পিনপতন নিস্তধ্বতা হলের ছাদটা মনে হয় খুব প্রিয় ছিলো মুরাদের। যখন তখন ছাদে উঠে গান গাইতো গিটার নিয়ে। ফোনে কথা বলতে বলতে ছাদে উঠে যেতো। ফার্স্ট ইয়ারে অামরা যখন হলে উঠি তখন মুরাদ থাকতো গেস্টরুমে, আমি সংসদে। তখন পরিচয়।
দেখা হলেই কথা হতো, কিরে কি খবর? কই যাস??
৩১ ডিসেম্বর ২০১১ সূর্যাস্তের ঠিক আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম বরকত হলের বি ব্লকের ছাদ থেকে পড়ে মুরাদ মারা গেলো। অামি ওর লাশ দেখিনি। সাহস হয়নি। শুনেছি বাম চোখটা কোটর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো। মাথাটা পুরো থেতলে গেছে।
রংপুর ক্যাডেট কলেজের ছাত্র ছিলো। জাহাঙ্গীরনগর থেকে ইংরেজিতে (৩৬ তম ব্যাচ) অনার্স পাশ করলো এই সেদিন, মাস্টার্সের ক্লাস চলছিলো। চাকরি বাকরির জন্য চেষ্টা করছিলো আমাদের মতই। ভুলভাল গিটার বাজাতো। সবসময় সানগ্লাস পড়তো আর ফুলহাতা শার্ট।
খুব ভালো টেবিল টেনিস খেলতো। থাকতো ৪৩১ নম্বর রুমে। আমার রুম ২২৭। আমার রুম থেকে ২ তলা উপরে গিয়ে ৩টা রুম পড়ে মুরাদের রুম।
টাঙ্গাইল শহরের আকুরটাকুর পাড়ায় ওদের বাড়ি।
ওর বাবা গনি মিয়া বিন্দু বাসিনী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। এক নামে টাঙ্গাইলের সবাই চেনে। আমাদের বন্ধূবান্ধব অনেকেই তার ছাত্র।
গতকাল সন্ধ্যায় হলের মাঠে মুরাদের জানাজা শেষে ওকে চিরবিদায় জানালাম। যে মাঠে ওর জানাজা পড়লাম, ফার্স্ট ইয়ারে সেই মাঠেই একসাথে হলের রিইউনিয়নে লম্ফজম্ফ করেছিলাম।
জানাজা শেষে মুরাদের লাশ নিয়ে যাওয়া হলো টাঙ্গাইল। ওর লাশ বহনকারী এ্যাম্বুলেন্সের সাথে এক বাস বন্ধূ, ছোট ভাই, বড় ভাই, শিক্ষক গিয়েছে টাঙ্গাইল, শেষ বিদায় জানাতে।
সবচেয়ে কষ্ট লাগছে পহেলা জানুয়ারি মুরাদের জন্মদিন। আজ যে ছেলেটার জন্মদিন, সে কাল বিকেলে ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছে, সে আমাদের বন্ধু ছিলো।
সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।