পশ্চিম দিক থেকে এক ছাগ সমস্ত পৃথিবী পার হয়ে এল, ভুমি স্পর্ষ করল না,আর সেই ছাগের দুই চোখের মাঝের জায়গায় অবশ্যি একটা সিং ছিলো। পরে দুই শিং বিশিস্ট যে মেষকে আমি দেখেছিলাম,নদীর সামনে দাঁড়িয়ে আছে,তার কাছে এসে সে আপন বলের ব্যগ্রতায় তার দিকে দৌড়ে গেল। আর আমি দেখলাম যে সে মেষের কাছে এলো এবং তার উপর ক্রোধ উত্তেজিত হল। মেষকে আঘাত করলো ও তার দুই সিং ভেঙ্গে ফেললো,তার সামনে দাঁড়ানোর শক্তি ঐ মেষের রইল না,তাকে সে ভুমিতে ফেলে তার পায়ে তলায় পিস্ট করতে লাগলো,তার হাত থেকে ওই মেষকে উদ্ধার করে এমন কেউ ছিলো না। পড়ে ঐ ছাগ ভীষন অহংকার করলো,কিন্তু বলবান হওয়ার পর সেই বড় সিং ভেঙ্গে গেলো এবং সে জায়গায় আকাশের চার বায়ুর দিকে চারটি সিং অবশ্যই সৃস্টি হলো।
“
ড্যানিয়েল ৮;৫-৮ ।
পারসিয়ান ভাষায় তিনি পরিচিত গুজুস্ট্যাগ নামে। পারস্যে এখনো তাকে বলা হয় ইস্কান্দার ই মাকদুনি। আরবীতে আল ইস্কান্দার আল মাকদুনি আল ইয়ানানি। হিব্রুতে আলেকজান্ডার মকডন।
অ্যারামিক ভাষায় ত্রি-কারনাইয়া। উর্ধু ও হিন্দিতে সিকান্দার ই আজম। বাইবেলে তাকে শৃঙ্গধারী সম্রাট বলা হয়েছে ...কোরানে তাকে জুলকারনাইন নামে ডাকা হয়। যার অর্থ দুইশিং ধারি এমন কেউ যে অল্প বয়সে বিশাল সম্রাজ্যের অধিকারী। ধারনা করা হয়ে থাকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দুই দিকেই সম্রাজ্য থাকায় তার এই নাম।
কারো কার মতে তার মাথায় দুটি শিং এক মত দাগ ছিলো...অথবা তার চুলে দুটি শিং এর মত গুচ্ছ ছিলো। যাই থাকুক না কেন সম্রাজ্যের ইতিহাসে তিনি অমর একজন।
মেসিডনিয়ার রাজধানী “পেল্লা”র এক উষ্ণ রাতে রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ স্বপ্নে দেখলেন তিনি তার রানী অলিম্পিয়াসের গর্ভে সিংহের মোহর স্থাপন করে দিয়েছেন আর রানী স্বপ্নে দেখলেন তার গর্ভে এক সিংহের জন্ম হতে যাচ্ছে। পরের দিন সকালে রাজা ফিলিপ তার প্রধান জ্যোতিষিকে ডেকে স্বপ্ন বর্ননা করলেন। সব শুনে জ্যোতিষি জিজ্ঞাস করলেন আপনার কোন রানীও কি একি স্বপ্ন দেখেছেন কি না রাজা খবর নিয়ে জানতে পারলেন তার রানী অলিম্পিয়াসও কাল রাতে একি স্বপ্ন দেখেছেন...রাজ জ্যোতিষীর মুখে এবার হাসি ফুটল...তিনি গননা করে জানালেন তাদের একটি পুত্র সন্তান জন্মাবে যে হবে সিংহের মত পরাক্রমশালী।
৩৫৬ বিসিতে জন্ম নিলেন লিখিত ইতিহাসের শ্রেস্টতম যোদ্ধা আর সম্রাট আলেকজান্ডার...যিনি প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যর মধ্যে তৈরি করতে চেয়ে ছিলেন সেতুবন্ধন।
