বিশ্বাস অনেক বড় জিনিস.......... আমি ছোট বেলা হতেই হাবলা টাইপ ছিলাম। একটু কালোও। মোটা তারুপর আবার কালো হওয়ায় অনেকে দুষ্টুমী করে বলতো, তুই বড় হযে নায়ক হবি। শুনে ছোট্ট মনে একটু খুশি খুশি ভাব আসলেও কালোত্বের কারনে তা আবার উধাও হয়ে যেত নিমিষেই। কারন নায়ক যাদের দেখতাম সবাইতো সুন্দর সুন্দর চেহারাওয়ালা।
নাহ, এই কালোত্ব গুচাতেই হবে। যেই ভাবা সেই কাজ। আপুরা থাকায় একটু সুবিধাও হলো। উনাদের প্রসাদনী সামগ্রী হাতের নাগালেই, হাত বাড়ালেই পাই।
একদিন সকাল বেলা করলাম কি আপুরা স্কুলে যাবার পর আরাম করে বসে আচ্ছামতো মেকাপ করলাম।
মেকাপ করলাম বল্লে ভুল হবে, একপ্রকার মুখে লাগিয়েই দিলাম। তারপর দিলাম পাওডার। এটাতেই আমার কাল হলো। পাওডারযে কতো পরিমান দিতে হয় তার আইডিয়া না থাকায় আচ্ছামতন লাগালাম। ভাগ্যিস আয়না দেখিনি আমি, নির্ঘাত নিজেকেই দেখে নিজেই ভিমড়ি খেতাম।
আমি না খেলেও তা মা ঠিক ঠিক খেল পরক্ষনেই। হঠাৎ মা আমাকে খুঁজতে এসে দেখে সেকি চিতকার। অন্ধকারে ভুত দেখার মতো অবস্থা। অবশেষে আমাকে আবিষ্কার করে উত্তম মধ্যম দিয়ে ছেড়ে দিলেন। নাহ আমার কালোত্ব দুর আর হলোনা।
মেকাপ বক্স আমার কাছ থেকে এখন নিরাপদ দুরত্বেই রাখা হয়। আপুসস আমার দুঃখটা বুঝলনা কেউ।
সেই কালোত্ব নিয়েই বড় হলাম। একটা উপাধীও পেলাম সাথে, কালো মানিক। সেটা শুনতে একটু কষ্ট পেলেও ফুটবলের রাজার নামে উপাধী পেয়ে মনে মনে আপলুত হই।
এটা মনের কোনেই হারিয়ে যায়। এই কালোত্ব নিয়ে অনেক অবহেলা, বঞ্চনা সয়ে সয়ে কালোত্বের দুঃখবোধটা যেন আর তেমন লাগেইনা। কালোত্ব কোন ব্যাপার না, কর্মটাই আসল সেটা মনে প্রানে বিশ্বাস স্থাপন করে বড় হয়ে ইঠতে লাগলাম। একদিন হলো কি?
আমার বন্ধুকে নিয়ে গেলাম আমার এক আত্মীয় বাড়ি, বিয়ের মেহেদীতে। কালোত্বযে কতো বড় অভিশাপ তার বর্হিপ্রকাশ একানেও উদাহারন হয়ে আমায় অপমান করতে এগিয়ে এলো।
কতো তালতো বোন এখানে সেখানে ঘুরে, কিন্তু কেমন আছি তাও জিজ্ঞেস করার যেন কেউ নেই। ভাবলাম চেনা জানা নেই বলে হয়তো এমন। না, চেনা জানারাও দুরে দুরে পালায়। সামনের রুমে বসে আছি। অন্য পাশে আরেক আত্মীয় চামড়া সাদা হাবলা টাইপ একটা ছেলের সাথে দেখি দুটো মেয়ে (সাক্ষাত কাজিন) খুব জমিয়ে আড্ডায় ব্যস্থ।
আহা কতো কি ঢঙ। আমরা যেনো দুটো কালো সো পিস।
কিছুক্ষন পর ভিতর মহলের ডাকে মেয়েগুলোর একজন আমাদের জন্য কিছু নাস্তাপানি নিয়ে এল। আমাদের সামনে রেখেই সেই চামড়া সাদা হাবলা টাইপ স্মার্ট? ছেলেটার সাথে হা হা হু হুতে মশগুল হয়ে গেল। সেই হাবলাটাইপ ছেলেটা জানতাম মেট্রিক ফেইল।
আর উপরে যাবার সৌভাগ্য নাকি উনার হয়নি। আর আমরা তখন ইন্টার রেজাল্টের ওয়েটিংএ । আর মেয়ে দুটোও সেইম আমাদের মতোই, তবে শহুরে স্মার্ট গার্ল। আহা সেকি কথা বলা ডংরে বাবা, বাংলা বলে না বাংলিশ বুঝে উঠতে আমাদের নির্ঘাত আরেকবার মেট্রিক পাশ দিতে হবে। আমরা নাস্তা সামনে নিয়ে পুজো করছিলাম।
