অন্ধকার; মৃত নাসপাতির মতন নীরব সেদিন দুপুরে এই নিঃশংষ ঘটনা ঘটার পর এক জুনিয়রের ফেসবুক স্টাটাসে দেখলাম কুয়েট রক্তের বন্যায় ভেষে গ্যাছে । কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক । খুবই উদ্দিগ্ন হলাম । ঘটনা জানার জন্য ফোন করলাম আমারই এক বন্ধুকে, সে মেকানিকালের শিক্ষক । আমি ফোনের এপাশ থেকে বুঝতেছিলাম সে কাঁদতেছে ।
আমাদেরই এক ছোট ভাই, তুসার, মেকানিক্যালের শিক্ষক, ওকে ভর্তি হতে হয়েছিল হাসপাতালে । ওর কি দোষ ছিল? ও বাচাতে চেয়েছিল নিরীহ স্টুডেন্ট দের । কেমিষ্টির আজিজ স্যার নাকি ছাত্রলীগ যুবলীগের ছেলেদের ধাওয়ায় মাটিতে পরে যান । মাটিতে পরা স্যার কে মেরেছে জানোয়ারেরা ।
ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের পোলাপান বিএল কলেজের ইম্পোর্টেড কিছু কুকুর সহ পুলিশের ছত্রচায়ায় ঘটিয়েছে এই মর্মান্তিক ঘটনা ।
এক জুনিয়র মুখবইতে বললো ‘ভাইয়া একাত্তরে পাকহানাদারদের সেই দমন, নিপিড়নের অপারেশন সার্চলাইট দেখিনাই, কিন্তু আজকের মত বর্বরতম ঘটনা আমি কোনদিন দেখিনাই । জুনিয়র পোলাপান রামদা, রড, বাশ দিয়ে মেরেছে শিক্ষক-ছাত্রদের । ’
ছাত্রদের হাতে এই রড, হকিস্টিক, রামদা তুলে দিয়েছে কারা? নির্লজ্জ ছাত্র কল্যান পরিচালক শিবেন আর ভিসি আলমগীর রাজনীতির নামে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসব ঘটাচ্ছে । শুনেছি একুশে হলে পাচতলা থেকে শুরু করে নিচতলার সিঁড়ি নাকি ভিজে গিয়েছিল রক্তে । এর পরে ভৈরবে প্রবাহিত হয়েছে অনেক পানি ।
সেই পানি মুছে দিতে পারে নাই রক্তের দাগ । হল ভ্যাকেন্ট করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল সেদিনই । অথারিটি সেই পুরানো প্রসেস, কালকক্ষেপন করতাসে । ছাত্রলীগের সে পশুতুল্য পোলাপানগুলোকে বাচানোর জন্য এখন সেই তিনফুট ভিসি খুবই একটিভ । বায়াসড় শিক্ষকদের নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে ।
এভাবে চাপা দেয়ার প্লান করা হচ্ছে রক্ত ঝরানো এই পৈশাচিকতা, চরম লজ্জাস্কর এই বর্বরতাকে । এই নীতি বিবর্জিত বাষ্টার্ড, শিক্ষক নামের কলঙ্ক গুলোর নোংরামি আর কতদিন দেখবো?
আমাদেরই এক ছোট ভাইয়ের একটা মন্তব্য পড়ে পর শরীরটা কেমন যেন শিউরে উঠলো ‘এবার মায়ের হাত থেকে কাফনের কাপড় পরে যেতে হবে ক্যাম্পাসে, সবাই দোয়া করবেন’ । এই কোন দেশে বাস করছি আমরা । এরশাদ শিকদার যেভাবে মেরে ফেলার আগে নির্যাতন করতো তার ভিকটিমদের, এই দুই জানুয়ারী কি ছিল সেরকম কোন ঘটনার ড্রেস রিহার্সেল? এই ঘটনা, পরিস্থিতি অব্যহত থাকলে হয়তো প্রথমবারের মত রাজনীতির কালো থাবায় শুন্য হবে কোন মায়ের কোল, মুছে যাবে ভবিষ্যত কোন ইঞ্জিনিয়ারের আজন্ম লালিত স্বপ্ন ।
ছাত্ররাজনীতি এখন প্রশ্নবিদ্ধ ।
কেন, কি উদ্দেশ্যে আমাদের ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি অ্যাক্টিভ সেটা আমরা সবাই জানি । ছাত্ররা এর থেকে কোন বেনিফিট পাচ্ছে না । সার্থন্বেশী একটা মহল এর ফায়দা লুটছে । আমাদের সময় কুয়েটে অ্যাক্টিভ রাজনীতি ছিল না । সিনিয়র জুনিয়রদের রিলেশান ছিল ছোট ভাই বড় ভাই রিলেশনের মতই ।
কত আবদার ছিল তাদের, কত মজার ঘটনা ছিল ওদের আর আমাদের মাঝে । পার্সোনালী আমার ক্ষেত্রে আমার নিজের ছোট ভাইয়ের সাথেও আমি এতটা ইন্টিমেট নই । স্টিল নাউ, ওদের সাথে আমার খুব কাছের রিলেশন অটুট আছে । আর এখন কি দেখছি, শুনছি, পড়ছি এসব । ছাত্রলীগকারী জুনিয়রদের হাতে নাকি ইদানিং অহরহ মার খাচ্ছে, সিনিয়ররা ।
শেইম, শেইম । আমার মাথা নিচু হয়ে আসছে, লজ্জায় ।
আজকের তোমরা যারা ছাত্র তারাই সমাজের ভাবী গৌরব কেতন । তোমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে দেশের ভাগ্যহত, নিপিড়িত জনতা । তোমাদের ধৈর্য হারালে চলবে, সবাই সংঘবদ্ধ হও, অন্যায়ের প্রতিবাদ করো ।
জুনিয়রদের উদ্দেশ্যে মাকসুদের গানের মত বলবো ‘তোরা সারা বাংলায় খবর দিয়ে দে, তোরা দেয়ালে দেয়ালে চিকা মেরে দে, মোদের আবার যুদ্ধে যেতে হবে’ । এই যুদ্ধ, এই আন্দলন হবে পাপের বিরুদ্ধে পুন্যের, এই যুদ্ধ নষ্ট রাজনীতির বিরুদ্ধে সাধারন ছাত্রদের । ধ্বংস হোক কলঙ্কিত ছাত্রলীগ । তোমরা সংঘবদ্ধ থাকো, জয় তোমাদের সুনিশ্চিত । আর জেনে রেখো তোমাদের বড়ভাইরা তোমাদের সাথেই আছে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।