ছোটবেলা আমার কেটেছে খুবই বিচ্ছিন্নভাবে। বিশাল বড় এক যৌথ পরিবার। একগাদা কাজের লোক,কাজের মেয়ে,কিছু আশ্রয়ী আর একঝাক আত্মীয় এই নিয়ে প্রতিবার কমপক্ষে ৫০ জনের খাবারের আয়োজন করা হত। এত লোক থাকায় মা খুবই ব্যস্ত থাকতেন আর বাবা তো তখন তার ব্যবসা নিয়ে থাকতেন পড়ে। আমার সমবয়সী যারা ছিল তাদের সাথে আমার খুব একটা মিল পড়ত না।
কারণ তখন থেকেই আমি ভীষণ একগুয়া আর জেদি। মারপিটে উস্তাদ। ছোটবেলার মারপিটের দাগ এখনও রয়ে গেছে শরীরের নানা স্থানে। এইসব কারণে আমি সবার মাঝে থেকেও হয়ে পড়লাম ভীষণ একলা একা।
বড় হয়ে আমি আবিষ্কার করলাম আমি খুবই লাজুক হয়ে পড়েছি।
কারো সাথে বিশেষ করে মেয়েদের সাথে তো কথাই বলতে পারি না। তাই কিশোর বয়সে আমার হল না কোনও বন্ধু। তাতে আমারই বা কি? আমি হলাম বিচিত্র স্বভাবের। কখনও বই এর প্রেমে পড়তাম তখন কখনও বা উদাস হয়ে বসে থাকার। কখনও বা একলা একা মাছ মারার শখে ভাসতাম আমি।
আমার এসএসসি পর্যন্ত সময় কেটেছে তাই বন্ধুবান্ধব ছাড়াই। বিশেষ করে মেয়ে তো নাইই। আমাদের স্কুলে ছেলে মেয়ে আলাদা সেকশন থাকায় মেয়েদের প্রতি আমার আড়ষ্টতা আর লজ্জা আরও বেড়ে গেল। কলেজ এভাবেই শেষ। ততদিনে আমার কিছু বন্ধু হল।
অবাক হয়ে দেখতাম তারা মেয়েদের সাথে হাসছে কথা বলছে আবার কেউ কেউ আরও একদাফ এগিয়ে প্রেমও করছে। ব্যাপারটা আমার জন্য খুবই কষ্টদায়ক ছিল। কারণ আমি মেয়েদের দেখলে তখন শুধু লজ্জা না ভয়ও পেতাম।
তারপরও এরমাঝে একটি দুর্ঘটনা ঘটে গেল। কিভাবে কি হয়েছিল তা আর নাই বললাম কিন্তু ঐ ঘটনার পর থেকে মেয়ে সঙ্গ থেকে হাজারো হাত দূরে আমি।
তারপর বড় হলাম। পেশায় ঢুকলাম। একদিন খোজ পেলাম ব্লগের। লেখালেখির প্রতি আমার কিছুটা আগ্রহ ছিল তা থেকে ব্লগিং শুরু। আমার কোনোকিছুই বেশীদিন ভাল লাগে না।
একপর্যায়ে ব্লগের প্রতি আগ্রহও হারিয়ে ফেললাম। ফেসবুকে ঘুরি ফিরি। কখনও কখনও হারানো ব্লগ বন্ধুদের সাথে চ্যাট হয় আমার। তখনও আমি ভীষণ একলা। এত এত বন্ধু অনলাইনে থেকেও আমি কারো কাছের নয়।
আমার খুব কাছের কিছু ভার্চুয়াল বন্ধুদের কথায়, "তোমার দ্বারা কিছু হবে না। এত বড় হলে একটা মেয়ে জুটাতে পারলে না এখনও!"
এই কথা শুনতে শুনতে আমার গা সয়ে গেছে তাই কিছু বলি না শুধু হাসি। তারপর হুট করে একদিন এক ব্লগার আমায় এড করল। এড হওয়ার দিনই ছিল তার জন্মদিন। উইশ করতে গিয়ে কি মনে করে যেন তার ছবি অ্যালবাম দেখতে লাগলাম।
পুরা মাথা নষ্ট আমার। একটা মানুষ এত সুন্দর করে হাসে কিভাবে? একটা মানুষ এত এত কিউট হয় কিভাবে? মাথায় একটা ঝিমঝিম ভাব। খোজ নিলাম তার। কবিতা লেখে মাঝে মাঝে গল্প লেখার চেষ্টা তার। আমার তখন মনে হচ্ছিল এই মেয়ের সব কবিতা আমার জন্য, সব লেখা আমার জন্য।
তার বন্ধুদের মাঝে কয়েকজন আবার আমার পুরানা কালের ব্লগ বন্ধু। জানলাম সেও একা। তবে ভয়ংকর ব্যাপার হল স্মার্ট মেয়ে তো তাই দোকা হওয়ার তার কোনও ইচ্ছাও নাই। (একদিন সাহস করে নক করলাম তাকে। কিছু কথা হল।
এত মিশুক! মনে হল এই মেয়েটা এত মিশছে আমার সাথে কারণ সে আমার তাই। তখনও কিছু বলা হয় নাই তাকে। চলছে এভাবে কথা। কিন্তু আমি আর থাকতে পারছি না। একদিন সাহস করে বলেই ফেললাম।
শুনে সে চুপ।
অনেকক্ষণ পর বলল, এটা কোনোদিনই সম্ভব নয়।
আমি মন খারাপ করে চুপচাপ রয়ে গেলাম। তারপর ভাবলাম সব ছেড়ে চলে যাই। ভার্চুয়াল দুনিয়া থেকে দূরে সড়ে গেলে তো ভুলতে পারব ওকে।
কিন্তু তখন টের পেলাম ওকে আমার চাইই চাই। কি আর করা! বারবার তাকে বুঝানোর এক পর্যায়ে মোবাইল নাম্বারটা পেলাম।
কথা বলার সময়ও দুনিয়ার সব বাধা। সে না না না বলতেই থাকে দিনের পর দিন। আমি হতাশ হই তবু হাল ছাড়ি না।
তারপর একদিন দেখি হঠাৎ করেই সে অনেকটা নরম। খুবই অবাক আমি। তারপর দিনের পর দিন সে নরম হচ্ছে।
প্রতি রাতে আমি তাকে বলি, আমি তোমায় খুব ভালোবাসি। এতটা যে এর চেয়ে বেশী কোনও ছেলের কোনও মেয়েকে বাসা সম্ভব নয়।
বলার পর অপেক্ষা করি। সে যদি একবার বলে আমি তোমায়.....
না গলে না সে তখনও।
তারপর একদিন রাতে কাজ করছি পত্রিকায় একটা লেখা পাঠাব।
এমন সময় ও নক করল। তোমার প্রোফাইলটা একটু চেক করবে?
করছি বলে প্রোফাইলে গিয়ে তো মারাত্মক অবাক আমি।
ইন অ্যা রিলেশনশিপ উইথ........
বিশ্বাস হচ্ছিল না আমার নিজের চোখকেই। অনেকক্ষণ ঠাণ্ডা আমি। একদম চুপচাপ।
ও বলল, কি হল তোমার?
আমি বললাম, আমি তোমায় ভালোবাসি।
সে বলল, আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল তাহলে আমিও বলব তোমায় আমি অনেক অনেক ভালোবাসি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।