১০ বছর বয়সে এক কালো রঙের বন্য স্ট্যালিয়ন ঘোড়াকে বশে এনে আলেক্সজান্ডার প্রথম তার পিতা আর তার মেসেডোনিয়ান সভাসদদের নজর কারেন। তার বাকি জীবনে সবচেয়ে ঘনিস্ট বন্ধু ছিলো বুকাফেলাস নামের ঐ কালো স্ট্যালিয়ন আর প্রিয় ছিলো গুরু অ্যারিস্টটলের বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ের বন্ধু হেফাস্টিয়ান। তিনি ছিলেন আলেকজান্ডারের সম্রাজ্যে দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি ও সবচেয়ে বিশ্বস্ত।
হায়ারোগ্লিফিক্সে লেখা আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেটের নাম
১৩ বছর বয়সে আলেক্সজান্ডারকে পড়ানোর জন্য রাজা ফিলিপের অনুরোধে অ্যারিস্টাটোল প্লেটোর বিদ্যালয় ছেড়ে চলে আসেন অজপাড়া গা মাইসিয়ায়।
তার নিবিড় তত্ত্বাবধানে চলে ন্যায়শাস্ত্র,অধিবিদ্যা,নীতিশাত্র,দর্শন,মনস্তত্ব,পদার্থ বিদ্যা,অর্থ নীতি,রাজনিতি,কাব্য সাহিত্য বিষয়ে জ্ঞানার্জন। ১৬ বছর বয়সে রাজা ফিলিপ বাইজেন্টাইনে বিদ্রোহী প্রদেশে যুদ্ধ যাত্রা করলে ১৬ বছর বয়সে আলেক্সজান্ডারকে মেসেডোনিয়ার শাষক হিসাবে কিছুদিনের জন্য দায়িত্ব দিয়ে যান।
কিন্তু রাজপুত্র হিসাবে আলেকজান্ডার খুব একটা সৌভাগ্যবান ছিলেন না..। তার মা ছিলেন এপিরাসের মেয়ে আর তাই মেসেডনিয়ার নিয়মে বিশুদ্ধ মেসিডোনিয়ান না হওয়ায় আলেকজান্ডারের পক্ষে কোনদিন রাজা হওয়া সম্ভব ছিলো না..। উত্তরাধিকারী সন্ধানে ফিলিপ আর একটি বিয়ে করলে রানি অলিম্পিয়া আর আলেকজান্ডারের সাথে চরম বিরোধ তৈরী হয় এবং এক সময় মা আর বোন সহ তাকে দেশ ছেড়ে নানার দেশে নির্বাসনে যেতে হয়..।
কিন্তু সেনা বাহিনীর মধ্যে তরুন আলেজান্ডারের প্রবল জনপ্রিয়তা থাকায় ফিলিপ একসময় না চাইলেও তাদের ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হন। দিনে দিনে সিংহাসনের উত্তরাধিকার কে কেন্দ্র করে সৎ ভাই অ্যারিডাইয়াস ও পিতা ফিলিপের সাথে তার বড় পুত্র আলেকজান্ডারের সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। এমন সময় একদিন আলেকজান্ডারের ছোট বোনের বিয়ের অনুস্টানে রাজা ফিলিপের দেহরক্ষীরা বিদ্রোহ করে ফিলিপকে খুন করলে তরুন আলেকজান্ডার বাধ্য হয়ে সিংহাসনে বসেন।
শিশুকাল থেকে গ্রীক বীর একিলিসের ভক্ত আলেকজান্ডার প্রথমে মেসেডোনিয়ার অধীনে গ্রীসের বাকি নগর রাস্টগুলিকে কুটনীতি আর বাহুবলে একতাবদ্ধ করেন। গ্রীস নগর রাস্ট্রদের কমিটি লীগ অব কোরিন্থ তাকে পারস্য সম্রাজ্যর বিরুদ্ধে অভিযানেরর জন্য নির্বাচিত করে।
এরপর তিনি জয় করে নেন একের পড় এক রাজ্য সম্রাজ্য জনপদ ...