হঠাৎ একটা মেয়ে চেচিয়ে উঠলো আল্লাহ আপনারা খাচ্ছেন না যে? ওহ এসব আমাদের জন্য? (মনে মনে বল্লাম)। দোস্ত আমার রাগে ফুলতেছে। বেটা কোন জায়গায় নিয়ে এলি? বল্লাম সবুর কর বেটা।
খাবার দাবারের সময় হলো। আমাদের সামনে থেকেই চামড়া সাদা হাবলাটাকে হাত ধরে আদর করে নিয়ে গেল খাবার টেবিলে।
আমরা শালা অন্ধকারে নজরে এলামনা। পরে খেয়াল করে দেখি আরে বাত্তিতো জ্বলে। না এই লাইটের ফোকাস কম। বাত্তির রাজা ফিলিপ্স লাগায়নি মনে হয়। ভাবনায় ছেদ পড়লো।
অবশেষে ডাক পড়লো এতিমদের। গেলাম কন্যার মা আমাকে বসালেন কন্যার পাশেই মানে ওই স্মার্ট মেয়ের পাশে। আমাকে ভাববার সময়ও দিলোনা মেয়েটা হুট করে উঠে চামড়া সাদা স্মার্ট বয়ের পাশে গিয়ে বসলো। আমারও এত শখ নেই, এত হাই ভোলটেজ স্মার্ট মেয়ের পাশে বসে না আবার জ্বলে পুড়ে না যাই। এমনিতেই কালো।
যাক খাবার পালা শুরু। চামড়া সাদা স্মার্ট বয়কে তারা দুই কন্যে মিলে খবার দাবার তুলে দিতে দিতে প্লেট ভরিয়ে তুল্লো। আমরা দুই ভিখারি নজরেও এলামনা। এখানেওকি বাত্তির রাজা ফিলিপস্ লাগায়নি? কল্লা বাঁকা করে বাধ্য হয়ে উপর দিকে তাকালাম। না ঠিকিইতো আছে।
কি আর করা, নিজেরাই লজ্জা সরমের মাথা খেয়ে শব্জি দিয়ে ভাত খেতে লাগলাম।
চামড়া সাদা স্মার্ট ছেলেটা কি যেন নিয়ে দিচ্ছিল মেয়েটাকে। সাথে সাথেই বলে উঠলো, নো নো, টু মাছ টু মাছ। ছেলেটা ভাবলো দুই টুকরা মাছ দিতে বলছে। সে মুরগী ফেলে দুই টুকরা মাছ দিয়ে দিল।
আর বন্ধু আমায় দিলো খুঁচা। বন্ধু আমার বিরাট খাদক। কিন্তু কিছু বলতেও পারেনা কিছু নিতেও পারেনা। বাধ্য হয়ে আমিই নিয়ে দিলাম তাকে মাছ মুরগী ডাল। ঠিক তখনি ঘটলো এক বিপত্তি।
শহুরে স্মার্ট মেয়েটি চামড়া সাদা স্মার্ট বয়কে প্লেটে মুরগী নিয়ে দিতে যেয়ে হাত থেকে পড়ে গিয়ে তা গিয়ে পড়লো ছেলেটির কাপড়ে। অমনি মেয়েটি বলে উঠলো য়্যামি ডেকিনায়, রিলি য়্যাই এ্যাম এ্যা শ্যরি। বন্ধু আমার খুক করে উঠলো। এবার দিলাম আমি খুঁচা। মানে কিরে কি হয়েছে? বন্ধু আমায় চোখ মারে।
বুঝলাম আমিও। এবার লোতক করেই মেয়েটিকে বল্লাম সিচ (সিস্টার) আপনি না ইংলীশ মিডিয়ামে পড়েছেন? মেয়েটি জবাব দিলো। ইয়াহ। তারপর বল্লাম তাহলে বলেনতো আই এম এ স্যরি এটা কোন গ্রামার বইতে পেয়েছেন। আমরাও একটু শিখতাম।
কারন আমরা পড়েছি আই এম স্যরি। মেয়েটির মাথায় যেন কেউ ঝারু দিয়ে জোরে বাড়ি দিলো, (আমরা কিন্তু দিইনি, কসম) মুখটা তখন দেখার মতো। বেলুনের হাওয়া বের হয়ে গেলে যেমন দেখায়। না খেয়েই উঠে চলে গেল।
প্রায় দু’ঘন্টা আরো ছিলাম।
মেয়েটিকে একবারের জন্যও আর দেখিনি। চামড়া সাদা স্মার্ট ছেলেটা দেখি বাইরে চেয়ারে একা একা বসে মাছি মারছে।
না জানি ওইদিন বেচারা কয়টা মাছি মেরেছিলো শেষ পর্যন্ত, দেখার খুব খায়েশ ছিলো
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।