আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

B-Movie । আন্তর্জাতিক বিশ্বে যার প্রচলন আগেও ছিল এখনো আছে।

I always tell the truth. Even whn I lie. বি মুভি...। এটা হলো মুভিগুলোর একটা কাটাগরির নাম । চলচ্চিত্র সমালোচকরা ছবির গুনগত ও শৈল্পিক মান বুঝাতে এ ধরনের টার্মগুলো ব্যবহার করে থাকেন। বি মুভিগুলো সাধারনত হলিঊডের হাত ধরে বেয়ে ওঠে। ১৯৫০ এর আগে এর ব্যবহার শুরু হলেও ১৯৫০ এর দিকে বেশ প্রতিপাত্তের সাথে বাজার নিয়ন্ত্রন করে বি মুভি।

বি মুভি বলতে সাধারনত কম বাজেটের, হালকা পর্নোগ্রাফি টাইপ ফিল্মগুলোকে বোঝানো হলেও পর্বর্তিতে এর ধারা বদলে যায়। সেক্স আর ভায়োলেন্স অধিক মাত্রায় ব্যবহার করা হলেও মুভিগুলো মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হয়। ই সিনেমাগুলো যতনা অশ্লীল তার চেয়ে পোষ্টারগুলো বেশি অশ্লীলতায় ভরা ছিল দর্শক আকর্ষণ করার জন্য। বি মুভির আলাদা করে জেনার কখনোই ছিলনা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন শুন্যতার বি মুভি নির্মান হয়েছে, আর এর বাজার প্রসারিত হয়েছে।

বি মুভি কখনো টাটকা সাই ফাই হয়েছে আবার কখনো রোমান্টিক থ্রিলার হয়েছে। যদিও শেষের দিকে এসে এটা একশনধর্মি হয়ে পরে। একটু টেকনলজি আসতেই এতে প্রচুর পরিমান ভায়োলেন্স ব্যবহার করা শুরু হয়। এবং ভায়োলেন্সেকে মুখ্য করে প্রচুর রক্তপাত ঘটিয়ে বেশ অসাধারন কিছু হরর মুভি তৈরী করা হয়। আসুন দেখা যাক বি মুভির কিছু বৈশিষ্ট্যঃ ১।

বাজেট খুব কম হবে। ২। হরর,থ্রিলার ও একশন নির্ভর ৩। ভিলেনের প্রতিপত্ত ৪। নায়ক এবং নায়িকা থাকবে ৫।

সেক্স এবং অশ্লীন দৃশ্য অতিমাত্রায় থাকবে। ৬। ন্যাকামি থাকবে ৭। ভায়োলেন্সের প্রচুর তোড়জোড় থাকবে ৮। বাংলা ফিল্মের মত ১ হাজারবার মারার পরও নায়ক মরবে না।

৯। নায়ক গুলি করলে গুলি লাগবে, কিন্তু নায়কের গায়ে একটাও লাগবেনা। ১০। নায়ক নায়িকার মিলন বাধ্যতামুলক। ১১।

গান বাজনা স্পেশালি না থাকলেও খুব কড়া ধাচের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক থাকবে। ১২। নায়ককে প্রচুর তেল মারা হবে। সে যে সবার থেকে সেরা এটা বোঝানোর জন্য ফিল্মের ৩০ মিনিট দয়ার সাথে ব্যয় করা হবে। ১৩।

নায়িকাদের সৌন্দর্য এখানে মুখ্য ভুমিকায় কাজ করে। ১৪। নায়িকা অজান্তেই জড়িয়ে যাবে কাহিনিতে। নায়কের পিছন পিছন ঘুরবে আর বিপদ বাড়াবে। ১৫।

রিভেঞ্জ থাকতেই হবে। ধরুন ২০ বছর আগে বাবাকে মেরে ছিল। বর্তমানে ৭০ দশকে সাই ফাই আর একশন যুগে প্রচুর বাজেট আসাতে এই মুভির প্রচলন একেবারে কমে যায়। কমে যাওয়া আর ধংস হয়ে যাওয়াতো আর এক কথা নয়। কিন্তু এখন বি মুভি প্রচুর পরিমানে রিলিজ করছে।