এশিয়া মাইনরের গর্ডিয়াম শহরের গ্যালেক্টিয়ার একটি প্রাচীন শহর। ঐ শহরের পথে একটি মাল গাড়ি বাধা থাকতো থামের সাথে । । কিংবদন্তি ছিলো যে সেনাপতি বা ব্যক্তি ঐ গিট খুতে পারবে তার পক্ষেই এশিয়া বিজয় সম্ভব হবে। দীর্ঘ দিন কেউ ঐ গিট খুলতে পারে নি...এরপর আলেকজান্ডারের সৈন্যরা একে একে চেস্টা করলো..এক সময় আলেকজান্ডার নিজেও ৩ বার চেস্টা করে ঐ গিট খুতে না পেরে খুব হতাশ বোধ করেন...এরপর তিনি একাকি ভাবতে লাগলেন তার গুরু অ্যারিস্টটল থাকলে কি করতেন...? ভাবতে ভাবতে হঠাৎ আবিস্কার করলেন এশিয়া জয়ের জন্য একটা সামান্য গিট খোলার উপরে নির্ভর করার দরকার নেই..এই গিট খোলার রুপকথা শুধুই অপপ্রচার...এশিয়া বিজয়ে ইচ্ছুক দের মানসিক শক্তি নস্ট করে দেয়ার জন্য..তখন আলেকজান্ডার সবার সামনে তলোয়ারের এক কোপে ঐ গিট কেটে ফেলেন ...শুরু হয় তার এশিয়া বিজয়ের অভিযান।
ইংরাজিতে কাট দ্যা গর্ডিয়ান নটস কথাটা সেই থেকে এসেছে।
যুদ্ধক্ষেত্রে আলেকজান্ডার চিরকাল সামনে থেকে লড়াই করেছেন..প্রতিটি দুর্গ আক্রমনে বা দুর্গের দেয়াল ভাঙ্গার সময় সরাসরি নিজের সৈনিকদের সাথে তিনি অংশ নিতেন। যার ফলে জীবনে তাকে একাধিকবার আহত হতে হয়। ইসাসের যুদ্ধে উরুতে,গাজা অভিযানে ঘাড়ে,তুর্কিস্তানে পায়ে গুরুতর আঘাত পান। আফগানিস্তানে তিনবার তিনি লড়াইয়ের সময় জখম হন আর ভারত অভিযানের সময় মুলতানের কাছে বুকে তীর বিধে ফুসফুস ফুটো হয়ে যায়।
আলেকজান্ডার পারস্য অভিযানে বের হয়েছেন জানতে পেরে ৩৩৪ বিসিতে বর্তমান সিরিয়ার একটি স্থান ইসাসের কাছে পিনারাস নদীর তীরে পারস্যের দিকে অগ্রসরমান আলেকজান্ডার কে আক্রমন করেন পারস্য সম্রাট তৃতীয় দারিয়ুস.. কিন্তু এক লাখ সৈন্য নিয়ে পরাজিত হয়ে পারস্যের দিকে পালিয়ে যান দারিয়ুস। আলেকজান্ডারের বাহিনীতে ছিল ভুগোলবিদ,ইতিহাসবিদ,প্রানী বিজ্ঞানী,রাস্ট্র বিজ্ঞানী,চিত্র শিল্পি। প্রতিটি যুদ্ধে তিনি একেবারে সামনে থেকে বুকাফেলাসের পিঠে চড়ে যুদ্ধ করতেন। দারিয়ুসের ৪০ হাজার সৈনের বিপরিতে ১১০ জন নিয়ে সংকীর্ন নদী তীরে যুদ্ধ করে দারিয়ুসকে তাড়িয়ে দেন আলেকজান্ডার।
এরপর টায়ার বন্দর,ব্যবিলন ,মিশর,সিরিয়া,প্যালেস্টাইন যেখানেই তিনি গিয়েছেন যে জনপদই তিনি জয় করেছেন সেখানকার সংস্কৃতির সাথে মিশে যাওয়ার চেস্টা করতেন।
