আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চলো, বদলে যাই (কোন এক বন্ধুদিবসে লেখা গল্প)

আজীবন বন্ধু থাকতে চেয়েছিলাম আমরা। ভেবেছিলাম এই নতুন সম্পর্কে জড়াবার পরও আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় থাকবে আমরা বন্ধু। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই আমাদের অন্য পরিচয়টা বড় হতে থাকে। ক্রমশ আমি পরিবর্তিত হতে থাকি, তুমিও। যে আমি কখনো কর্তৃত্ব পরায়ন হতে চাইনি, সে আমি কথায় কথায় কর্তৃত্বের ছড়ি ঘুরাই তোমার উপরে।

আর যে তুমি যখন তখন তর্ক জুড়ে দিতে আমার সাথে, রাগ করলে আমার পিঠে দুমাদুম কিল বসিয়ে দিতে, সেই তুমি এখন আমার ভয়ে সদা তটস্থ থাক। বলতে পার, কেন আমরা এমন হয়ে গেলাম? কে দায়ী? বোধ হয় আমিই। নাকি তুমি? নাকি আমাদের এই সমাজের শিখিয়ে দেয়া তথাকথিত শিক্ষাগুলো? কি জানি! তোমার কি এখনও মনে আছে আমাদের সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোর কথা? আমাদের ক্রমশ গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়ে উঠা বন্ধুতার দিনগুলোর কথা? আমাদের মধ্যে গোপনীয়তা বলতে কোন শব্দ ছিল না তখন। জীবনে ঘটে যাওয়া ছোটখাটো ঘটনাগুলোও একে অন্যকে না বলা পর্যন্ত শান্তি পেতাম না। এখন কিনা সে সব দিন শুধুই অতীত।

এখন আমাদের মনে গোপন কুঠুরির অভাব নাই। আমরা এখন একে অন্য থেকে কিছু কিছু ঘটনা লুকাতে সদা ব্যতিব্যস্ত। মনে ভয়, কি জানি এ ঘটনাটা জানলে কোন তুলকালাম কান্ড ঘটে বসে! ওথেলীয় ইর্ষাও তো আমাদের মনের মধ্যে ছিল না কোনও কালে। বিশ্বাসের কমতি ছিল না মনের মধ্যে কোনও। এখন কেন তবে বাড়ির বাইরে গেলে আমি নির্বিঘ্নে থাকতে পারি না? তুমিও বা কেন অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে আমার দেরী দেখে অস্বাভাবিক কিছু চিন্তায় মন ভার করে বসে থাক? আমি বুঝি, তোমাকে এখন তোমার ছেলে বন্ধুদের সাথে গোপনে যোগাযোগ রাখতে হয়।

পাছে আমি কষ্ট পাই অথবা রেগে উঠি! আমার প্রায়ই মনে হয় আমি তোমাকে বন্দী করে রেখেছি। তোমার স্বতঃস্ফুর্ততা গলা টিপে হত্যা করেছি। এমন কি কথা ছিল? আমাদের বাঁধনটা কি ক্রমশ আলগা হয়ে পড়ছে না? তুমিও নিশ্চয়ই বুঝতে পার। এখন ঠিক এই মূহুর্তে আরেকটা ঝড় উঠলে সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে যাবে। খড়ের কুটোর মতো উড়ে যাবে আমাদের সবটুকু ভাললাগা, ভালবাসা।

আমার ভয় হচ্ছে। প্রচন্ড ভয়। কখন যে সে ঝড় ধেয়ে আসে আমাদের জীবনে! আমি বা আমরা দুজনই জানি, সে ঝড় আসবেই। অথচ (তুমি চাও কি, না চাও, জানি না) আমি কিন্তু চাই না। কখনোই চাই না।

তাইতো আজ আমার এই চিঠি। তুমি চিঠিটা যখন পড়ছ, তখন আমি অফিসে। কাল মাঝ রাতে যখন ঘুম ভেঙ্গে যায়, হঠাৎ মনে পড়ে এক সময় আমরা প্রতিদিন একজন আরেকজনের কাছে চিঠি লিখতাম। আমরা বিশ্বাস করতাম চিঠিতে নিজেকে প্রকাশ করা যায় সবচেয়ে বেশী। নিজেদের প্রকাশ করার জন্য, একে অন্যকে চেনার জন্য চিঠি লিখতাম আমরা।

আর এখন! এখন কথাই হয়না ঠিকমতো! তুমি তোমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকো, আমি আমার। আজ অনেক দিন পর তোমাকে লিখলাম। আশা করব তুমিও একটা কিছু লিখবে। তার উত্তরে আমি আবার। এভাবে আগের অবস্থানে আবার আমরা ফিরে যাব।

আবার আমরা নতুন করে শুরু করব। একবার ভাঙলে নাকি জোড়া লাগে না কোন কিছু। আমি এ বিশ্বাস করি না। মানুষের মনটা কি নিরেট বস্তু? নিশ্চয়ই না। মন জোড়া লাগতে জানে।

জোড়া লেগে আগের চেয়েও শক্ত হতে জানে। চল, নতুন করে শুরু করি। চেষ্টা করতে তো দোষ নাই কোন। এই বন্ধু দিবসে আবার আমরা বন্ধু হই। জগতের সব স্বামী-স্ত্রী বন্ধু হোক।

বন্ধুতাই সবচেয়ে মহৎ সম্পর্ক, সবচেয়ে মধুর। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।