আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"ঘরে ঘরে মানুষ মারার যন্ত্র!"

ঘটনা-১ : গত ২৭ জুন রাজধানীর খিলগাঁও রিয়াজবাগ এলাকার ১৩৯৮/৩/বি নাম্বার বাসায় সিলিংফ্যান বিস্ফোরিত হয়ে সিরাজুল ইসলাম (৫৬), তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা কলি (৪৫) এবং তাদের সন্তান রাশেদুল হাসানের (২৫) নির্মম মৃত্যু হয়েছে। নিহতের স্বজনরা জানিয়েছেন, সারা রাত ফ্যানটি চলছিল। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে পুরো ঘরে আগুন ধরে যায়। ঘটনা-২ : গত ২৩ মে মুগদার একটি বাড়িতে চার্জার ফ্যান বিস্ফোরণে আনোয়ারুজ্জামান শিপন (৩৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন তার স্ত্রী ফারিয়া জামান, ছেলে অপূর্ব (৩) ও প্রতিবেশী আরমান (৫)।

ঘটনা ৩ : গত ২১ মার্চ মিরপুর-১৩ নাম্বার সেকশনের ব্লক-সি, লেন-৬-এর ২২ নাম্বার বাড়িতে টেলিভিশন বিস্ফোরণের ঘটনায় দেড় বছরের শিশু মারুফ, তার বাবা মোতাহার আলী, মা জেসমিনের মৃত্যু হয়। ঘটনা ৪ : গত বছরের ৭ অক্টোবর রাজধানীর ৮১১ পশ্চিম কাজীপাড়ার দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে ল্যাপটপ বিস্ফোরণে আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের ভাগ্নে আহমেদ শওকত মাসুদ (৪৩) নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। "ঘরে ঘরে মানুষ মারার যন্ত্র!" ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে নিম্নমানের বৈদ্যুতিক গৃহস্থালি পণ্য। নিত্যব্যবহার্য এসব পণ্য মাঝেমধ্যেই বিস্ফোরিত হচ্ছে। ঘটছে নির্মম মৃত্যুর ঘটনা।

গুরুতর অগ্নিদগ্ধ হয়ে অনেকে প্রাণে বেঁচে থেকেও পঙ্গুত্ববরণ করে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব বৈদ্যুতিক গৃহস্থালি পণ্যের মান তদারকি করার কোনো প্রতিষ্ঠানই নেই। কেবল বৈদ্যুতিক পাখার মান যাচাই ও সার্টিফিকেট দেওয়ার ক্ষেত্রে তদারকি প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই (বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন) হলেও ওই প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে নিম্নমানের বৈদ্যুতিক পণ্যগুলোকে বিস্ফোরকের সঙ্গে তুলনা করেছেন তারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে এমন কোম্পানিগুলোর বাজারজাতকৃত পণ্য বছরে অন্তত দুবার ল্যাবে পরীক্ষা করার কথা থাকলেও তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকছে।

বাংলাদেশ ইলেকট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মীর নিজামউদ্দীন আহমেদ জানান, বিস্ফোরণের ঘটনায় যারা মারা গেছেন কিংবা যারা গুরুতর আহত হচ্ছেন তাদের দায় কেউ নিচ্ছে না। কেবল বৈদ্যুতিক পাখা নয়, নিত্যব্যবহার্য আরও বৈদ্যুতিক পণ্যের তদারকির ক্ষমতা বিএসটিআইকে দেওয়া উচিত। একই সঙ্গে বিএসটিআইর ধীরগতির কাজের সমালোচনা করেন তিনি। নিম্নমানের বৈদ্যুতিক পণ্য এবং ভবনের বৈদ্যুতিক ওয়্যারিংকে বিস্ফোরণের মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিঙ্ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. শেখ আসিফ মাহ্মুদ জানান, চীন থেকে অনেক নিম্নমানের ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য আমাদের বাজারে ঢুকছে। এগুলোর খুব একটা তদারকিও হয় না।

তিনি আরও বলেন, কোনো ভবনের নকশা তৈরির ক্ষেত্রে কেবল আর্কিটেকচার এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের পাশাপাশি ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ারদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা উচিত। বিএসটিআই প্রসঙ্গে বুয়েটের ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিঙ্ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আরিফুল হক বলেন, আমি নিজে ২০০৮ সালে বিএসটিআইর ফ্যান স্ট্যান্ডার্ড যাচাই কমিটির সদস্য ছিলাম। সে সময় কোনো পণ্যের ফ্যানের ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো পরিমাপক ছিল না। কেবল সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পাখাগুলোর প্রদত্ত বৈশিষ্ট্য যাচাই করে লাইসেন্স দেওয়া হতো। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় মুঠোফোনে কথা বলা অবস্থায় বিস্ফোরণ এবং মুঠোফোন চার্জ দেওয়া অবস্থায় চার্জার বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।

নিম্নমানের এসব মুঠোফোনের বেশির ভাগই চীনে তৈরি বলে জানা গেছে। তবে এসব পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারিভাবে কোনো নজরদারি নেই। বিএসটিআইর সার্টিফিকেট মার্কস উইংয়ের পরিচালক সি এম কমল প্রসাদ দাশ দাবি করেন, বিএসটিআই নিয়মিতভাবে বৈদ্যুতিক পাখাসহ ১৫৫টি পণ্যের মান প্রণয়ন ও পরীক্ষা করে থাকে। তবে বিস্ফোরিত পণ্যের তদন্ত করার এখতিয়ার বিএসটিআইকে দেওয়া হয়নি। সাবধান থাকুন , অন্যকেও সাবধান করুন ।

ধন্যবাদ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।