আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিথ ও ইতিহাসের দায়

গত সোমবার প্রথম বেলায় মতিঝিলে কী ঘটেছিল তা নিয়ে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন মিথ। কেন সরকার সে রাতে ঘুমন্ত-নিরস্ত্র মানুষগুলোর ওপর গুলি চালিয়েছিল? কিভাবে গণহত্যা চালিয়ে, লাশ গুম করে, মিডিয়া ব্লাক আউট করে মতিঝিল দখল করেছিল? ইতিহাস একদিন এর উত্তর দেবে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতকে আমরা বলি কালো রাত, ইতিহাস ৫ মে রাতকেও কালো রাত বলবে। বিদেশী গণমাধ্যমগুলোর মতে সে রাতে মতিঝিলে অবস্থান করছিল কমপক্ষে ২ লাখ লোক। প্রকৃতপক্ষে এই সংখ্যা ২০-৩০ লাখ হবে বলে দাবি করেছেন সে কালো রাতের অভিযানে বেঁচে যাওয়া মানুষরা, যারা সারা জীবন বয়ে বেড়াবে গ্লানির এক জীবন।

নিশ্চিতভাবে তারা বিশ্বাস করবে এই দেশের উচু শ্রেণীর মানুষের কাছে তারা হচ্ছে ভিন্নমতের (অমানুষ)। আর ভিন্নমত দমনে সরকারের নগ্নতা পাক সরকারকেও হার মানিয়েছে। আমি তখন নিউজ রুমে, প্রতিমুহুর্ত সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে খবর আসছিল। ভাবছিলাম, শাহবাগের তুলনায় হেফাজতের সমর্থক ২০-৩০ গুণ বেশি হওয়া সত্বেও সরকার শাহবাগীদের যে নিরাপত্তা দিয়েছিলো তা হেফাজতকে কেনো দিলো না। উত্তর সম্ভবত ‌’রাজনীতি’।

শাহবাগ যেখানে সরকার ও বিচার বিভাগের ক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল, মতিঝিল তা করেনি। তারপরও কেন? উত্তর: ৪৭-৭১ পর্যন্ত ৭ পর্যায়ের কোথাও সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি না থাকলেও যেমন ৭২ সংবিধান সেটা সংযুক্ত করা হয়েছিল, সে একই কারণ এখানে প্রযোজ্য । সরকার ভিন্নমতের দুটি গণমাধ্যমকে বন্ধ করে দিয়েছে সেই কালো রাতে। রাস্তার সোডিয়াম বাতিগুলো ছিল নেভানো। সরকারপন্থী দুটি টিভি চ্যানেল ‘সময়’ ও ’চ্যানেল ২৪’এর লাইভ টেলিকাস্ট বন্ধ করে ১০ হাজার সদস্যের সশস্ত্র বাহিনী দিয়ে সরকার ১৫ মিনিটে ২০-৩০ লাখ লোক হটাতে কত হাজারকে হত্যা করেছিল? একটু চিন্তা করুন, এবার আরো তথ্য সংযুক্ত করুন আপনার চিন্তায়।

সরকারের প্রস্তুতি ছিলো এমন — প্রথমে সশস্ত্র বাহিনী, তারপর দমকল, তারপর লাশ সংগ্রহের জন্য সিটি কর্পোরেশনের ট্রাক। বাহ! সব মিলিয়ে ২-৩ ঘন্টার সফল হত্যাকাণ্ড। অতঃপর মুখপাত্র হানিফের বক্তব্য: মতিঝিলে কোনো হতাহত হয়নি। কোনো অস্ত্র ব্যবহার হয়নি। এবার চাওয়া হচ্ছে আপনার কাছে প্রমাণ।

দেখান কী হয়েছিল? বাহ বা, বাহ যদি গণহত্যা না চালাবেন, তবে এই আয়োজন কেন? কেন ঘুমন্ত-নিরস্ত্র মানুষের ওপর রাতের আধারে, গণ মাধ্যমকে সরিয়ে এই আক্রমণ? আর এজন্য এই গণহত্যা হয়ে দাড়াচ্ছে মিথ। হয়তো সংখ্যাটি ২০-২২ জন থেকে ১-২ লাখ হয়ে যাবে । ১৯৭১ এ কত লোক মারা গিয়েছিল? এই সংখ্যা নিয়ে এখনও ব্যাপক গবেষণা হয়নি। ফলে মিথ হয়ে আছে এবং আমরা এই মিথকে আকড়ে থাকতেই পছন্দ করছি। ৫ মে ঘটনা হয়তো একাত্তরকে ছাড়িয়ে যাবে।

তবে সবচেয়ে কষ্ট হয় মানবাধিকারের রক্ষক নামধারী যখন সুলতানা কামালরা এই দেশের এই নীরিহ মানুষগুলোর মৃত্যুতে নির্লিপ্ত থাকে। তবে ইতিহাস কি এর দায় মেটাবেনা? সুলতানা কামালদের উত্তরসূরীদের কাছে প্রশ্ন। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।