আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাশ্মীর-১

প্রবাসী ভূস্বর্গ কাশ্মীর। মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর কাশ্মীরের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন “ পৃথিবীতে স্বর্গ থেকে থাকলে তা এখানে, তা এখানে, তা এখানে” সেই সৌন্দর্য হয়তো আজও আছে কিন্তু বোমা, বন্দুকের গুলিতে কাশ্মীর আজ অশান্ত। পৌরানিক কাহীনি এবং নাম করন- কাশ্মীর শব্দের অর্থ হল শুকিয়ে যাওয়া ভূমি। অনেক অনেক দিন আগে চারদিকে হিমালয় আর পীর পাঞ্জল পাহাড় ঘেরা এই এলাকা ছিল বিশাল এক হ্রদ। রাজা দক্ষ তনয়া সতী’ র হ্রদ নাম অনুসারে নাম ছিল সতীসর।

সেই হ্রদে বাস করত এক দৈত্য। নাম তার “জলোদ্ভব” দৈত্যের অত্যাচারে লোকজন থাকত সন্ত্রস্ত। অবশেষে কাশ্যপ ঋষি এগিয়ে এলেন তাদের সাহায্য করতে। কাশ্যপ ছিলেন ব্রহ্মাপুত্র মারিচের ছেলে। যে সাতজন মুনি বা ঋষিকে সপ্তর্ষি বলা হয়ে থাকে তাদের একজন হলেন ব্রাহ্মন ঋষি কাশ্যপ।

হিন্দু ধর্মগ্রন্থ বেদ অনুসরনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন কাশ্যপ। ঋষি কাশ্যপের আবেদনে তুস্ট হয়ে ভগবান বিস্নু এগিয়ে এলেন। বিশাল এক শুকর বা বরাহের রুপ নিয়ে গুতো দিয়ে ভেঙ্গে ফেললেন এক দিকের পাহাড়। ফলে হ্রদ গেল শুকিয়ে আর মারা গেল সেই দৈত্য । যেখানে শুকর বা বরাহরূপী বিষনু পাহাড় ভেঙ্গেছিলেন তার নাম হল বরাহমুল, যা এখন বারমুল্লা নামে পরিচিত।

হ্রদ শুকিয়ে জেগে ওঠা পাহাড় ঘেরা এই উপত্যকাই হল কাশ্মীর উপত্যকা। লোকজনের বসতি গড়ে উঠলো নতুন জেগে ওঠা এই উপত্যকায় । কাশ্যপ ঋষির দেশ বা “কাশ্যপ-মার” থেকে ক্রমশ নাম হল কাশ্মীর। ঋষি কাশ্যপের আমন্ত্রনে সারা ভারত থেকে লোকজন এসে বসতি গড়ে তুললো এই উপত্যকায় যারা কালক্রমে হলেন কাশ্মীরি পন্ডিত। নিলমত পূরান এবং ১২ শ শতাব্দীতে কালহান রচিত গ্রন্থ “রাজতরঙ্গীনি” কাশ্মীর উপত্যকা নিয়ে রচিত আদি গ্রন্থ।

চীনা পর্যটক “হিউ-এন-সাং” এর বইয়ে এই এলাকার পরিচয় মেলে “ কা-শি-মি লো” রুপে আর প্রাচীন গ্রীক ইতিহাসে বলা হত “কাস্পেরিয়া” মহাভারতে উল্লেখ আছে কাম্বোজ রাজাদের অধীন ছিল এই এলাকা। কাম্বোজরা ছিলেন ভারত এবং পারস্য হতে উদ্ভূত জাতি গোষ্ঠি। পাঞ্চাল রাজবংশ রাজত্য করতেন এই এলাকায় যেখান থেকে পাহাড় শ্রেনীর নাম হয় “পাঞ্জল” পরে মুসলীম শাসনামলে “পীর” শব্দ যুক্ত হয় যা থেকে নাম হল “পীর পাঞ্জল” ভূগোলঃ- পাক-ভারত উপমহাদেশের উত্তর পশ্চিম কোনে পাকিস্তান, ভারত এবং চী্ন, এই তিন দেশে ছড়িয়ে আছে পাহাড়ী রাজ্য কাশ্মীর। হিমালয় পর্বতমালার উচু উচু পাহাড়, স্বচ্ছ পানির হ্রদ এবং নদী, চিরসবুজ গাছপালা নিয়েই কাশ্মীর। আরো আছে পৃথিবীর সবচে উচু যুদ্ধক্ষেত্র সিয়াচেন হিমবাহ।