যেহেতু বাজেট কম তাই ধুমিয়ে ব্যাবসা করছে। কিন্তু আমাদের চোখের সামনে আসছে কম। বিভিন্ন ওয়েবসাইট আর আই এম ডি বির জন্য আমরা বেশ আর্টিফিয়াল মুভিগুলোর খোজ পাইলেও এই মুভিগুলো আমাদের অগোচরে থেকে যাচ্ছে। সাধারনত ডিভিডির দোকানে এই মুভিগুলো খুব বেশি দেখা যায়। বর্তমান সময়ের এই এই মুভিগুলো ভাল ব্যবসা করলেও এর রেটিং থাকে খুব কম।

কিন্তু আগের বি মুভির রেটিং ছিল দেখার মত। দেখা যাক গোল্ডেন এইজের সেরা কিছু বি মুভি ঃ The Raven (1963) Raw Deal (1948) The Day the Earth Stood Still The Time Machine The Thing from Another World Village of the Damned Them! The War of the Worlds House of Wax House on Haunted Hill হলিঊড স্বীকার করে আজকে তারা যে স্থানে আছে, আজকে তাদের যে এত ভক্ত তার পিছনে অনেক গুরুত্ত্ববহন করে বি মুভিগুলো। সেই গোল্ডেন এইজ থেকে শুরু করে আজ অব্দি সারা বিশ্বে বি মুভি ব্যপাকভাবে প্রসারিত, সিরিয়াস বা ক্লাসিক মুভি খুব কম মানুষই দেখে। আমাদের যেটা জানা নেই তাহলো হলিঊডে নিয়মিত বি মুভি তৈরী হচ্ছে। এবং তারা বক্স অফিস ও ফাটাচ্ছে।

হয়তো আলোচোনা করার মত টাকা কামাচ্ছে না কিছু পরের ফিল্মের বানানোর অনুপ্রেরনা ঠিকই উঠছে। দেখা যায় ২০০০ এর আগের সেরা কিছু বি মুভি। The Wicker Man Cube Re-Animator The Demon Black Christmas The Abominable Dr. Phibes Near Dark Dead Alive আচ্ছা এমন কোনো বি মুভির নাম জানা আছে কি যেগুলো বেশ সাফল্যের সহিত হলিঊডের অন্যদের পল্টি মেরেছে। আছে, ইদানিং খুব ভালো ভালো ডিরেক্টররা বি মুভিকে ধরে রাখার জন্য নতুন করে সুন্দর গোছালোভাবে বি মুভি তৈরী করছে। যেগুলো বেশ ভালো রেটিং এবং পাশাপাশি বেশ ভালো দর্শক তৈরী করছে।

দেখা যাক যে মুভিগুলো দেখে আমি বি মুভির উপর আগ্রহি হলাম। Planet Terror (2007) Death Proof Once Upon a Time in Mexico (2003) Machete Desperado The Spirit Born to Raise Hell Shaun of the Dead এই ট্রেইলারটা দেখে নিন। বি মুভি সম্পর্কে ভালো ধারনা পেতে আমার উল্লেখিত মুভিগুলো দেখে নিতে পারেন। পাশাপাশি যেকোনো মুভি দেখে নিতে পারেন। বেশ ভালো ও হিট মুভিগুলোর লিষ্টি এখানে।

এখন আমার কিছু কথা। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যেসব মুভি হচ্ছে, সাকিব খান এবং আমাদের পরিচালকরা যেসব মুভি বানাচ্ছেন। থিওড়ি বলছে, সেগুলোকে দুচোখ বুজে বি মুভি বলা যায়। তার মানে হলিঊডের সাথে পাল্লা দিয়ে আমরাও বি মুভি বানাচ্ছি। কিন্তু কথা হল যেখানে হলিঊড এই বি মুভি বাচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে, সেখানে আমরা চেষ্টা করছি এটাকে ধংস করার।

আমরা ভালো মুভি চাই। আমরা চাই আমাদের মুভিও আন্তর্জাতিক সম্মাননা পাক। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই না সাকিব কিংবা আর যারা এই বি মুভির বাজার টিকিয়ে রেখেছে সেটা নষ্ট হোক। কারন একটা ইন্ড্রাসট্রি বেচে থাকতে যেটা দরকার তা হলো দর্শক। সারা দুনিয়া ব্যাপি সবথেকে বেশি দর্শক হলো এই বি মুভির।

