আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দিস ইজ নট এবাউট জিএসপি, দিস ইজ এবাউট বিএনপি, বিটিপি এন্ড বাল

ট্রুথ নট সেইড টুডে, কুড টার্ন টু আ লাই টুমোরো শিরোনাম ভুল বুঝবেন না। এখানে জিএস্পি সুবিধা নিয়া আলাপ হবে। কেন? কারণ জিএসপি সুবিধা আমাদের প্রাপ্য না। বছর বছর যে শত শত গার্মেন্টস শ্রমিক গেল বিশ বছরে দুই নেত্রীর আমলেই মারা পড়তেছে তাতে দুইজনের কারো মনে হয় নাই ন্যায়বিচার কইরা দুই একটা মালিক ধরা উচিৎ। শ্রমিক অধিকার রক্ষা করা উচিৎ।

এখন যে ওয়াশিংটন টাইমসের আর্টিকেলের দোহাই দিয়া জিএসপি বাতিলের দায় দিচ্ছেন বিরোধী দল প্রধানকে সেইটা নতুন না। দুনিয়ার সকল সমস্যার জন্য সরকার সাধারনত বিরোধীদলকেই দায় দিয়া আসছে। তাইলে কেন, এই দায় অস্বীকার করতে খালেদা জিয়া আমতা আমতা করে বললেন এই লেখা আমার নয়। তাও আবার প্রকাশিত হবার পাচ মাস পরে। এরমধ্যে বুড়িগঙ্গায় অনেক কালো পানি গড়ায়ে গেছে, অনেকের মল তাতে ভেসে গেছে।

মওদুদসহ অনেক সিনিয়র নেতাই এই লেখার পক্ষে মাস খানেক আগে সাফাই গাইছে। মাহমুদুর রহমানের একটি গোপন ফোনালাপে উনি বলসেন এই লেখা হাসিনা লেখলে উনি ৭কলাম হেডিং দিয়া 'শোয়ায়া ফেলতেন'। কেন নেত্রী জনতার উপরে বিশ্বাস না করে আমেরিকাকে 'ইনভেইড' করতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন তা উনারে ব্যাপক ক্ষুব্ধ করসে বলেন। আসলে এই অংশের জন্যই লেখাটার দায় এড়ানো খুব জরুরী হয়ে পড়সে। খালেদা জিয়ার আর্টিকেলে আসলে নানান অবরোধ আরোপ করে সরকারকে নাজেহাল করে 'আমেরিকান গণতন্ত্র'(যেইটার রূপ আমরা আফগানিস্তান, ইরাক, পাকিস্তানে দেখসি) কায়েমের জন্য আমন্ত্রণ জানান।

সেটাকেই মাহমুদুর রহমান 'ইনভেইড' করার আমন্ত্রণ হিসাবে দেখছেন। উনি বলে 'শি ইজ পলিটিকালি ডেড'। এটা একটু বেশিই উত্তেজিত হয়ে বলেছেন। কারণ বাংলাদেশের মানুষ ইংরাজি লেখাটি পড়ে দেখে নাই। তবে যে মুসলিম সেন্টিমেন্ট খালেদার পক্ষে ছিল তারা তীব্র মার্কিন বিদ্বেষী, বিশেষ করে মার্কিন গণতন্ত্র বিদ্বেষী।

কারণ ইরাক, আফগানিস্তানে গনহত্যা ও অনৈতিক যুদ্ধ থেকে যে গণতন্ত্র বিক্রি করেছে আমেরিকা তার চেয়ে অনেক কম রক্তে আমরা ভালো গনতন্ত্র পেয়েছি। বিরোধীদলে থাকা অবস্থায় সবাই বিদেশে গিয়ে বিশ্রিভাবে নানান অভাব অভিযোগের কথা বলেন। কিন্তু এইটাই মনে হয় প্রথম প্রকাশিত চিঠি যেটা এমন ভয়ংকর কথা প্রকাশ করলো গনমাধ্যমে। এখন প্রশ্ন থাকে চিঠি কি খালেদা লিখসে? যদি বলি এতোগুলান ইংরেজি লাইন খালেদা জিয়া লিখতে পারেন না, বা নিজ হাতে লেখেন নাই- তাহলে উনার প্রথম প্রকাশিত আর্টিকেলটা আসলে কে লিখসে তা নিয়ে সংশয় জাগে। সেখানে আবার সোল অথর।

