আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শফি হুজুরদের বাড়তে দিয়েছি এখন আগাছাই গাছে পরিণত হয়েছে!

ইমরোজ শফি হুজুরের একটি ওয়াজের ভিডিও ক্লিপ দেখলাম ইউটিউবে। পুরোটা দেখার পর আমার মনে হলো, নাহ! এবার কিছু একটা বলতেই হবে। এভাবে আর চলতে পারে না। একটা জিনিস খুব পরিষ্কার বুঝতে পারলাম। শুধু ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করলে ধর্মের বারোটাই বাজে।

ধর্মের নামে যাতা রটানো যায়, যাতা করা যায়। আমাদের দেশে এক শ্রেণীর ধার্মিকের উদ্ভব হয়েছে। যারা ইসলামকে হেফাজতে রাস্তায় নেমেছেন। আমাদের দেশে যখন কেউ নামাজ পড়তে বাঁধা দেয় না, রোজা রাখতে বাঁধা দেয় না সেখানে কেন ইসলামের হেফাজত করতে নামতে হবে? যাদের কথা বলছি এরা খুব চতুর প্রকৃতির মানুষ। এরা মাদ্রাসায় পড়া একগুচ্ছ মানুষ যাদের শিক্ষার দৌড় বেশি নয়।

অথচ, এই শিক্ষা নিয়ে এরা চায় মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে। মানুষকে শাসন করতে। সুতরাং একজন অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত মানুষ যখন শাসন করবেন তখন তার সাবজেক্ট বা প্রজাদেরও হতে হবে তার চেয়েও অশিক্ষিত। ধর্মীয় শিক্ষার জালে ফেলে এরা ঠিক সেটাই করছে। একগুচ্ছ অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরী করছে।

এর ফলে শিক্ষার অভাবে এরা গোয়ার হয়ে উঠছে। আর অশিক্ষিত দরিদ্র্য মানুষের কাছে ধর্মই একমাত্র অবলম্বন। সুতরাং ধর্মকে ট্রাম কার্ড হিসেবে খেললেই হয়ে গেল। বর্তমানে এদের নেতা হলেন শফি হুজুর। তিনি তার বয়ানে পরিষ্কার করে দিয়েছেন মহিলাদের প্রতি তাদের মনোভাব কি।

যাদের সামনে বসে তিনি বলছেন, "মার্কেটিং করার জন্য বাইরে যাওয়ার কি দরকার, ছেলে আছে, স্বামী আছে তাদেরকে বললেই তো হয়"। তারা এতটাই অশিক্ষিত গন্ডমূর্খ যে উল্টো প্রশ্ন করতে পারে না। আমি সেখানে থাকলে ওনাকে একটা প্রশ্ন করতাম। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ ) এর প্রথম স্ত্রী বিবি খাদিজা (রাঃ ) কিভাবে ব্যবসা করতেন? তিনি কি তাঁর স্বামী বা ছেলেকে দিয়ে ব্যবসা করাতেন? সেটাকি সম্ভব? আমি জানি হযরত আয়েশা (রাঃ ) একজন যোদ্ধা ছিলেন। তিনি যুদ্ধে গিয়েছেন।

আমার প্রশ্ন শফি হুজুরের কাছে সেটা কেমনে সম্ভব ছিল? তিনি আরও বলেছেন লক্ষ লক্ষ টাকা মেয়েরা আয় করছে কিন্তু সংসারে শান্তি নাই। শান্তি নাই কারণ আল্লাহর রহমত নাই। আমি এরকম অনেক পরিবারকে চিনি যারা মায়ের আয় করা টাকা দিয়ে সংসার চালায়। আমি এমনও পরিবারকে চিনি যে পরিবারের বড় মেয়েটি চাকরি না করলে পুরো পরিবার না খেয়ে থাকবে। আমার পেটে ভাতের দরকার আগে, আল্লাহর রহমত পরে দিয়েন শফি হুজুর।

এটা কোন বাস্তব সম্মত কথা, মেয়েরা কাজ না করলে ওদের উপর নির্ভরশীলদের কি হবে? এরকম কত কত পরিবার আছে বাংলাদেশে তাঁর হিসাব কি শফি হুজুর রাখেন? মেয়েদেরকে চার দেয়ালে বন্দী করে রাখলে কি হবে পরিবারগুলোর? নাহ! আমি আল্লাহকে দেখি নাই অভাগার মুখে খাবার তুলে দিতে। কেননা তিনিই বলেছেন, মানুষের ভাগ্যের নির্ধারক সে নিজেই। ব্রেইন ওয়াশ করা এই মানুষগুলো দেশের ক্ষমতায় গেলে কি হবে জানেন? দেশটা সিরিয়া, মিশর, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, পাকিস্তানের মত সংকটে পড়বে। মেয়ে ভর্তি স্কুল বাসে বোমা ফাটবে। আফগানিস্তানের মেয়েদের চাকরি থেকে নিষিদ্ধ করে দেওয়ার পর, কত মেয়ের পরিবারের অবস্থা খারাপ হয়েছে আমরা সে হিসেব কোনদিন করেছি? ধর্মের কথা বললে শান্তি লাগার কথা।

