শ্রাবণের রাত শীত আর খেজুর রস যেন আঙ্গাআঙ্গি ভাবে জড়িত ছিল আমার জীবনে এক সময় । সারা শীতকাল কাটত খেজুর রসে । সে সময় যা তৈরি হত তাঁর সাথে থাকত খেজুর রসের সম্পর্ক । শীতের শুরতে কামাল কাকু গাছের মাথায় উঠে যেতেন । নিপুন শিল্পীর মত গাছ কাটতেন ।
তার কাটা গাছে অন্যদের তুলনায় অনেক বেশী রস হত । কিছু দিন পর গাছে রস আসত । খুব ভোঁরে রসের ঠিলা গুলো নামিয়ে নিয়ে আসা হত । ঘুম চোখে কাচা রস খেতে কি যে ভাল লাগত, তা বলে প্রকাশ করা যাবে না । রসের পরিমাণ বেশী হলে, শুরু হত গুঁড় তৈরির তোড়জোড় ।
বিকাল বেলা মা তৈরই করতেন চিতাই পিঠা । গরম গরম চিতাই পিঠা খেজুরের গুঁড় দিয়ে খেতে অমৃতর মত লাগত । পরের দিন খেতাম দুধ চিতাই পিঠা । যে দিন চিতাই পিঠা হত না , সে দিন খেতাম ভাপা পিঠা । এটাও তৈরি হত খেজুরের গুঁড় দিয়ে ।
মাঝে মাঝে তৈরি হত আতপ চালের পায়েস ।
সারা টা শীত চলত খেজুর গুঁড় আর রসের প্রবল প্রতাপ । এখন আর আমাদের গাছ গুলোতে রস হয় না ।
কামাল কাকু আর নেই । তার ছেলে আর এই পেশায় নেই ।
অবহেলায় আর গাছ গুলোতে রস হয় না । আমাদের এলাকায় আর গাছি নেই । কেউ মারা গেছে, কেউ পেশা পরিবর্তন করেছে । এখন আর খেজুরের রস খওয়া হয় না । বছর খানেক আগে ফেরিয়ালা কাছ থেকে রস কিনতে যেয়ে দেখি , তাতে চিনি মেশান ।
এর পর থেকে আর রস খাইনা ।
সেই রসও নেই, সেই পিঠাও নেই । আজ কালকের মেয়েরা আগের মত কষ্ট করে পিঠা বানাতে চায় না ।
তাই এখন রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে কখন চিতাই পিঠা, কখন ভাপা পিঠা খাই । আর দুধের সাধ, ঘোলে মিটাই ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।