আবার যদি বলি উনি নিজে না লিখলেও উনার হয়ে দলের প্রেস সেক্রেটারি লিখসেন। উনি না পড়ে সাক্ষর করসেন- তাহলেও দায় থেকে যায়। কারণ না পড়ে সাক্ষর করা কোন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাজে না। কোন শিক্ষিত বা অশিক্ষিত মানুষেরি সাজে না। বেশ জটিল সমস্যা।

সমস্যা আরেকটু বাড়লো যখন স্বয়ং ওয়াশিংটন টাইমসের এসিস্টেন্ট এডিটর বললেন তারা নিশ্চিত হয়েই লেখাটি ছাপিয়েছেন। নিউজ লিঙ্ক(Click This Link)। উনি আরো বলেন লেখাটি খালেদার পক্ষ থেকে দিয়েছেন তার এক এজেন্ট মার্ক পার্সী। তাইলে মার্ক পার্সী কে? মার্কে পার্সী হচ্ছেন বিটিপি এডভাইজার নামের একটা লন্ডনী পাবলিক রিলেশন ফার্মের সহপ্রতিষ্ঠাতা, বর্তমানে ম্যানেজিং পার্টনার। এরমানে বিএনপি একটা পাবলিক রিলেশন ফার্ম নিয়োগ দিয়েছে।

এখন পিআর ফার্মের কাজ খুবই ইন্টারেস্টিং। এরা ইমেজ সাফ করতে, ইলেকশন জিতাইতে খুব ভালো কাজ করে। পশ্চিমা দুনিয়াতে এদের এস্তেমাল করা খারাপ চোখে দেখা হয় না। কিন্তু এদের কাজটা অনেকটা প্রপাগান্ডা তৈয়ার। বিটিপি কি ধরনের প্রপাগান্ডা তৈয়ার করতে পারে তার একটা নমুনা দেখলাম দাঁ ইন্ডিপেডেন্ট এর ওয়েবসাইটে।

সেখানে পরে আসছি। যদি ধরে নেই বিটিপির মার্ক পার্সীকে অন্য কেউ নিয়োগ করেছে, মানে খালেদা জিয়াকে ট্রাপ করতে নিয়োগ করেছে। তাহলে বলতে হবে এরা সিরিয়াস লোক। কারণ ্মার্ক পার্সীদের পারিশ্রমিক নেহায়েত কম না। জানুয়ারীর ওই লেখা দেখে প্রতিবাদ করার দীর্ঘসময় পেরিয়ে গেছে, তখন তা করা হয় নাই দলের পক্ষ থেকে।

বরং সাফাই দেয়া হয়েছে। ফলে প্রমাণিত হয়, বিএনপি ওই লেখা লিখিয়েছে কাউকে দিয়ে বা নিজে লিখেছে, এরপর মার্ক পার্সীর বিটিপিকে দিয়েছে। এরপরে সেটা ওয়াশিংটন টাইমসে প্রকাশিত হয়েছে। এখন আসি বিটিপির মার্ক পার্সীরা কিভাবে কাজ করে সেখানে। এরা ভাড়াটে ক্যানভাসার।

