নীলফামারী-ডোমার সড়ক সংস্কারের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার ওই সড়কে মানববন্ধন ও অবরোধ করেছে জেলাবাসী। একই দাবিতে ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর নীলফামারীতে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।
এদিকে যশোর-নড়াইল আঞ্চলিক মহাসড়ক সংস্কারের দাবিতে ওই সড়কে পরিবহন ধর্মঘট চলছে।
নীলফামারী: বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত নীলফামারী-ডোমার সড়কের ২২ কিলোমিটারজুড়ে মানববন্ধন করে জেলাবাসী। এ সময় তারা সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে গোটা সড়ক অবরোধ করে রাখে।
এতে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।
মানববন্ধন চলাকালে সড়কের ডোমারের সোনারায়, ধরনীগঞ্জ ও নীলাহাটি এবং নীলফামারী সদরের চৌরঙ্গী, অচিনতলা, হরতকীতলা, পলাশবাড়ী নটখানাসহ বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ হয়।
এসব সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ সরকার, নীলফামারী পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহম্মেদ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আনিছুল আরেফিন চৌধুরী।
দুপুর ১২টায় মানববন্ধন শেষ হলেও দেড়টা পর্যন্ত নীলফামারী সদরের নটখানায় সমাবেশ চলছিল। এ সময় সাংসদ হামিদা বানু (শোভা) ডোমার থেকে নীলফামারী আসার পথে নটখানায় অবরুদ্ধ হন।
সেখানে তিনি আন্দোলনকারীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে সড়ক সংস্কারের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ও যোগাযোগমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার প্রতিশ্রুতি দেন।
এ সময় হামিদা বানু শোভা বলেন, ‘রাস্তার সংস্কার এত দিন কেন হলো না, সেটা এখন আমরা সবাই জানছি। এটা আমাদের সরকারের ব্যর্থতা নয়, এটা ঠিকাদারের ব্যর্থতা। ’ এটা যদি আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে হয়ে থাকে, তা হলে তিনি সেটা দেখবেন বলে জানান।
নটখানার সমাবেশে জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি শাহজাহান আলী চৌধুরী জেলাবাসীর দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর নীলফামারীতে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেন।
তিনি বলেন, সড়কের সংস্কারকাজ শুরু করা না হলে ভবিষ্যতে তাঁরা লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
পরে জেলাবাসীর পক্ষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
নীলফামারী চেম্বারের সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ সরকার বলেন, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে। রাস্তার সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত নীলফামারীবাসী দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে আরএনআই এমপি-২ নীলফামারী প্রকল্পের আওতায় ওই সড়কের উন্নয়নকাজের দরপত্র-প্রক্রিয়া শেষে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লিমিটেডকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতার কারণে কাজই শুরু করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এ সময়ের মধ্যে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এ অবস্থায় জেলাবাসীর পক্ষে গত শনিবার নীলফামারী চেম্বার ভবনে জরুরি সভা হয়। সভায় মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করার সিদ্ধান্ত হয়।
যশোর: সকাল থেকে পরিবহন শ্রমিকেরা লঠিসোঁটা নিয়ে যশোরের মনিহার, নীলগঞ্জ, হামিদপুর, দাইতলাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান নেন।
তারা সব ধরনের যানবাহন চলাচলে বাধা দেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা ১০ ইজিবাইক ও নছিমন ভাঙচুর করে।
ধর্মঘটের কারণে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হয়।
যশোর জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি, নড়াইল জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি, বাংলাদেশ পরিবহন সংস্থা শ্রমিক সমিতি, যশোর আন্তজেলা বাস সিন্ডিকেট ও নড়াইল জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক সমিতির ডাকে গত সোমবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের এই ধর্মঘট শুরু হয়েছে।
এদিকে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উদ্যোগে গতকাল বালু ও ইটের খোয়া ফেলে ওই সড়কের কয়েকটি স্থানে গর্ত ভরাটের চেষ্টা হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবহন সংস্থা শ্রমিক সমিতির সভাপতি আজিজুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শ্রমিকদের দেখানোর জন্য সওজ থেকে বালু ও ইটের খোয়া ফেলে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। কার্যত ওই বালু ও ইটের খোয়া কোনো কাজে আসেনি। ’ তিনি বলেন, সড়কটি যানবাহন চলাচলের উপযোগী না করা পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।
সওজ যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল হায়দার বলেন, যশোর-নড়াইল সড়ক সংস্কারের জন্য যশোরের সেল-পিএইএল-জেভি নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করার আশ্বাস দিলেও গতকাল প্রতিষ্ঠানের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
যে কারণে বাধ্য হয়ে তাঁদের কাছে যতটুকু ইট-বালু ছিল, তা দিয়ে সড়ক সংস্কারের চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ওই প্রতিষ্ঠান দু-এক দিনের মধ্যে কাজ শুরু না করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্র: প্রথম আলো ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।