একি নামের দুজন মানুষ। একজন কালো, আরেকজন সাদা (গাত্রবর্ণ অর্থে নয়)। কিন্তু আমজনতার পছন্দ কালো। ভোট দিয়ে তারা কালোকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছে হয়তো মাত্র এক হাজার টাকা বা অন্ধ দলীয় আনুগত্যের কারণে। এখন বাচ্চাকে মণিপুর স্কুলে ভর্তি করে আমজনতার হাজার হাজার টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে।
আমজনতা যেন এক হর্ষকামী সোসাইটি, দিয়ে যাও বাঁশ, মিটিছেনা আঁশ। ডঃ কামাল হোসেনকে তারা ভোট দেননি, একঃ কামাল হোসেন একহাজার টাকা দিয়ে একটি ভোট কেনার রাজনীতি করেন না। দুইঃ উনি বঙ্গবন্ধুর সততার রাজনীতিতে অবিচল। অন্যদিকে কামাল মজুমদার কেবল বঙ্গবন্ধুর ছবি-রাজনীতিতে সচল। মিরপুরবাসীর এখন আয়নায় নিজের মুখ দেখা উচিত, সত্যিই এই আপনিই কী এই কামাল মজুমদারকে ভোট দিয়েছিলেন?
সুতরাং আজকের রাষ্ট্রীয় দুর্ভাগ্য নিয়ে হাসিনা এবং খালেদার মৃত্যুকামনা করে যারা ফেসবুক স্টেটাস দিয়ে ছয় মাসের কারাদন্ড পাচ্ছেন তাদের প্রতি অনুরোধ আগে আত্মসমালোচনা করুন তারপর অন্যের সমালোচনা করতে যাবেন।
বৃটিশ আমলের দাস মনোবৃত্তি নিয়ে আমরা আমজনতা শক্তের ভক্ত নরমের জম হয়ে রয়ে গেলাম। কামাল মজুমদারের মতো একজন রাজনৈতিক স্থলদস্যুর অঙ্গুলি হেলন ছাড়া এখন মণিপুর বিদ্যালয়ের একটি পাতাও নড়েনা। আমজনতা হতাশায়, বিপন্নতায় আবার তাহলে বিএনপির বাঁশের অপেক্ষমান, আবার রাজনৈতিক স্থলদস্যু তারেক রহমান। বাংলাদেশের আমজনতা দোয়া নিয়ে তারেক রহমানের অঙ্গুলি হেলনে ২০১৪ থেকে বাংলাদেশের সমস্ত পাতা নড়তে শুরু করবে। মিরপুরবাসীর দোয়া নিয়ে স্থলদস্যু খাম্বা মামুন কামাল মজুমদারকে বিপুল ভোটে পরাজিত করবে।
একটি ভোট এবার দুহাজার টাকা। অন্তত চারটি ফেনসিডিলের বোতল সাবাড় করে একদল তারুণ্য দেশের সেরা মণিপুরের স্কুলটি কামাল মজুমদারের তালুক থেকে নিয়ে খাম্বা মামুনের তালুকে উপহার দেবে।
কারণ বাংলাদেশ সংবিধানের অন্যতম লেখক, বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল হোসেনকে মিরপুরের মানুষ নির্বাচনের জামানত বাজেয়াপ্ত করে সুনির্দিষ্ট করেছে আজকের মণিপুর স্কুলে সাংসদের চাঁদা আদায়ের সংস্কৃতি এবং এলাকার ভাগ্য। বেছে নিয়েছে ভ্যাম্পায়ার রাজনীতির কামাল মজুমদারকে। বাংলাদেশে দুর্নীতি সংস্কৃতির ব্যাপক সামাজিকীকরণে আমজনতার ভূমিকা মূখ্য।
ভোটের আগে টাকা আর গুজবের লোভ সামলানোর মতো শিক্ষা যদি মিরপুরের শিক্ষিত পুরবাসীর না থাকে, বাংলাদেশের প্রত্যন্তের অবস্থা কী অনুমান করতে পারেন।
নির্বাচনী প্রতিবেদনে কালোটাকার ছড়াছড়ির আভাস থাকলেও আমাদের রিপোর্টাররা আজ পর্যন্ত নির্বাচনে টাকার খেলা নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরীর প্রশিক্ষণ লাভ করেনি। নাসিক এবং কুসিক নির্বাচনের টাকার খেলা নিয়ে কোন স্পেসিফিক রিপোর্ট দেখেছেন? পুলিশ বা RAB নির্বাচনে মারামারি ঠেকাতে সফল, কিন্তু কালো টাকা বিতরণকারীদের ধরতে ব্যর্থ হয় তারা, দুএকজনকে ধরে,ফলো আপ হয়না। এটা নিশ্চয় তাদেরো প্রশিক্ষণের অভাবজনিত। দক্ষতা থাকলে ঐ ধৃত একজন আসামীকে ধরেই কালো টাকা কোন প্রার্থী বিলাচ্ছে তার পরিচয় জানা যায়।
