সেই কষ্টগুলো থেকেই তবে আজ...
শেষ পর্যন্ত যাবার বাহন ম্যানেজ হল। আধঘণ্টা ধরে রোদে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছি। যেতে হবে মমতার বন্ধনের কাছে, রক্তের শেষঠিকানায় !
যাহোক ঠাসাঠাসি করে উঠি বাহনে। পঙ্খিরাজে ! তারপর শুরু গন্তব্যে যাওয়ার।
সকালবেলায় খবরটা শুনে মনটা বেদনায় ভরে যায়।
এ খবর সবাইকে শুনতে হয়, নিজেও হতে হয় শিরোনাম।
শহরের বিষাক্ত ধুলোর পথ মাড়িয়ে যাচ্ছি। চোখ জ্বলছে, নাক শিরশির করছে আর কান দুটো তো কালা হয়ে আছে আগে থেকেই।
মহাসড়কের বামপাশ দিয়ে নেমে গেছে আমাদের চলার সরুপথখানি। কে যেন এখানকার মন্ত্রী ছিলেন একদা।
তার এই এলাকায় তিনি তৈরি করেন পাকা রাস্তা। সেই পথ দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের পঙ্খিরাজ !
দু’পাশে সদ্য ফসলতোলা ন্যাড়া ভূঁই। এরই মাঝে ছোপ ছোপ হলুদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। নিচে খানিকটা সবুজের ছোঁয়াও।
নিত্যদিনের চোখ ঝাঝাল কটকটে যন্ত্রণা থেকে সাময়িক মুক্তি।
আর সেই মুক্তির আনন্দে ঘণ্টাখানেক আগের বিষাদের ভাবটা যেন মিইয়ে গেছে। আসলে কি গেছে ? জানা নেই।
পথ চলাতেই আনন্দ, না কি খুঁজি কাঙ্খিত সেই ঠিকানা। পাকারাস্তার মাঝখান থেকে খাবলা খাবলা মাংস উপড়ে নিয়ে গেছে যেন কেউ। দগদগে ঘাওয়ালা দেশি কুকুরের মত !
পঙ্খিরাজের চালকের মুখে কিন্তু বিরক্তির কোন ছায়া নেই।
থাকবেই বা কেন, সে তো অহরহ চিবিয়ে যাচ্ছে এহেন অখাদ্য।
পথ যেন শেষই হয় না। শেষ হওয়ার জন্য কোন আকুলতাও নেই। তারপরও যেতে হবে; যাবো আমাদের প্রিয় মানুষের প্রিয় ঠিকানায়। সাত-পাঁচ ভাবনার এক ফাঁকে পৌছে যাই বাটিতে।
সারাবাড়ি জুড়ে অসংখ্য কালো কষ্ট, শোককাতর মানুষগুলো সান্তনা খুঁজে ফিরছে নিজেদের কাছ থেকেই !
ভেতরে ঢুকতেই ডুকরে ওঠে আমার স্বজন, প্রিয়জন হারানোর সেই বেদনায় ফিকে হয়ে যায় দু’ মিনিট আগের হলুদ-সবুজের ভালোবাসা।
শক্ত পাথর কেটে গাছি যেমন ঝরিয়ে দেয় ফোটায় ফোটায় যন্ত্রণা, ঠিক তেমনি দু’চোখ ভিজে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।
লুৎফুন নাহার আমাদের মাঝে নেই। তিনি আমার রক্তের টান। আজকের দিনে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে তিনি নক্ষত্র হয়ে গেছেন।
এ পথে হেঁটেছেন আমার বাবা, মা-আজ তিনিও।
মনে পড়ে না কোন সুখস্মৃতি তাকে কেন্দ্র করে; হয়তো ছিল তার কাছে। তিনি বুকে আঁকড়ে রেখেছিলেন একদা এই হতভাগাকে। কখনো লেনদেন হয়নি সেসব টুকরো কথাগুলো; সময় ছিল না।
তিনি বেশ কিছুকাল অসুস্থ ছিলেন।
মাঝে একবার যাই। কথা ছিল আবার যাবার। গেছিও। কিন্তু এ যাওয়ায় তার কিছু কিছু এসে যায় না; যাচ্ছে আমাদের।
ফুফু তোমাকে ভালবাসা হয়নি কখনো।
তুমি অনেক বড়, ছোট এই আমরা। তবে, তোমাকে এটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি- তোমার আদরের ভাই আর ভাবির কাছ থেকেও কোন আদর পাইনি। স্মরণে থাকার মত কোন কিছুই বলতে পারি না। তোমাদের কাছ থেকে নিত্য না পাওয়া থেকেই হয়তো আমার বুকখানি শুকিয়ে কাঠ। এখন পাথরের বুক গলে বেরিয়ে পড়বে ঝরণাধারা।
তাতে কি শীতল হবে তোমাদের জান-প্রাণ?
তৌহিদ জামান
২৬.১২.১১
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।