আধুনিক মিডিয়াতে কিভাবে সংবাদ, এন্টি স্পিন, কাউন্টার দিতে হয় তা উনারা জানেন। সেকাজটি করতে গিয়ে মার্ক পার্সী একবার গোপন ক্যামেরায় ধরা পড়েন। খবরটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার। শ্রীলঙ্কান গার্ডিয়ান বা খালিজ টাইমস মার্কা পত্রিকার নয়। ২০১১ এর ৭ডিসেম্বরে প্রকাশিত সংবাদ 'হাউ ডেয়ার ইউ একিউজ মাই ক্লায়েন্ট অফ জেনোসাইড'(Click This Link)।

কথাটি মার্ক পার্সীর। আপনারা যারা হোটেল রুয়ান্ডা (IMDB 8.2) ছবিটি দেখেছেন তারা জানেন কি ভয়াবহ গনহত্যা চলছিল রুয়ান্ডাতে ১৯৯৪ সালে। সেই গনহত্যার দায় যেন সরকারের ঘাড়ে না পড়ে, সেজন্য এন্টি স্পিন দিয়ে আড়াল করতেই মার্ক পার্সী ও বিটিপিকে ভাড়া করেছিল রুয়ান্ডা সরকার। গোপন ভিডিওতে উনি আসলে একজন পটেনশিয়াল উজবেক ক্লায়েন্টের সামনে নিজের কীর্তি জাহির করছিলেন। সেই উজবেক ক্লায়েন্টের গোপন ক্যামেরায় ধরা পড়ে যান উনি।

সেসময় সংবাদটি সাড়া ফেলেছিল কারণ মার্ক পার্সী ব্রিটিশ লিবারেল ডেমোক্রাটদের নির্বাচনী প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখসেন। এই কাজটি অবৈধ না। বিটীপির ওয়েবসাইটেই বলেছে 'উই নো হোয়াট ইট টেইক্স টু সিকিউর ভিক্টরি (ইলেকশন)'(http://www.btpadvisers.com/who-we-are/)। এই সার্ভিস যে কেউ নিতে পারে। ফ্রেন্ডস অফ ইউনুস একবার বিটিপির সার্ভিস নিয়েছে প্রচার প্রচারনা চালাতে।

আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে সাভারের রানা প্লাজা ধ্বসের পর একটা লেখায় সরকারকে এমন পিআর ফার্ম ভাড়া করে গার্মেন্টস শিল্পের জন্য মানবিক আবেদন, পোশাকের মাত্রাতিরিক্ত নিম্নমূল্যের ব্যাপারে প্রচার চালাতে অনুরোধ করি। সেই অনুরোধ রাখলে হয়তো আমাদের জিএসপি হারাইতে হইতো না। কিন্তু গনহত্যা ধামাচাপা দেয়ার কাজটি চরমভাবে অনৈতিক। প্রশ্ন থাকে, বিএনপি কি তাহলে মার্ক পার্সীর বিটিপিকে নিয়োগ দিয়েছে? যদি দিয়ে থাকে তাহলে কি তাদের কাজ শুধু একটি চিঠি প্রকাশেই সীমাবদ্ধ নাকি আরো কাজ করছে তারা? সম্প্রতি তারেক জিয়ার পলিটীকাল থট নিয়ে একটা বই প্রকাশিত হয়। সেটার মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অনেক গন্যমান্য ব্রিটিশকে উপস্থিত হয়ে তারেকের সাথে ছিবি তুলতে দেখা গেছে।

পরে ওই বইয়ের প্রকাশকের কাছে ইমেইল করে কোন সাড়া পাইনি, বইটির কোন দাম লেখা নেই, অনলাইনে বিক্রিও হচ্ছে না। লেখক তালিকার এক ব্রিটিশ ডেভিড নিকোলসনকে ইমেইল করে জিজ্ঞাসা করলাম বাংলাদেশী একজন রাজনীতিবিদের জীবণ নিয়ে একটি ১৫০০শব্দের আর্টিকেলে কেমন খরচ পড়বে। জবাবে উনি জানালেন লেখাটির জন্য নিবেন মাত্র ৪৫০পাউন্ড(মানে ৫৩হাজার টাকা)। আমি আর দরদামে অগ্রসর হলাম না। বোঝাই যাচ্ছে পলিটীকাল ইমেজ মেরামতে বেশ পয়সাপাতি খরচ যাচ্ছে।

