আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মশা দমনে আলোক ফাঁদ!

অপেরা মিনির মত লাইফ মেইন্টেইন করি ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গু ও জাপানিজ এসসেফালাইটিসের মত মশা বাহিত রোগে বাংলাদেশে প্রতি বছর আক্রান্ত হয় লক্ষ লক্ষ মানুষ। এসব রোগের বাহক নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘ বার বছর ধরে গবেষণা করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কবিরুল বাশার। ব্যাঙ ও ফড়িং, সুর্যকন্যা গাছের রস দিয়ে মশা দমনের সাফল্যের পর এবার তিনি উদ্ভাবন করেছেন নতুন ধরনের আলোক ফাঁদ। দুই বছর আগে তিনি এর নকশা তৈরি করেন এবং জাবি বিজ্ঞান কারখানার মেকানিক্স মোঃ হোসেন নয়নের সহযোগিতায় এই আলোক ফাঁদটি তৈরি করেন। এরপর দীর্ঘ চার মাস নানা ত্রুটি বিচ্যুতি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এটিকে মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যান।

এই আলোক ফাঁদটি এ পর্যন্ত বাংলাদেশের বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ময়মনশিংহ, নেত্রকোনা, ও ঢাকা জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে। একটি আলোক ফাঁদ এক রাতে প্রায় এক হাজার মশা ধরতে সক্ষম বলে জানান গবেষক কবিরুল বাশার। তবে তা নির্ভর করবে যে ঘরে ফাঁদটি দেওয়া হয়েছে তাতে মশার পরিমানের উপর। এই যন্ত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে শিক্ষক কবিরুল বাশার বলেন, ‘এই ফাঁদটি মশা ধরার জন্যে খুবই কার্যকর। এর কার্যকারিতা মশার কয়েল বা এরোসলের চাইতে অনেক বেশি।

মশার কয়েল বা এরোসলের বিশেষ কয়েকটি প্রজাতির মশাকে মারে কিন্তু এই ফাঁদ প্রায় সব প্রজাতির মশাকে ধরতে পারে। ’ এই বিষয়ের উপর একটি গবেষণা প্রবন্ধ খুব শীঘ্রই যুক্তরাজ্যের জার্নালে প্রকাশিত হবে বলে তিনি জানান। মশার কয়েল বা অ্যারোসলের নানা রকম ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে কিন্তু এই ফাঁদটির কোন ক্ষতিকর দিক নেই। এই ফাঁদটি তিনি তৈরি করেছেন ফেলে দেওয়া বিভিন্ন জিনিস যেমনঃ নষ্ট চার্জার লাইটের কেস, নষ্ট কম্পিউটারের ছোট ফ্যান, মটর, বাটারি, ছোট দুটি লেড লাইট ও দুটি ১.৫ ভোল্ট ব্যাটারি বা মোবাইলের ব্যাটারি দিয়ে। মোবাইলের ব্যাটারি দিয়ে বানালে এটি রিচার্জ করেও চালানো যায়।

আমেরিকার সিডিসি তৈরি মশা ধরার যন্ত্রের তুলনায় অনেক হালকা এবং দামে সস্তা। এটা তৈরি করতে খরচ হবে সর্বোচ্চ দুইশ টাকা। যেখানে একটি অ্যারোসলের দাম দুইশ টাকার বেশি সেখানে এই আলোক ফাঁদ অনেক সাশ্রয়ী হবে বলে তিনি মনে করেন। ভালভাবে ব্যবহার করলে একটি ফাঁদ ৫ বছর চালানো সম্ভব। বাংলাদেশ ভেক্টর কন্ট্রোল এসোসিয়েশনের সভাপতি, আইইডিসিআর এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তৌহিদ আহম্মেদ এই আলোক ফাঁদের কার্যকারিতা সম্পর্কে টেলিফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, আমি এই আলোক ফাঁদ বান্দরবান অঞ্চলে ব্যবহার করেছি এবং দেখেছি অন্যান্য পদ্ধতিগুলোর তুলনায় এটা মশা ধরার জন্যে সবচেয়ে কার্যকরী উপায়।

মশা দমন ও মশা বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে এটি অবদান রাখবে বলে আমি মনে করি। আলোক ফাঁদ ব্যাবহারকারী কুমারী গ্রামের স্বাস্থ্য কর্মী শাহিন আক্তারকে টেলিফোনে এর কার্যকারিতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা একটা অবাক করা যন্ত্র, সন্ধ্যায় ঘরে ঝুলিয়ে রাখলে সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি অনেক মশা ভিতরে আটকে আছে। আমাদের গ্রামের লোকজন প্রথমে বিশ্বাসই করতে চায়নি। স্যার আমাকে ৮ টি বাতি দিয়েছিল। গত এক বছর যাবত এগুলো ব্যবহার করছি।

আমি বাতিগুলো একেক সময় একেক বাড়িতে দিয়ে মশা ধরে নিয়ে এসে স্যারকে কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দেই। স্যার মশা পরীক্ষা করে জানান আমাদের এখানের ম্যালেরিয়ার পরিস্থিতি কী হতে পারে। তবে গ্রামের সব বাড়িতে একটি করে বাতি দিলে পারলে ভাল হত। ’ বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি দূষণের প্রভাবে ভেক্টর বাহিত রোগ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মশা, বেলে মাছি সহ অন্যান্য রোগ বাহকের প্রজননের জন্যে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে।

বাংলাদেশের প্রায় ১৩টি জেলায় ম্যালেরিয়া ৩৪টিতে ফাইলেরিয়া এবং ৪৫টি জেলাতে ভিসেরাল লিসমেনিয়াসিসের প্রাদুর্ভাব রয়েছে। ছয়টি বিভাগীয় শহরে রয়েছে ডেঙ্গু বাহক মশা। অতি সম্প্রতি চিকুনগুনিয়া নামক আর একটি মশা বাহিত রোগ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শনাক্ত হয়েছে। মশা বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কবিরুল বাশার স্যারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গবেষকের কাজ উদ্ভাবন করা আর এটা মাঠ পর্যায়ে জনগনের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্যে প্রয়োজন সরকারী ও বেসরকারী উদ্দ্যোগ। তিনি রোগীর চিকিৎসা না করে রোগের চিকিৎসা করার কথা বলেন।

যার কারনে রোগটি হচ্ছে তাকে নিয়ন্ত্রণ করলে অর্থও সাশ্রয় হবে মানুষও রোগ থেকে বাঁচবে। জানা যায় যে, সহকারী অধ্যাপক কবিরুল বাশারের আগে উদ্ভাবিত হারবাল মসকিউটো কয়েল খুব শীঘ্রই বাজারে ছাড়বে একটি কোম্পানি। কোন সরকারী ও বেসরকারী সংস্থা যদি তার উদ্ভাবিত আলোক ফাঁদ নিয়ে ম্যালেরিয়া বা ফাইলেরিয়া অঞ্চলে বিতরণ করতে চান তাহলে তিনি বিনামুল্যে এই প্রযুক্তি সরবরাহ করবেন বলে জানান। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।