আল্লাহর কথা খোদার কথা, রাসূলের কথা শুনতে সবারই প্রাণ জুড়িয়ে যাওয়ার কথা নয় কি? অথচ এরা ধর্মের নামে ওয়াজ করে হেইট্রেট, ঘৃণা ছড়িয়ে যাচ্ছে মানুষের ভেতর। সরল সাধারণ মানুষের ভেতরে তারা গ্রোথিত করছে অশান্তির বিজ। এটি যেদিন জ্বলে উঠবে সেদিন কেউই রক্ষা পাবে না। মানুষে মানুষে হানাহানি মারামারি লেগেই থাকবে। আজকে ধর্মের এই অবস্থার কারণ হলো আরবে গোত্রে গোত্রে সংঘাত।

সেখানে তারা গোত্রে গোত্রে যুদ্ধবিগ্রহের রাজনৈতিক কারণে ধর্মকে ইচ্ছামত নিজেদের কাজে ব্যবহার করেছে। এইজন্য আসল ধর্মের কোন ছিটেফোটাও আজ নেই। আজ ধর্মের নামে ওয়াজ শুনলে মনে হয় আমার পাশে বসা হিন্দুটি মানুষ নয়। আজ ধর্মের নামে ওয়াজ শুনলে মনে হয় নিজের বউকে কাল থেকে ঘরে তালা বন্ধ করে দেই। কারণ ছাড়াই তাকে বলি, কেন উলঙ্গ চলাফেরা করো? কেন বাইরে যাও।

তুমি জানো না একটি কড়িও তোমার নিজে থেকে কেনার হুকুম নাই? দিন পার হয়েছে, অনেক অনেক যুগ চলে গেছে অথচ এই ধর্মান্ধদের কোন বিকার নাই। তারা বসে আছে সেই যুগে ফিরে যাবে। সেসময় কি শেয়ার মার্কেট ছিল? মোবাইল, টেলিফোন, টেলিভিশন, ইন্টারনেট, ফ্যান, এসি, গাড়ি, শপিং মল, রকেট প্লেন, ক্যামেরা কিছুই কি ছিল? এই এত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে একটি জাতি কিভাবে অন্ধকারে পরে থাকতে চাইতে পারে আমি এখনও বুঝি না। ইসলাম আসার আগে নাকি মেয়েদেরকে জ্যান্ত পুতে মেরে ফেলা হত কারণ সমাজে এতই অনাচার ছিল। এখন দেখছি আমার কোন মেয়ে সন্তান হলে আমাকেও তাই করতে হবে।

কেননা, হাজার হাজার মানুষ এটা বিশ্বাস করে নারীরা পাপী, তারা তেতুলের মত, তাদের দেখলে জিবে পানি আসতেই হবে। আমার মেয়েকে আমি চার দেয়ালে বন্দী জীবনযাপন করতে দিতে চাই না। এর থেকে ভালো সে মরে যাবে। কোন দরকার নাই এই সমাজে কোন মেয়ের বাস করা। এত ঘৃণার মধ্যে কেমন করে বাস করবে একটি মেয়ে? কেমন করে জন্ম দিবে আরেকটি সত্ত্বাকে? নিজের বিবেকের কাছে একবার প্রশ্ন করে দেখুন না! আমার বউ চাকরিজীবী, আমিও চাকরি করে খাই।

আমাদের টোনাটুনির সংসারে কোন মারামারি হানাহানি নাই। আমরা বেশ সুখেই আছি, ভাল আয় করছি ভাল খাচ্ছি। এটাই কি রহমত নয়? আমার বউকে বন্দী করে আমি সাইকোপ্যাথ বানিয়ে রহমত খুজতে চাই না। এটা আমাকে দিয়ে হবে না। সুতরাং শফি হুজুর, আধুনিকতা মানেই উলঙ্গ চলাফেরা নয়, ছেলেমেয়ে একসাথে পড়াশোনা করা মানেই সেক্স করা নয়, ছেলেমেয়ে পাশাপাশি চাকরি করা মানেই কিন্তু পরোকিয়া নয়।

দেয়ার ইজ এ লাইন ড্যাট ইউ ডোণ্ট ওয়ান্ট টু সি বিকোজ ইউ আর ব্লাডি ব্লাইন্ড! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।