ফেলানীর নাম নিয়ে রাজনীতি করা থেমে না থাকলেও বছর না যেতেই ভুলতে বসেছি আজ এই দিনে তাকে হত্যা করা হয়েছিলো। আমাদের বন্ধুপ্রতীম (?) রাষ্ট্রের সীমান্তরক্ষীরা গত বছর এই দিনে তাকে গুলি করে হত্যা করে। গুলিতে আহত ফুলের মতো ছোট্ট ফেলানী তার অসহায় বাবার চোখের সামনে ছটফট করতে করতে মারা যায়। এভাবে দীর্ঘ সাড়ে চার ঘন্টা তার লাশ ঝুলে থাকে কাঁটাতারের বেড়ায়। এরপর থেকে ফেলানী শুধু একটা লাশ নয়, হয়ে দাঁড়ায় কিংবদন্তি! ভারতীয় আগ্রাসনের নির্মম প্রতীক।
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, প্রতিবারই ফেলানীদের মতো গরীবেরা কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় যাবার হাতিয়ার হয়। তাদের মৃত্যুর ঘটনার মাধ্যমে কেউ না কেউ উপকৃত হলেও যার মৃত সেই ব্যক্তির পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সব সময়েই থাকে উপেক্ষিত। মৃত্যুর পরেও সে ও তার পরিবার ব্যবহৃত হতে থাকে বিভিন্নভাবে। তাতে ওদের কী আসে যায়? ফেলানীরা কি কখনো তাদের প্রাপ্য মর্যাদাটুকু পেয়েছে? এদের মৃত্যুর পরে দেহ থেকে প্রাণটা উধাও হবার সাথে সাথে নামটাও চুরি হয়ে যায়। মৃতদেহ পচে গলে গন্ধ বেরুলেও তাতে কারও কিছু আসে যায় না।
স্বার্থ উদ্ধারে শুধু নামটাই প্রয়োজন। বিএসএফের চেয়েও কি আমরা কম নিষ্ঠুর?
ফেলানীর সাথে মনে পড়ে আরও একটি হতদরিদ্র মানুষের নাম। সে আমাদের নূর হোসেন। এরশাদের স্বৈরাচারবিরোধী আচরণে যে বুকে লেখা ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ স্লোগান ধারণ করে পেটোয়া বাহিনীর গুলিতে আত্মবিসর্জন দিয়েছিলো। রাজপথে রক্তের দাগ শুকানোর আগেই নূরের নামটিও চুরি হয়ে গিয়েছিলো।
তাকেও আমরা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রতীক বানিয়ে ফায়দা লুটেছি। কিন্তু যে পরিবারটা নূরের মতো রোজগারি ছেলেটাকে হারালো তাদের খবর আমরা কয়জন রাখি? নূর হোসেনের নাম আজও ব্যবহার করে যে যার ধান্দা লাভে ব্যস্ত। কিন্তু সেই সময়ে যারা নূরের মতো সহজ সরল ছেলেদের গণতন্ত্রের মাসালা দিয়ে রাজপথে নামিয়েছিলো, সেই গণতন্ত্রের কি হাল এখন? কিংবা সেই স্বৈরাচার এরশাদ?
লিখতেও লজ্জা হচ্ছে। পরপর তিনটি খবর পড়ে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল, হায়রে নূর হোসেন! তুই কতো বোকাই না ছিলি (ক্ষমা করো নূর হোসেন কথাটা বলার জন্য)! নূর হোসেনের মৃত্যুদিনের আগে এরশাদ নূর হোসেনের নেত্রীর সঙ্গে এক মঞ্চে বসে আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ থেকে গণতন্ত্রকে সামনে নেবার প্রতিজ্ঞা করে। তার ক`দিন পরেই নূর হোসেন দিবস।
দেখলাম মৃত্যুদিনে তার দলের কোনো নেতা নেই। পরিবারের কিছু লোক এবং অন্যরা তাকে স্মরণ করছে। কিছুদিন যেতে না যেতেই বিস্মিত হবার মতো খবর। এরশাদকে সরকার চায়ের দাওয়াত দিয়েছেন। পাটা-পোতার লড়াইয়ে নূর এবং ফেলানীরা ছাতু ছাতু।
লড়াই শেষে যে যার স্বার্থে একে অপরের গায়ে হেলান দিয়ে থাকা। রাজনীতির কতোই না রঙ্গ! সত্যি রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। সঙ্গে যোগ করতে হয়, রাজনীতিতে আদর্শ বলতেও কিছুই নেই।
মনে পড়ে সেই বাসন্তীর কথা? মনে তো পড়তেই হবে। কারণ বাসন্তীও চুরি হওয়া নামেদের মধ্যে একটি নাম।
সে আরও বেশি হতভাগিনী। জীবিত থাকতেই নিজের নামকে ছিন্নভিন্ন হয়ে ব্যবহার হতে দেখেছে। কতোবার এই নামটি ক্ষমতায় যাবার হাতিয়ার হয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। কিন্তু এতো ক্ষমতাময় প্রভাববিস্তারি নামটি যে ধারণ করে ছিল সে নিজে কিন্তু বরাবরই ছিল ক্ষমতাহীন। ক্ষমতাবানদের কাছে অচ্ছুত, ফেলে দেবার মতোই একটা মানুষ!
