশে গা ঘেষে বসে ওর শরীরে তাপ নেই, গন্ধ শুকি। মা'র গায়ে এক অদ্ভুত মিস্টি গন্ধ আছে....কতদিন ভেবেছি একদিন মা'র গা ঘেষে বসে বুক ভরে ওর গায়ের গন্ধ নিয়ে মা'কে জিঙ্গেস করব সে কোন পারফিউম মাখে.........করা হয়নি । কখনও কি আর করা হবে?
নাহ্ আমার চোখ দিয়ে অবশ্যই পানি পরছে না ।
মাঝে মাঝে এখানে এত বেশি হিউমিডিটি হয় যে চোখমুখ এমনিতেই ঘামে ভিজে যায় কান্নাকাটি আমি করিনা শুধু শুধু চোখ দিয়ে নাক দিয়ে ফত ফত করে কিসব বেরয় ছি!
তাড়েক ভাইয়া দেখলে ঠিক বলত, "কিরে ছুটকি তোর নাক দিয়ে পোটা পরে কেনরে"
আমার আবারও খুব সেই ছুটকি হয়ে যেতে ইচ্ছে করে....... আমার নাক চোখ দিয়ে হিউমিডিটিতে গড়িয়ে পরা পানি মুছতে ইচ্ছে করে মা'র আঁচল দিয়ে, ইচ্ছে করে আবারও সেই পাখিটা হই, ইচ্ছে করে বিধাতাকে জিঙ্গেস করি, "আর কতদিন পরে সেই পাখিটা আকাশে উড়বে যে পাখি আকাশে ওরে আকাশ ছোবার ইচ্ছেয় .........??? ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।