সিইসি তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে অবসরে যাচ্ছেন। কিন্তু তিনি নিশ্চয়ই উপলব্ধি করেছেন ২০০৮ এর নির্বাচন থেকে কুসিকে পর্যন্ত কালো টাকার ছড়াছড়ি হয়েছে, নির্বাচন কর্মকর্তারা ধরতে পারেননি। অবশ্যই দক্ষতার অভাব।
আর গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আসলেই নির্বাচনের সময় নাশকতা ছাড়া আর কোন বিষয়ে কোন খোঁজ রাখে বলে মনে হয়না। নির্বাচনে কালোটাকার সংস্কৃতি আটকাতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও ব্যর্থ।
যে কারণে কামাল মজুমদার ফুলের মালা গলায় নিয়ে ঘুরছে। কালো টাকার আছর ঠেকানোর মতো কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। তাই রাজনীতি রয়ে গেল গড ফাদারের হারেমের দাসী হয়ে।
কামাল মজুমদার মিডিয়ার বিরুদ্ধে জিহাদে মণিপুরের নিষ্পাপ শিশুদের তার পক্ষে দাসবন্ধনে বাধ্য করেছেন। আবার সেই দাসপ্রথার কথা মনে পড়ে গেল।
শিশুদের এলেক্স হেইলির রুটস গল্পের দাস কুন্তাকিন্তির মতো কামাল মজুমদারের দাঁড় করিয়ে রাখা বাংলাদেশ রাজনীতির অচলায়তনের অন্ধকার স্পষ্ট করে দিল। একজন নৃত্যশিল্পীকে ছাত্রলীগ নেতাদের সাম্প্রতিক ধর্ষণের ঘটনায় ঈশরদীতে বিএনপির ৯১-৯৬ শাসনামলে ছাত্রদলের নেতাদের একজন দরিদ্র কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ করে পুড়িয়ে মারার ঘটনাটি মনে পড়ে গেল। সুতরাং আজকের ছাত্রলীগের তান্ডব দেখে ২০১৪ সালে আমজনতার দোয়া নিয়ে তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হলে ছাত্রদলের যে তান্ডব শুরু হবে তা আঁচ করা যায়।
পত্রিকার মতামত জরীপে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তায় ধস, অতএব বিএনপির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি, এক জিয়া লোকান্তরে লক্ষ্য বাঁশ ঘরে ঘরের প্রস্তুতি (রেফারেন্স ০১-০৬ হাওয়াযুগ)। এই কালো-গণতান্ত্রিক ভাবনার প্রজনন ব্যবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে দাস থেকে দাসতর হয়ে পড়ছি আমরা।
হাইব্রিড ব্যবসায়ী, তস্কর তরুণ নেতারা এখন টিভি মাইক্রোফোন দেখলে মনিকালিভনিস্কি হয়ে হঠে। তাদের পলিটিক্যাল লিপসার্ভিস শুনে আমরা ফেসবুকে লাইক দিই অথবা কামাল মজুমদার আর খাম্বামামুনের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে আমরা কতিপয় উপায়হীন ইন্টেলেকচুয়াল কীবোর্ডমৈথুন করি। এ এক ট্র্যাজিক স্টেলমেট, থমকে যাওয়া বাংলাদেশ সভ্যতার ঘড়ির কাঁটা। অকালপ্রয়াত কবি আবুল হাসান এই উদিত দুঃখের দেশ সম্পর্কে আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ফুল ফুটবে না, ফুটবে না, ফুল আর কখোনোই ফুটবে না।
সত্যিই কী তাই, আবুল হাসান কী তবে ত্রিকালদর্শী টিরেসিয়াস! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।