তাহলে বোঝাই যায় একটা ইন্ড্রাস্ট্রিতে বি মুভি কতটা গুরুত্ত্বপুর্ন। আমি চাই আমাদের দেশের এই বি মুভি বেচে থাকুক। আর বি মুভির যে টার্মগুলো এখনো এদেশে প্রভাব বিস্তার করেনি সেগুলো আসুক। যেমন হরর, থ্রিলার, সাই ফাই। আমাদের এখানে রোমান্টিক, একশন বি মুভি বেশি জনপ্রিয়।

এটা নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছে। আমার ব্যার্থতা যে আমি আমার লেখনি দ্বারা আমার উদ্দেশ্য পরিষ্কার করতে পারিনি। তাই কমেন্ট থেকে কিছু প্রয়োজনিয় কথা এখানে তুলে দিলাম। উদ্দেশ্য ১ঃ আমি সবাইকে বি মুভি দেখার আমন্ত্রন জানাচ্ছি না, আবার বি মুভি নির্মানের আহবানও জানাচ্ছিনা। আমার উদ্দেশ্য হলো কোনভাবেই যেন সিনেমার উৎপাদন বন্ধ না হয়ে যায়।

নিম্নমানের হলেও সিনেমা নির্মান হোক, এতে করে অন্তত ইন্ডাস্ট্রির চাকা সচল থাকবে। উদ্দেশ্য ২ঃ ইন্ডিয়াতে যা হচ্ছে, ফিল্ম ভালো হোক খারাপ হোক তারা হলে যাচ্ছে। আমরা শুধু ফিল্মের সমালোচনা করছি। এই বিষয়ে জাষ্ট প্লিওসিন অথবা গ্লসিয়ার এর কথাটাতে একটা বানী মনে করি আমরা রিক্সাওয়ালার ছবি বলে শাকিবের মুভিকে গালি দিব, আর ভালো একটা মুভি বের হলে ইন্টারনেটে খুজবো ডাউনলোড লিংক আছে কিনা? আসলে আমাদের বাংলা ফিল্ম সম্পর্কে কোনো ধারনা নেই। সমসায়িক বিচার করে একটা ইন্ড্রাস্ট্রি ভাষায় আনার কোনো মানে হয় না।

হলিঊডের বি মুভিগুলো দেখলে আমরা সহসাই বলি, এই ফিল্মের কাহিনি বাংলা ফিল্মের মত। কিন্তু আমি চেয়েছি বাংলা ফিল্মের মত কোনো ফিল্মের ভাষা বা বহি প্রকাশ হতে পারে। বাংলা ফিল্মের মত যে মুভিগুলো সেগুলোর নাম বি মুভি। তাই এসব মুভিকে আমরা বি মুভি বলে আখ্যায়িত করবো, বাংলা ফিল্মের মত বলে না। আর বি মুভি মানেই যে অবহেলিত মুভি তা কিন্তু না।

হলিঊড এটাকে বাচিয়এ রাখার জন্য বা এই মুভিগুলো হলিঊডকে একসময় মানুষের সামনে প্রকাশ করেছে, সেটাই তু্লে ধরা আমার একমাত্র উদেশ্য। আমরা বলি ফিল্মের কাহিনি বাংলা ফিল্মের মত। কিনতু আসলেই কি বাংলা ফিল্মের কাহিনি সম্মপর্কে কোনো আইডিয়া আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আই এম ডি বি চেক করলেই বোঝা যায় গোটা ৩০ মুভি আছে তার লেখা নিয়ে। শরতচন্দ্র সহ আরও নেক রাইটারের লেখা নিয়ে বাংলা প্রচুর মুভি আছে।

বাংলা ফিল্মের কাহিনি বলতে তাহলে কি বোঝায় ? আমি জাষ্ট বাংলা ফিল্ম মানে নাট সিটকানো !!! সেটা থেকে মানুষকে বের করতে চেয়েছি। এই মুভিগুলোকে বি মুভি বলা হয়। বিশ্বে এখনো মানুষ বি মুভি গোগ্রাসে গিলছে, চাইলে তোমরাও দেখতে পার। কিন্তু ভাই প্লিয দেখে পরে সমালোচনা কর। আমার এই একটাই কথা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।