লেখালেখি হচ্ছে। কিছু বেফাস কথাও লিখে ফেলতে পারে ভাড়াটে লেখকরা এটা হয়তো ভেবে দেখেন নি তারেক রহমান। আমারদেশের রেশমা কাহিনীর পুনঃপ্রকাশ ঘটাতে মিররে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। সান্ডে মিরর লেখে '“The Sunday Mirror travelled to Bangladesh to meet anti-government campaigners who insist the rescue was staged by the authorities to combat the wave of bad publicity that engulfed the country’s £1billion-a-year garment industry after the Rana Plaza factory collapsed in Dhaka.” মানে তারা শুধু সরকারবিরোধীদের সাথেই আলাপ করতে এসেছিল। তারা এটিকে জিএসপি সুবিধা বাতিলের ব্যাড পাব্লিসিটি আড়ালের জন্য বানানো হোক্স বললেও আমারদেশে এটি যখন প্রকাশিত হয় তখন জিএসপি সুবিধা বাতিল হয় নি।

এরমানে একটি এন্টি-স্পিন তৈরীতে সান্ডে মিরর তৎপর ছিল। তারা যদি বাংলাদেশে এসে রেশমার উদ্ধারের অসামঞ্জস্য না পেত তাহলে কি সংবাদ করতো? করতো না। কারণ সেটা সংবাদযোগ্য না। এখানে খেয়াল করলে দেখা যাবে সবকিছুই ঘটছে লন্ডনে। যেখানে বিটিপি আছে, মার্ক পার্সী আছেন, তারেক জিয়াও আছেন।

রাজনীতিতে প্রচার প্রপাগান্ডার দরকার আছে, কিন্তু এই স্পিন এন্টীস্পিনের ভিড়ে আসল দাবিটি হারিয়ে যাচ্ছে। সেটি মানুষের বাচার দাবি। শ্রমিকের অধিকারের জন্য দুই নেত্রী একটি কথাও বললেন না। একজন বললেন না তারা মালিকের বিচার করবেন। শ্রমিক অধিকার রক্ষার জন্য উনারা সতর্ক হলে জিএসপি কারো মুখের কথায় হারাতে হতো না।

আমাদের পত্রিকায় রানা প্লাজার ভয়াবহ ট্রাজেডির কথা হেফাজতের ঢাকা আগমনের সাথে সাথে হারিয়ে গিয়েছিল। অথচ বিদেশি মিডিয়াতে তখনো বাংলাদেশের হাজার শ্রমিকের মৃত্যু নিয়ে রিপোর্ট হয়েছে প্রতিদিন। লেবার রাইটস ফোরামগুলো তীব্র চাপ তৈরি করেছিল পিটিশন দিয়ে জিএসপি বাতিলের জন্য। কিন্তু তারা আমাদের শ্রমিকদের মঙ্গল চেয়েই সেটা করেছে। কারণ এটাই একমাত্র পন্থা ছিল চাপ প্রয়োগের।

মাত্র ৭২%ট্যারিফ বাড়বে বটে, কিন্তু বাচবে কতো প্রাণ সেটা মনে রাখতে হবে। জিএসপি আমাদের অধিকার বলে নেত্রীরা যে ধারণা দিচ্ছেন তা ভূল। এই ধারাবাহিক গনহত্যা চলতে দেয়া যায় না। মিথ্যার বিলাতি বেসাতি দিয়ে, একে অপরকে দোষ দিয়ে এটা ঢাকা যাবে না। লবিং করলে দেশের ভালোর জন্য করেন।

-বাঙ্গাল ৫/৭/২০১৩ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।