বাসন্তী, আসাদ কিংবা নূরের মতো ফেলানীর জীবনেও ঘটতে যাচ্ছে একই পুনরাবৃত্তি।
গত এক বছরে যতোবার এবং যতোভাবে ফেলানীর নাম এসেছে পত্রিকা থেকে শুরু করে সবখানে। অথচ আজ তার মৃত্যুর দিনে গুটিকয়েক পত্রিকা বাদে কোথাও খবর নেই, নেই তেমন আলোচনা। এই নাম চুরি হওয়া মানুষদের আত্মারা কি আজো কেঁদে ফেরে? অন্ততঃ একটা অনুরোধ সরকার এবং নাগরিক সমাজের প্রতি:ফেলানীরা মৃত্যুর পরে হারিয়ে গেছে, চুরি হয়ে গেছে তাদের নামও। একটু সন্মান দেখাই তার মৃত্যুকে। আজ এই দিনটি হোক ফেলানীদিবস।
যে দিবসে আমরা স্মরণ করবো ফেলানীর মৃত্যুকে। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবো, সারা বিশ্বে ভারতের মতো আগ্রাসনবাদী রাষ্ট্রের পীড়নের বিরুদ্ধে। ফেলানীর কাঁটাতারে ঝুলে থাকা লাশটি হোক বিশ্বে আগ্রাসনবাদিতার বিরুদ্ধে একটা তীব্র প্রতিবাদ। শুরুটা আমাদের দেশ থেকেই হোক। সবাই আমরা এক সাথে বলি, ‘আজ ফেলানী দিবস’।
জয় হোক মানবতার, ধ্বংস হোক আগ্রাসনবাদ।
লেখক:
ফেলানীর নাম নিয়ে রাজনীতি করা থেমে না থাকলেও বছর না যেতেই ভুলতে বসেছি আজ এই দিনে তাকে হত্যা করা হয়েছিলো। আমাদের বন্ধুপ্রতীম (?) রাষ্ট্রের সীমান্তরক্ষীরা গত বছর এই দিনে তাকে গুলি করে হত্যা করে। গুলিতে আহত ফুলের মতো ছোট্ট ফেলানী তার অসহায় বাবার চোখের সামনে ছটফট করতে করতে মারা যায়। এভাবে দীর্ঘ সাড়ে চার ঘন্টা তার লাশ ঝুলে থাকে কাঁটাতারের বেড়ায়।
এরপর থেকে ফেলানী শুধু একটা লাশ নয়, হয়ে দাঁড়ায় কিংবদন্তি! ভারতীয় আগ্রাসনের নির্মম প্রতীক।
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, প্রতিবারই ফেলানীদের মতো গরীবেরা কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় যাবার হাতিয়ার হয়। তাদের মৃত্যুর ঘটনার মাধ্যমে কেউ না কেউ উপকৃত হলেও যার মৃত সেই ব্যক্তির পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সব সময়েই থাকে উপেক্ষিত। মৃত্যুর পরেও সে ও তার পরিবার ব্যবহৃত হতে থাকে বিভিন্নভাবে। তাতে ওদের কী আসে যায়? ফেলানীরা কি কখনো তাদের প্রাপ্য মর্যাদাটুকু পেয়েছে? এদের মৃত্যুর পরে দেহ থেকে প্রাণটা উধাও হবার সাথে সাথে নামটাও চুরি হয়ে যায়।
মৃতদেহ পচে গলে গন্ধ বেরুলেও তাতে কারও কিছু আসে যায় না। স্বার্থ উদ্ধারে শুধু নামটাই প্রয়োজন। বিএসএফের চেয়েও কি আমরা কম নিষ্ঠুর?