বলা হয়ে থাকে সিয়াচেনে শত্রুপক্ষের সাথে যুদ্ধে যত লোকক্ষয় তার চেয়ে বেশী মানুষ প্রান হারায় প্রাকৃতিক বৈরিতায়। ইতিহাসঃ- মৌর্য্য সম্রাট অশোক কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরের গোড়া পত্তন করেন (খৃঃপূঃ ৩য় শতাব্দী) তখন বৌদ্ধ ধর্ম ছিল এই এলাকার প্রধান ধর্ম। ৮ম শতাব্দীর শেষে বা ৯ম শতাব্দীর গোড়ার দিকে বিখ্যাত হিন্দু পন্ডিত শঙ্করাচার্য কাশ্মীরে আসেন। কথিত আছে যে “সারদা পীঠ” মন্দিরের চার দিকের চার দরজার দক্ষিন দরজা বন্ধ থাকত, কারন ভারতের দক্ষিন থেকে কোন পন্ডিত এই মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি পায় নি। শঙ্করাচার্য্য তর্কযুদ্ধে মন্দিরের পন্ডিতদের পরাজিত করে দক্ষিন দরজা দিয়ে এই মন্দিরে প্রবেশ করেন।

অভিনব গুপ্ত ছিলেন ১০ম শতাব্দীতে কাশ্মীরে জন্ম নেওয়া বিখ্যাত দার্শনিক পন্ডিত। কাশ্মীর মুসলিম শাসনাধীনে আসে চতুর্দশ শতাব্দীতে। মধ্য এশিয়ার তুর্কমেনিস্তান থেকে নৃশংস সেনাপতি দুলুচা ৬০, হাজার সৈন্য নিয়ে “জজিলা” গিরিপথ দিয়ে এসে কাশ্মীর দখল করে নেন। দুলুচা তার চলার পথে সমস্ত শহর গ্রাম জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংশ করে দেন। বস্তুত এই সময় থেকেই কাশ্মীরে হিন্দু রাজত্বের পরিসমাপ্তি ঘটে।

হিন্দু ধর্মী থেকে ইসলামগ্রহনকারী রাজা রিনচিন ছিলেন প্রথম মুস্লিম শাসক । এরপর শাহ মীর ক্ষমতায় আসেন। কাশ্মীরের মুসলিম শাসকদের মধ্যে কেউ কেউ যেমন ছিলেন সহনশীল অন্যেরা ছিলেন চরম অসহিষনু। সিকান্দার বুশতিখান(১৩৮৯-১৪১৩) ছিলেন চরম অত্যাচারী। তিনি সমস্ত মন্দিরের মূর্তি ভেঙ্গে ফেলেন এবং হিন্দুধর্ম নিষিদ্ধ ঘোষনা করেন।

অনেক পন্ডিত কাশ্মীর ছেড়ে পালান, অনেকে করেন আত্মহত্যা। ১৫৮৬ সালে কাশ্মীর মোগল শাসনাধীনে আসে। মোগলদের হাত থেকে কাশ্মীর চলে যায় আফগানী দুররানী সম্রাটদের হাতে। শিখ আমল- ১৮১৯ সালে লাহোরের শিখ সম্রাট রঞ্জিত সিং কাশ্মীর দখল করেন। শিখ শাসনকালে গোহত্যা নিষিদ্ধ করা, আজান দেওয়া, মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়া ইত্যাদি মুসলিম ধর্ম বিরোধী পদক্ষেপ নেন শিখ শাসকেরা।

বৃটিশদের সাথে শিখদের যুদ্ধে্র পর কাশ্মীর শিখ রাজাদের নিয়ন্ত্রনে থাকলেও তা থাকে এক দেশীয় রাজ্য হিসেবে। কাশ্মীর শাসিত হতে থাকে ডোগরা রাজাদের দ্বারা বৃটিশদের করদ রাজ্য হিসেবে। এই সমস্ত দেশীয় রাজ্য নাম মাত্র স্বাধীনতা ভোগ করত। মহারাজা গোলাব সিং, রনবীর সিং, প্রতাপ সিং হয়ে ১৯২৫ সালে ক্ষমতায় বসেন হরি সিং। হরি সিং ছিলেন অত্যাচারী শাসক।

প্রজারা বার বার তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে তা তিনি অত্যন্ত নৃসংশভাবে দমন করেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।