পরিচয় কত দিনের তা মনে নেই। তবে বছর তিনেকের কম হবে না। সাংবাদিক দীনেশ দা। চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে। আর কোনো দিনই তার সঙ্গে দেখা হবে না।
কিন্তু তার নামটি মনে থাকবে যতদিন বেঁচে থাকবো।
সাংবাদিকতার সুবাদেই তার সঙ্গে পরিচয়। দীনেশ দা ইসলামী দল ও বামপন্থী দলগুলোর নিউজ কভার করতেন আমাদের সময় পত্রিকায়। আমি তখন আজকালের খবর পত্রিকায় জামায়াত ও বিএনপি বিট করতাম।
একই সঙ্গে জামায়াতের অনেক প্রোগ্রাম কভার করেছি।
শান্ত সভাবের এই মানুষটি এত তারাতারি চলে যাবেন ভাবতেও পারিনি।
সব সময় ঠান্ডা মেজাজে কথা বলেতন। শুদ্ধ বাংলায় কথা বলা ছিলো তার স্বভাব। কারো সঙ্গে কখনো রাগ করতে দেখিনি।
তার বাসায় কখনো যাইনি।
শুনেছি বাসায় তার সংগ্রহশালা বেশ ভারী।
তবে তার সঙ্গে সব সময় যে ব্যাগটি থাকতো তার মধ্যে টেলিফোন নম্বরের ফাইলটিতে অনেকের নম্বর ছিলো। দেশের ৫৩টি ইসলামী দলের সকল নেতারাই দীনেশ দাকে চিনতেন ভালো করে। আর দীনেশ দা'র সংগ্রহেও তাদের নাম ঠিকানা ফোন নম্বর থাকতো।
তার সাংবাদিকতার বয়স কম করে হলেও ২০/২৫ বছরের কম হবে না।
বছর দুয়েক আগের ঘটনা। দুর্গা পুজার নিউজ করতে বলা হলো অফিস থেকে।
পূজার নিউজ করার অভিজ্ঞতা আগে ছিলো না। সমস্যায় পড়ে গেলাম। দীনেশ দা'কে কল দিলাম।
দাদা মেইলে নিউজ পাঠিয়ে কনফার্ম করলেন মোবাইলে।
আমাদের সময়ের জন্ম থেকেই দীনেশ দা সেখানে কাজ করতেন।
সম্ভবত গত ডিসেম্বর অথবা নভেম্বর মাসের কোনো একদিন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে দেখা দীনেশ দা'র সঙ্গে। দূর থেকে আমাকে দেখে স্বভাব সুলভভঙ্গীতে মহসিন বলে ডাক দিলেন। কাছে গেলাম।
বসতে বললেন। বললাম দাদা কেমন আছেন? উত্তরে বললেন ভালো নেই। কেনো? বললেন চাকরী নেই। একই সঙ্গে বললেন আমাদের সময় থেকে চাকুরিও গেছে পাওনাও দেয়া হয়নি।
শুনে মনটা খারাপ হলো।
ঢাকা শহরে আমরা যারা চাকুরির টাকায় সংসার চালাই তাদের চাকুরি না থাকা কতটা বেদনার তা আমি নিজেও বুঝি। কারণ এরকম বেকারত্বে কয়েকবার আমাকেও পরতে হয়েছিলো।
যাই হোক দাদা বললেন, আপনাদের বার্তা২৪ এ মিডিয়া পাতায় একটা নিউজ করে দিবেন। আমি দাদাকে বললাম কি লিখতে হবে, আপনার নিজের মতো করে লিখে আমার মেইলে পাঠিয়ে দিয়েন। আমি আপ করার ব্যবস্থা করবো।
পরে অবশ্য দাদা আর মেইল দেননি।
এর পর মাঝে মাঝেই রিপোর্টার্স ইউনিটিতে দেখা হতো। দেখা হলেই কুশল বিনিময় হতো। মাস খানেক আগে একবার সন্ধ্যায় রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বসে প্রায় দু'ঘন্টা গল্প করলেন তার সাংবাদিকতা জীবনের। সম্ভবত ওই দিনই ছিলো সর্বশেষ তার সঙ্গে দীর্ঘ সময় গল্প।
এসবই এখন স্মৃতি।
তার মেয়েটাকে কয়েকদিন দেখেছি। বাবার মতো শান্ত। স্কুলে দিয়ে আসা আবার নিয়ে আসার কাজটা দাদাই করতেন।
৮ তারিখ সকালে রোড মার্চ বহরে চট্টগ্রাম রওয়ানা করার কিছুক্ষণ পরই খবর পেলাম মটর সাইকেল দুর্ঘটনায় দাদা চলে গেছেন।
শুনেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আমিও প্রতিদিন এই ঢাকা শহরে চাকুরির তাগিদে মটর সাইকেল নিয়ে এদিক সেদিক যাই। জানি না কখন কি হবে।
তবে এসব দুর্ঘটনার জন্য গাড়ী চালকরা অনেক অংশেই দায়ী তার বলার অপেক্ষা রাখে না। চালকরা সাবধান হলে দুর্ঘটনা অনেক কম হবে।
তবে
দীনেশ দা আমাদের মাঝে আর কখনোই ফিরে আসবেন না। আর কখনোই বলবেন না মহসিন কেমন আছেন?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।