ফেলানীর সাথে মনে পড়ে আরও একটি হতদরিদ্র মানুষের নাম। সে আমাদের নূর হোসেন। এরশাদের স্বৈরাচারবিরোধী আচরণে যে বুকে লেখা ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ স্লোগান ধারণ করে পেটোয়া বাহিনীর গুলিতে আত্মবিসর্জন দিয়েছিলো।
রাজপথে রক্তের দাগ শুকানোর আগেই নূরের নামটিও চুরি হয়ে গিয়েছিলো। তাকেও আমরা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রতীক বানিয়ে ফায়দা লুটেছি। কিন্তু যে পরিবারটা নূরের মতো রোজগারি ছেলেটাকে হারালো তাদের খবর আমরা কয়জন রাখি? নূর হোসেনের নাম আজও ব্যবহার করে যে যার ধান্দা লাভে ব্যস্ত। কিন্তু সেই সময়ে যারা নূরের মতো সহজ সরল ছেলেদের গণতন্ত্রের মাসালা দিয়ে রাজপথে নামিয়েছিলো, সেই গণতন্ত্রের কি হাল এখন? কিংবা সেই স্বৈরাচার এরশাদ?
লিখতেও লজ্জা হচ্ছে। পরপর তিনটি খবর পড়ে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল, হায়রে নূর হোসেন! তুই কতো বোকাই না ছিলি (ক্ষমা করো নূর হোসেন কথাটা বলার জন্য)! নূর হোসেনের মৃত্যুদিনের আগে এরশাদ নূর হোসেনের নেত্রীর সঙ্গে এক মঞ্চে বসে আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ থেকে গণতন্ত্রকে সামনে নেবার প্রতিজ্ঞা করে।
তার ক`দিন পরেই নূর হোসেন দিবস। দেখলাম মৃত্যুদিনে তার দলের কোনো নেতা নেই। পরিবারের কিছু লোক এবং অন্যরা তাকে স্মরণ করছে। কিছুদিন যেতে না যেতেই বিস্মিত হবার মতো খবর। এরশাদকে সরকার চায়ের দাওয়াত দিয়েছেন।
পাটা-পোতার লড়াইয়ে নূর এবং ফেলানীরা ছাতু ছাতু। লড়াই শেষে যে যার স্বার্থে একে অপরের গায়ে হেলান দিয়ে থাকা। রাজনীতির কতোই না রঙ্গ! সত্যি রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। সঙ্গে যোগ করতে হয়, রাজনীতিতে আদর্শ বলতেও কিছুই নেই।
মনে পড়ে সেই বাসন্তীর কথা? মনে তো পড়তেই হবে।
কারণ বাসন্তীও চুরি হওয়া নামেদের মধ্যে একটি নাম। সে আরও বেশি হতভাগিনী। জীবিত থাকতেই নিজের নামকে ছিন্নভিন্ন হয়ে ব্যবহার হতে দেখেছে। কতোবার এই নামটি ক্ষমতায় যাবার হাতিয়ার হয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। কিন্তু এতো ক্ষমতাময় প্রভাববিস্তারি নামটি যে ধারণ করে ছিল সে নিজে কিন্তু বরাবরই ছিল ক্ষমতাহীন।
ক্ষমতাবানদের কাছে অচ্ছুত, ফেলে দেবার মতোই একটা মানুষ!
বাসন্তী, আসাদ কিংবা নূরের মতো ফেলানীর জীবনেও ঘটতে যাচ্ছে একই পুনরাবৃত্তি। গত এক বছরে যতোবার এবং যতোভাবে ফেলানীর নাম এসেছে পত্রিকা থেকে শুরু করে সবখানে। অথচ আজ তার মৃত্যুর দিনে গুটিকয়েক পত্রিকা বাদে কোথাও খবর নেই, নেই তেমন আলোচনা। এই নাম চুরি হওয়া মানুষদের আত্মারা কি আজো কেঁদে ফেরে? অন্ততঃ একটা অনুরোধ সরকার এবং নাগরিক সমাজের প্রতি:ফেলানীরা মৃত্যুর পরে হারিয়ে গেছে, চুরি হয়ে গেছে তাদের নামও। একটু সন্মান দেখাই তার মৃত্যুকে।
আজ এই দিনটি হোক ফেলানীদিবস। যে দিবসে আমরা স্মরণ করবো ফেলানীর মৃত্যুকে। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবো, সারা বিশ্বে ভারতের মতো আগ্রাসনবাদী রাষ্ট্রের পীড়নের বিরুদ্ধে। ফেলানীর কাঁটাতারে ঝুলে থাকা লাশটি হোক বিশ্বে আগ্রাসনবাদিতার বিরুদ্ধে একটা তীব্র প্রতিবাদ। শুরুটা আমাদের দেশ থেকেই হোক।
সবাই আমরা এক সাথে বলি, ‘আজ ফেলানী দিবস’। জয় হোক মানবতার, ধ্বংস হোক আগ্রাসনবাদগ।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
লেখক: ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।