মিশর থেকে পারস্য শক্তিকে বিতারিত করে মিশরের প্রধান দেবতা রা এর মন্দিরে জাকজমক ভাবে পুজা করে নিজেকে মিশরের ফারাও হিসাবে স্থাপন করেন। ৩৩১ এ চুরান্ত ভাবে মুখামুখি হন পারস্য সম্রাট ৩য় দারিয়ুসের। দারিয়ুসের ১০ লক্ষ পদাতিক ,রথি,অশ্বারোহি,হাতির বিপরীতে মেসেডোনিয়ানদের ছিলো ৪০ক হাজার পদাতিক আর ৭০০০ অশ্বারোহি। যুদ্ধে ৩য় দারিয়ুস চুরান্ত ভাবে পরাজিত হন এবং পালিয়ে যাওয়ার পথে আফগানিস্তানের কাছে তার সৎ ভাই তাকে হত্যা করে। ।
আলেকজান্ডার পারস্য বিজয় করে পুড়িয়ে দেন রাজধানী সুসা আর পার্সেপোলিস। পার্সেপোলিসের ধন রত্নের পাহাড় দখল করে ৩০ হাজার মানুষ কে দাস হিসাবে বিক্রি করে দেয়া হয়। তবে
আলেকজান্ডার দারিয়ুসকে ধাওয়া করে মৃত অবস্থায় পেয়ে রাজকীয় মর্যাদায় তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন।
আলেকজান্ডারের অভিযানের রুট
ভারত অভিযান
ভারত অভিযানের পুর্বে তিনি সারগডিয়ান ব্যারেনের এক কন্যা রোক্সানাকে বিয়ে করেন। এরপর নিজেকে পারস্যের সম্রাট ঘোষনা করে সিংহাসনে তার অভিষেক হয়।
বিয়ে করেন পারস্যের রাজকন্য দারিয়ুসে ছোট মেয়ে কে...তার বাহিনীতে দলে দলে যোগ দেয় পার্সীরা...। প্রাচ্যের আচার আচরনে প্রতি তার বিশেষ দুর্বলতা ছিলো... তিনি দরবারে পারস্যের পোষাক পরতেন ও আচার অনুসরন করতে ভালোবাসতেন। প্রস্কিনেসিস বা অভিজাতদের হাতে চুমু খেয়া সম্মান প্রদর্শনের পারস্য রীতি তিনি পারস্য দখলের পরে নিজ দরবারে চালু করেন। । তার এহেন এশিয়ন আচার আচরন গ্রহন কে আগে থেকেই গ্রীক ও মেসিডনিয়ান জাতীয়তাব্দের বিভক্ত হয়ে থাকা সৈন্যদল আর বয়স্ক জেনারেলরা সহ্য করতে পারলেন না।
ভারত অভিযানের ঠিক পুর্বে আলেকজান্ডারের বাহিনীতে জাতীয়তার প্রশ্নে দ্বন্দ বিদ্রোহ দেখা দেয়...৩৩০ এ তাকে তার করেকজন জেনারেল হত্যার চেস্টা করে। আলেকজান্ডার তার গুরু অ্যারিস্টটলের কাছে বুদ্ধি চেয়ে মেসিডনে দুত প্রেরন করেন। গুরুর পরামর্শে তিনি সকল প্রবীন সৈনিক আর সেনাপতিদের অবসর না হয় মৃত্যুদন্ড দিয়ে অপেক্ষাকৃ্ত নবীনদের সামনে নিয়ে আসেন।
৩২৭ বিসিতে সিন্ধুর উপকুলে পৌছে গান্ধারার সব গোস্টিপ্রধান কে তার অধীনতা স্বীকার করে নিতে বললে তক্ষশীলার রাজা আম্ভি সহ অনেকে তার বশ্যতা মেনে নেয় কিন্তু কাম্বোজার অ্যাসপাসই গোত্র ও সোয়াত উপত্যাকার কিছু উপজাতি গোত্র তার অধীনতা মেনে নিতে অস্বীকার করে যুদ্ধ শুরু করে। তিনি তখন কাম্বোজা দখল করে রক্ত বন্যা বইয়ে দেন ও ৪০ হাজার অ্যাসপাসইকে দাস হিসাবে বিক্রি করে দেয়া হয়।
