আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তিন বছরেই জনপ্রিয়তার বেলুন ফুটো

মাত্র তিন বছরের মাথায় আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তার ফাঁপানো বেলুন ফুটো হয়ে গেছে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ২৩১টি আসন অর্থাৎ জাতীয় সংসদের মোট আসনের ৮৭ শতাংশ আসন। কিন্তু আওয়ামী লীগ তাদের গগণচুম্বী নির্বাচনী ফলাফল ধরে রাখতে পারেনি। মধ্যগগণে উড়তে থাকা আওয়ামী লীগে প্রথম ধকল আসে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে। টানা ১৭ বছরের মেয়র মহিউদ্দিন ধরাশায়ী হন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনজুরের নিকট।

আনারস প্রতীক নিয়ে বিএনপির এ প্রার্থী পেয়েছেন ৪ লাখ ৭৯ হাজার ১৪৫ ভোট। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী এ বি এম মহিউদ্দিন পেয়েছিলেন ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৬১৭ ভোট। এর রেশ না কাটতেই আওয়ামী লীগ আবার ধকল খায় পৌরসভা নির্বাচনে। প্রত্যাশিত ফলাফল পায়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। পৌরসভা নির্বাচনে সম্মিলিতভাবে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ৮৮টি আসন।

পক্ষান্তরে বিএনপি পেয়েছে ৯৭টি আসন। বিদ্রোহী আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা পায় ১৫টি আসন এবং বিদ্রোহী বিএনপি প্রার্থীরা পেয়েছিল ৯টি আসন। বিদ্রোহীদেরকে মূল দলে অন্তর্ভুক্ত করলে বিএনপি পেয়েছে ১০৬টি এবং আওয়ামী লীগ পেয়েছে ১০৫টি। তারপর নবগঠিত নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শামীম ওসমানকে দলের সমর্থন দিয়ে আবারো ভুলের মাশুল গুণে আওয়ামী লীগ। এবার পরাজিত হয় নাগরিক কমিটির প্রার্থীর নিকট।

নাগরিক কমিটির প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভি দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে ১ লাখ ৮০ হাজার ৪৮ ভোট পেয়ে জয়ী হয়। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমান দেওয়াল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে পান ৭৮ হাজার ৭০৫ ভোট। আওয়ামী লীগের দূর্গ হিসেবে পরিচিত নতুন এ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও ক্ষমতাসীনরা হারে ১০১,৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে । সবশেষ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও একই চিত্র। নবগঠিত এ সিটি কর্পোরেশনেও আওয়ামী লীগকে পেতে হয় পরাজয়ের গ্লানি।

নবগঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) প্রথম মেয়র নির্বাচনে বৃহস্পতিবার ৩০ হাজার ৩১১ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন বিএনপি থেকে অব্যাহতি নেয়া মনিরুল হক সাক্কু। ৬৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে সাবেক পৌর মেয়র মনিরুল হক সাক্কু মোট পেয়েছেন ৬৫ হাজার ৭ শ’ ৪০ ভোট। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আফজল খান ৩০ হাজার ৩শত ১১ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন। তার মোট ভোট সংখ্যা ৩৫ হাজার ৪২৯। আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে হানা দিয়েছে বিএনপি ।

দীর্ঘ ৪০ বছর আওয়ামী লীগের আসনে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারী উপ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-১ আসনে বিজয়ী হয়েছে বিএনপি। হবিগঞ্জ-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী শেখ সুজাত মিয়া পেয়েছেন ৮১ হাজার ৩৩০ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আ’লীগের ডাক্তার মুশফিক হোসেন চৌধুরী পেয়েছেন ৮০ হাজার ৪৫ ভোট। বিগত পৌর নির্বাচনে বিএনপি সিলেট বিভাগের ৯টি পৌরসভায় বিজয় অর্জন করে। এর বিপরীতে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয় মাত্র ৬টিতে।

একটিতে বিজয়ী হন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এসবের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দূর্বলতার বিষয়টিও সামনে চলে এসেছ। কুমিল্লায় দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বসাতে না পারা, হবিগঞ্জে মহাজোটের দুই প্রার্থী। চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের একাংশের মহিউদ্দিনের বিরোধিতা, ইমেজহীন প্রার্থীকে নারায়নগঞ্জ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জেলা সভাপতি আকরামের পদত্যাগ। এসব বিষয় নিয়ে এখনি না ভাবলে ভবিষ্যতে তার চড়া দাম দিতে হবে বলে মনে করছেন রাজনীতিক বিশ্লেষকরা।

মহাজোট সরকারের তিন বছর পূর্ণ হওয়ার প্রাক্কালে নাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয়ের মাত্র দুই মাস পর কুসিক নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থীর ভরাডুবির জন্য প্রার্থী মনোনয়নে আওয়ামী লীগের ভুল স্বিদ্ধান্তকেই দায়ী করলেন দেশের বিশিষ্ট ব্যাক্তি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এছাড়া, মহাজোটের ঐক্যের প্রতিফলন না থাকা, স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় কোন্দল, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আফজল খানের পরিবার থেকে একাধিক প্রার্থীর নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ, নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকা এবং সরকার দলীয় এমপিদের ইমেজ সংকটও আফজলের পরাজয়ের নেপথ্যে কাজ করেছে বলে মন্তব্য করেন তারা। তাদের মতে, নাসিকের পর কুসিকে একই ঘটনার পুণরাবৃত্তি সরকারের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ার বিষয়টিই প্রমাণ করে। এটা আওয়ামী লীগের জন্য অশনি সংকেত বলেও তারা মন্তব্য করেন। এ বিষয়ে বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, “আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।

” প্রতিশ্রুতির যথাযথ বাস্তবায়ন করতে না পারায় এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় কোন্দল, এবং একই দলের একাধিক প্রার্থী থাকার কারণে কুসিক নির্বাচনে আফজলের ভরাডুবি হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান বলেন, “কুসিক নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থীর পরাজয় আওয়ামী লীগের জন্য অশণি সংকেত। জনগন মন্দকে বর্জন এবং ভালোকে গ্রহণের সংষ্কৃতিতে ফিরে আসছে এটা তারই প্রমাণ। ” এজন্য সরকারের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়াকেই দায়ী করা যাবেনা বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তার মতে, “স্থানীয় কোন্দল এবং একাধিক প্রার্থী তাদের ভোটে বিভক্তি ঘটিয়েছে। ” এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ের আরো অনেক সমস্যাই এর নেপথ্যে কাজ করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। কুসিক নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের জন্য আওয়ামী লীগের দলীয় শৃঙ্খলা না থাকা, প্রার্থী নির্বাচনে ভুল স্বিদ্ধান্ত নেয়া এবং মহাজোটের ঐক্যের প্রতিফলন না থাকাকেই দায়ী করেছেন মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ পুরোপুরি একটা বিশৃঙ্খল দল। তাদের মধ্যে শৃঙ্খলার ছিটেফোটাও নেই।

জাতীয় পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত এই বিশৃঙ্খলা চলছে। এজন্য একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। দলীয় কোন্দল নির্বাচনে প্রকাশ্য রূপ ধারন করেছে। এছাড়া মহাজোটের ঐক্যের প্রতিফলন এখানে ছিলোনা। নিজেদের একাধিক প্রার্থী ছাড়াও মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থী এককভাবে নির্বাচন করেছেন।

এ কারণে ভোট বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ” তাছাড়া দলটি জনগনের আস্থাও কিছুটা হারিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।