৩২৬ বিসিতে সিন্ধু অতিক্রম করে পাঞ্জাবে প্রবেশ করলে তার মুখামুখি হন ৭ ফুট লম্বা কঠোর শাষক পুরু । ঝিলম নদীর তীরে পুরুর সাথে যুদ্ধে জীবনে প্রথমবারের মত প্রচন্ড বাধার সম্মুখিন হন। এক পর্যায়ে যুদ্ধে হারতে হারতে ঘুরে দাড়ান এবং তিনি পুরুর দুই পুত্রকে হত্যা করেন। শেষ পর্যন্ত পুরুর সাথে তার সন্ধি হয়। তবে ইতিহাসে এতো কঠিন প্রতিরোধের সম্মুখিন আলেকজান্ডারকে কোথাও হতে হয় নি।
পুরুর হস্তি বাহিনী তার মেসেডোনিয়ান সৈন্যদের মধ্যে চরন ভীতির সঞ্চার করে। দীর্ঘ সময়ের সাথী সেই কালো স্ট্যালিয়ান ঘোড়া বুকাফেলাস যুদ্ধ এ মারা যায়। বর্ষা শেষে আলেকজান্ডার তার বাহিনী কে উদ্দীপ্ত করতে ব্যার্থ হন। দীর্ঘ দিন স্ত্রী পুত্র আর জন্মভুমির বাইরে থাকা মেসেডোনিয়ানরা আর যুদ্ধ করতে চাইছিলো না। অনেক কস্টে ২০ হাজার সৈন্যের এক অনিচ্ছুক বাহিনী নিয়ে গঙ্গার তীরে পৌছান আলেকজান্ডার।
তার জন্য ৪০ ফার্লং প্রশস্ত গঙ্গার অপর পারে অপেক্ষা করছিলো ২ লাখ পদাতিক,৮০ হাজার অশ্বারোহি,৭ হাজার রথি,৬ হাজার হাতি নিয়ে তৈরী গঙ্গা অববাহিকার সব রাজ্যের সম্মিলিত বাহিনী..। আলেকজান্ডারে সৈনারা বিশাল গঙ্গা পাড়ি দিয়ে যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানায়। বাধ্য হয়ে ফিরতি পথ ধরেন আলেকজান্ডার। চলে আসেন বেলুচিস্তান হয়ে মুলতান এ, এর পর রাজধানী সুসায় ফিরা পথে মুলতানে এক সংক্ষিপ্ত সংঘর্ষে বুকে তীরবিদ্ধ হন।
ভারত অভিযান স্মরনে চালু করা মুদ্রা
আলেকজান্ডার প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য কে এক করতে চেয়েছিলেন।
সুসায় ফিরে ভাষা আর জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে আবারো তার দলের মেসিডোনিয়ান আর পার্সীদের মধ্য বিরোধ তৈরি হয়। ৩২৪ বিসিতে দখল করা পারস্যের রাজধানী সুসায় তিনি বিশাল বিজয়োৎসবের আয়োজন করেন। তিনি নিজেকে পারস্যর অনুকরনে শাহেনশাহ বলে পরিচয় দিতে থাকেন এবং সেই অনুকরনে পোষাক পরিধান করতেন এবং ব্যবিলনে তার রাজধানী সরিয়ে নিয়ে যান। তিনি অভিজাত মেসিডোনিয়ানদের সাথে পারস্যের মেয়েদের গনবিয়ের আয়োজন করেন। তার এই আচরন গ্রীক ও মেসিডোনিয়ানদের এবারো পছন্দ হয় নি।
এরই মধ্যে তার জীবনে এক দারুন আঘাত আসে .... সবচেয়ে বিশ্বস্ত বাল্যবন্ধু ও তার সম্রাজ্যের দ্বিতীয় ব্যক্তি হেফাস্টিয়ান হঠাৎ মারা যায়। ধারন করা হয় তাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়। বন্ধুর মৃত্যুতে একটানা ছয়মাস শোক পালন করেন আলেকজ্জান্ডার.
মৃত্যুঃ
অনেকের ধারনা বিরোধীদের স্টিকনিন বিষের বিষ ক্রিয়ায় আলেকজান্ডারের মৃত্যু হয়েছিলো। তবে বেশির ভাগ ইতিহাসবিদের মতে ম্যালেরিয়ায় তার মৃত্যুর কারন। ব্যবিলনে ৩২৩ বিসিতে মাত্র দশ দিনের অসুস্থাতায় তার জীবনাবসান হয়।
আবার কারো মতে তার রগচটা উন্মাদনা রোগ সারানোর ঔষুধ হেলিবার অতিরিক্ত সেবনে আলেকজান্ডারের মৃত্যু হয়। মৃত্যুশয্যায় শায়িত প্রায় বাক্যরহিত আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট তার সবচেয়ে বড় পদাতিক বাহিনীর প্রধান ক্রেটারাসকে উত্তরাধিকারী মনোনিত করে যান.তবে দুর্ভাগ্যক্রমে ক্রেটারাস সেখানে উপস্থিত না থাকায় জেনারেলরা গুপ্তঘাতক পাঠিয়ে ক্রেটারাসকে হত্যা করে।
শেষকৃ্ত্য
তার মৃতদেহ ৪০ দিন মধুতে ডূবিয়ে রাখা হয় এরপর স্বর্নের তৈরি আধারে সংরক্ষন করা হয়। তার শবাধারের নকশা করে সেসময়ের বিখ্যাত নকশাবিদ ডিওডোরাস । সোনার তৈরী মন্দিরের মত বাহনে করে টেনে নেয়া হয় তার কফিন।
তবে তাকে কোথায় সমাহিত করা হয়েছিলো তা আজো ধোঁয়াটে ইতিহাস। কারো মতে টলেমি তার শবাধার জোর করে মিশরের আলেকজান্ডারিয়া নিয়ে গিয়ে সপ্তমাশ্চর্য আলেকজান্দ্রিয়া বাতিঘরের পার্শে তাকে সমাহিত করে।
ইস্তাম্বুল জাদুঘরে রাখা আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট এর(ধারনা)কফিন
মেসিডনিয়ানদের রাজা থেকে গ্রীকদের কনফেডারেশনের অধিপতি.... মিশরের ফারাও থেকে পারস্যের শাহেনশাহ হতে পেরেছিলেন...মাত্র ১৩ বছর সময়কালের মধ্যে। তারমত সম্রাজ্য ভাগ্য আর কোন নৃপতির নেই। তার মৃত্যুর পরে তার বিশাল সম্রাজ্য তার সেনাপতিরা সংঘর্ষ গুপ্তহত্যা আর খুনের মাধ্যমে দখল করে নেয়।
তার মৃত্যুর খবর শুনে প্রথম স্ত্রী রোক্সানা অপর স্ত্রী পারস্যের রাজকন্যা কে তার নামে ডেকে এনে হত্যা করে। এরপর তার শিশু পুত্র ৪র্থ আলেকজান্ডার কে মেসিডোনিয়ার সিংহাসনে বসানোর চেস্টা করা হয় এসময় তার মা অলিম্পিয়াস নিজেকে অস্থায়ী রানি ঘোষনা করেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেসিডনিয়ান এক অভিজাত ক্যাসেন্ডার নির্দেশে তার মা,স্ত্রী রোক্সানা ও শিশু পুত্রকে হত্যা করা হয় । ৫০ লক্ষ বর্গ মাইলের বিশাল সম্রাজ্য সেনাপতিদের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। ক্যাসেন্ডার মেসিডন,থ্রেস লাইসিমাকাস, পারস্যও মেসোপটেমিয়া সেলুকাস আর লেভেন্ট ও মিশর টলেমি নিজেদের দখলে চলে যায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।